বাসুদেব গুপ্ত
একটি মানুষ
একটি মানুষ গোপন ঘরে কেউ চেনে না তাকে
সারাটি দিন সেই তো আমায় ব্যস্ত করে রাখে
এই বুঝি সে আঘাত পেয়ে দুঃখে নুয়ে পড়ে
এই বুঝি সে উচ্ছসিত আনন্দনির্ঝরে।
কেউ চেনে না তাকে সে যে লুকিয়ে আমার ঘরে
বন্ধু আর অবন্ধু সবাই জিজ্ঞাসাবাদ করে,
কেমন সে লোক, চরিত্র তার ভদ্র বলা যায়
কি বই পড়ে দুপুরবেলা ডিনারে কি খায়?
আঙুল কি তার ঝর্ণাকলম শিল্প হয়ে ঝরে
নাকি ছুরি বাগিয়ে সে ঠিক গলার নীচে ধরে?
সবাই যখন ঘুমে সে কি দরজা খুলে যায়
ঘর ও বাহির ভাসিয়ে দেওয়া দুষ্টুমি জোছনায়?
আমার ঘরে থাকে তবু জানি না তার নাম
আয়নাতে রোজ মুখটি দেখি ডানটি ঘুরে বাম।
তার চিন্তায় ঘুম আসে না সে হাত ছুঁয়ে থাকে
স্বপ্ন সেকি দেখছে এখন তার হারানো মাকে?
নামিয়ে সে ভার সব বাসনার নৌকোটি দেয় খুলে,
আমি বসে দুঃখ বাছি ছন্নছাড়া চুলে।
একটি মানুষ তার জন্যেই সারা জীবন যায়
সে যত পায় আঘাত তত তার পরিচর্যায়।
জানি সে তার সময় হলে না চুকিয়ে দেনা
ভোরবেলাতে উঠবে ট্রেনে আর মনে রাখবেনা।
জানলায় এসো
ভালোবাসা লেখা শেষ হলে
একবার এসো জানলায়, দেখো
শুকিয়েছে ফুল শব। পোড়া গাছ পাশাপাশি শুয়ে
ডালধরাধরি যেন শুয়ে আছে বসন্তের স্মৃতি।
বসন্ত পায়নি ভিসা, বসন্ত বাউরী ওই আটকে দেয়ালে
স্কুলেও উড়ছে ধোঁয়া, দোলনায় শিশু পুড়ে খাক।
ভালোবাসা জুড়িয়ে যাবে, ওষ্ঠ ছোঁয়াও কফিকাপে
তোমার ঘরের ধোঁয়া বাইরের ধোঁয়াকে ভ্যাংচায়।
কালিফোর্নিয়াতে এল বসন্ত, শরীর কীবোর্ড
বাইরে দৌড়ে যায় ফসফরাস বাচ্চার দল
জানলা শক্ত করে আঁটো, ভোট দিও প্রবল সঠিক
প্রতিটি ফুলের জন্য একটি বুলেট যেন থাকে
প্রতিটি পেটের শিশু পায় যেন একটি গ্রেনেড।
মিডিয়া টাঙিয়ে দেবে জানালায় মিনিটে মিনিটে ক্ষয়ক্ষতি
ভালোবাসা খেলা শেষে দেখে যেও যখন বিরতি।
🍂
অভিবাসী
ভিসাটা টেম্পোরারি হাতে নিয়ে
এখন কদিন নিশ্চিন্তি তোমাদের দেশে
এদিক ঘোরো ওদিক ঘোরো দিন যাচ্ছে যাক
জীবন যেন উলের বল খুলতে খুলতে যাবে
কার সাধ্য নতুন করে উলগুলো জড়াবে।
ভিসাটা টেম্পোরারি। অফিসার স্বপ্নে খবর রাখে
কাজ সেরে ফিরবেন তো নিজের নিজের বাড়ী
নইলে উপায় আছে? পেনাল কোডের পেন
মিছমিছি কেন চান সময় হলে ঠিক ফিরেই যাবেন।
ফিরবো কোথায় কে জানে কোথায় আমার ঠিক দেশ
কোথায় আমার বাড়ী, চির আপনজন
পরবাসে ঘুরে যাই ভ্রমণপিপাসী পাসপোর্টহীন
পকেটে বিবর্ণ ভিসা। মুছে গেছে লেখা
কে জানে মেয়াদ আর কমাস কদিন।
গোধূলিবধু
গোধুলিবধূর আঁচলে দাউদাউ
লুকিয়ে আনে সন্ধ্যাফল কোন সে বনবাসীর?
জটায় যার জড়িয়ে সাত নদীর জলমালা
সাজানো ঢিপি অন্তরীণ উইএর বাসাবাড়ী
উঠোন জুড়ে উড়ছে পাতা শব্দহীন কোণে
সে আছে একা জড়িয়ে বুকে জটিল অহংকার,
সুরেলা হাত স্পর্শে আর জাগেনা ঝংকার?
অথচ চাঁদ নামেনি তার জানলা বেয়ে চোর
অথচ কোন উদাস শিয়াল আসেনি নিতে খোঁজ
জটিলবটের শিকড় তাকে প্রাচীন নামে ডাকে
বৃষ্টিভেজা মৃত্তিকা দেয় নম্র শরীর পেতে
তার কি নেই তক্তাপোষ সুজনিসবুজ বাড়ী,
তার কি নেই বন্ধুব্রণ, প্রেমের মারামারি?
গোধুলিবধুর কাজলচোখ আগুনে অভিমান
কি লেখা তার জন্য লেখে ধূমকেতুরা জেগে
সে সব জানে পড়তে পারে, আগুনে অক্ষর
শিরায় জ্বলে আগুন আলো শিরায় সর্বনাম
গোধুলিবধু জলের ঘরে শান্ত হয়ে বসো
অবগাহন সমাপ্ত হোক মৃত্যু হয়ে হেসো।
দরজায় পদশব্দ
দরজায় পদশব্দ উঠে আসে
হাওয়ায় উড়ছে মিশে একাকার দিক
রাস্তায় হাঁটা বেআইনী নীল মাসে
বন্য কুকুর, শুরু হবে পিকনিক?
জোড়া যাচ্ছেনা কোন স্মৃতি কোন শোক
ঋতু যত গাঁথি ছিঁড়ে খুঁড়ে যায় মালা
এখন কেউ আর সাজে না ভদ্রলোক
ভীরু চাঁদ যেন এলুমিনিয়াম থালা।
নখে লেগে আছে ছিন্ন প্রেমের পাপ
অভিমানে বুক ভাসে বিয়ারের ফেনা
গোটা শহরটা যেন দিতে চায় লাফ
ইঁটের পাঁজর বিনিময়ে প্রেম কেনা।
দরজায় পদশব্দ কেউ তো নেই
আমি তো কবেই ফিরে গেছি গোধূলিতে
ঘর বসে আছে লক্ষ্মীতো আসবেই
শূন্যতা আছে শূন্য শয়ন পেতে।
0 Comments