জ্বলদর্চি

Love's Uncertainty Principle : ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও এলিজাবেথ স্যুমাখার /পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী — ৯৪
Love's Uncertainty Principle : ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও এলিজাবেথ স্যুমাখার 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা 

(১)
 প্রথম দেখা : 

আগামী শনিবার আমাদের ক্যাম্পাসেই ক্লাসিক্যাল মিউজিকের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে। তুমি সেখানে পিয়ানো বাজাবে, কোনো অজুহাত শুনব না—কোনোরকম ভূমিকা ছাড়াই বললেন এরউইন জ্যাকোবি।
হঠাৎ-টেলিফোনে ও'প্রান্তের চেনা কণ্ঠস্বর শুনে খানিক আশ্বস্ত হলেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। আসলে এখন টেলিফোনের ঘণ্টি বাজলে আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকেন বিজ্ঞানী। মূহুর্তের ব্যবধানে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তাঁর বিনয়ী জবাব ভেসে ওঠে — তুমি তো ভালো করেই জানো, ফিজিক্স ব্যতিত মিউজিকই আমার ভালোবাসা। তাছাড়া অজুহাত আমি কোনোদিনই দিই না। তবে আজকাল মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, বুঝলে।
– সেটা জানি। জানি বলেই বলছি, অনুষ্ঠানে তোমাকে বাজাতেই হবে। আমি ভায়োলিনে থাকব।
– বেশ, তবে তো ভালোই হবে। 
সংক্ষিপ্ত টেলিফোন কলটি হঠাৎ কেটে গেল। ওয়ার্নার-এর মন খানিক উতলা। বাকিং পাবলিশিং হাউজের কর্ণধার এরউইন জ্যাকোবি ওয়ার্নারের বন্ধু। বিভিন্ন রকম বাদ্যযন্ত্রে বিশেষ পারদর্শী। যে লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ার্নার পদার্থবিদ্যার প্রফেসর, তার পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য সে। 

২৮ জানুয়ারি ১৯৩৭। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি হলে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের আসর বসেছে। সেখানে চেম্বার মিউজিক বাজাবেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, ভায়োলিনে জ্যাকোবি। ওঁরা বাজাবেন বিঠোভেনের জি মেজর ট্রায়ো। ওয়ার্নারের খুব প্রিয়। ছাত্র জীবন থেকেই মিউজিকের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা, পরিচয় ও ভালোবাসা। কতবার যে অনুষ্ঠানে বাজিয়েছেন! কিন্তু আজ তিনি বিধ্বস্ত। ক্লান্ত। অবসন্ন। মানসিক অস্থিরতার চরম পর্যায়ে বিচরণ করছেন। অনেক দিন পর এই প্রথম হলভর্তি দর্শকের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলেন তিনি। ক্ষণিক থেমে চোখ বুজে বড় বড় শ্বাস বুকে ভরে নিলেন। তারপর হাত রাখলেন পিয়ানোতে। কয়েক মূহুর্ত পরেই সম্পূর্ণ বদলে গেল হলের পরিবেশ। তিনি ডুবে গেলেন সুরের মায়াজালে। শ্রোতারাও বাকশূন্য, মুগ্ধ। 
    কিশোরী বেলায় এলিজাবেথ স্যুমাখার হাইজেনবার্গ (১৯১৪–১৯৯৮)
  
দর্শকাশনে একেবারে সামনের সারিতে বসে মন দিয়ে মিষ্টি সুর শুনছিলেন বাকিং পাবলিশিং হাউজের এক শিক্ষানবিশ। নাম এলিজাবেথ স্যুমাখার। কৈশোর উত্তীর্ণ বছর একুশের এক ডাকসাইটে সুন্দরী। স্মার্ট। মার্জিত আচরণ। আদতে আর্টহিস্ট্রির স্টুডেন্ট। অনুষ্ঠান শেষে এলিজাবেথ দেখা করলেন বয়সে বছর চোদ্দো বড় হাইজেনবার্গের সঙ্গে। বছর দুয়েক আগে ফিজিক্সে নোবেল জয় করেছেন বৈজ্ঞানিক। প্রথম আলাপচারিতায়, ক্ষণিকের কথাবার্তায় পরস্পর প্রভাবিত হলেন দুজনে। প্রথম সাক্ষাতের দু'সপ্তাহ পরে তড়িঘড়ি বাগদান সেরে ফেললেন তাঁরা। বাগদান সেরে উঠেই এক চিঠিতে মা-কে হাইজেনবার্গ লিখলেন — 
এলিজাবেথের সঙ্গে আমার পরিচয় মাত্র চোদ্দো দিনের। এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। প্রথমে সাধারণ কিছু কথাবার্তার পর আমরা পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি। তারপর থেকে খুব দ্রুত বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গেল। বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বললাম আমরা দুজন। পদার্থবিদ্যার নিরস তত্ত্ব আলোচনা নয়, আমাদের গল্প শুরু হয় মিউজিক নিয়ে। তারপর অবধারিত এসে পড়ে জীবনবোধ, ইতিহাস ও সাম্প্রতিক অন্যান্য বিষয়। মনে হচ্ছিল কত যুগ ধরে কত কথা ও ভাবনা যে জমে আছে! শেষমেশ ওকে বলেই ফেলি – আমরা কি সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে পারি না?

একগুচ্ছ কথার শেষে মা-কে লেখা চিঠিতে হাইজেনবার্গের আরও সংযোজন — 
'তোমার সম্মতি পাব এই আশায় গতকাল আমাদের বাগদান হয়ে গেছে।'

(2)
পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও অনিশ্চয়তাবাদ তত্ত্ব 

সমকালীন বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের আকাশে এক এবং অদ্বিতীয় নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। বিশেষ অপেক্ষবাদ ও সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বের প্রাণ পুরুষ তিনি। এ হেন প্রবাদপ্রতিম তাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিকের সমকক্ষ হিসাবে একসময় খ্যাতির মধ্যগগনে বিরাজ করছিলেন হাইজেনবার্গ। খুব ছেলেবেলা থেকেই লেখাপড়ায় তিনি জিনিয়াস। জন্ম ১৯০১ সালের ৫-ই ডিসেম্বর। ইউরোপে একসময় বিজ্ঞানের তীর্থভূমি জার্মানির ভ্যুর্ৎসবুর্গ-এ। জন্মদাত্রী মা অ্যানি ওয়েকলেইন। পিতা বিখ্যাত হাইস্কুল শিক্ষক অগাস্ট হাইজেনবার্গ আধুনিক গ্রিক সাহিত্যের তৎকালীন একজন নামকরা প্রফেসর ছিলেন। 

ছেলেবেলায় একজন লুথাসিয়ান খ্রিস্টান হিসাবে তাঁর বড়ো হওয়া। কিশোর বয়সে একবার আল্পস পর্বতমালা ভ্রমণে গিয়ে তিনি প্লেটোর 'Timaeus' বইখানা পড়ে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। বইটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি তত্ত্বের রহস্য নিয়ে লেখা। বইখানি পড়ে পরে তিনি স্বীকার করেছেন— 'ফিলোসফি, প্লেটো ও অনুরূপ বিষয় অধ্যয়ন করে আমার মন তৈরি হয়েছিল।'
         
যুবক বয়সে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ

তারপর এল সেই কাঙ্ক্ষিত সময়, যা তাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়। ১৯২৫ সাল। নীলস বোর-এর পরমাণু তত্ত্ব আবিষ্কারের পরেও পরমাণুর ভেতরে যে সব অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা ঘটে চলেছে তার সঠিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এত ক্ষুদ্র পরমাণুর অভ্যন্তরে এতগুলো ইলেকট্রন কীভাবে ঘুরপাক খায়? কোয়ান্টাম বলবিদ্যার স্থপতি বিজ্ঞানী শ্রোডিঞ্জার-এর তরঙ্গের ব্যাখ্যা আশাব্যঞ্জক হলেও পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রনের সমস্যার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা তখন অমিল ছিল।

জুন মাসের এক বিকেলে শরীরে সামান্য জ্বর নিয়ে হাইজেনবার্গ পৌঁছে গিয়েছিলেন জার্মানির উত্তরে নির্জন হেজল্যাণ্ড দ্বীপে। বয়স সবেমাত্র বছর চব্বিশ। ইলেকট্রনের সমস্যাটি মাথার মধ্যে অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। সেদিন রাতে গণনা করতে বসলেন ইলেকট্রনের গতি ও ভরবেগ নিয়ে। তা সন্ধান করতে গিয়ে পেলেন অদ্ভুত তথ্য। তিনি দেখলেন, কোন এক মূহুর্তে একটি ইলেকট্রনের 'অবস্থান' ও 'ভরবেগ' রাশি দুটিকে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যায়, ইলেকট্রনের 'ভরবেগ' ও 'অবস্থান'-এর গুণফলের তথ্য হুবহু মিলছে না। ব্যাপারখানা কী? 'A × B'-এর ফলের সঙ্গে 'B × A'-এর ফল মিলছে না। আরও সহজ করে বললে, ২ × ৩ এবং ৩ × ২ সমান নয়! কী করে সম্ভব এই অদ্ভুত ঘটনা? এমন নিয়ম কেবল গণিতের ম্যাট্রিক্স নিয়মে খাটে। এরই সূত্র ধরে ম্যাক্স বর্ন ও পাসকুয়াল জর্ডানের সঙ্গে মিলে জন্ম হল কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নতুন শাখা― ম্যাট্রিক্স মেথড। এ হেন যুগান্তকারী আবিষ্কার এবং এর ব্যবহারিক প্রয়োগ হিসাবে হাইড্রোজেনের বহুরূপতা আবিষ্কারে অবদান রাখার জন্যে ১৯৩২ সালে তিনি ফিজিক্সে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে।

যদিও কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় তিনি বেশি বিখ্যাত তাঁর 'অনিশ্চয়তা নীতি' আবিষ্কারের জন্য। কী এই 'অনিশ্চয়তা নীতি'?

কোন একটি মূহুর্তে একটি গতিশীল ইলেকট্রন কণার অবস্থান ও ভরবেগ দুটো একইসঙ্গে নিঁখুত মাত্রায় গণনা করা অসম্ভব। অবস্থান পরিমাপ করলে ভরবেগের মাপনে ত্রুটি অবশ্যম্ভাবী। আবার ভরবেগের পরিমাপনের সময় অবস্থান পরিমাপে ত্রুটি ধরা পড়ে। এটাই হাইজেনবার্গের 'অনিশ্চয়তা নীতি' নামে খ্যাত। এ হেন নীতিটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি মৌলিক নিয়ম। অথচ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তা মানতে অপারগ। অসম্মতিমূলক মন্তব্য করে বসলেন তিনি— 'ঈশ্বর পাশা খেলেন না।' এদিকে ক্ষেপে লাল হাইজেনবার্গ ও নীলস বোর। প্রত্যুত্তরে কড়া কথা শোনালেন বিজ্ঞানী বোর। অবশিষ্ট জীবনে যে-ঝগড়া কখনও মেটেনি। আইনস্টাইনের পরম ভক্ত থেকে হাইজেনবার্গ হয়ে উঠলেন বিশ্ববিশ্রুত বৈজ্ঞানিকের কঠোর প্রতিপক্ষ।
 ‌‌   
জার্মান পদার্থবিদ ড. ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ (১৯০১–১৯৭৬)

জার্মান এই পদার্থবিজ্ঞানী বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। জার্মানিতে তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দুন্দুভি বেজে উঠেছে। নাৎসি জার্মানির মূলমন্ত্র ইহুদি বিদ্বেষ। ইহুদি বিতাড়ন ও নিধনে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চারদিকে শুধু স্বৈরাচারী হিটলারের জয়ধ্বনি। এমন সময় বে-মক্কা মন্তব্য করে বসলেন হাইজেনবার্গ। তিনি বললেন, 'একজন বিজ্ঞানী ইহুদি হলেও তাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে দেওয়া উচিত।' ব্যাস, নিন্দার ঝড় উঠল আলোর বেগে। প্রাণ সংশয় দেখা দিল তাঁর। 'শ্বেতাঙ্গ ইহুদি' তিরস্কার শুনতে হল তাঁকে। এমনকি ১৯৩৫ সালের শেষদিকে তাঁর জীবনে নেমে এল বড় সড় এক দুর্যোগ। হত্যার উদ্দেশ্যে গুপ্তচর নিয়োগ করা হল তাঁর পেছনে। চাকুরীর পদোন্নতি আটকে গেল। এমন বিভীষিকাময় সময়ে এগিয়ে এলেন তাঁর মা ওয়েকলেইন। দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতার কারণে হিমলারের মায়ের সঙ্গে দেখা করেন ওয়েকলেইন। দুই মায়ের সাক্ষাতের পর রাগ ঠাণ্ডা হয় সর্বাধিনায়ক হিটলারের। সাময়িক স্বস্তি পেলেন হাইজেনবার্গ।

এমন বিভীষিকাময় সময়ে গানের প্রতি আসক্তি তাঁকে তাঁর ভালোবাসার মানুষের সন্ধান দেয়। ক্লাসিক্যাল মিউজিক ভীষণ পছন্দ হাইজেনবার্গের। নিজে উচ্চ মানের পিয়ানো বাদক। ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি মাসে এলিজাবেথ স্যুখামারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কবিতা-গানের আড্ডায়। পরিচয় থেকে গাঢ় হয় সম্পর্ক। সম্পূর্ণ হল পরিণয়ে। ২৯-শে এপ্রিল সাত পাকে বাঁধা পড়েন তারা। সাত সন্তানের জনক-জননীর সে-বন্ধন আমৃত্যু অটুট ছিল।

(৩)

"প্রিয়তমা এলিজাবেথ,

ভেবে অবাক হচ্ছি, তোমাকে লেখা এই চিঠিখানি আমার প্রথম প্রেমপত্র। আসলে আমার মনে হয় আমরা জন্মজন্মান্তের পরিচিত এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই চির সুন্দর এবং চির অভ্যস্থ অংশীদারি জীবনে এখন একলা থাকা বড় বেদনাদায়ক। আমাকে এত শান্তি আর মানসিক নিরাপত্তা এনে দেওয়ার জন্য তোমার কাছে আমি ঋণী। আমার সকল চেতনা দিয়ে অতীব গুরুতর, কিন্তু সুন্দর সাবলীল প্রাত্যহিক বদলগুলো দুজনে একসঙ্গে উপভোগ করতে পারব ভেবে সময়ের প্রতি আমি ভীষণ উন্মুখ। এত সমস্ত কিছুর জন্য তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ, প্রিয়ে।"

ইতিমধ্যে বন্ধুবর উল্ফগ্যাঙ্গ পাউলি (১৯০০–১৯৫৮) এক উষ্ণ অভিনন্দন পত্র লিখে পাঠিয়েছেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। প্রথম প্রেমে পড়া বন্ধুকে তাঁর পরামর্শ ও শুভেচ্ছা বার্তা সংবলিত চিঠির কথা উল্লেখ করে প্রেমের চিঠিতে হাইজেনবার্গের আরও সংযোজন —
"আজকে সন্ধ্যায় তুমি কী করছ? আমি একঘণ্টা পিয়ানো বাজানো প্র্যাকটিস সারতে চাই এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়ব। বিগত সপ্তাহগুলো ধরে, আমার ধারণা, তুমিও অল্প রাতঘুমের খেসারত দিচ্ছ।"

এদিকে নিজের বাড়িতে একগুচ্ছ গুরুতর সমস্যার মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে এলিজাবেথের। একেবারে নাজেহাল অবস্থা। বিশেষত সব বিষয়ে বাবা হেরম্যান স্যুমাখার-এর অসন্তোষ বড্ড চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বাবা হেরম্যান স্যুমাখার আদপে একজন সেকেলে গোঁড়া প্রকৃতির মানুষ। সব বিষয়ে খুঁত ধরা তাঁর স্বভাব। মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। অতি সম্প্রতি তাঁর ঘেরাটোপ থেকে নিজের কন্যার মুক্ত ভাবনা-চিন্তার বহিঃপ্রকাশে তাঁর বাবা ভীষণ উত্তেজিত। যদিও মেয়ের জন্য নোবেল পুরস্কার জয়ী পাত্র পেয়ে নিশ্চয়ই খুব একটা অসন্তুষ্ট হননি পিতা। তবে তাঁর একখানা শর্ত ছিল। বড় ভাই এরউইনের বিয়ের পরই ওয়ার্নারের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবেন তিনি।

বিয়ের আগে পাঁচ সপ্তাহের মাথায় ওয়ার্নারকে সেকথা চিঠি লিখে জানায় এলিজাবেথ। করুণ সুরে তাঁর স্পষ্ট অভিব্যক্তি— 
'এখানে বাড়িতে তোমার অপরিসীম অন্তর্শক্তি দরকার, যদি তুমি এই দমবন্ধ করা পরিবেশে নিজে থেকে ডুব দিতে চাও।'
বিশ্বাস করে তাঁর প্রিয় ওয়ার্নারকে আরও লিখলেন এলিজাবেথ — 'সেই কোন ছোটবেলা থেকেই একই পুরোনো কাসুন্দি-মার্কা করুণ দুর্দশা দেখে আসছি আমি। বাড়ির লোক বুঝতে চায় না আমার জীবনে কীসে আমি বেশি আনন্দ পাই এবং মানুষকে আমি কতটা ভালোবাসি! একা একা আনন্দ উপভোগ করার বান্দা আমি নই। তোমাকে আমার কাছে পাওয়া যে কত সুখের, তা বলে বোঝানো অসম্ভব। আমার সমস্ত সত্তা দিয়ে তোমাকে সর্বোত্তম বানাব আমি।
শুভ রাত্রি, হে প্রিয়। আমার কাছে তুমি খুবই মহার্ঘ। এবং তুমি বিনা আমি প্রায় অসহায়। পাঁচ দিনের মাথায় আবার আমি তোমার কাছে আসব।

ইতি
তোমার লি'

এ হেন চিঠি লেখার একদিন পরের ঘটনা। নিজের ভালোবাসার মানুষটির অনির্বচনীয় মহিমায় আপ্লুত এলিজাবেথ। তাঁর সে-অভিব্যক্তির স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় ফিরতি চিঠিতে —
"সত্যি কথা বলতে, আমি একেবারে ভুলে গেছিলাম পরস্পরকে লেখা এই চিঠিগুলো আমাদের প্রথম প্রেমের বাস্তব দলিল, অকৃত্রিম স্বাক্ষর; যার জন্য বেশি বেশি পরস্পর একসঙ্গে বাস করছি। কিন্তু আজ, এইক্ষণে পত্র লেখার তুচ্ছতা খানিক অনুভব করছি আমি। কারণ, আমার হৃদয় ভালোবাসার রসে এত পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে আর তার সূচাগ্র পরিমাণ অনুভূতি চিঠিতে তোমার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হচ্ছে! যখন তুমি সবসময় পাশে থাকবে, স্বাধীনভাবে ভালোবাসার আলো উৎসারিত হবে। ঠিক যখন বাস্তবের পর্বত-সমান আমার সকল চেতনা এবং অনুভূতি সমষ্টি সঠিক জায়গায় এসে পড়বে।"
     বাগদান পর্ব সেরে প্রেম-যুগল আরলিন গ্রীনবাম ও ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, ১৯৩৭
    
প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে চিঠি ও পাল্টা চিঠি রচনা করে চলেছেন দুজনে। সেই প্রথম বার হাইজেনবার্গ নিজের গবেষণাগারে একঘেয়ে কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্য উষ্মা প্রকাশ করছেন চিঠিতে। এই প্রথম তাঁর ব্যয়িত সময় এবং চেতনাশক্তি তাঁকে কীভাবে এলিজাবেথের থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, তার বর্ণনা প্রেয়সীকে লেখা চিঠিতে পরিষ্কার উল্লেখ করে তিনি বলছেন —
"এখুনি তুমি এখানে চলে এস। সবকিছু, যা কখনও আমাদের দুজনের নয়, আমি ভুলতে রাজি আছি। আমি বিশ্বাস করি— সকলের মঙ্গল হবে, যদি এই গ্রীষ্মে ফিজিক্স গভীর আঁধারে ডুবে যায়, যা ভবিষ্যতে হয়তো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থের জ্ঞান আহরণের চাইতে তোমার কাছ থেকে এই প্রথমবার আরও বেশি কিছু শেখার আছে আমার।"

ভালোবাসার মানুষটির সত্তার পূর্ণতা বিকাশের পথে শর্তশূন্য সমর্থনের দুটি মূল ভিত্তি ভালোবাসা আর জীবন। এ দুয়ের মধ্যে কোনটি সে বেছে নেবে, কোনটা মূল স্তম্ভ হবে — এলিজাবেথের প্রত্যুত্তর তার পূর্বাভাস দেয়। তাঁর সেই অমোঘ ধারণার প্রতিফলন ঘটে চিঠিতে —
"আগামী গ্রীষ্মে, হে প্রিয়তম, তুমি যদি ফিজিক্স থেকে কিঞ্চিৎ সময় বের করতে পার; সেটা আমার জন্য স্বর্গলোকে কাটানো মুহূর্তগুলোর মতো ক্ষণিকের স্বপ্ন মনে হবে। এবং তুমি এক রকম নিশ্চিত থাকতে পার যে পরে কখনও দুঃখী হব না আমি, যখন তুমি সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে কেবল ফিজিক্সে দীর্ঘ সময় ব্যয় করবে। এটা তোমার প্রয়োজন — আমি জানি। এবং নিজের মতো করে আমি ভালো থাকব, যখন আমি জানব— তুমি আমাকে ভালোবাসো।"

বিয়ের মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। এমন সময় দুজন দুজনকে অনুসন্ধানের আপাত অসম্ভব আশ্চর্যতায় এলিজাবেথের আনন্দ।
"ভালোবাসা! প্রায়শই ভাবতাম কী অদ্ভূত জিনিস এই ভালোবাসা! হঠাৎই সবকিছু ঠিকঠাক চলতে শুরু করে— কেমন যেন বিস্ময় লাগে! অপূর্ণ স্বপ্নগুলো সত্যি হয়। কত মুষ্টিমেয় লোকের ভাগ্য সহায় হয়!"

(৪)

লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গের আকাশ ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। ঘন ঘন লিপজিগ ও মিউনিখ যাতায়াত এবং কারণে-অকারণে সেনাকর্তাদের অহেতুক প্রশ্নবাণে জর্জরিত, বিধ্বস্ত তরুণ পদার্থবিদ। প্রশাসনের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সঙ্গে আপস করে চলার তাঁর অদম্য প্রয়াস অব্যাহত। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের দেশ, নিজের মাটি ছেড়ে না-যাওয়ার দৃঢ় সংকল্পে অটল তিনি। সেকথার প্রতিধ্বনি শুনি এলিজাবেথকে লেখা চিঠিতে —
"আমার ভাবনাগুলো আমাদের ভাবী জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে। এই সব চিন্তা-ভাবনাই আমাদের দুজনের সাধারণ লক্ষ্য। সেজন্য ২৯ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করা বেশ কষ্টের। কেননা, ধ্রুব সত্য কথাটা হল তোমাকে ছাড়া আমি একদম পেরে উঠবো না; যদিও আমি মনে মনে স্মরণ করি যে বিগত বছরগুলোতে আমি সব সামলেছি। তাই প্রথাগত ন্যূনতম জ্ঞান অনুযায়ী, তা হয়তো আজও অসম্ভব নয়। পাহাড় ভ্রমণের আগে আমার বর্তমান মানসিক অবস্থা বিশেষ রাতের কথা স্মরণ করায়, যখন আগত সকালের আনন্দ প্রত্যাশায় তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাও এবং পাছে সবকিছু সুন্দর না যায় তার আতঙ্ক খানিক তাড়া করে বেড়ায়। কুঁড়ে ঘরের সামনে যে-মূহুর্তে তুমি তুষার-কুঠার হাতে তুলে নাও; তুমি নিশ্চিন্তে থাক এবার সবকিছু মসৃণভাবে এগোবে। লেকের ধারে, অন্ধকারে যখন দুজনে একসঙ্গে বসব; সমস্ত কিছু কত রঙিন, কত মধুর প্রতিপন্ন হবে!"

তাঁদের দুজনের বোঝাপড়া কতখানি সুন্দর আর স্বাস্থ্যকর, তার একটা ছোট্ট দৃষ্টান্ত এ প্রসঙ্গে তুলে ধরি। ট্রেন ছুটছে দ্রুত গতিতে। রেলগাড়ির কামরায় পাশাপাশি বসে এলিজাবেথ ও ওয়ার্নার। প্রেমিকার হৃদয়-মনে আনন্দ উপচে পড়ছে। খুশির বহিঃপ্রকাশ ঘটল তাঁর সঙ্গীতে। ট্রেনের জানালায় মাথা রেখে গান গাইতে শুরু করলেন তিনি। এদিকে, ওয়ার্নার গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন। সে-চিন্তার পথে বার বার বাধা হয়ে উঠছে সুর। শেষমেশ প্রেমিকাকে গান থামাতে বলে সে। হতভম্ব এলিজাবেথ (ডাক নাম 'লি') তৎক্ষণাৎ থামিয়ে দেয় গানের কলি। পরের দিনের ঘটনা। প্রেয়সীর হৃদয়ে অনিচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য ওয়ার্নারের মনে সংশয়। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের রূঢ় ব্যবহারে ওয়ার্নার যারপরনাই লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে, যে-জিনিস মানুষকে উদ্দিপিত করে, তার ভয়ে সদা চঞ্চল ও ভীত তাঁর কোমল মন। উল্টোদিকে, অচেতনে এলিজাবেথ একটু বেশি কাব্যিক। সেজন্য নিজের প্রধান দূর্বলতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রেমের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখে এলিজাবেথ—
"হে প্রিয়তম, সর্বক্ষণ একসঙ্গে জুটি বেঁধে থাকার ব্যাপারে আমি প্রশ্নাতীত খুশি। কীভাবে দুজনের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, কীভাবে একই পথে সুন্দর পদক্ষেপে আমরা এগিয়ে চলব; আমি জানি।  কতখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ মিল রেখে, যা একজনের সর্বোচ্চ পাওয়া, আমরা সবকিছু হাসিল করব – সবাই দেখতে পাবে নিশ্চয়ই। যদি তুমি আমার প্রতি ক্ষুন্ন হও, তুমি জানো, এই ভয়ে আমি সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এ সব আমার অলীক কল্পনা! মানুষ প্রায়ই আমার সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু আমি জানি, আমাকে শান্ত রাখার যাবতীয় কৌশল তোমার করায়ত্ত। তোমাকে নিয়ে আমি কখনও বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্থ নই। ঘটনাচক্রে খুব বেশি আত্মসম্মান আমার নেই। যদি তোমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসতে পারি, সেটাও পেয়ে যাব আমি।
আমি ভাবি, হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তুমি শীঘ্রই বিশ্বাস করবে – তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি আমি।"

বিয়ের মাত্র ষোলো দিন আগে এলিজাবেথকে লেখা পত্রের অলিতে গলিতে আঁকা ছিল 'Very late and Very tired' কথাগুলি। আগামী জীবনে পথচলার রূপরেখা এঁকে দেয় এলিজাবেথ — 
"যখন নির্জন স্টেশনে গাড়ির চালককে ছেড়ে একা একা অন্ধকারে বাকশূন্য কাঠের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাবো আমরা, কিংবা পর্বতচূড়ায় দিনান্তের সূর্যাস্ত অবলোকন করব, হে প্রিয়, তখন আমাদের আগে থাকবে পুরোটা জীবন এবং আমি বিশ্বাস করি, সেটা খুব ভালো হবে। সবসময় দুজন দুজনকে নিঃশর্ত সমর্থন করব আমরা।"

ঠিক দুই সপ্তাহ বাকি।  প্রাক-বিবাহ প্রতিশ্রুতির সুন্দর ধরন— যৌথ-জীবনের লক্ষ্য ওয়ার্নার শেয়ার করছেন—
"আর মাত্র চোদ্দো দিন! এই দুসপ্তাহ নিজের মনকে কীভাবে আশ্বস্ত করব যে, এরপর আমরা চিরতরে সঙ্গী হব। আর তা না হলে, জীবনে কখনও কোনো কিছু করতে পারব না। শুরু শুরুতে আমি বেশি চিন্তা করব না এবং শুধু খুশি হব। ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করব যে, তুমি সবসময় আমার পাশে রয়েছ। কিন্তু পরে একসঙ্গে জীবন অতিবাহিত করতে সচেতন হতে চাইব আমরা। সততাই আমাদের মূলধন হবে। ভালোবাসা, মিউজিক অথবা কাজ – সবকিছুর উর্দ্ধে জীবনের প্রয়োজনীয়তা সর্বদা লক্ষণীয় হবে।

বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। কনের বাড়ি থেকে বিশেষ উপহার পায় এলিজাবেথ ও হাইজেনবার্গ। কনের দাদু বিঠোভেনের পিয়ানো মিউজিকের আটখানা খণ্ড উপহার দেয় হবু বর-বধুকে। এলিজাবেথ সুন্দরভাবে ওয়ার্নারকে জানায় 'আমি ভাবছি– তোমার সঙ্গে সেগুলো বাজানোর দুঃসাহস আমার কখনও হবে না।'
নতুন জীবনে প্রবেশের তিন দিন আগে ওয়ার্নার একখানা অনুভূতি প্রকাশ করে। বাহ্যিক রূপে অনুভূতিটা শুকনো মনে হবে, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে মিলনের গূঢ় ভাবার্থ প্রকাশিত হয় —
"আমার দৃঢ় বিশ্বাস – আমরা দুজন দুজনের ক্ষেত্রে পারফেক্ট মানানসই এবং মিলনের মাধ্যমে পৃথিবীতে আমাদের জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখব না।"
        
বর-কনে বেশে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও আরলিন গ্রীনবাম, ২৯ এপ্রিল ১৯৩৭, বার্লিন

শেষমেশ তাঁদের অপ্রতিরোধ্য প্রেম পূর্ণতা পায় ২৯শে এপ্রিল ১৯৩৭। ওইদিন সাত পাকে বাঁধা পড়লেন তাঁরা। বিবাহের অব্যবহিত পরে প্রথম দুবছরে তাঁদের পত্র লেখায় ন্যূনতম ছেদ পড়েনি। ১৯৩৭-এ এলিজাবেথ প্রেগন্যান্ট হলেন। সেবছরের শেষদিকে যমজ সন্তান– উল্ফগ্যাঙ্গ ও মারিয়া'র জন্ম দিলেন তিনি। পরের বছর পয়লা জানুয়ারির প্রাক্কালে পাহাড় থেকে হাইজেনবার্গ চিঠি লিখলেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে —

"হে প্রিয়তমা অর্ধনারীশ্বর লি, গতবছর কত সুন্দর অভিজ্ঞতা আমাকে দিয়েছ তুমি। তবু এখনও অব্দি পাওয়া সমস্ত জিনিস আমার কেমন নতুন প্রতিপন্ন হচ্ছে! সবকিছু যেন নতুনভাবে সুন্দররূপে একসঙ্গে পরস্পর অনুসরণ করছে। একসঙ্গে জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির সঠিকভাবে চালিত করতে আমরা এখন সমর্থ। আগামী দিনগুলোতে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানবিকতার অনিবার্য পতনে ব্যথিত এলিজাবেথ। ব্যথাতুর চিত্তে তাঁর তিক্ত-মধুর খেদ—
"আমার ভালোবাসা,
তোমার মর্মভেদী প্রেমময় চিঠির জন্য লক্ষ নিযুত কোটি ধন্যবাদ তোমাকে। আমার ক্ষেত্রেও বটে; এখনও অব্দি সবকিছু যেন নতুনের মতো ঠেকছে এবং শেষ বছরের চেয়ে আরও বেশি কিছু, আরও বেশি সুন্দর সময় অবশ্যই আসবে। আমি যখন সেই স্বপ্ন দেখি, আমি প্রায়ই চমকে উঠি আর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভবিতব্যের দিকে তাকাতে কিন্তু কিন্তু বোধ করি। উফ! ভবিষ্যতের কী ভয়ঙ্কর চেহারা! আমি ভাবতে পারি না – মানুষ এখন যেভাবে বেঁচে রয়েছে — অহংকারী-বিচ্ছিন্ন-উন্মাদ-নেশাগ্রস্থ-ভগবানে উপহাস; তার জন্য একদিন উচ্চ মূল্য দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তখন আমরা সবাই অসহায়ের মতো মুখোমুখি হব। সেজন্য, আমি বর্তমান সময়কে যতটা বেশি সম্ভব আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। বর্তমান সম্পদগুচ্ছ নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের হৃদয়ের গহীন থেকে ভালো থাকার জন্য এগুলোই যথেষ্ট, তাই না!"

এভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়া, অকৃপণ সহযোগিতা এবং অকৃত্রিম ভালোবাসার দুর্লভ রসায়নে ভর করে চল্লিশ বছর ধরে তাঁরা সুখী দাম্পত্যের অনন্য নজির সৃষ্টি করে গেছেন। প্রেম দিবসের কুচকাওয়াজে তাঁদের অমর প্রেম-কথায় অনুপ্রাণিত হোক শত কোটি প্রেম-যুগল।

তথ্যসূত্র :
* The marginalian online site 
* Biography of Werner Heisenberg — David Cassidy
* হাইজেনবার্গের আকাশ — অমিতাভ চক্রবর্তী 
* Physics Today 

সংগ্রহ করতে পারেন 👇


Post a Comment

0 Comments