জ্বলদর্চি

বিসর্জন সেরে বাড়ি ফিরে আসে একলা মানুষ /প্রদীপ্ত খাটুয়া

বিসর্জন সেরে বাড়ি ফিরে আসে একলা মানুষ

প্রদীপ্ত খাটুয়া 


"কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা" কাব্যগ্রন্থটি সদ্য প্রকাশিত হয়েছে সিগনেট প্রেস থেকে। কবি ঋত্বিক ত্রিপাঠী। দীর্ঘদিন অক্ষর সাধনা করছেন। সম্পাদনাও করছেন দীর্ঘদিন। বাংলা  অক্ষরের জগতে বেশ উচ্চারিত এক নাম। মানুষের কথা ও মানুষের জীবন উদযাপন করে চলেছেন বামপন্থা ও আন্দোলনে বিশ্বাসী এই কবি, প্রতিনিয়ত। কবিতায় নিজস্ব ভাষা তৈরী করতে পেরেছেন, যা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং বলিষ্ট। সরাসরি বলতে পছন্দ করেন না। গভীর আত্মদর্শনবোধকে জুড়ে দেন উচ্চারণের সাথে। যেমন 'সংজ্ঞার বিপরীতে' কবিতায় কবি বললেন- 'চেয়েছি বলেই দেশ নইলে একটাই পৃথিবী হয়'। বেশ স্পষ্ট ও ক্ষুরধার এই পঙক্তি। অমোঘ বাণীর মতো। নিত্যযাপনকে অনুধাবন করতে থাকেন সুচারু বিশ্লেষকের মতো। এবং খুব সহজে বলতে পারেন- 'আমরা শিখে গেছি আজ দেখেও না দেখার ভান'।  
        সবই পরিচিত কিন্তু চিরদুর্বোধ্য দৃশ্যকাব্যের অন্তর্গত ব্যঞ্জনা ছত্রে ছত্রে তুলে ধরেছেন ঋত্বিক। যা ছয়ের দশকে প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, মনীন্দ্র গুপ্ত, বীতশোক ভট্টাচার্য'রা বাংলা কবিতার জগতে অনুচ্চকন্ঠ ও মেধাসিক্ত কবিতা রচনার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রেখে গেছেন। এই কবির কবিতায় বারবার উঠে এসেছে যে শব্দগুলো, সেগুলি হল- 'ত্রিভুজ', 'ত্রিকোণ পিরামিড', 'ত্রিভুজের মধ্যে বৃত্ত', 'ত্রিভুজের কেন্দ্র', 'বৃত্তের পরিধি', 'ত্রিভুজের সূচিমুখ' ইত্যাদি । 

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
        'রজ্জুতে সর্পভ্রম' শব্দটি বারংবার উচ্চারিত হয়েছে দুটি কবিতায়। কিন্তু মগ্ন চৈতন্য বা পরাবাস্তবতা কবিতাগুলোয় নতুন এক পাঠসঞ্চলন ঘটিয়েছে। কিন্তু কিছু পরে সেই সঞ্চলন আর থাকছে না। ক্ষণিকের অনুভব যেন কবিতাগুলোর আয়ু! অনন্তের দিকে উড়ান কোথায়? দুঃখবোধে আহত বা শ্রান্ত হওয়ার অবকাশ কোথায়? আধুনিক বেশ কিছু শব্দবন্ধ তৈরি করেছেন তিনি। ভালো। কিন্তু কবিতায় কাব্যধর্মিতা কিছুটা হলেও আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে শব্দের জাগলারির আধিক্যে। এক্ষেত্রে কবিতার পুরো একটি পঙক্তি উদ্ধৃত করলাম পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য-
        "মাথা তোলে ত্রিভুজ, অতঃপর স্নায়ু, সাক্ষী পিরামিড  
          একান্ত বংশীনাদেও সমীচীন নয় প্রতিক্রিয়া, যেহেতু 
          অক্ষদণ্ডের বামে ও ডানে প্রতিপাদ্য ক্রীড়া সন্তর্পণে.." এরকম বেশ কিছু পঙক্তি পাওয়া যাবে কাব্যগ্রন্থের অন্য কবিতায়।
      তারপরেও বৃত্তের পরিধির কাছে চলে যেতে পারা দিকদর্শী এই কবির কিছু পঙক্তির দর্শন পাঠকের মনে থেকে যাবে বহুকাল। 
   'আসলে ঘুঘু ও গৃহস্থ বাঘ একসাথে মশারি টাঙায়..' 
   'অভিমান কবে আর একমুখী ছিল..'
   'মানুষের কথা ততটাই যতটা বৃত্তের পরিধি..'
   'শোক আর শ্লোক এড়িয়ে কবে আর সামাজিক ছিল মানুষ'
   'স্বনামধন্য সংসারেই থাকে নশ্বরতার প্রখর রোদ।'
      সবশেষে, হৃদয় উচ্চারিত ও বিনত আত্মস্বীকার পাঠককে চিনিয়ে দেয় প্রকৃত কবির জাত। প্রাণের আরামের মতো শীতল বাতাস বয়ে যায় কবিতার পরতে পরতে-
        "উৎসর্গের পরেও স্বীকার করি ঋণ, অমোঘ/ বাম গালে তিল, সেখানে সন্ধে লেগে আছে.../ সন্ধের সন্ধি। খড়ের ওপর কোমল মাটির প্রলেপ/ আমাদের সব ভালোবাসা দু'হাত পেতে চেয়ে নেওয়া।"

🌀কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা । ঋত্বিক ত্রিপাঠী । 
     সিগনেট প্রেস ।  ডিসেম্বর ২০২৩

🍂

Post a Comment

0 Comments