সুমিত্রা ঘোষ
কালের নিয়মে সবাইকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। রানিরও দিন শেষ হয়ে আসছিল। মা ভবতারিণী দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব ইতিহাস সৃষ্টি করলেন রানি রাসমণি। বাংলার ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল। আপামর ভক্তমণ্ডলী জানবে জানবাজারের রানি দক্ষিণেশ্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করেছেন। পাঠকদের আর একবার স্মরণ করিয়ে পূর্ব প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে, বাংলার ১২১৯, ৮ বৈশাখ রাসমণি জানবাজারের জমিদার গৃহে বধূ হিসেবে প্রবেশ করলেন। এরপর দীর্ঘ কয়েক বছর পর রানির জীবনে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটল। ১২৫৪ বঙ্গাব্দ রানির বাসনা হল, কাশীতে গিয়ে বিশ্বেশ্বর দর্শন করবেন। কলকাতা থেকে কাশী যেতে গেলে জলপথে যেতে হত কারণ ঐ লাইনে তখন রেলপথ হয়নি। কলকাতা বিখ্যাত ধনী রানি রাসমনির কাশী যাওয়ার জন্য পঁচিশখানি বজরা তৈরি করা হল। সঙ্গে থাকেন দাস-দাসী - আত্মীয়স্বজন- লোক লস্কর খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদি সে এক এলাহি আয়োজন, নিজের ঘনিষ্ঠ জনের মধ্যে ছোট মেয়ে জগদম্বা এবং মেজো জামাই মথুরাবাবু যাবেন বলে ঠিক করা হল। দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত গিয়ে বজরায় রাত্রিবাস করার সময় স্বপ্ন পেলেন, মা এসে বললেন, তোর কাশী যাওয়ার দরকার নেই। গঙ্গার তীরে মনোরম একটি জায়গায় আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো ও ভোগের ব্যবস্থা কর। মা যে মূর্তিতে রাত্রিতে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে রানির নিত্য পূজা গ্রহণ করবেন বললেন। রানি স্বপ্ন পাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত আছে। কেউ কেউ বলেন কাশী যাওয়ার আগের আগের দিন রাত্রে রানি স্বপ্নে মাকে দর্শন করেন। অন্যমতে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত গিয়ে রানি, মাকে স্বপ্নে দর্শন করেন এবং মায়ের আজ্ঞা পান গঙ্গার তীরে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য।
🍂
তখনকার দিনের বিখ্যাত দেবীমূর্তি নির্মাণকারী নবীন ভাস্কর মা ভবতারিনীর মূর্তি নির্মাণ করলেন। ১৮৫৫ সালে ৩১ মে বৃহস্পতিবার স্নানযাত্রার দিন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হল । বাংলা ১২৬২বঙ্গাব্দে। ১৮৪৭ সালে জমি কেনা হয় ১৮৫৫ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে রানি রাসমনি যখন সপার্ষদ কাশীযাত্রা করেছিলেন (যদিও যাওয়া হয়নি) তখন দক্ষিণেশ্বরে গঙ্গার ঘাটের কাছে তিনি রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠে শ্যামাসঙ্গীত শুনে বিশেষভাবে আপ্লুত হয়ে যান এবং বজরা থেকে এসে পরিচয় জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন তিনি রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, বাড়ি কামারপুকুরে, বর্তমানে তিনি কলকাতা ঝামাপুকুরে ভাড়াবাড়িতে থেকে টোল পরিচালনা করেন। ছাত্রদের শিক্ষাদান করাই তাঁর উদ্দেশ্য। এরপর ১৮৫৫ স্নানযাত্রার দিন যখন ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হল তখন রামকুমার -ই দেবী মন্দিরের পূজারির পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। রামকুমারের পরামর্শে রানি তাঁর গুরুকে দেবালয় অর্পণ করলেন। রানি এই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ব্রাহ্মণাদি উচ্চবর্ণ দেবী মন্দিরে অন্নভোগ গ্রহণ করতে রাজী হতেন না। ঝামাপুকুরের চতুষ্পাঠীর অধ্যাপক এবং শ্রীরামকৃষ্ণের অগ্রজ এই বিধান দান করেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব মন্দির প্রতিষ্ঠার সেই অনুষ্ঠান কোনদিন ভুলতে পারেননি।
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments