নবীন প্রবীণের একগুচ্ছ কবিতা
বিমান কুমার মৈত্র গৌতম বাড়ই মলয় সরকার বাসুদেব গুপ্ত মলয় জানা রাখহরি পাল পার্থ সারথি চক্রবর্তী চিত্রা ভট্টাচার্য্য সুব্রত দাস অমর সাহা আবীর ভট্টাচার্য্য চক্রবর্তী বিনোদ মন্ডল স্বপন কুমার দে সোমদত্তা মৌমিতা চ্যাটার্জী
বিমান কুমার মৈত্র
কখনও পাখির
চেয়ে পালকের রেনু ভারী হয় চোখ পাকায়
এক্ষুনির মতো, চিরুনির স্থিরবিদ্যুতের কাঁটা
তোলা পশম - তাবুর ফাঁক দিয়ে গুনে নেয়
প্রস্থচ্ছেদের বৃত্ত সংখ্যাগুলো।
যে
ঘোড়া নাতর সওয়ার হয়ে ছুট দেয়
খাদের সীমানা ঘেঁষে পাড়ের কার্নিশে
দুপুরের নাকছাবির বেহাগ আড়ালে
তার স্খলনের ভূমিতে ঘোড়া ঘাস খায়।
গৌতম বাড়ই
ম্যাজিসিয়ান
তার দু'হাজার তেইশতম এই খেলা আজকে
একটি মানুষ খন্ডিত হচ্ছে সেই যাদুহাতে-
খন্ডিত হচ্ছে প্রতিটি সত্তা এবং সবশেষে,
যে জোড়া মানুষটি বেরিয়ে এলো সে ভারতবর্ষ।
লেনদেন
মুঠো ভরিয়ে দুইহাতে তিনি অনেক দেন
যখন দিচ্ছেন আকাশ পেড়ে সোনালী চিল
তারপর একে একে নেবেন তিনি সবকিছু
এমনকি মুঠোখুলে শ্বাসপ্রশ্বাস পরমায়ু!
মলয় সরকার
নির্বোধ
আমায় তুমি বলেছিলে-
আকাশ ছিঁড়ে আনবে রোদ।
ভেবে ছিলাম সত্যি কথা,
ছিলাম আমি কি নির্বোধ!
ঘোষেদের কুকুরে
ঘোষেদের কুকুরে
ঝাঁপ দেয় পুকুরে,
সাঁতরিয়ে বল আনে -
ঠিক বেলা দুপুরে।
বাসুদেব গুপ্ত
আশা
একচল্লিশ প্রাণ একচল্লিশ বাজী
খেলছে খেলুক জুয়াড়ী তার পাশা
আমরা জেনেছি অন্ধকারের টানেলে
মানুষই থাকবে মানুষের শেষ আশা।
যুদ্ধবিরতি
চারদিন শুধু। গান গাও। দেখো শেষ হাসি বাচ্চার
যুদ্ধবিরতি আর কটা দিন, শুরু হবে কাল ছারখার।
এসো নাচঘরে জ্বলছে আগুন ঝাড়লন্ঠন হাসপাতাল
যুদ্ধবিরতি। বুদ্ধ হাসেন বোমারু বিমানে মহাকাল।
মলয় জানা
কথা রাখতে হয়
১.
কেউ হাঁটল হাজার বছর,
কেউ বাঁধল ষাঁড়ের চোখে ঢুলি
আমি বড্ড ভীতু প্রেমিক,
তোমায় ভেবেই ভুলি।।
২.
বরুনা কিংবা নাদের আলী,
কত্তদিনের কথা!!
কবিতা পড়েও শেখনি প্রিয়ে,
কথা রাখতে হয়!
রাখহরি পাল
আদিম বিষাদ
গোপনে শুকায় জল নিরীহ আঙুল
একটু বাড়ালে হাত স্পর্শ পেত কিনা?
জানা নেই।অন্ধকারে একাকী জারুল
মরুতৃষ্ণা ছড়িয়েছে সম্পর্কহীনা।
চৈত্র -দুপুর
অজুহাত খুঁজে নেয় চন্দনের গন্ধ আহ্বান
চৈত্র-দুপুর।পুকুরের ঘাট থেকে সপ্ সপে গায়
জলপরী। আঁচলের বাঁধ দিয়ে নদির উজান
সাধ্য কী,-তারার আকাশ ঢাকে আঁধার বন্যায়।
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
অশ্রু
দু'কুল ভেসে গেলে-
ধরে রেখো, খড়কুটোর মত।
তাও যদি ভেসে যাই
দু'ফোঁটা অশ্রু দিও, সাধ্যমত।
বট
বটগাছের পাতায় পাতায় প্রাণ!
ডালে ডালে বিশ্বাস!
ঝুরি থেকে নেমে আসে আশা!
বিটপগুলো ভরসা। স্তম্ভমূলে সাহস!
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
আবির্ভাব
প্রাণের অংকুর উদ্গম হয় বসুন্ধরার বিকাশ তীর্থে।
জন্মলগ্নের ক্রন্দন বাজে,দিগন্তের পালা বদলে।
প্রতিধ্বনিত হয় সৃষ্টির বেদনার মর্ম যন্ত্রনা
বিশ্বজুড়ে চলে রক্তখয়ী অস্তিত্বের সংগ্রাম।
শেষের যাত্রায়
অস্তগামীর বিষণ্ণ সাঁঝে,আলোর ধ্বজা উড়িয়ে
তুমি পাড়ি দিয়েছো আকাশ পাড়ে শুকতারা টি হয়ে।
শুভ্র শীতল বেদনা বিধুর নীরব রাজপুরিতে।
হাসি টুকু রইলো শুধুই বিদায় কালে ভুবন ডাঙ্গার ঘাটে।
সুব্রত দাস
'ঘুম'
রাত্রি আমি তোমায় খুঁজি
একটু ঘুমের তরে,
সারারাত যাক স্বপ্ন ঘুমে
জাগিও কিন্তু ভোরে।
'স্বপ্ন'
একগোছা রজনীগন্ধা
সঙ্গে তুমি নিও,
ঘুমের মধ্যে গন্ধেভরা স্বপ্ন
আমায় দিও।
অমর সাহা
একা
আমরা কেউই একা নই -
রয়েছে আমাদের সঙ্গী
নবারুণ সূর্যের কিরণ; দুর্বা ঘাস ও ফড়িং
পাখি ফুল লতা পাতা জড়ানো ভূমি।
মধুকর
অঘ্রাণে ধানের গন্ধ ভরপুর
একদল পায়রা পোকা খায় মাঠে
শীতের মরশুমি ফুল ফোটে
মধুকরেরা গুনগুন করে ঘুরে ঘুরে।
🍂
আবীর ভট্টাচার্য্য চক্রবর্তী
বাগেশ্বরী
মিডডে মিলের অন্নে নিত্য ক্ষুধা তার নিবারণ
অঙ্গময় মালিন্য বিভূতি,জ্বলে ওঠে লোক উপহাসে
তবু বই যত্নে ধরে বুকে, ইস্কুলে সে আসে
এ যুগের বাগীশ্বরী হাসে, মেধাশ্রমে ঈপ্সিত অর্জন।
সম্পর্ক
বাঁধিনি কখনও তাকে লৌকিকতা ডোরে
তবু তার হাস্যমুখে সূর্যালোক ঝরে
সেই তেজ ছড়িয়ে ভূমায়, ভরে ক্ষেত হেমন্তসুধায়
আলোকে পুলকে সৃষ্টি মাতৃত্ব মায়ায়..
বিনোদ মন্ডল
লাফ
তিড়িং লাফিয়ো না
পালতোলা নৌকো জানে
রমণী তার ঘুলঘুলি নিয়ে
অ্যাডভোকেসি কখনো করেনা।
ডাক
ফেরারি পাখির ঠোঁটে মিঠে রোদ উঁকি
গোধূলির ওম মাখা সিরোসিস সুখে
সবতো জানিস তুই হাটখোলা বুকে
কেন তবু ডেকে যাস প্রমত্ত ডাহুকি !!
স্বপন কুমার দে
লেখা হয়নি
কবিতায় তোমার জন্য একটি লাইন, "ভালো থেকো"।
কবিতার শেষ লাইনটি,-" ভালোই ছিলাম"।
মাঝখানের লাইনগুলি একেবারেই নতুন নয়।
বহু ব্যবহৃত, বহু চর্চিত—তাই উপেক্ষিত।
অন্বেষণ
একটা আকাশ খুঁজি, বুক খোলা আকাশ,
যেখানে রক্ত জমাট অন্ধকারে তারাদের ছুঁতে পারি।
এক আঁচল মানুষ চাই, শুধুই মানুষ,
যাতে পায়ের তলার মরুটাও নদী হয়ে যায়।
সোমদত্তা
মায়া
আমার রাত জাগা চোখ ,
তোমার আলোর সকাল শুরু হোক ।
আমার অন্ধকারের ছায়া ,
তুমি যে শুধু ই মায়া।
পড়ন্ত আলোয়
বেপরোয়া এলোমেলো চুল,
দুর্বিনীত অবাধ্য এক বিকেলের আলো,
বৃষ্টি শেষের হাওয়ায় ভাসে।
প্রতিদিনই তাই তার মুখে উজ্জ্বল সাদা কালো ,
এই বিষন্ন শীতেও তাই বসন্ত আসে।
মৌমিতা চ্যাটার্জী
মাদার্স ডে
মায়ের জন্য কিসের আচার, কিসের অনুষ্ঠান?
চাকচিক্যের মাতৃদিবস, নকল পূজার নাম।
যে 'মা' দিল রক্তে, দুগ্ধে অমূল্য তোর প্রাণ,
সংশয়ে তাঁর জীবনধারা, ফুটপাথ তীর্থধাম।
বাধা
তুমি আমি সীমান্তে দাঁড়িয়ে আজও মুখোমুখি,
কত ব্যাথার শতক হল পার।
ছুঁতে চেয়েও অধরা আঙুল ভেজে নোনা জলে,
চাবুকের মত বুকে বিঁধেযায় বেরঙিন, বিষাদ কাঁটাতার।
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments