দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আত্মসংবৃতি ও আত্মলীনতা (যা অটিজম নামেও পরিচিত) বলতে, একটি মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ততাকে বোঝায়, যা তিন বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রকাশ পায়। আত্মসংবৃত্ত(ইংরেজি পরিভাষায় যাদের অটিস্টিক বলা হয়) শিশুরা সামাজিক আচরণে দুর্বল হয় এবং পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়।
প্রকৃতপক্ষে অটিজম নামে এই ব্যাধিটি শারীরিক,সামাজিক এবং ভাষার দক্ষতাকে প্রভাবিত করে। তিন বছরে বয়স হওয়ার আগেই এই ব্যাধির লক্ষণ দেখা যায়।
'অটিজম' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'অটোস' থেকে নেওয়া, যার অর্থ 'স্ব'। ১৯১১ সালের সুইস সাইকিয়াটিস্ট দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল ইউজেন ব্লিউলার, তিনি এটি ব্যবহার করেছিলেন নিজের আভ্যন্তরীণ জগতের প্রত্যাহার বর্ণনা করতে।তিনি এর মাধ্যমে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। অটিজম শব্দের ব্যবহার করা হয়েছিল ঐ বিশেষ মানুষদের ঐ বিশেষ অবস্থাকে বর্ণনা করার জন্য যেমনটি আজ জানা যায়।এটি ১৯৪৩ সালে উদ্ভুত হয়েছিল। অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট লিও ক্যানার এই ব্যাধিটিকে(অটিজমকে) সিজোফ্রেনিয়া থেকে আলাদা করেছেন।
আজ ২রা এপ্রিল 'বিশ্ব অটিজম দিবস'। এটি একটি মস্তিষ্ক জনিত রোগ। সারা পৃথিবীতেই এই রোগ উত্তোরত্তর বেড়েই চলেছে, কিন্তু এই অটিজম স্পেকটাম ডিসঅর্ডার (এ.এস. ডি) নিয়ে জনমানসে সেভাবে কোন জ্ঞান নেই, ফলে সচেতনতাও নেই। এই রোগ একেবারেই বিরল নয়। এদেশে ৫৮জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজম নিয়ে জন্মায়। মেয়েদের থেকে চার গুণ বেশি ছেলেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়।এই রোগ যে অবহেলিত আজ বিশ্ব অটিজম দিবসের প্রাক্কালে চিকিৎসকেরা তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
অটিজম একটি স্নায়বিক রোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সামাজিক এবং মানসিক আচরণ যেভাবে পরিণত হয় এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের আচরণ সেভাবে পরিণত হয় না, এটি একটি মস্তিষ্ক জনিত স্নায়ুবিক রোগ।
🍂
যারা অটিজমে আক্রান্ত তারাও কিন্তু সমাজের একটি অংশ এটা আমাদের মতো সাধারণ, সুস্থ মানুষদের বুঝতে হবে এবং তাদের সুস্থভাবে বাঁচার ও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাদের সমাজ থেকে আলাদা ভাবলে চলবে না।
অটিজম সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই আর এই কারণে মা-বাবারা তাদের শিশু অটিজমে আক্রান্ত হয়েছে শুনলে মনের দুঃখে ভেঙে পড়েন। এটি একটি নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। এই রোগ শুরুতে ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা করালে অনেক সময় নিরাময় হয়ে যায় এবং শিশু সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারে। শুধু তাই নয়, বরং দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে এদের বুদ্ধি অনেক বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি এদের মধ্যে বিশেষ কিছু দক্ষতাও থাকে।
ছোটবেলায় আমরা একটা প্রোগ্রাম দেখতাম এলিশ ইন দা ওয়ান্ডারল্যান্ড খ্যাত লুই ক্যারল চার্লস ডারউইন, শিশু সাহিত্যিক হ্যান্স আন্ডারসন আলবার্ট আইনস্টাইন, মাইকেল আঞ্জোলো এমনকি বিল গেটস ও স্টিভ জোক সহ অনেক সফল মানুষই অর্টিজম স্পেকটাম ডিসঅর্ডার নিয়েই সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। আমাদের আশেপাশে এমন অনেকে মানুষ আছেন যাঁরা এই ডিসঅডার নিয়েও দিব্যি সুস্থভাবে বেঁচে আছেন, কিন্তু সচেতনতার অভাবে এই নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার টিকে অভিভাবকেরাই চিনতে পারেন না। তায় এই রোগ সম্পর্কে আরো বেশি করে প্রচার দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভীষণভাবে প্রয়োজন এই রোগকে ছোটবেলাতেই চিহ্নিত করা।
আজ ২রা এপ্রিল world autism awareness day. এই দিনটি অটিজম সম্পর্কে সকলকে সচেতন হওয়ার ডাক দেয়। আমরা যারা living with autism তারা একটু হলেও এই রোগ সম্পর্কে জানি এবং সচেতন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেশিরভাগ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের এই রোগ সম্পর্কে জানানো ও সচেতন করার জন্য বিশ্বে ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালিত হয়।
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments