জ্বলদর্চি

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনি। পর্ব ২। রহস্য সন্ধান/বাসুদেব গুপ্ত

এআই থেকে রেহাই - কল্পকাহিনি। 
পর্ব ২। রহস্য সন্ধান
বাসুদেব গুপ্ত



“এই লিঙ্কটা দেখো। কে এই গড। সেটা বার করতে হবে। ডে জিরোটা কি? বার করো। দু মাস সময়। 
https://tempalink/2546hder”
তারিখ ৭ই অগাস্ট ২০৩৫।

যাকে বলে ক্রিপ্টিক মেসেজ। সংক্ষিপ্ত। টু দি পয়েন্ট। কার মেসেজ, কোথা থেকে মেসেজ কিছু লেখা নেই। অনির্বাণ নতুন এই কাজে ঢুকেছে। তিন মাস হল। তবু সে জানে কার মেসেজ। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। ওর কাজ খুব বিপদের, কিন্তু বিপদেই ওর উৎসাহ বলেই এই কাজটি ও পেয়েছে। হয়ত কেউ কেউ নিজেকে ধ্বংস করার উপায় খুঁজতে থাকে। হয়ত অনির্বাণেরও আছে সুপ্ত আত্মহননের ইচ্ছা। কে জানে। ঝপ করে একটা নিঃশ্বাস পড়ে ওর। লিঙ্ক কপি করে রাখতে সময় লাগে ৪৫ সেকেন্ড। ১৫-১৪…০। মেসেজ অদৃশ্য হয়ে যায়। সিকিউরিটির বাড়াবাড়ি। একটু হাসি পায়। সিনেমার মত কায়দাটা এখনো ছাড়তে পারে নি সিকিউরিটি এজেন্সীগুলো। 

লিঙ্কটা ক্লিক করলেই পাওয়া গেল এক মাস আগে ঘটে যাওয়া সব রহস্যময় সব বিপর্যয়ের বর্ণনা, ছবি, ম্যাপ, ও উইকিপিডিয়ার লিংক প্রতিটি লোকেশানের। গড কে বার করতে হবে? এর থেকে উদ্ভট কাজের দায়িত্ব আর দিতে পারল না বস? বস কে তাই অবশ্য জানা নেই। সবটাই রহস্যের আড়ালে। 

অনির্বাণ গুপ্ত। কভার জব দি গ্লোবাল টাইমসের পলিটিকাল রিপোর্টার। আসলে সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স, ভারতভূমি সরকার। ৩০ বছরের যুবক। ছিপছিপে চেহারা, উজ্জ্বল স্বাস্থ্যবান উপস্থিতি। এখন সবাই স্বাস্থ্যের নিয়ম মানতে আইনত বাধ্য, এটা কোন বিশেষ ব্যাপার নয় । সাইকোডেলিকসের অভ্যেস নেই। তার ওপর মাথায় BeemV51 ব্রেন এনহ্যান্সার চিপ লাগানোর সূত্রে কমবো আইকিঊ ১৫০র কাছাকাছি। Be হল Bezos আর em হলো এলন মাস্ক। নিউরালিঙ্ক আর আলেক্সা এই দুটি বিখ্যাত যন্ত্র এক করে তৈরি এই চিপ। অত্যন্ত দামী। কিন্তু দি গ্লোবাল টাইমস পৃথিবীর এক নম্বর সংবাদ প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে এটা কিছু না। অনির্বাণের এটা প্রথম এসাইনমেন্ট। ওর পূর্ব সঙ্গিনী ভেরা স্পেস স্টেশন টুতে চলে গেছে, সে অরবিটেই থাকে। অগত্যা বিচ্ছেদ। তবু সে খবর নেয় মাঝে মাঝে। ভালোবাসা কাকে বলে এখনো অনির্বাণ ঠিক বোঝে না, তবে মায়া বোঝে। আগে এসব মায়া টান ইত্যাদি নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হত। জিপিটির আবির্ভাব হতে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। নেহাত লিখতে হলে জিপিটি লেখে, কিন্তু তেমন আর দরকার পড়ে না। সকলেরই এখন অনেক কাজ, এসব ভাবার সময় কম। এই নতুন কাজটার কথা অনির্বাণ তাকেও বলে নি। সিকিউরিটি বড় বালাই। 

সিকিউরিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর পঞ্চাশ শতাংশ জিডিপি খরচ হয় সিকিউরিটি ঠিক রাখতে। যদিও এ আইএর উদ্ভবের জন্য এবং মধপ্রাচ্যে তেল প্রায় ফুরিয়ে গিয়ে সব মরুভূমিতে এ আই এর বিরাট বিরাট সেন্টার বসানোর পর থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ প্রায় থেমে গেছে। পৃথিবী চারটে টেরিটরি। ভারতভূমি, জুমেরিকা, মঙ্গোলেশিয়া আর FU বা  ফ্যাক্টরি ইউনাইটেড যা আগে ছিল  মধ্যপ্রাচ্য, শেখদের তেলের সাম্রাজ্য।  এখন বিশ্বের অর্থনীতি, সংস্কৃতি নীতি, সব চালায় এক্স। এক্স ইন্টারনেটের মত বিশ্বব্যাপী চালু সুপার এ আই। ২০৩২ সালের এক চুক্তির পরে সবকটি টেরিটরি এর যুগ্ম মালিক । কিন্তু ভিতরে ভিতরে সব টেরিটরিই এখনো এক্সের মালিক হবার চেষ্টা চালিয়ে যায়, তাই মাঝে মাঝেই এখানে ওখানে ড্রোনযুদ্ধ হয়। মানুষ মরা কমে এসেছে, অনেকটা সিনেমার যুদ্ধের মত। সেটা  টুগ্লটিউব দেখায়। 

এক্স এখন প্রায় ঈশ্বরের স্থান দখল করে নিয়েছে। তার প্রথম কাজ এ আইএর বিরুদ্ধে যেন কোন জনমত তৈরী না হয়, বর্তমান পৃথিবীর যে সামাজিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাতে যেন কোন আঘাত না আসে। অনির্বাণ যা করছে সবই এক্সের নখদর্পণে, ওর বস এক্সের সম্মতি না পেলে এই দায়িত্ব সে পেত না। মনে মনে এক্সকে প্রণাম জানিয়ে বসকে জানিয়ে দেয়, সে কাজ শুরু করছে। 


অনির্বাণ অফিসের ক্যান্টিন বয়কে একটা লার্জ কফির অর্ডার দিয়ে তার কিউবিকলে এসে আরাম করে বসে। কিউবিকলের জানলাটা জানলা নয়, স্বচ্ছ একটি পর্দা। ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে সামনের বিস্তৃত ভারচুয়াল ধানক্ষেত। ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন এখানে ওখানে কুয়াশার ছোট ছোট ঝাঁক তূলোয় মোড়া বকের মত উড়ে উড়ে এসে বসেছে। যেন প্রাচীন কোন আর্টিস্টের আঁকা ল্যান্ডস্কেপ। এখন অবশ্য আর কেউ ছবি আঁকে না। ফটো তোলে, কিন্তু সব ছবি পিকাসোর আঁকা। যখন মানুষ নিজে নিজে রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকতো, পিকাসো নামে সত্যি একজন শিল্পী ছিল। এখন নতুন পৃথিবীতে পিকাসো হল ছবির এআই অ্যাপ। একচেটিয়া। ঠিক যেমন টুগল সমস্ত ইনফর্মেশানের মালিক। এককালের টেসলা আর গুগল মিলে তৈরী এই মহাকর্পোরেট। আর পৃথিবীর সব ছবির মালিক সুপার কর্পোরেট পিকাসো কর্প। জানলার ছবির জন্য কম্পানি মাসে মাসে ভাড়া নেয়। তারাই এলগরিদম চালিয়ে ঠিক করে কোন ছবি জানলায় দেখানো হবে। 

🍂

ক্যান্টিন বয়টি নতুন। হাসিখুশি ৪ ফুট হাইটের রোবট। গোল গোল কাজলটানা চোখ। নাম ভিঞ্চি। কথা কম, হাসি বেশি। হাসলে মুখে গোলাপী আলো জ্বলে ওঠে। অনির্বাণের ঠিক যেমন পছন্দ তেমনি কফি দিয়ে গেল ভিঞ্চি। পছন্দ জানাটা সহজ। টুগলের ডাটাবেস থেকে দেখে নিয়েছে। ৩০০ সিসি জল পিএইচ ৭। ৫ গ্রাম এরাবিক কফি। ২৫ গ্রাম ইন্ডিয়ান জলি গো মিল্ক তার সংগে মু্ম্বাই শর্করাপুর থেকে ডাইরেক্ট স্পীড লুপে ডেলিভারী চিনির ৩ গ্রাম । 
কফি এত জল্দি বাগান থেকে ঘরে পৌঁছয় বলে থাকে একেবারে তাজা ও নির্ভেজাল। পৃথিবীর পঞ্চাশ শতাংশ চিনি আর মোলাসেস আসে শর্করাপুর থেকে। 
ভিঞ্চি তাড়াতাড়ি যেতে হলে গড় গড় করে চাকার ওপর চলে । নৈলে চাকাগুলো ঢুকে রোগা রোগা লোহার ঠ্যাং বেরিয়ে আসে তখন হাঁটতেও পারে। গড়গড় করে এসে খট করে উঠে দাঁড়িয়ে কফি আর একটা বেকন জড়ানো ক্রোসাঁ টেবিলে রেখে এক স্যালুট দিয়ে হাসল। বলল ওহায়ো গোজাইমাস। ভাগ্যিস পোকা থেকে প্রোটিন আর মিলেটের কাবাব তৈরির এক্সপেরিমেন্টগুলো বিচ্ছিরি ভাবে ব্যর্থ হয়। তাই এখনও খাবার জিনিষগুলো খাবার মত রয়েছে। থ্রি ডি প্রিন্টারে দোসা ইডলি এসব ভারতভূমি(দ)তে তৈরী হয় বলে শোনা যায়। ভারতভূমির চারটি সুবা (দ) (ব) (য) আর (গু)। যদিও রাজাধিরাজ একজনই। 

অনির্বাণের ব্রেন লিংকে ভিঞ্চির জাপানী অভিবাদন অনুবাদ হয়ে গেল হিন্দীতে। অনির্বাণ হাসলো, বলল সুপ্রভাত। হাসাটা দরকার। গম্ভীর হয়ে থাকলে ভিঞ্চির ইমোশান ডিটেক্টর কাজ করবে, ডাটা বেসে অনির্বাণের লগে এন্ট্রি হবে। কনসিউমার হিসেবে রেটিং কমবে। নতুন কাজ। কাজেই এইচ আর বলে দিয়েছিল, সব সময় রেটিং নিয়ে সজাগ থাকবেন । সেও অবশ্য এক রোবট। নাম লিসা। এই রেটিংটা যে আবিষ্কার করেছিল তাকে পুরস্কার দেওয়া উচিত। অনির্বাণ দাঁতগুলো আরও বার করে হাসল।  ট্রিং করে আওয়াজ হলো ব্রেন লিংকে। রেটিং ৫। ভিঞ্চি দিয়েছে। 

এইচ আরের কথা মনে পড়তেই অনির্বাণ তাড়াতাড়ি কাজে মন দেয়। প্রথমে চোখ বোলায় তদন্তের ব্রীফে। একই সঙ্গে যা মনে আচ্ছে ফিংগার প্লটার দিয়ে লিখতে থাকে স্ক্রীনে। 

১) গড কোন স্বর্গীয় ব্যক্তি?-- না 
২) গড এলিয়েন বা ভিন্ন গ্রহের কেউ না, তাহলে তারা রসিকতা করত না এমন করে, সোজা এসে যা করার করে দিত। এলিয়েন বলে কিছু ১০০ লাইট ইয়ারের মধ্যে নেই সেটা এস্ট্রোনমাররা বলেই দিয়েছেন কাজেই সেই সম্ভাবনা বাতিল,
৩) গড চান না পৃথিবী ধ্বংস করতে, খুব যত্ন করে তিনি এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন, যাতে যত সম্ভব ক্যাসুয়াল্টি কম হয়,
৪) গডের সম্পূর্ণ কন্ট্রোলে আমাদের সব কম্পিউটার সিস্টেম, ইন্টারনেট, এবং এআই। 
৫) এগুলো সব গডের ডেমো প্যাকেজ। তিনি দেখাতে চান তিনি কত শক্তিমান। 

এ পর্যন্ত ব্যাপারটা সোজা। কিন্তু গড কে? আর শক্তি দেখিয়ে তিনি কি করতে চান? পৃথিবীর রাজা হতে চান? ব্যাপারটা খুব অসম্ভব নয়। ভারতভূমির দেশপতি সেরকম চেষ্টা মাঝে মাঝেই করে থাকেন। যে ভাবে ভারতভূমির কর্পোরেটরা একের পর এক দখল করছে, তিনিও গড হতে পারেন বৈকি।

কিন্তু তিনি খুব সিরিয়াস মানুষ আর এভাবে ফাজলামি করবেন না বলেই মনে হয়। এর মধ্যে একটু সেই সিলিন্ডারে বাস করা শিল্পপতির পদ্ধতির মিল দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তো মারা গেছেন এবং তাঁর সিলিন্ডার ঝড়ের গতিতে এগিয়ে চলেছে আলফা সেন্টুরির দিকে। এই গড মোটেই খেলা করছেন না আমাদের সঙ্গে। তিনি কিছু চান।  

সেটা কি?

(ক্রমশ)

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments