জ্বলদর্চি

বিদ্বেষে-- বিষাদে- রবীন্দ্রনাথ /প্রথম পর্ব/দ্বিজেন্দ্রলাল রায় /তনুশ্রী ভট্টাচার্য



বিদ্বেষে-- বিষাদে- রবীন্দ্রনাথ 
প্রথম পর্ব
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

তনুশ্রী ভট্টাচার্য।

চিত্রাঙ্গদা কাব্য সম্পর্কে তাঁর  মন্তব্য---"এই পুস্তক খানি পুড়িয়ে ফেলা উচিত"---। রবীন্দ্রনাথ তাঁর দুর্নীতিমূলক এবং লালসাপূর্ণ লেখাগুলিকে ঐশ্বরিক বলে দাবী করেন --নিজেরই মনগড়া দাবীকে নস্যাৎ করার জন্য তিনি  উদগ্র বাসনা নিয়ে বসেছিলেন । সোনার তরী র প্যারোডি লিখে  টক্কর দিয়েছিলেন। এক সাহিত্য সম্মিলনে সোনার তরী কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের ঢঙে মেয়েলি ভাবে তাঁকে নকল করে মিমিক্রি করালেন এক  বন্ধুকে দিয়ে। নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ উষ্মা প্রকাশ করে হল ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ----
শুধু এক অজ্ঞাত কারণে নাট্যকার কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রবীন্দ্রনাথের প্রতি এই বিদ্বেষ মনোভাব থেকে বেরোতে পারলেন না।  আমাদেরকেও ভাবায় । আজ ও!! কী এমন হলো যে একদিনের সুহৃদ স্বজন  রবীন্দ্রনাথের "দ্বিজুবাবু" ধীরে ধীরে প্রবল রবীন্দ্র বিদ্বেষী হয়ে গেলেন!  যুগপৎ বিস্ময়  ও বিষাদ  জাগে মনে। আমাদের!সেদিনও  জেগেছিল  রবীন্দ্রনাথের মনে। অথচ তাঁদের মধ্যে পত্র বিনিময় হতো নানা বিষয়ে। দুই কবি। দুজনেই সঙ্গীত সাধক।পারস্পরিক আমন্ত্রণ নিমন্ত্রণ কবিতায় পত্রলেখা--- জলের সারল্যে সে বন্ধুত্ব  চলত তিরতির করে। কিন্তু ধীরে সে জল ঘোলা হলো। করলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নিজেই। দু একটা কার্য কারণের অবতারণা করা যেতে পারে।প্রথমত "বঙ্গভাষার লেখক"নামক গ্রন্থে   কবি লেখকদের জীবনী ও সাহিত্য কর্ম   গ্রন্থিত করা হচ্ছিল।কোনো অজ্ঞাত কারণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাম বাদ যায় । দ্বিজেন্দ্রলাল রুষ্ট হন রবীন্দ্রনাথের ওপর। সেই শুরু। রবীন্দ্রনাথ এই গ্রন্থে নিজের জীবনী দিলেন না কিন্তু সম্পাদকের অনুরোধে "আত্মপরিচয়" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখলেন। সেই নির্দোষ প্রবন্ধই রবীন্দ্র-- দ্বিজেন্দ্র বিদ্বেষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ালো।

দ্বিতীয়ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ঐতিহাসিক নাটক গুলো যখন সাহিত্য সমাজে যথেষ্ট আদৃত হচ্ছে তখন  ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের কাছে থেকে তেমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পান নি  তিনি। এটা তাঁর মনে হয়েছিল। এবং সেই অসন্তোষ  থেকেই ধূমায়িত হতে থাকল বিদ্বেষ। 

তৃতীয়ত--দ্বিজেন্দ্রলাল মনে করতেন রবীন্দ্রনাথের এক দল স্তাবক আছে  এবং তিনি  ঐ দলে নাম লেখাবেন না। বরং তিনি অকারণ বিদ্বেষ ছড়াবেন। জ্যোর্তিময় আলোকবৃত্তকে নিন্দার কালো মেঘে ঢেকে দিতে কুন্ঠা করলেন না ।
এরকম আরো আছে । তিনি মনে করতেন রবির মেজদা  সত্যেন্দ্রনাথ রবির কবিতা সব জায়গায় পড়ে পড়ে বিজ্ঞাপন দেন কবি রবীন্দ্রনাথের।বা ঠাকুর বাড়িতে কেন শুধু রবির লেখা নাটকই বা অভিনীত হবে,কেন ওর লেখা গানই ব্রাহ্মসমাজের অনুষ্ঠানে গাওয়া হবে।
এই সূত্রে বেশ মনে করা যায় যে "বিলাত ফেরতা" কবিতায় দ্বিজেন্দ্রলাল ঠাকুর বাড়ির ইংরেজপ্রীতি নিয়ে কটাক্ষ করেন।

🍂

সোনার তরী কবিতার অস্পষ্টতা  নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে  তীব্র ভাষায়  আক্রমণ করেন  এবং "কাব্যহীন কবি" বলতেও দ্বিধা করেন নি। সোনার তরী র মাথামুন্ডু কিছু নেই এবং অস্পষ্টতা দিয়ে কবিতা হয় না, এটা একটা দোষ-- গুণ নয়। --- সাহিত্য পত্রিকায় এই মর্মে তিনি  সমালোচনা করলেন। বস্তুত  দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের রবীন্দ্র বিদ্বেষ এমন জায়গায় পৌঁছে  গেল যে তিনি সর্ব সমক্ষেই কবিকে হেয় করতে লাগলেন। বহু বিচিত্র ধূসর  কালো ও পঙ্ক রঙের সে সব ঘটনা।  
কবি তখন  লন্ডনে। গীতাঞ্জলির সৌরভ সবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এদেশে দ্বিজেন্দ্রলাল সহ অনেকের ই সমালোচনার হলাহল  ঊদ্গীরণেও কবি নিলির্প্ত।কবির ঔদাসীন্যে  দ্বিজেন্দ্রলাল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন।  ঈর্ষার আগুন থেকে  উঠে এলো আনন্দবিদায় নাটকটি। যেখানে এক সংলাপে  রাজা রামমোহন কে বিত্তহীন রাজা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ কে বিষয়ী মহর্ষি আর রবীন্দ্রনাথ কে কাব্যহীন কবি বলে অপমানের চূড়ান্ত ও লাঞ্ছনা করলেন। কবি সব জানতে পারলেন ।কিন্তু তিনি নির্বিকার। কবি ভাবতেন অনর্থক কাদা ঘেঁটে কি হবে ! এইসব অকরুন সমালোচনার বিদ্বেষ বিষ থেকে মনকে মুক্ত রাখতে চাইতেন। লিখেছেন কোন এক চিঠিতে "বিদ্বেষে কোন সুখ নাই কোন শ্লাঘা নাই এইজন্য বিদ্বেষটার প্রতিও যাহাতে বিদ্বেষ না আসে আমি তাহার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিয়া থাকি । জীবন প্রদীপের তেল তো খুব বেশি নয়, সবই যদি রোষে  দ্বেষে জ্বালাইয়া ফেলি,তবে ভালোবাসার কাজে এবং ভগবানের আরতির বেলায় কি করিব !!

আহা! এই ই রবীন্দ্রবীক্ষা, রবীন্দ্র দীক্ষা ,রবীন্দ্র শিক্ষা-- আমরা যদি এমনটি ভাবতে পারি!! এই পঁচিশে বৈশাখ থেকেই ! ভাবতে শুরু করি না কেন ! দোষ কোথায়! তবেই তো সার্থক রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments