জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ/নির্মল বর্মন

বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ
নির্মল বর্মন


কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ হিন্দু-মুসলমানের বন্ধুত্ব পূর্ণ জীবনযাত্রাকে পাথেয় করে সাহিত্য সৃষ্টিতে বিরাট জনপ্রিয়তার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন।সারাজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন। তার প্রতিফলন ঘটেছে উপন্যাসেও । উপন্যাসে স্থান লাভ সেই হতভাগ্য দারিদ্র্যের ছাপ। 
কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ এর গল্প ''কল্লোল' পত্রিকায় প্রকাশিত । গল্পের নাম  "কলের নৌকা'' ১৩৩৪।
                   ‌কথাসাহিতিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ এর রচিত উপন্যাসগুলি:--: 
‌‌"পদ্মদিঘির বেদেনী'' (১৯৪৯), ''একটি সঙ্গীতের জন্মকাহিনি'' (১৯৫১), ''কনকপুরের কবি'' (১৯৫৩), ''দক্ষিণের বিল''; (১৯৫৩),' ''জোটের মহল''  (১৯৫৪), ''অহল্যা বন্যা'' (১৯৫৫), ''নাগিনী মুদ্রা' ' (১৯৫৯), ''চরকাশেম'' (১৯৫৯) ''ভাঙছে শুধু ভাঙছে'' ইত্যাদি।
                                 কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ এর ''পদ্মদিঘির বেদেনী'' উপন্যাসে গরীব, অসহায়, নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের  ক্ষুরধার যন্ত্রনা'র প্রতিচ্ছবি  প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের হাটে বাজারে বন্দরে বেদে-বেদেনীদের নানাবিধ কার্যকলাপ ও জীবনযাপন চিত্রকলা  এই উপন্যাসে সু বিন্যস্ত । বস্তুতঃ ময়না চরিত্র চিত্রনে আধুনিক ভাবনা সুবিদিত। ফলতঃ ময়না'র 'আচার-ব্যবহার, সংস্কার-বিশ্বাস'প্রেম প্রীতি'র বিষয়টি  জীবন্ত ও সার্থক হয়ে উঠেছে। ময়না'র মধ্যে নিরপেক্ষ সম্প্রীতি বিশেষতঃ হিন্দু-মুসলমানের  সংমিশ্রিত সংস্কৃতি'র মেলবন্ধন উপন্যাস'টিকে সামনের সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ফলতঃ ময়না জাতিতে মুসলমান কিন্তু হিন্দু আচার সংস্কারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে , সে মা  মনসা পূজো'র জন্য  নিবেদিত প্রাণ। মনের শান্তির জন্য 'বৈষ্ণব ভৈরব' এর  নিকট ময়না ভক্তিমূলক গান যত্নসহকারে  শেখে। সুতরাং কথাকার 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি'র ভাবনা চিন্তা মাথায় রেখে উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন।

🍂

            সাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ বাহাদুরের সর্বশ্রেষ্ঠ  ''চরকাশেম'' উপন্যাস টি। তাই 'চরকাশেম' উপন্যাসে হিন্দু মুসলমানের গতানুগতিক দাঙ্গা,দেশবিভক্ত, কঠিন মন্বন্তর, পোড়ামাটি'র  নীতিমালা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিত। আবার এই উপন্যাসে 'হিন্দু-মুসলমান'এর সামাজিক ঐক্যের রূপ সুচিত্রিত । নায়ক 'কাশেম মিঞা'র  আদর্শবান চরিত্র।নায়ক মহামন্বন্তর, দেশবিভক্ত, মানুষে-মানুষে জটিল দাঙ্গা, অমানবিক নির্যাতন ও পাশবিকতা কখনো পছন্দ করে না। ফুলমন  আভিজাত্য ভাবনায় বুঁদ । সে আভিজাত্য মনুষ পদবাচ্য নয়, তা মূলতঃ উপলব্ধি করেছে কাশেমবাবু। কিন্তু বারংবার ফুলমন এর দ্বারা কাশেম বাবু প্রতিহত , তার স্বপ্ন,তার ভালোবাসা রবীন্দ্রনাথ নাথের তাসের ঘরের মতো ভেঙে খান খান। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর 'কালিন্দী'- উপন্যাসে কালিন্দী নদীর চরে  অনেকের স্বপ্ন ও সৃজনশীল সম্ভাবনাকে জাগ্ৰত করেছিল। তদরূপ 'চরকাশেম' উপন্যাসে  বহু মানুষের স্বপ্নও সৃজনশীলতাকে লালিত করেছিল। 
যুদ্ধ,দ্বন্দ্ব ও মন্বন্তর সাধারণ মানুষের সবকিছু কেড়ে নিয়েছিল বটে আবার তারাই বিস্তৃত চর দেখে , নতুন সৃষ্টি সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত । উপন্যাসের এক পাতায় প্রেম-ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি তো অন্য পাতায় ' প্রতিবাদী ও সংগ্রামী জীবন'-এর দ্বন্দ্বমূলক পরিচয় দানে শিল্পরূপ সত্ত্বা সার্থক হয়ে উঠলেও কালের অমোঘ আকর্ষণে আজ কজন বা মনে রেখেছেন। তাই সমসাময়িক নানা বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করেই অকাতরে বলা যায় কথাসাহিত্যিক অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ আজ প্রায়ই বিস্মৃতপ্রায়।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments