ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৭৬
সম্পাদক - মৌসুমী ঘোষ
চিত্রগ্রাহক - ঋপণ আর্য
সম্পাদকীয়,
আজ ছোটোবেলা প্রকাশের দিন, আজ ছুটির দিন, তাই আজ ছড়া আর গল্প শোনার দিন। আজ ছড়া শোনাবেন সবিতা পিসি। মনকাড়া হাতির ছড়া। হাতির ছড়া পড়ে এটা ভেবনা হাতি বিশাল বলেই তার এত কদর। ছোট্ট শামুকও যে খুব উপকারী হয় তার গল্প বলেছেন সুমনা আন্টি। আর গল্প শোনাবেন তানিয়া পিসি। রাজকুমার সিদ্ধার্থের গল্প। এত সুন্দর করে তানুয়া পিসি গল্পটা বললেন যে আমি তোমাদের হয়ে তানিয়া পিসিকে বলেছি রোজ রোজ নতুন নতুন গল্প শোনাতে হবে। কি ঠিক তো? শ্রীকান্ত আঙ্কেলের লাচুঙের নেকড়ে পড়ে কেউ ভয় পাচ্ছ না কি? আমার কিন্তু একটু একটু ভয় করছে। আমি ভয় পেয়েছি শুনে ওদের ভারী মজা হয়েছে। ওদের মজার ছবি পাঠিয়েছে ঋপণ আঙ্কেল। সৌমী আর শুভশ্রীর আঁকা আমাদের খুব ভাল লেগেছে। সব শেষে জানাই বৃষ্টির আগমণের খবর এসেছে ছোটোবেলার দপ্তরে। গরমের দিন শেষ। তাই আনন্দ করো। মৌসুমী ঘোষ।
জীবজন্তুদের নানা মজার কথা
সুমনা সাহা
পর্ব- ৮
উপকারী শামুক
কাল বাদে পরশু বাড়িতে পুজো। তাই সাজো সাজো রব। বড়রা খুব ব্যস্ত, দাদু আর মামারা ঠাকুরমশাইয়ের দেওয়া ফর্দ মিলিয়ে পুজোর নানা জিনিসপত্র কেনাকাটা ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত। আর ওদিকে মা, আন্টি এ বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে ঘর সাজানো, কুটনো কোটা, নাড়ু পাকানো এইসব নিয়ে ব্যস্ত। ছোটদের শাসন এখন আলগা। অর্কর বাবা আর রাজেশ্বরীর বাবা আজ রাত্রেই এসে পড়বেন। মামি ও দীদা আজ নতুন অতিথিদের জন্য অনেক স্পেশাল পদ রান্না করেছেন। বুকাইয়ের মা আর রাজির মা দুজনেই গ্রামের মেয়েদের মত পায়ে আলতা পরেছেন, খোঁপায় রূপোর কাঁটা দিয়ে চুল বেঁধেছেন আর দিদার দেওয়া নতুন তাঁতের শাড়ি পরেছেন। বুকাই আর রাজির সঙ্গে ভূতো আর গিনি এসে যোগ দেওয়াতে ওদের একটা দল তৈরি হয়েছে। তারা সারা পাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, বকুনি দিচ্ছে না কেউ। সন্ধ্যার আগে একটু ঝোড়ো হাওয়া উঠল। সঙ্গে বিদ্যুতের চমক। সবাই ভাবল বৃষ্টি হবে। কিন্তু ছিটেফোঁটা জল পড়ার পরে সব থেমে গেল। বাতাস বেশ ঠাণ্ডা হয়েছে। বাগান থেকে সুন্দর কামিনী আর চাঁপা ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। দাদু বললেন, “চলো, পুকুর ঘাটে গিয়ে বসা যাক।” এই পুকুরটা মাছ ধরা পুকুরের মত বড় নয়। এটা বাড়ির খিড়কি দরজার সামনে, রান্নাশালের পিছনের পুকুর। এখানে বাসনকোসন ধোওয়া হয়। সুন্দর করে ঘাট বাঁধানো পুকুরের ঘাটে ছোটরা সবাই দাদুর সঙ্গে গিয়ে বসে পড়ল। মামি ওদের হাতে দিয়ে গেল বাটি ভর্তি করে মুড়ি, তাতে নারকোল কোরা আর বাদাম মেশানো। সঙ্গে গরম গরম কুমড়োর পকোড়া, এখানে বলে কুমড়ি। আকাশে মেঘের চাদর সরিয়ে উঁকি দিয়েছে এক ফালি চাঁদ। বুকাইয়ের মনটা গল্পের জন্য লোভী হয়ে উঠেছে। পুকুর পাড়ের ছোট ছোট গাছগুলো মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে, বোঝা যাচ্ছে যে ঝোপের ভিতরে কিছু চলাফেরা করছে, তাদেরই নড়াচড়ায় কাঁপুনি উঠছে। বুকাই দাদুকে জিজ্ঞেস করল, “ওখানে কি নড়ছে?”
“শামুক বা ব্যাঙ হয়তো”, দাদু বললেন।
বুকাই উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল, “জানো দাদু, আজ আমরা শামুক দেখলাম। খুব আস্তে আস্তে হেঁটে যাচ্ছিল। আম বাগানে দেখেছি। মাথার উপর একটা শুঁড়ের মত উঁচু করে হাঁটছিল। আর চলে যাওয়ার পর একটা ভেজা দাগের মত চিহ্ন দেখেছি।”
দাদু বললেন, “তুমি কি ভাল করে খেয়াল করে দেখেছিলে? একটা শুঁড় নয়, নিশ্চয় দুটো দেখে থাকবে। কেন জানো? যেসমস্ত শামুক ডাঙায় চলেফিরে বেড়ায়, তারা ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস চালায়, তারা পালমোনাটা শ্রেণির। এদের মাথার উপরে দু’জোড়া কর্ষিকা থাকে, ইংরাজিতে যাকে বলে টেনট্যাকল। মানে আকর্ষ। লতানে গাছেরা যে অঙ্গের দ্বারা অন্য গাছ বা শক্ত বস্তুর অবলম্বন করে বেয়ে ওঠে। পিছনের কর্ষিকা জোড়ার গোড়ায় থাকে শামুকের চোখ। দরকার পড়লে কর্ষিকা গুটিয়ে নিতেও পারে। জলের শামুকেরও কর্ষিকা থাকে, তবে এক জোড়া, আর সেগুলো গুটাতে পারে না। জলের শামুক মাছের মত ফুলকার সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস চালায়। এরা প্যারাফিলেটিক গোত্রের। আর ঐ যে ভেজা দাগ বলছ, ওটা মিউকাসের দাগ। শামুকের নরম মাংসল পা যখন মাটির সংস্পর্শে থাকে, তা যাতে শক্ত বা ধারালো জিনিসের আঘাত লেগে কেটে না যায়, তার জন্যই আঠার মত চটচটে মিউকাস ক্ষরণ হয়। ওরা সেজন্য ব্লেডের উপর দিয়েও অক্ষত অবস্থায় চলে যেতে পারে।”
“পিঠের উপর শাঁখের মত খোলাটা নিয়ে, খুবই আস্তে হাঁটছিল শামুকটা।”
“হ্যাঁ, ওদের গতি খুবই ধীর, এক সেকেন্ডে এক মিলিমিটার যায়, বুঝতে পারছ সেটা কতটুকু? আর ওই শাঁখের মত খোলই ওদের সুরক্ষা আবরণ। শত্রুর হাত থেকে নিজের নরম শরীরটাকে রক্ষা করতে ঐ ব্যবস্থা। তবে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে যে, খোলার উপরে যে প্যাঁচালো চক্রাকার দাগ, সেগুলো চলার সময় ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে। বেশিরভাগই অমন, এদের বলে ডানাবর্তী।”
কথা বলতে বলতে দাদু একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন। নিজের মনেই বিড়বিড় করে বললেন, “নরমদের জন্য এই পৃথিবীর কোন দয়া নেই। তারা অকাতরে শেষ হয়ে যায়!”
বুকাই আবার জিজ্ঞেস করল, “ও দাদু, ওরা কি খায়?”
বুকাইয়ের আগ্রহী মুখ দেখে দাদু ওর থুতনিতে হাত ছুঁয়ে আদর করে বললেন, “তোমার মতো আর কয়েকটিকে পেলে অনেক অবোলা প্রাণ বাঁচবে, যদি কৌতুহলের সঙ্গে সঙ্গে সত্যি সত্যি দরদও থাকে প্রাণে!”
তারপর বললেন, “প্রকৃতি মা সব প্রাণির খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ঐটুকু তো ছোট্ট প্রাণি, কত আর খাবে? বেশির ভাগ শামুকই তৃণভোজী। কচি পাতা, গাছের নরম ছাল, শাক, ফল এইসমস্ত খায় ডাঙার শামুক। তবে কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক শামুক মাংসাশী বা উভভোজীও হয়।”
“এরা কতদিন বেঁচে থাকে?”
“এইটা ভাল প্রশ্ন করেছ। নানা প্রজাতির শামুকের আয়ু বিভিন্ন। প্রকৃতিতে আকাটিনিডে শামুক ৫ থেকে ৭ বছর বাঁচে, আবার হেলিক্স প্রজাতির শামুক ২ থেকে ৩ বছর বাঁচে। জলজ অ্যাপল জাতের শামুকের আয়ু মাত্র বছরখানেক। বেশিরভাগ শামুকের মৃত্যু হয় শিকারীর হাতে আর নয়তো পরজীবী সংক্রমণে। গৃহবন্দী অবস্থায় শামুকের আয়ু অনেক বেড়ে যায়, প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। কিছু কিছু শামুক প্রায় ৩০ বছর পর্যন্তও বাঁচে, এমনও দেখা গেছে।”
“শিকারীর হাতে শামুক কেন মরবে? ওদের কে শিকার করে?”
🍂
দাদু হেসে ফেললেন বুকাইয়ের কথা বলার ধরণ দেখে। বললেন, “শোন কথা! তুমি অবাক হচ্ছ ভেবে, যে, বিরিয়ানি, পিৎজা, বার্গার, রোল, চাউমিন ফেলে লোকে এই খুদে জীব খেতে যাবে কোন দুঃখে? তাহলে বলি শোন, আজ থেকে দেড় লক্ষ বছর আগে থেকেই মানুষ শামুক খেত, পুড়িয়ে, মানে যাকে তোমরা রোস্টেড মিট বলো, সেইরকম ভাবে। তার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার এক গুহা খননের সময় পলির স্তরের ভিতর মানুষের হাতের তালুর মাপের বড় শামুকের পোড়া খোল উঠে এসেছে, সেখান থেকেই গবেষণার শুরু। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, আফ্রিকায় ৪৯০০০ বছর আগে এবং ইউরোপে ৩৬০০০ বছর আগে কোন ভেজা জায়গা থেকে তুলে শামুক খাওয়া হত। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা ছিল গুহাবাসী। গুহা থেকে বেরিয়ে এসেই প্রথমে তারা শিকার করা শেখেনি। বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে শিকার করা, আগুন জ্বালানো সব কিছুই শিখেছে। প্রথমদিকে তারা আগুনের ব্যবহার জানত না বলে কাঁচা মাংস খেত। পরবর্তীকালে আগুনের ব্যবহার শিখে তারা মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস করে। তারপরে তারা বনজঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজি, পাখির ডিম প্রভৃতি খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করতে আরম্ভ করেছে। প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে থেকেই কিন্তু মানুষ রোস্ট করে শামুক খেতে শুরু করেছিল। এই আধুনিক যুগেও কিন্তু ইউরোপ, চীন, জাপান ও আমেরিকার অনেক নামী রেস্তোরাঁয় গেঁড়ি গুগলির মত ছোট শামুক বা ঝিনুকের ঝোল জনপ্রিয় পদ হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এতে সহজপাচ্য প্রোটিন থাকে, তাই শরীরের পক্ষে খুব উপকারীও। এছাড়াও শামুক সংগ্রহ একটা লাভজনক পেশা। গ্রামবাংলায় হাজার হাজার মানুষ আছে, যারা শামুক সংগ্রহ করে সংসার চালায়। এদের বলে চুনকার।”
“শামুক সংগ্রহ করে কি করে দাদু? রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে?”
“না রে দাদুভাই। তার থেকেও বড় কাজ আছে এর। কিছু প্রজাতির ঝিনুকের পেটে মুক্তো হয় স্বাভাবিক ভাবে প্রাকৃতিক নিয়মে। তবে কৃত্রিম ভাবেই এখন মুক্তোর চাষ আরম্ভ হয়েছে। বাংলাদেশে ও পশ্চিমবাংলার নানা চলনবিলে, খালে এইরকম ঝিনুকের চাষ হয় আর তা থেকে মুক্তো সংগ্রহ করে বছরে প্রায় কুড়ি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এছাড়া শামুকের খোল পুড়িয়ে তৈরি হয় চুন। মাছের ও খামারের হাঁস মুরগির খাবার হিসেবেও শামুকের প্রচুর চাহিদা আছে বিদেশে। আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশে থাকেন। তাদের কাছে শুনেছি, ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা নদীর তীরঘেঁষেই রয়েছে আড়িয়ল বিল। বিলের উত্তর-পশ্চিমে দোহার ও নবারগঞ্জ উপজেলা এবং পূর্ব-দক্ষিণে সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার একর জায়গায় ছড়িয়ে আছে এই বিল। ধানের মৌসুম শেষ হলে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় শামুক কুড়ানোর ধুম। প্রতিদিন প্রায় ২০ টন শামুক তোলা হয় এই বিল থেকে। ঐসব এলাকায় গেলে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে শামুক কুড়ানো। ধানের মৌসুম শেষ হলে বৃষ্টির জলে ভেসে যায় বিল। জুলাই মাসে বিলের মধ্যে শুধু জল আর জলের উপর ভাসে শ্যাওলা ও লতাপাতা। জাল ও সরু কাপড দিয়ে জলের ভিতর থেকে ভাসমান শামুক ছেঁকে তোলে দিনমজুররা। ছোট ছোট কোষা নৌকাও থাকে সঙ্গে। এরা ঝিনুক, শামুক সংগ্রহ করে দালালদের প্রতি মণ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করে। এক মণ ঝিনুক থেকে প্রায় ৩০ কেজি চুন তৈরি হয় যার বাজারমূল্য ৭০০ টাকা। তাছাড়া প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫০ থেকে ৬০ রতি মুক্তা সংগ্রহ করে। সেসব ১০ টাকা রতি দরে দালালদের বিক্রি করে। গাজনা-চলনবিলে বছরে একশো কোটি টাকার কেনাবেচা হয়। এই পেশায় জড়িতদের মধ্যে অধিকাংশই বংশানুক্রমে এই পেশায় রয়েছেন। তাদের সংসার ভালোভাবেই চলছে। তাছাড়া মুক্তো বিক্রির টাকা তাদের বাড়তি রোজগার।”
বুকাই, রাজি এসব শুনে বিস্মিত হয়। এমন ছোট্ট একটা প্রাণি এত মানুষের সংসার চালানোর ক্ষমতা রাখে! শুধু বুকাই, রাজি কেন, ভূতো আর গিনিও এতসব জানত না। ওরাও হাঁ করে দাদুর কথা গিলছে। কে জানে, ভূতোর মাথায় এসব শুনে নতুন কোন আইডিয়া এসে গেল কি না!
দাদু বলেন, “আরও শুনবে? শামুকের মিউকাসেরও ভারি গুণ! গবেষণায় দেখা গেছে, শামুকের শ্লেষ্মায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই মানুষের শরীরের ক্ষতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বন্ধ করতে শামুকের শ্লেষ্মা খুবই কাজের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শামুকের শ্লেষ্মায় ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে। ইতিমধ্যে গবেষণাগারে পরীক্ষানিরীক্ষায় মানুষের ত্বকের ক্যানসার-কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে সফলও হয়েছে শামুকের শ্লেষ্মা। আমেরিকার মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জোশুয়া জেইচনার পরীক্ষা করে দেখেছেন, বাগানের শামুকের একটি প্রজাতির (বৈজ্ঞানিক নাম= করনু অ্যাসপারসাম) স্লাইম থেকে ত্বকের যত্নের বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য তৈরি করা যেতে পারে, এই প্রজাতির শামুকের মিউকাস অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ ও নতুন কোলাজেনকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা এতে আছে। এই উপাদান বার্ধক্যের গতি কমাতে পারে। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ বাহার হাউশমান্ড বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক মেরামতের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক আর্দ্র রাখতে শামুকের শ্লেষ্মাযুক্ত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেশি। শামুকের শ্লেষ্মা প্রাকৃতিক ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা ক্ষতের জ্বালা কমায় ও বার্ধক্যজনিত লক্ষণ কমাতে পারে। ত্বকের কোলাজেন উত্পাদনকে বাড়ানোর উপাদানও রয়েছে শামুকের শ্লেষ্মায়। শামুকের শ্লেষ্মা নিয়ে এইসমস্ত নতুন পরীক্ষানিরীক্ষার ফলে শামুকের মত তুচ্ছ প্রাণির গুরুত্বও বেড়ে যাচ্ছে। আসলে কি জানো দাদুভাই? কেউ ছোট নয়। যাকে তুমি গুরুত্বই দিচ্ছ না, হয়তো তারও বিশেষ কোন গুণ আছে, কোন ম্যাজিক করার ক্ষমতা আছে।”
“কিন্তু দাদু, তাহলে তো সব শামুক ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে?”
এই কথায় দাদু খুব খুশি হলেন, বুকাইকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “এই ভাবনা যার আসে, সেই পারে সবদিক সামলাতে। প্রয়োজন থেকে লোভকে তফাৎ করতে পারলে সব দিক রক্ষা হয়। তবে কি জানো? শামুক ঝিনুকের জন্ম হয় লাখ লাখ। শামুক ডিম পাড়ে দশ-বিশ হাজার। কিন্তু ঝিনুক সমুদ্রে বা মিষ্টি জলে একবারে দশ-বিশ লাখ ডিম পাড়ে। সুতোয় গাঁথা পুঁতির মতো মালা আকারে ডিম হয়। ডিম ফুটে যখন ছানা বের হয়, তাদের খাওয়ার জন্য জলের মাছ থেকে শুরু করে জলচর মাছখেকো পাখি ও অন্যান্য নানা জীবজন্তুর মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কারণ ছানারা বড় হয়ে গেলে তাদের খোলস তৈরি হবে। তখন ঐ শক্ত খোলা ভেঙে খাওয়া কষ্টকর। তাই খোলা তৈরি হওয়ার আগেই তুলতুলে ছানাগুলো খেতে পছন্দ করে শামুকের শত্রুরা। তবে কত খাবে? শত্রু খেয়ে সাবাড় করার পরেও যে পরিমাণ বেঁচে থাকে, তাই যথেষ্ট। সবগুলো যদি বেঁচে যায়, আর বছর বছর অমন ডিম পাড়তে থাকে, কয়েক বছরের মধ্যেই একটা শামুকের বংশই এক একটা শহর ঢেকে ফেলবে। তাই প্রকৃতি মা সব বুঝেশুনে সৃষ্টি করেছেন, খাদ্যও, খাদকও।”
হাতির ছড়া
সবিতা বিশ্বাস
হাতির ছড়া পড়বে যারা অবাক হবে খুব
দেড়শো কেজি খাবার খায় কাদায় দেয় ডুব
চামড়া মোটা কানটা কুলো আইভরির দাঁত
পিঁপড়ে দেখে রাজার হাতি ভয়েই কুপোকাত
চার ঘন্টা ঘুমোয় হাতি জোরসে ডাকে নাক
কলাবাগান সাবাড় করে একটু পেলে ফাঁক
ওরা মোটেই বুদ্ধু নয় বুদ্ধি ক্ষুরধার
মস্তিস্কের ওজন জেনো পাঁচ কেজি ভার
স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর বন্ধুকে রাখে মনে
শত্রু চেনে শুঁড়টি তুলে গন্ধ শুঁকে বনে
বন্ধু যদি দুঃখ পায় সবাই ঘিরে ধরে
স্বান্তনা দেয় শুঁড় বুলিয়ে খুব আদর করে
আকারে বড় হলেও জেনো কোমল মন হাতি
নিষেধ করি ওদের পিঠে উঠোনা তুমি সাথি
ব্যথায় ওরা কষ্ট পায় ঝরে চোখের জল
পিঠের পরে মালের ভার হারিয়ে ফেলে বল
স্তন্যপায়ী বিশাল জীব সবার থেকে সেরা
শুঁড়টি তার দেড় লক্ষ পেশী দিয়ে ঘেরা
ঝরনা জলে স্নান করা হাতির খুব প্রিয়
বন্ধু শোনো হাতির প্রতি একটু যত্ন নিও
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী
পর্ব ৪৫
রাতের অন্ধকারে যে বিভীষিকা ও আতঙ্কের মধ্যে সেরগিল সাহেবরা পড়েছিলেন এবার বোধ হয় তা সাঙ্গ হবার পালা। এবারের মত অভিযান প্রায় সাকসেস বলা যেতে পারে, কী বলেন নটবরবাবু?-বেশ কিছুটা তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন সেরগিল সাহেব। দেখলেন কিনা, এ পাহাড়ি এলাকায় নেকড়ে ফেকড়ে কুছ নেহি, হ্যায় তো কুছ বাগড়বিল্লা অউর জংলি কুত্তা। ডরকে মারে চলা গ্যায়া অউর কুছ সাফ হো গ্যায়া।
দীপকবাবুর এখনো চোখ মুখ স্বাভাবিক হয়নি। আতঙ্কিত মুখটাকে কিছুতেই এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে পারছেন না। তবু কোনো রকমে বলেন,- কুছ নেহি? এই গুলো তবে কী? এদের যা ভয়ঙ্কর জংলিপনা দেখলাম তারপরেও বলতে হবে কুছ নেহি!
নটবরবাবু এত সব কিছুর মধ্যে কোনো কথা বলেনি, অদ্ভুত এক মৌনতায় ডুবে ছিল। এবার মুখ খোলে,- এই ভয়ঙ্কর জানোয়ারদের কাছে আমার রামসিং আর শার্দুল কি টিকে থাকতে পারবে! ওদের হয়তো কবেই ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছে! গলা ধরে আসে নটবরবাবুর।
এই প্রথম সেরগিল সাহেব লক্ষ করেন, এককালের জাঁদরেল পুলিশ অফিসার কাঁদছেন। দুর্বল হয়ে পাশের একটা পাথরের ওপর বসে আছেন।
সেরগিল সাহেব এবং ছেত্রী ম্যাডাম দ্রুত কাছে এসে বলেন,- ডোন্ট ওরি স্যার! সে রকম কুছু ঘটলে আমার কাছে রিপোর্ট আসত। রেড উলফদের ডিম্যান্ড অন্য আছে। ওরা আপনাদের মত মানুষদের শুধু ভয় দেখিয়ে ওদের ডিম্যান্ড গুলো সরকারের কাছে জানান দেবে। আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, দুটো লেপচা মালবাহক সঙ্গে নিয়ে এক কনস্টেবল এসে সেরগিল সাহেবের কাছে দাঁড়ায়। আর ঠিক তখনই বিকট পাশবিক চিৎকারে কতগুলো মশাল পাহাড়ের আরো ওপরের দিকে ছুটে যায়। পিছনে আরো কয়েকজন।
এই সবকিছু ঘটে সেকেন্ডের মধ্যে।
সেরগিল সাহেব হয়তো ব্যাপারটা আগে থেকেই আন্দাজ করে ফেলেছিলেন, তাই বিদ্যুৎ চমকানোর মত চমকে উঠেও অর্ডার দেন,- ছুপ যাও ! ছুপ যাও সব! ততক্ষণে এক ঝাঁক গুলির শব্দে আপার শাক্যাঙের রহস্যময় বুনো পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হতে শুরু করেছে। কেঁপে উঠেছে ঝোঁপ আর ওয়াটার নাট, পাইন গাছের পাতা। বরফের কুচো মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। বিকট আওয়াজে পিলে চমকে ওঠে। নিশ্চিত ভাবে বলা যায় বিশেষ কোনো জন্তুর গলা থেকে শেষ আর্তনাদ বেরিয়ে গেল। একটা দুটো নয় একাধিক। অনেক,-অনেকবার। নটবরবাবুও চোখ মুখ মুছে সজাগ দৃষ্টিতে ওপরে অকুস্থলের দিকে চেয়ে। আচমকা বলে ফেলে,- দ্যাটস দ্যা রিয়েল রিভেঞ্জ অ্যান্ড হোয়ের উই হ্যাভ ওন দ্যা ম্যাচ। ফিনিশড! ফিনিশ করে দাও সব। ভীষণ, ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে নটবরবাবু পাহাড়ের পাথুরেভূমিতে লাফাতে শুরু করে।
দীপকবাবু সহ উপস্থিত সকলেই চোখ বিস্ফারিত চোখে এক অসম্ভব ভয়ানক কিছুর জন্য অপেক্ষা করে রইলেন। এবার সেরগিল সাহেব এবং ছেত্রী ম্যাডামকেও দেখা গেল তাদের অস্ত্র বের করে টারগেট ঠিক করে নিতে। সিকিউরিটি ফোর্স অবশ্য আগে থেকেই AK-101 Rifle এর মত স্বয়ংক্রিয় রাইফেল উঁচিয়ে অ্যালার্ট রয়েছে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। আলোর রোশনাইগুলো ধীরে ধীরে ওদের দিকেই ফিরে আসছে। একদিকে ভয়, অন্যদিকে অজানা আশঙ্কা তার মাঝে যুদ্ধ জয়ের উল্লাস যেন মিলে মিশে আতঙ্কিত উচ্ছ্বাস হয়ে ফুটে উঠতে চায়ছে। ঠিক তখনই দেখা গেল লেবার আর মেষপালকদের মাথায় ফিট করা একগুচ্ছ ফিক্সড লাইটের প্রত্যাঘাতে ধূসর রঙের নেকড়ের নিথর দেহগুলো পাথরের চ্যাট্টানের ওপর ধরাস ধরাস করে কারা যেন ফেলে দিল। সব ক’টাই বাঁশের টুকরো দিয়ে বাঁধা। জমকালো আলোয় রক্তে কালো হয়ে যাচ্ছে গোটা জায়গাটা। মুখের ভেতর থেকে ক্যানাইন দাঁতগুলো অদ্ভুত ভাবে বেরিয়ে পড়েছে।
সেরগিল সাহেব লক্ষ করেন প্রত্যেকটার গলায় বকলেশ। আর প্রত্যেক বকলেশে বাঁধা আছে রেডিও কলার। জি পি এস সিসটেমের মাধ্যমে ওদের ট্রেস পাওয়ার জন্য কারা বেঁধে রেখেছে।
দ্রুত সেরগিল সাহেব ওই রেডিও কলারের দিকে এগোতেই, অন্ধকার থেকে গম্ভীর স্বর ভেসে আসে,--ডোন্ট টাচ দ্যা ডেডলি বিস্ট।
উপস্থিত আতঙ্কিত সেরগিল সাহেব, শবনম ছেত্রী ম্যাডাম, তার সিকিউরিট ফোর্স, সঙ্গে থাকা অন্যান্য কনেস্টেবল, লেপচা লেবারের দল, জনা কয়েক ট্রেকার এবং মেষ ও ইয়াক পালকের দল, সবাই চমকে দেখে সামনে জলপাই রঙের ইউনিফর্ম পরিহিত ,যারা এতক্ষণ জঙ্গল আর পাহাড়ের মাঝে এক হয়ে গিয়েছিল সেই ভারতীয় সেনা বাহিনীর একটা দল ওদের সামনে এসে হাজির। ওদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র। হাসতে হাসতে ওরা সেরগিল সাহেবের কাছে এসে বলে,-আর আপনাদের এরা জ্বালাবে না। বাট অ্যালার্ট রহেনা হোগা। অর এক বাত হ্যায় আপ লোগোকো অর বহত চৌকস রহেনে প্যারেগা। ইয়ানি হেলথ অর দিমাক দোনো হি। উসকে সাথ মডার্ন মেশিনারি গ্যাজেটস ভি হ্যায়। দ্যাটস ভেরি সিরিয়াস অ্যান্ড আর্জেন্ট। এক বাত ইয়াদ রাখনা চাহিয়ে ,- আজ পুরা ইন্ডিয়া অন্দর অউর বাহার সে ঘায়েল হ্যায়। হাম লোগোকা হি দেখনা হোগা। জয় সিক্কিম! জয় হিন্দ!
-জয় হিন্দ! সেই উত্তরপূর্ব ভারতবর্ষের জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি ভুমিতে ধ্বনিত হয়,-জয় হিন্দ! দীপকবাবু এবং নটবরবাবু সোল্লাসে বার বার জয়ধ্বনি তোলে-জয়হিন্দ! জয় হিন্দ!
শুভশ্রী সরকার
নবম শ্রেণি, শতদল বালিকা বিদ্যায়তন
উত্তর ২৪ পরগণা
সিদ্ধার্থের গল্প
তানিয়া ব্যানার্জী
ছোট বন্ধুরা তোমরা জানো তো একটা ভীষণ সাংঘাতিক ঝড় হয়ে গেলো। এই ঝড়ে পাখিরা পশুরা বাইরে থাকে তাদের না খুব কষ্ট জানো তোমাদেরও নিশ্চয়ই এই কথা জানতে পেরে খুব কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই। আজকে তোমাদের তোমাদেরই মত এক ছোট্ট সেই রাজকুমার সিদ্ধার্থের গল্প বলবো। একদিন সিদ্ধার্থ রাজপ্রাসাদের বাগানে খেলা করছিল । সেই বাগানে তার খুড়তুতো ভাই মানে তার কাকার ছেলে দেবদত্ত সেও খেলা করছিল।তারা ছিল রাজার ছেলে তাই অস্ত্রবিদ্যার বিভিন্ন রকমই তাদের খেলা ছিল। তার ভাই দেবদত্তর কাছে ছিল একটা তীর ধনুক দেবদত্ত সেই তীর ধনুক দিয়ে এটা উড়ন্ত পাখিকে একটা আঘাত করলো। পাখিটা এসে পড়ে গেল সেই বাগানে। তীর বেঁধা পাখিটাকে কোলে তুলে নিয়ে সিদ্ধার্থ দৌড়ে গেল রাজার কাছে।পাখিটার জন্য সিদ্ধার্থর খুব কষ্ট হচ্ছিল। রক্ত ঝরছিল পাখিটার গা দিয়ে। সিদ্ধার্থ রাজাকে বলল, যে এই পাখিটা আমার আমি একে সেবাশুশ্রূষা করে যত্ন করে সারিয়ে তুলবো,এই পাখিটা আমাকে দিন। কিন্তু তার ভাই দেবদত্ত কিছুতেই তাকে পাখিটা দিতে রাজি নয় যে আমি পাখিটাকে তীর মেরে নিচে নামিয়ে এনেছি আমি ওই পাখিটাকে নেব তখন সিদ্ধার্থ রাজসভার সবার কাছে বিচার চাইলো। রাজসভার সবাই বিচার শুরু হল যে পাখিটা কার সিদ্ধার্থ পাবে? না দেবদত্ত পাবে।কার কাছে যাবে পাখিটা? তখন রাজসভায় পুরোহিত রাজা মন্ত্রী এনারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানালেন যে পাখিটা সিদ্ধার্থর কাছে যাওয়া উচিত কারণ পাখিটার প্রাণ বদ করতে চেয়েছিল যে পাখিটার প্রাণ নিয়ে নিতে চেয়েছিল তার কাছে পাখি ফেরত দেওয়া যায় না পাখিটা যাওয়া উচিত তার কাছেই যে সেবা-শুশ্রূষা করে ফিরিয়ে দিতে চায়। অর্থাৎ পশুপাখি প্রাণী কাউকে আঘাত করা উচিত নয় কারোর প্রাণ নিয়ে কখনোই কোনোভাবে খেলা করা উচিত নয়। সিদ্ধার্থ ছোটবেলা থেকে অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত ছিল অর্থাৎ কোন প্রাণীর প্রতি হিংসা বোধ ও তার ছিল না এই সিদ্ধার্থ রাজকুমার ছিলেন বটে কিন্তু বড় হয়ে তিনি হয়েছিলেন সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসী । তিনি সাধনার দ্বারা বোধি জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সারা পৃথিবীতে তিনি ভগবান বুদ্ধ রূপে অহিংসার বাণী প্রচার করে গেছেন।
1 Comments
খুব ভালো
ReplyDelete