৪০তম পর্ব
তৃতীয় ভাগ - দ্বারকা পর্ব
দেবী প্রসাদ ত্রিপাঠী
নিজ আত্মীয়দের মর্মান্তিক পরিণতি দেখে যুধিষ্ঠির আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। যমরাজ তাকে বললেন - "হে ধর্মপ্রাণ মহাত্মা ! চলুন ! আপনার স্বর্গে গমনের সময় আগত ! " অশ্রুশিক্ত হয়ে তিনি যমকে বললেন "এ কেমন বিচার হে ধর্মরাজ ! আমার অগ্নিরূপ তেজস্বী পবিত্র এবং ধার্মিক নিকট ব্যক্তিদের এই ভীষণ পরিণতি ! আর আমাকে আপনি বলছেন এদের ত্যাগ করে স্বর্গসুখ ভোগ করতে ! কক্ষনো নয় ! যতদিন পর্যন্ত এঁরা এইখানে থাকবেন ! আমিও এঁদের সাথে থাকবো ! আর এদের অতি নিকট হবার জন্য আমিও এদের পাপের ভাগী। আমাকেও শাস্তি দিন !" যম জিজ্ঞেস করলেন - "এটিই কি আপনার শেষ সিদ্ধান্ত ?" যুধিষ্ঠির শান্ত, দৃঢ় ভাবে বললেন - হ্যাঁ। আমি এই নরকেই আমার প্রিয়জনদের সাথে থাকবো।
যুধিষ্ঠিরের কথা শেষ হবার সাথে সাথে নরক অন্তর্হিত হলো। যুধিষ্ঠির অবাক হয়ে দেখলেন তিনি স্বর্গের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। "হে ধর্মরাজ !"- যম বললেন ! "কুরুক্ষেত্রে আপনি একটি মহাপাপ করেছিলেন, পুত্রশোকে কাতর এক পিতা আপনার কাছে সত্যকথার আশা করেছিল। কিন্তু সেই দ্রোনাচার্যকে আপনি মিথ্যা বলেন ! তাঁকে অর্ধসত্য বলে মায়া ছলনা করেন ! অশ্বত্থামা নামে হাতীর মৃত্যুকে উপলক্ষ করে — "অশ্বত্থামা হত" বলে দ্রোণকে হত্যা করেছ। 'ইতিগজ' কথাটা নিম্নকন্ঠে বলার জন্য মহামতি দ্রোণ তা শুনতে পাননি। তাই সেই পাপে আজ আপনার নরক দর্শন হলো ! আমি আমারই মায়া বলে আপনাকে নরক দর্শন করালাম ! এইবার আসুন ! আপনার সমস্ত আত্মীয় স্বর্গে আছেন, তার আগে আপনি পবিত্র ঝর্ণায় স্নান করে শুদ্ধ হন ! তারপর তাদের সাথে দেখা করবেন !"
🍂
অতঃপর যুধিষ্ঠির যমরাজকে সঙ্গে করে স্বর্গে উপস্থিত হলেন। যম বললেন, মহারাজ ! আপনার স্বর্গে আগমনের সাথে সাথে দ্বাপরযুগের লীলাখেলা সাঙ্গ হলো ! দেখুন ! অষ্টবসুর জ্যেষ্ঠ দ্যহোকে, যিনি ভীষ্ম রূপে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। দেখুন বৃহস্পতিপুত্র দ্রোনাচার্যকে। আমারই একটি অংশ বিদূর হয়ে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়। দেখুন চন্দ্রদেবপুত্র বুধ যিনি অভিমন্যু হয়ে পৃথিবীতে জন্মান। দেখুন ১২জন আদিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিশাখ অর্থাৎ কর্ণকে। দেখুন গন্ধর্বরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে। দেখুন বিষ্ণুর দ্বার রক্ষক নরকে - যিনি আপনার ভাই অর্জুন হয়ে জন্মান। দেখুন কলিপুত্র দুর্যোধন এবং শকুনিকে ! তাদের শ্রীবিষ্ণু পৃথিবীতে পাঠান কেবল মাত্র আপনাদের পাঁচভাইকে একসূত্রে গেঁথে রাখার জন্য। পার্বতিসখী জয়া কুন্তী রূপে এবং বিজয়া গান্ধারী রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। সবশেষে যম বললেন - হে মহাত্মা ! সময় এসেছে নিজের আসল রূপ উপলব্ধির। আপনি আর কেউ নন মুনি বিবস্বান ! এই কথা শুনে যুধিষ্ঠির আত্মঅবগত হলেন এবং সাথে সাথে তার সামনে আবির্ভাব হলো শ্রীকৃষ্ণের।
"হে আমার অনুচরবৃন্দ ! দ্বাপরের শেষে আমি এই রূপে আবির্ভূত হয়েছিলাম ! আমি আবার এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হবো। যখন কলিযুগের পাপ আর ধরিত্রীর পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হবে না তখন আবার আমি এই ধরিত্রীকে পাপ মুক্ত করে সূচনা করবো নতুন কালের !"
সবাই করজোড়ে যুগাধিপতিকে প্রণাম করলেন।
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপথে। গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহস্তুতে।।
নম ব্রহ্মণ্য দেবায় গো ব্রহ্মণ্য হিতায় চ। জগদ্ধিতায় শ্রীকৃষ্ণায় গোবিন্দায় বাসুদেবায় নমো নম:।
পরবর্তী অংশ ৪১তম পর্বে.....
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী
0 Comments