জ্বলদর্চি

আমার অনুভূতিরা পর্ব - ৭ (তিনটি কবিতা)/সুবর্ণা নাগ


আমার অনুভূতিরা 
পর্ব - ৭ (তিনটি কবিতা)

সুবর্ণা নাগ 



সঞ্জীবনী 
 
আমি বিশ্বাস করি,
বেণীমাধব, অমলকান্তি বা বনলতা সেনরা - বেঁচে আছে।
না শুধু কবিতায় নয়,
চরিত্রে, অস্তিত্বে, ভূমিকায়।
এই এইখানেই কোথাও!
না, আজ তারা কেউ আর কাঙ্ক্ষিত নয়। 
বেণীমাধবের বাড়ি আর কেউ যেতে চায় না,
অমলকান্তি কর্পোরেটের দাস আর বনলতার চুল পাতলা হয়ে আসছে।
কবিতারা আজকাল ফুটপাথ
দিয়ে হেঁটে যায়। 
চেহারাটা যেন, সংসারের ভার বইতে বইতে  চল্লিশেই বুড়িয়ে গেছে, এমন।
মাঝে মাঝে মৌনতা ভেঙে 
কেউ অপ্রাসঙ্গিক যৌনতা আনে,                 
 বুড়ো চামড়ায় প্রসাধনের মতো!

আমি চাই, জরায় না জড়িয়ে
আবার কোনো 
নীরা, সুধা , বামী বা অমিত 
অমর হোক।
আমি চাই এদের আবার 
ডাকনামে ডাকা হোক।
পড়ুয়ার ঠোঁটে মৃত সঞ্জীবনী সুধা
লেগে থাক ।।


বিপরীতে 

তুলোর বালিশে শুয়ে 
বড়ো কঠিন জীবন,
যেমন বিকেলের রোদ আছে,
কৈশোর নেই।

শেষ পাতে মিষ্টির পরেও 
তিক্ত হিসেব বাকি।
বৃষ্টির জমা জলে আর ,
কাগজের নৌকো ভাসে না ।

বাজারে সস্তার দরাদরির পর 
দাম দিয়ে বিরক্তি কেনা।
বেলাগাম সুখ আছে- 
 তবু তৃপ্তি নিরুদ্দেশ!



পুরুষ, তুমি 

সতেরোটা পর্দা সরালে,                          
পুরুষের মন ছোঁয়া যায়।
হাসি চাপা তার কান্নার 
হদিশ পাওয়া দায়।
বাবা গত হলে মন খুলে কাঁদে না,
পাছে মা আরও ভেঙে পড়ে।
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঘিরে চারপাশ,
আড়ালে দু ফোটা ঝরে।
স্ত্রীর আবদার মেটাতে সে 
নিজের শখ দেয় যে বেচে,
শখের ঘড়ি, শখের জ্যাকেট 
তালিকার সেই নিচে।
ছেঁড়া বুটে মাড়িয়ে আসে, 
তার যা কিছু ছিলো বরাদ্দ।
পুরুষের যেন আবেগ বারণ,
সে কঠিন হতেই বাধ্য।
ধর্মে কর্মে ন্যায় নীতিতে 
পান্ডব পুরুষই গৌরব,
ছলে, হিংসায়, মানহানিতে 
দল বেঁধেছিলো কৌরব।
বিধাতা পুরুষ সম বন্টনে 
মন দিয়েছেন সৃষ্টিতে,
সেও পুরুষ, এও পুরুষ 
তফাৎ শুধু দৃষ্টিতে।
পিতা পুরুষ, প্রেমিক পুরুষ 
এ বিশ্ব পুরুষ-প্রকৃতি,
সুখে দুঃখে পরিপূরক 
 ভালোর মাঝেই বিকৃতি! 
নীরব তাদের যন্ত্রনারা 
অট্টহাসি বজ্রনাদে,
তারও জেনো কষ্ট হয় 
সংসার যার শক্ত কাঁধে।
গোপন ব্যাথার দমকা চাপে 
ওদেরই হৃদয় বন্ধ হয়,
আমি জানি, তুমিও জানো 
সব পুরুষই মন্দ নয়।

Post a Comment

0 Comments