দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
আজ ২৫ শে জুলাই "বিশ্ব আইভিএফ দিবস" এই দিবসটি নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে এক বরদানের এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী ঘটনার দিন।এই পদ্ধতিটি না এলে, আজ সারা বিশ্বে বহু দম্পতি মা-বাবা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত হতেন।
প্রতি বছর, ২৫শে জুলাই, বিশ্বব্যাপী আশা এবং অলৌকিকতার দিন পালিত হয়, ২৫শে জুলাই বিশ্ব আইভিএফ দিবস।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রজনন ওষুধের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে, বন্ধ্যাত্বের সাথে লড়াই করা লক্ষ, লক্ষ দম্পতিকে মাতৃত্ব-পিতৃত্বের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছে।
আইভিএফ কি?
ইন ভিট্রো ফার্টিলেশন (IVF) হলো,একটি বৈপ্লবিক সাহায্যকারী প্রজনন প্রযুক্তি, যা এমন দম্পতিদের সাহায্য করে, যাদের মা-বাবা হওয়ার সমস্ত পথ ও লড়াই বন্ধ হয়ে যায় এবং এর ফলে একটি সন্তানকে ধারণ করতে পারেন। আইভিএফ একটি জটিল ধারার চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডিম্বাশয় থেকে ডিমের পরীক্ষা করা হয়, তারপর শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। এবং পরবর্তীতেভ্রূণ জরায়ুতে স্থানান্তরিত করা হয়।
🍂
আরও পড়ুন 👇
এই দিবসের তাৎপর্য অনেক।
এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে, আমরা শুধুমাত্র সেই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কথাই স্মরণ করি না, যা আইভিএফ কে সম্ভব করে তুলেছে, সেই সাথে এই আবেগপূর্ণ যাত্রায়, যাত্রা শুরু করা ব্যক্তি ও পরিবারের স্থিতিস্থাপকতা, প্রজনন সচেতনতা এবং শক্তিকেও সম্মান ও স্বীকার করি।
আইভিএফ এর ইতিহাস খানিকটা এরকম-
দেশের প্রথম আইভিএফ শিশুর জন্ম ২৫শে জুলাই,১৯৭৮সালে ইংল্যান্ডে হয়েছে এবং সেই কারণেই বিশ্ব আইভিএফ এই দিন বেছে নেওয়া হয়েছিল, যাকে বিশ্ব আইভিএফ দিবস বলা হয়ে থাকে।
একটি আইভিএফ ক্লিনিক, ভ্রূণ পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা একজন মহিলার দ্বারা নতুন জীবন তৈরি করার জন্য তৈরি থাকে। ভ্রুণ, নারী পালন করতে সাহায্য করেন। পরীক্ষাগার গুলি ক্লায়েন্টদের ডিম্বাণু, শুক্রাণু বা ভ্রূণ তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে পরিচিত হন।
২৫শে জুলাই,১৯৭৮ সালে, লুইস জয় ব্রাউন ইংল্যান্ডে আইভিএফ এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী প্রথম সন্তান ছিলেন। সেই থেকে, আইভিএফ সেই দম্পতিদের জন্য আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যাদের মা-বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখায়, অবশ্যই যারা বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাই ব্রাউন এর জন্মদিনের দিনই বিশ্ব আইভিএফ দিবস হিসাবে স্বীকৃত।
উন্নত প্রযুক্তির কারণে, আইভিএফ বছরের পর বছর ধরে আরও বিকাশিত হয়েছে। বিশ্ব আইভিএফ দিবসে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বিশ্বের প্রত্যেকটা মানুষ সম্মান জানাই। আইভিএফ-এর উপযুক্ত হিসাবে পরিচিত,প্যাট্রিক স্টেপটো এবং বব এডওয়ার্ডস, যারা প্রথম দেশের প্রথম 'টেস্ট টিউব' শিশু করেছিলেন তাদেরও সম্মান জানানো হয় এই দিনে।
বছরের পর বছর ধরে আইভিএফ প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে আইভিএফ প্রযুক্তিরও অগ্রগতির ঘটেছে সমানভাবে।
আইভিএফ এর গল্পটি শুরু হয়েছিল কুড়ি দশকের মাঝামাঝি, যখন এই প্রাসঙ্গিক চিকিৎসা বন্ধ করার ঘটনা তৈরি হয়েছিলো,ঠিক সেই সময আইভিএফ এর আবিষ্কার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলো চিকিৎসক দ্বয়কে।১৯৭৮সালে প্রথম আইভিএফ এর জন্ম হয়েছিলো,দুই বিজ্ঞানী চিকিৎসক রবার্ট এডওয়ার্ডস, একজন সরকারি চিকিৎসক এবং জীববিজ্ঞানী এবং স্ত্রীরোগ আক্রমণ ডঃ প্যাট্রিক স্টেপটোর মাধ্যমে আইভিএফ এর দ্বারা। এই শিশু হলেন, লুইস ব্রাউন। এই যুগান্তকারী অর্জন, প্রজনন প্রযুক্তিতে ভবিষ্যত উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছে।
আইভিএফ’ প্রজোনন সারা বিশ্বে কম বেশি আছে। কারণ সন্তান ধারণের সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন আইভিএফ(ইনভিট্রোফার্টিলেশন) এর সাহায্য নেওয় হয়।
আইভিএফ এর প্রয়োজন কতগুলি কারণে হয়ে থাকে, সেগুলি হলো,
ফ্যালোপিয়ান টিউবের ক্ষতি বা ব্লকেজ:-যদি মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলি ব্লক বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, শুক্রাণু এবং ডিম্বাণ মিলিত স্বাভাবিক পথকে বাঁধা দেয়, তবে আইভিএফের সাহায্য নেওয়া হয়।
পুরুষের বন্ধ্যাত্ব-যখন একজন পুরুষের শুক্রাণুর গতিশীলতা ও সংখ্যা কম থাকে সাধারণত সেই সময় পুরুষের বন্ধ্যাত্ব আসে। তখন আইভিএফ এর সাহায্য নেওয়া হয়।
এন্ড্রোমেট্রিওসিস:-আইডিয়ার এন্ড্রোমেট্রিওর ক্ষেত্রে, যেখানে জরায়ুর আস্তরণে জরায়ুর বৃদ্ধি পেতে পারে, এর ফলে সন্তান ধারণে অক্ষম হয়, তখনও আইডিএফ এর সাহায্য নেওয়া হয়।
দম্পতির বন্ধ্যাত্ব:-যখন ডায়াগনষ্টিক এর মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বের কারণ নির্ণয় করা যায় না, তখন আইভিএফ এমন একটি প্রযুক্তি,যা বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উন্নত মাতৃত্ব:-একজন মহিলার বয়স বাড়ার সাথে, সাথে তার অক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই সময় আইভিএফ একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
বারবার অসফল চিকিৎসা:- যদি চিকিৎসার মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভধারণ (আইইউআই) সফল হতে পারে না, তাহলে আইভিএফ পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন ডিসঅর্ডার : যে সকল ক্ষেত্রে উভয়ের বিভিন্ন ডিসঅর্ডার থাকে এবং সেই কারণে তারা সন্তান ধারণে অক্ষম থাকেন অথবা জিনগত বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা থাকে, এই সময়েও আইভিএফ-এর সাহায্য নেওয়া হয়।
সমকামী দম্পতি-আইভিএফ সমকামী দম্পতিদের শুক্রাণু বা ডিম্বানু ব্যবহার করে বা দাতা গ্যামেট এবং গ্রুপ বিকাশের মাধ্যমে জৈব সন্তানধারণ করতে পারেন।
একক মহিলা:- অবিবাহিত মহিলা প্রাথমিক দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে আইভিএফ এর মাধ্যমে জৈবিক ভাবে সন্তান ধারণ করতে পারেন।
আইভিএফ পদ্ধতিতে ৫টি ধাপ আছে। সেগুলো হলো..
উদ্দীপনা:-আইভিএফ এর জন্য উদ্দীপনার প্রয়োজন।এই সময় ডিম্বাণু নিরীক্ষণের জন্য রক্ত পরিক্ষা এবং আল্ট্রাউন্ড করা হয়।
ডিম পুনরুদ্ধার:-শরীর থেকে ডিম অপসারণের জন্য ফলিকুল অ্যাসপিরেশন করা হয়।
গর্ভধারণ এবং নিষিক্তকরণ:- এই পদ্ধতিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেক ঘটানো হয়। যদি নিষিক্ত গ্রুপ কম থাকে এবং ভ্রূণ ন হয়, তাহলে ইনট্রাসাইটো স্পার্মিক ইনপ্লাজম সক্রিয় (ICSI) করা হয়।
ভ্রূণ সংস্কৃতি:-এখানে, নিষিক্ত ডিমগুলি ভ্রূণ গঠনের জন্য বিভক্ত হচ্ছে কিনা,তা পরীক্ষা করার জন্য বা ভ্রূণ ভালোভাবে উদগত হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা হয়।
ভ্রূণ স্থানান্তর: এরপর ভ্রূণ বড় হয়ে, ইমপ্লান্টেশনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণ নিষেকের তিন থেকে পাঁচ দিন পরে হয়। তারপর ভ্রুণটি জরায়ুতে ছেড়ে দেওয়া হয়। গর্ভধারণ নিশ্চিত করার জন্য একটি গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা যেতে পারে।
সারা বিশ্বের বহু দম্পতিকে আশার আলো তথা সন্তান সুখ দিয়েছে এই আইভিএফ পদ্ধতি। তাই বর্তমানে এই পদ্ধতিটি বহুল প্রচলিত ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
0 Comments