গুচ্ছ কবিতা
অজিত দেবনাথ
ডুবে যাওয়া সূর্যের কাছে
ডুবে যাওয়া সূর্যের কাছে
একটি দিন মেঘদূত হয়ে খুঁজে নেয়
আসন্ন অন্ধকারের মৃদঙ্গ
কীভাবে একটি যাপিত দিন রেখে যায় নখের আঁচড়ে
আজব নেশার অন্ধতাপ
টুকরো স্মৃতি কী নিদারুণ কান্না হয়ে জমে ঝিমিয়ে পড়া পাকস্থলীতে, গিটারের নির্মোক তারে
ভাঙনের ওপারেও থেকে যায় কিছু
শূন্যতা,
শপথবাক্য, কিছু অস্পষ্ট প্রার্থনা
তিল তিল করে গড়ে তোলা হিসেবের ভগ্ন সাঁকো , মন খারাপের কিছু পঙক্তি
বোতাম খুলে বেরিয়ে আসা ব্যথার পারদ
ডুবে যাওয়া সূর্যের কাছে ছেঁড়া সুতো হয়ে ভেসে যায় কুয়াশা-জড়ানো রেলিঙের ভিজে দেশলাই
শ্বাশত দ্বীপের স্রোত-টানে ডুবে আগলে রাখা স্মৃতির বোবা আর্তনাদ
সমস্ত ভাঙনের পরেও জেগে থাকে আকাশের শেষ তারা
ধ্বংসের সীমান্তে ব্যাকুল হয়ে ভিজে সৃষ্টির ভরা কোটাল।
ধুলোবন্দি তাঁবু
তবু কেউ মনে রাখে না
অদৃশ্য হয়ে যাওয়া জ্যোৎস্নার অন্তহীন সৃজন
শিশিরে ভেজা বাঁশপাতার প্রণামী বাক্স
কত অনুপম শব্দ ঝরে
ডুবে নিশ্বাসের পোড়া সলতে
শূন্যে ভাসে সোনালি মথের অকৃপণ উচ্ছ্বাস
চোখের ষড়যন্ত্রে ভেঙে যায় আধপোড়া ধূপকাঠি
উদাসীন চিবুকে নীরব দহন
অপ্রকাশিত শিশিরের তীরবিদ্ধ শোক
আনমনে ভিজে জীবনযাপনের কত খ্যাপা ইস্তাহার
মধ্যরাত্রির স্বপ্নে জড়ায় পাণ্ডুলিপির দীর্ঘনিশ্বাস
জেগে থাকে রুমালের ভাঁজে
নৈঃশব্দ্যের পুনর্বিন্যাসে
মরণব্যাধির ঘামমোছা স্মৃতিটুকু
শুধুই ঝরে উৎসবের শস্যে
জানি না কীভাবে হাঁফধরা বৃষ্টিফোঁটা
ছুঁয়ে যায় শাশ্বতী দ্বীপ
শব্দের চুম্বনে লিখে প্রতীক্ষার অনিকেত অন্ধকার
পাখির ঠোঁটে খসে পড়া বিবশ তারার অশ্রু আবহ
ভেঙে যায় অসমাপ্ত কথার নোঙর
উড়ন্ত বালির প্রহারে
কেউ মনে রাখে না উত্তপ্ত নদীর বাঁধভাঙা ঝঞ্ঝাট
নিকানো উঠোনে উচ্ছল কাঁদার বাঁক
আর কুয়াশা-ঘেরা অস্পষ্ট স্মৃতির
আকাট প্রপাত
অশ্রুর নির্ঘুম শুধু তাকিয়ে থাকে
ভাঙাচোরা সাঁকোর ওপারে গড়ে ওঠে
কাঁচঘরের মতো কোনো ধুলোবন্দি তাঁবু।
🍂
আরও পড়ুন 👇
ঈশ্বর
আমার পুজোর বেদিতে ছিল না কোনো ঈশ্বর
ছিল না প্রবাদ বাক্যের মতো কৌঁসুলি প্রবচন
রং-ওঠা মূর্তির দিকভ্রান্ত ছায়াপথ
টেনে নিয়ে যায় ধস নামা পাহাড়ের কাছে
নিরীশ্বরের দবদপে শিখা
জড়ায় হেমন্তের অনিবার্য কুয়াশায়
আগলে রাখা অশ্রুর উষ্ণপ্রস্রবণ
ঝরে মেঘদূতের ঊর্মিমুখরে
শুধু শরীর জুড়ে একটা আশ্চর্য নদী
বয়ে যায় ঘাসের বালিশে মাথা রেখে
পূর্ণিমার চাঁদ জল খেতে আসে
নিঃশব্দ আকাশ থেকে অঝোরে ঝরে
নীল বৃষ্টি
পদ্মসায়রের কত অচেনা কন্ঠ
ছেঁড়া কাপড়ের গায়ে ঘুমিয়ে থাকে একটা পূর্ণ জীবন
তরঙ্গবিদ্রোহের শরণাগত
অক্ষরের বন্দর খোঁজে দু-মুঠো পঙক্তি
উড়ন্ত চিলের অকৃপণ বৈভব
আমার ঈশ্বর ভাসে না অলীক শূন্যতায়
মেঘ হয়ে জমে না ঈশান কোণে
পুঁতির মালা হয়ে তুলে না পদ্মবীজ
আগলে রাখে না নৈয়ায়িকের অমীমাংসিত শ্বাসমূল
আমার ঈশ্বর চায় শুধু দু-মুঠো ভাত
শ্মশানে পড়ে থাকা আধপোড়া বাঁশের নীরব দহন।
হেঁটে যাওয়া বৃষ্টির কথা
হেঁটে যাওয়া বৃষ্টির কথা কোথায় যে রেখে যাই
গাঢ় হয় সন্ধ্যা
শূন্যে জড়ায় পরাণভিটে
গাছের শরীর ছুঁয়ে থাকে অপেক্ষায় শীতল হ্রদ
চারপাশে আবছা ছায়ার দ্যূতক্রীড়া
মুখ গুঁজে ঘুমোয় পাথরে আঁকা জোনাকির ভাস্কর্য
দূর থেকে ভেসে আসা ঘুঙুরের বোল রেখে যায় বোধিসত্ত্বের দিনশূন্য রাত
লঘুতাপে পুড়ে শরীর
ঝরে দবদপে পূর্ণ শিখা
নিখুঁত বিন্দু
শূন্যেরই এক ক্ষুদ্র অবয়
আনমনে খসে পড়া শুকনো পাতার নিঃশব্দ অনুপল
আকাশের কোণে খসখসে মেঘের জলাশয়
কুয়াশার কার্নিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে বর্ণহীন তারা
হেঁটে যাওয়া বৃষ্টির ফোঁটা উড়ে যায় বাসন্তী হাওয়ায়
ঘাসফসলের জমিতে, বিলুপ্ত রেললাইনের অবহেলিত পাথরে
স্মৃতিভ্রংশের মতো কিছু মোহমুগ্ধ পঙক্তি
ভগ্নাংশের মতো পুড়ে গলিত দেহ
আবহে বাজে নিশাচর সঙ্গীত
ভাটিয়ালি সুরে জাগে জোয়ারের প্রণয়
0 Comments