জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা -স্মৃতির সরনী বেয়ে/নবকুমার মাইতি

গুচ্ছ কবিতা

স্মৃতির সরনী বেয়ে
নবকুমার মাইতি

হারিয়েও ফিরে পেতে চাই এ আমার সতত অভ্যাস
 মনের মাধুরী মেখে মনে মনে নিত্য সহবাস

বলেছিলে তুমি একদিন যা সত্য হারাবার নয়
 ভাল যদি বেসেই থাকো জেনো তুমি পাবে যে নিশ্চয়

খুনসুটি, বাক-বিতণ্ডা সবই ছিল তোমার আমার 
অমৃত আস্বাদ মনে বাহিরেতে আলোড়ন ঘন তমিস্রার

 জীবনতো ক্ষণস্থায়ী মায়া মোহ  স্মৃতির বিকার
 তুমি আছো হৃদয় মন্দিরে আর কি পাওয়ার আছে সার? 

 ধুলোখেলা তুলসীতলা, যা ছিল অমরাবতী শৈশবের 
ধূসর স্মৃতির মাঝে সমুজ্জ্বল পথরেখা সার্থক প্রেমের

 অনিন্দিতা আজো আমি কাঁদি, ফিরে পেতে সেই মধুরাত
 সূর্যমুখী বাগান মাঝে  অভয়-রূপ সংকল্পের হাত 

ঐহিকের স্বপ্ন সুখ মরে যায় উত্তাল গাঙের গহীনে 
নদী তীরে কাঁদি একা আবিশ্ব নিঃসঙ্গ তোমা বিহনে

 তুমি আছো, থাকবে তা জানি,
আমার হৃদয় দরিয়ায় 
পার হবো বিরহের নদী,তোমার প্রেমের গড়া নায়


২. অপার্থিব

গত শ্রাবণে আমরা পাহাড়ে গিয়েছিলাম 
জম্পেশ ছিল সেদিনের ট্যুর 
আলো আঁধারির মাঝে জঙ্গল ঘেরা আমাদের বাসা 
সামনে সুবিস্তৃত লন
 নদী বিভাজিকায় মিলন মধুর রাত
ঝর্ণার জল-কল্লোল ,পূবালী হাওয়া 
অনিন্দ্যসুন্দর ছিল ভ্রমণ পথ 
সারি সারি বনঝাউ, ধূ-ধূ বালির চর 
নিরিবিলি রাতে জোছনা আলোয়
 পাহাড়ি টিলায় বসেছিলাম দু'জন
 আগামীর অনাস্বাদিত ভবিতব্যের কথা ভেবে 
যখন সম্বিত ফেরে ,দেখি শুনশান পৃথিবী 
এক অনন্ত অপার্থিব জগতের মানচিত্র 
ভেসে উঠেছিল নদীর সুনীল জলে
 বড় মায়াময়,বৈদুর্যমনীর মত উজ্জ্বল
 যেমন পরকীয়া প্রেমে মাধুর্য বড্ড বেশি 
পেয়েও হারাতে হয়, আর বেশি পাবো বলে
 বিরহেই সার্থক মিলন,নব অনুরাগ মাঝে!

🍂

৩. নিত্য ধাবমান জীবন

সম্পর্কের রসায়ন সর্বদা সরলরৈখিক হয়না 
সময়ান্তরে বাঁক বদল করে নিভৃতে
 দূর আকাশের গ্রহ থেকে আলোচিত সব ভাষা 
যে ভাষায় কখনো পুরনো হবেনা সংবেদী জীবন
   
 শব্দ ভাষা কথাদের সাথে নিত্যদিনের 
মসকরা নয়,জীবন শৈলীর বিভাজিকা 
শব্দে শব্দে গড়ে তুলি ভাসমান যৌবন 
সৃষ্টির সুরম্য প্রাসাদ,ভালোলাগা রোদ্দুর হাসি
 সমবেত প্রচেষ্টায় বয়ে যাক নিত্য ধাবমান জীবন
 নিভৃত সময়ের সংলাপি মধুকথা...


৪. আমরা পথ চলছি

ভুলতে চেয়েও ভুলে থাকতে পারিনা 
অজস্র চিন্তা রাশি ক্রমশ কুরে কুরে খায় 
সত্তার ঘরবাড়ি,জৈবিক অনুষঙ্গ
 তবুও ভোলা যায় না সেদিনের সেই মুখ 
বিকেলের মায়াবী নরম আলোয় দেখা মুখ 
বিন্যস্ত কেশরাশি,হরিণ চোখের চাহনি 
পলকহীন আমার দৃষ্টি অজান্তে চলে যায় 
দিগন্ত রেখায়, অনন্ত অনুভবে দৃশ্যমান হয় 
তোমার চপল পায়ের ছন্দ,নুপুর নিক্কন 
আশমানী শাড়ির ভাঁজ,স্লিভলেস অন্তর্বাস 
আকাশ গঙ্গার পানে উদ্দাম বয়ে চলা নদী 
সারি সারি ঝাউবন,বলাকার পাখায় উদাসী হিন্দোল
অদূরে পাহাড়ী টিলায় অস্তাচলে দিনের সূর্য 
অভিকর্ষ অনুভব,বড্ড মায়াময় আমাদের মিথুন মুগ্ধতা
 আমরা পথ চলছি শান্তিনিকেতনের দিকে...


৫. উদাসীন কবির দর্শন

কোন এক নৈসর্গিক আলোর সন্ধানে 
পথ চলেছে কবি অনাদি সৃষ্টির পান্ডুলিপি হাতে 
ঝড় বৃষ্টি রোদ কোন দিকেই তার ভ্রুক্ষেপ নেই 
একমাত্র লক্ষ্য অশোক নিলয়, অনন্ত উজ্জ্বল পরমায়ু 
হিংসা ক্রোধ রিরংসা ষড় রিপুর দংশন
 এ জীবনে ক্রমশ অনায়াস করতলগত
 ভোগের সুগন্ধি চন্দন গড়িয়ে পড়ছে 
রাস্তায় পথচারী মানুষের দৃষ্টি পেরিয়ে  
কবি ছুটে চলেছে অনন্ত দ্রাঘিমা জুড়ে 
সীমাহীন ঔদাসীন্যে নগরীর পথে
 মানব মানবীর শরীরী মোহের বিভঙ্গে
 নিদারুন অরুচি ছিল তার, ঘনঘোর তমিস্রা
তাইতো মেহের আলী মতো তারস্বরে 
চিৎকার করে বলেছিল তফাত যাও-তফাত যাও 
নীতির ঘোলা জলে চৌর্যবৃত্তি পরায়ন নেতৃত্ব 
লাথি মারো বিবেকহীন সমাজের বুকে
 শঠতা প্রবঞ্চনা অপ্রেমের নিগড় ভেঙে 
আহ্বান করব সকালের শুদ্ধতম ভোর 
স্বর্গলক্ষ্মীর হাত থেকে গড়িয়ে পড়া অমৃত আস্বাদ!

Post a Comment

0 Comments