জ্বলদর্চি

মহাভারতের স্বল্পখ্যাত কিছু চরিত্র/চতুর্থ পর্ব /প্রসূন কাঞ্জিলাল

মহাভারতের স্বল্পখ্যাত কিছু চরিত্র
চতুর্থ  পর্ব 
প্রসূন কাঞ্জিলাল

বিচুখ্য 


মহাভারতে বিচুখ্য নামক এক রাজার কথা বলা হয়েছে। গোমেধ যজ্ঞে গোহত্যা দেখে সেই রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিলেন। শান্তি পর্বে ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বিচুখ্যের কাহিনী বলেন। ----

” হে ধর্মরাজ! মহারাজ বিচুখ্য প্রাণীগণের প্রতি সদয় হইয়া যাহা বলিয়া গিয়াছেন এক্ষণে সেই পুরাতন ইতিহাস কীর্তন করিতেছি,শ্রবণ কর। পূর্বে ঐ নরপতি গোমেধ যজ্ঞে যজ্ঞভূমিস্থ নির্দয় ব্রাহ্মণগণ ও ক্ষতদেহ বৃষকে দর্শন এবং গোসমূহের আর্তনাদ শ্রবণ পূর্বক দয়ার্দ্র হইয়া কহিয়াছিলেন , আহা! গোসমূদায় কি কষ্টভোগ করিতেছে। অতঃপর সমুদায় লোকে গোসমূহের মঙ্গল লাভ হউক।… ” ( শান্তি/ ২৬৫)

এই কাহিনী হতে জানা যায় একসময় গোমেধ যজ্ঞে ব্রাহ্মণেরা গোহত্যা করতেন। কিন্তু গরুর প্রতি করুণা ও গোহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এখানে লক্ষ্য করা যায়।


  সুদেষ্ণা

সুদেষ্ণা ছিলেন বিরাট রাজার স্ত্রী, উত্তর এবং উত্তরার মা, কীচকের দিদি এবং অভিমন্যুর শাশুড়ি। দ্রৌপদী অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন সৈরিন্ধ্রী ছদ্মনামে একবছর এঁর পরিচারিকার কাজই  করেছিলেন।

🍂

  ভূরিশ্রবা

কুরুরাজ সোমদত্তের পুত্র। মহাদেবের বরে সোমদত্ত এঁকে লাভ করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পঞ্চম দিনে ইনি সাত্যকির দশ পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। এর আগে সাত্যকির ঠাকুর্দা যদুবংশের বীর শিনি বসুদেবের জন্যে দেবকীকে হরণ করবার জন্য কুরুবংশের বীর সোমদত্ত তাঁর উপরে কুপিত হলে শিনি তাঁকে লাথি মেরেছিলেন। সেই অপমানের শোধ নেওয়ার জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের চোদ্দ দিনের দিন শিনির নাতি সাত্যকিকে সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা পাল্টা লাথি মেরেছিলেন। এরপরে তিনি সাত্যকির মাথা কাটতে গিয়েছিলেন। অর্জুন তখন যুদ্ধের নিয়ম ভেঙে একটি বিশেষ বাণে ভূরিশ্রবার ডান হাত কেটে দিয়েছিলেন। তখন সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবার জন্য ভূরিশ্রবা যুদ্ধক্ষেত্রেই দেহত্যাগ করবার জন্য যোগে বসলে, সবার নিষেধ অগ্রাহ্য করে সাত্যকি ভূরিশ্রবার মাথা কেটে দিয়েছিলেন।


দেবী অনসূয়া

দেবী অনসূয়া হিন্দু কিংবদন্তিতে অত্রি নামে এক প্রাচীন ঋষির স্ত্রী ছিলেন। অনসূয়া ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহশ্বেরকে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে পুত্রস্নেহে লালন-পালন করেছিলেন। পরে তিন দেবতাই তাঁকে আশীর্বাদ করতে চাইলে অনসূয়া তাঁদের তিনজনকেই নিজের পুত্র হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন। তখন তাঁর আকাঙ্খা মত— তাঁর গর্ভে— ব্রহ্মার অংশে সোম, বিষ্ণুর অংশে দত্তাত্রেয় এবং মহেশ্বরের অংশে দুর্বাসা জন্ম নিয়েছিলেন। চিত্রকূট পর্বতে অত্রি ঋষির আশ্রমে রামচন্দ্র পৌঁছাবার পরে অনসূয়াই সীতাকে দিব্য বরমাল্য, অঙ্গরাগ, গন্ধানুলেপন এবং নানাধরণের অলঙ্কার উপহার দিয়েছিলেন। রামায়ণের বর্ণনানুসারে, তিনি তার স্বামীর সাথে চিত্রকূট বনের দক্ষিণ পরিধিতে একটি আশ্রমে বাস করতেন।তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং সর্বদা অনাড়ম্বরভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে ধর্মানুশীলন করতেন। এগুলো তাকে অলৌকিক ক্ষমতা অর্জন করতে সাহায্য করেছিল। কাহিনী অনুসারে, অনসূয়া আকাশে ঝড় তুলেছিলেন, দেবতাদের অস্বীকার করেছিলেন এবং মন্দাকিনী নদীকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছিলেন।

( ক্রমশ  )

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments