বার্লিনের ডায়েরি --৩৭ পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য
(জলকন্যা ভেনিসের পরবর্তী অংশ )
আড্রিয়াটিক সাগরের অগুনিত ঢেউয়ের পারাবারে বিষণ্ণ রাতের আঁধার মৃদুপায়ে নেমে এসে চুপিসাড়ে জমিয়ে বসলো জলপুরীর অলিগলিতে। কানপেতে থেকেও তার ব্যগ্র পদধ্বনি শ্রী বা ঋষভ খেয়াল করেনি। আসলে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এই দ্বীপপুঞ্জর প্রধান স্টেশন সান্তালুসিয়া কিন্তু ওরা নেমেছিল মূল ভূখণ্ডের ষ্টেশন মেস্ত্রেতে। ভেনিসের গোলক ধাঁধায় হিমঝরা রাত গড়ালো আপন খেয়ালে । ঋষভ হেসে বলে অন্তহীন পথের সাথী হয়ে বেড়াতে বেরিয়েছি। নতুন শহরের সাথে পরিচিত হতে যদিও বেশ ঝুঁকি তবে দেশ আবিষ্কারের আনন্দটাও অস্বীকার করা যায় না কী বলো শ্রী ? সাড়াটি না দিয়ে কপট রাগে গটগট করে শ্রী এগিয়ে যায় লিপির নির্দেশিত পথে। একাকী অতক্ষণ লাগেজ পাহারা দিয়ে বোকার মত পথে দাঁড়িয়ে থাকায় ওর যথেষ্ট বিরক্ত লাগছে !
জলকন্যার বুকে শহর।
সাদা পোশাকে দীর্ঘদেহী রিসেপশনিস্ট ভদ্রলোকটি পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন , ভেনিসে বেড়াতে আসার আইনি কিছু ফর্মালিটি সারার পর হোটেলের রুমের চাবি পেয়ে প্রশস্ত টানা লম্বা সাবেকী আমলের অলিন্দ পার হয়ে চওড়া কাঠের সিঁড়ি বেঁয়ে ঘরে পৌঁছে অদ্রিজা বিস্মিত। বিশালকায় ঘরটিতে ভেনিসিয় ডিজাইনের কালোবার্নিশের ফার্নিচারে সাজানো ঘরটি । মেঝেতে নক্সাদার পার্শিয়ান কার্পেট ,ছাদ থেকে বেশ বড় আকারের ঝাড়বাতি ঝুলছে। সাগরের জলে পাল তোলা জাহাজে নাবিকের ভেসে যাওয়ার দৃশ্যর সাথে মুখোশকার্নিভাল ও রিয়ালটো ব্রিজের ছবির অপূর্ব দৃশ্যতে ওয়ালগুলো সু সজ্জিত । বাইরে রাতের অন্ধকারের নির্জন প্রকৃতি জন মানবের সাড়া নেই নিঝুমপুরী।ঘরের সংলগ্ন ব্যালকনিটির দরজা খুলে শ্রী দাঁড়ালে সামুদ্রিকএলোমেলো শীতল বাতাস যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে। ঋষভ ও হাতের সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে সুখটান দিতে পাশে এসে দাঁড়াল। স্ট্রীট লাইটের হলুদ আলোয় বাঁ দিকের জলাভূমি ঘেঁষে রয়েছে শ্যাওলা সবুজ ঘাসের জঙ্গল। চারদিকে কেমন রহস্যময়তায় ভরা !এতো লম্বা ঘাস ও আগে কখনো দেখেনি। আবছাআলোয় কিছুই বোঝা যায় না। জলে ভাসছে ভ্যাপোরাতি বা ওয়াটা বাস। হোটেলের পাশের ক্যাম্পাসে ইতালীয়ান ফুডের রেস্তোরাঁ পিজ্জা ফ্যাক্টরি বড়ো এক শপিংসেন্টার ও রয়েছে । এই খাবারের শপ টিতে ঢুকে কত বিভিন্ন রকমের পিৎজা শো কেসে সাজানো এবং প্রত্যেক টি পিৎজার পাশে নাম এবং উপকরণের চমৎকার বর্ণনা দেওয়া হ্যাম স্যামন চিকেন বিফ ছাড়া ও আরো কত কি অচেনা নামের সী ফুডের ফিলিং দেওয়া সুন্দর দৃষ্টি নন্দন করে রঙ মিলিয়ে খাবারের ডিশ সাজানো। ঋষভ ততক্ষণে চেয়ারে বসে পড়েছে। সে আর কোথাও যেতে রাজী নয় , ডিনারের পাঠ এখানে চুকিয়েই হোটেলে ফিরবে। চিকেনের সাথে লাল বেবী টমেটো সবুজহলুদ ক্যাপসিকাম দিয়ে টপিংকরা পিৎজ্জার সাথে কাপুচিনা কফির অর্ডার দিয়ে ফায়ার প্লেসের কাছের টেবিলটিতে বসে শ্রী দেখেছিল ইতালীর গর্ব বিশ্ববরেণ্য রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত চিত্র শিল্পী দের আঁকা ছবির রিপ্লিকা দিয়ে রেস্তোরাঁর দেওয়ালটি সাজানো। দাভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো, রাফায়েলের সাথে তিনতরেত্তোর মনোমুগ্ধকর প্রতিকৃতি ও শোভিত রয়েছে।
🍂
আরও পড়ুন 👇
টেবিলে অদ্রিজার পছন্দের মোজারেলা চীজ দিয়ে বানানো অপূর্ব দর্শনধারী পিৎজ্জা। ঋষভ বলে এমন জাদুময় পিৎজ্জা কফির সুগন্ধের টানেই অনায়াসে দুটোদিন এখানে দারুণ কাটবে। কিন্তু কফির খুব ছোট তস্য ছোটো মগে এতো অল্প পরিমান কাপুচিনা খুব কড়া তিতকুটে বিশ্রী স্বাদের কফি দেখে সত্যি শ্রী বিস্মিত হয়ে গিয়েছিল। সাংবাদিক বেবর্তর কাছে শুনেছিল এই বিশেষ কফি শরীর কে খুব তাড়াতাড়ি প্রাণবন্ত ও গরম করে। তবুও ইতালীর বিখ্যাত কাপুচিনা কফির বিশেষত্ব ওরা কিছু বুঝতে পারে নি। যাদের ঘন দুধের এবং চিনি দেওয়া গরম কফি খাওয়ার অভ্যাস তাদের মুখে এই বিশ্ববিখ্যাত তিতকুটে কফি মোটেই ভালোলাগে নি। তাই ক্রিম সমেত মিল্ককফির আবার অর্ডার দিয়ে মহানন্দে হোটেলে ফিরে সুসজ্জিত খাটের সাইড টেবিলের পাশে রাখা ম্যাগাজিন টি হাতে নিয়ে নরম বিছানায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শ্রী চলেছে গন্ডোলা ভাসা প্রাচীন ভেনিসিয়ার রাজপথে । ঐতিহাসিক শহরের ঐতিহ্য।
ভেনিসিয়া পৃথিবীর এক বিস্ময় বানিজ্যিক বন্দর ,সেতুতে ঘেরা অনেক দ্বীপের সমষ্টি যেখানে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। জলের মধ্যে গেঁথে থাকা আধুনিক সভ্য সমাজের উপযুক্ত সাজে গড়ে তোলা প্রাসাদ ও শহরের বাড়ি ঘর গুলো। কিছু কিছু প্রাসাদ ভবন শপিং মল সিনেমা হল অপেরা হাউজ হিসেবে ও ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। নান্দনিক কারুকার্য্যে সজ্জিত জলযানই এই জলমগ্ন ভাসমান শহরের জীবন যুদ্ধে একমাত্র পারাপারের ভরসার ভেলা ।
পাশে আধশোয়া তিতির উদগ্রীব হয়ে শ্রীর দিকে তাকায় বলে ভেনিসের সব গল্প ভারী interesting ,,, অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছো তাইনা ? শ্রী বলে ,ছবিতে যে ক্যানাল গুলো দেখা যাচ্ছে ওর ওপরে একসময়ে ছিল অগুনিত দ্বীপের সারি এই দ্বীপ গুলোকেই আবার নতুন করে গড়ে তোলা হোলো। জলের ওপর শক্ত করে ধরে রাখার জন্য সাগরের গভীরে যেখানে মাটি পাওয়া গিয়েছিলো সেখানে পোঁতা হোলো থাম বা পাইলন। বিলাসী ভেনিস শহরের গরিমা ঐতিহ্যের গল্প শোনাতে শ্রী পৌঁছে গিয়েছে আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগের বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় ।
একসময় পশ্চিম ইউরোপের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল ভেনিসনগরী । তুর্কি ও নরম্যান দস্যুদের যখন তখন হঠাৎ আক্রমণের সময় তৎকালীন রোমের আর এক সমৃদ্ধশালী নগর কনস্টান্টিনোপলস কে সর্বদা সাহায্য করার কারণে পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের সাথে ভেনিসের বন্ধুত্বপূর্ন দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল এবং ব্যবসা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভেনিস সুকৌশলে সফলতা পেয়ে বিশেষ সুবিধা লাভ করেছিল। এই সময় সাইপ্রাস ও ক্রিট দ্বীপে লবণ এবং কাছাকাছি থাকা দেশ গুলোতে মশলা ও শস্যের আমদানি রপ্তানির ব্যবসার জমজমাট প্রসার ঘটার মাধ্যমে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে ভেনিসিয়া এবং বেশ রাজকীয় শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে । ভেনিসের সাথে বহির্বিশ্বের পরিচয় ও সুদৃঢ় হয় । ভূপর্যটক বণিক মার্কোপোলো পশ্চিমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সিল্করুট আবিষ্কার করে চীন দেশে পৌঁছেছিলেন । তিনি মধ্যএশিয়া পার হয়ে সুদূর চীনদেশে ব্যবসা সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রসারের আশায় পৌছোন।সর্ব প্রথম তাঁর লিখিত ভ্রমণ কাহিনীর মাধ্যমে ইউরোপীয়ান দের সাথে চীন ও মধ্য এশিয়ার পরিচয়ের যোগসূত্র গড়ে ওঠে । কথিত আছে এ সময়ে ভেনিসিয়ার ৩,৬০০ নাবিক এবং ৩,৩০০ জাহাজ ভূমধ্যসাগরে ব্যবসা বাণিজ্যে একাধিপত্য বজায় রেখেছিল।
সেই সময়ে জলপথের অপরিসীম বাঁধা বিঘ্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও বিপর্যয় সামুদ্রিক ঝড় বৃষ্টি ,তুষারপাত, জলজ ভয়ংকর প্রাণী ও জলদস্যুর আক্রমণের সাথে লড়াই করে ভেনিসীয় বণিকগণ দেশ দেশান্তরে ব্যবসা বাণিজ্য চালু রেখে রীতিমত সমৃদ্ধময় বিপুল ঐশ্বর্য্যশালী এক বিশ্বশ্রেষ্ঠ দেশ হয়ে উঠেছিল। পুরোনো স্থাপত্য শিল্প দিয়ে গড়ে তোলা ঐতিহ্যে ঘেরা বিশাল প্রাসাদ গুলো আজো তারই নিদর্শন।
শিল্পী সাহিত্যিক রুচিবান মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে সাহচর্য্যে ও পৃষ্ট পোষকতায় এ শহর তিলেতিলে এক সমৃদ্ধশালী নগর রূপে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু জীবনে উত্থান পতনের মত এই দেশ টি তে ও একদিন পতনের কালো ছায়া নেমে আসে। ক্রিষ্টফার কলোম্বাস আমেরিকা মহাদেশের আবিস্কার করলে এবং পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কোদাগামা ভারতবর্ষ আবিষ্কার করলে ভেনিস তার সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক একাধিপত্য হারায়। ফরাশি ইংরেজ ওলন্দাজ দের ঔপনিবেশিক কর্ম কুশলতায় ও বাণিজ্যের সুদক্ষতায় ভেনিস ক্রমশঃ বিশ্ব বাণিজ্য থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
ভেনিসিয়ার উত্থান ও পতনের আলোচনায় সে রাতে ওদের ক্লান্ত আঁখিপাতায় নিদ্রা দেবীর কোমল স্পর্শ নেমে এলো। মা মেয়ের নিশ্চিন্তের ঘুম অবশেষে ভাঙলো ভোরের মায়াবী আলোয়। সাতসকালের কর্মব্যস্ত সূর্য জানলা দিয়ে সরাসরি ঘরে ঢুকে পড়ায় বিছানা আঁকড়ে আলসেমিতে সময়ের অপচয় না করে তিনজনে তৈরী হয়ে নিয়েছিল। জলকন্যার সাথে আজ প্রথম দেখা হবে। সে কী উত্তেজনা শ্রীময়ীর। ভেনিস যেন অধীর আগ্রহে সেজে কতকাল ধরে বসে আছে ,ওদের আসার প্রতীক্ষায়। শহরের জনপদ পরিক্রমায় সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতায় ওরা পূর্ণ করবে সঞ্চয়ের ঝুলি।
মেস্ত্রে থেকে সান্তা লুসিয়া ষ্টেশনে আসার পথে চোখে পড়লো দুদিকেই জলাভূমি। মাঝে মাঝে খুব দূরে ছোট্টছোট্ট গ্রামের সারি। প্রাচীনকালের লাল ইটের দেওয়াল প্লাস্টার খসে গিয়ে কঙ্কালের মত হাড় হাভাতে চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ি গুলো। অদ্রিজা বলে এমন টা তো ইউরোপের আর কোনোও শহরে কোথাও দেখেনি। হয়তো ওই দূরের লোকালয়ের ঘরবাড়ি গুলো বোমার আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে পরিত্যক্ত। নয়তো স্পষ্ট এক দারিদ্র্যের সঙ্গে সংঘর্ষকরে চলেছে মাছুড়েদের এই অঞ্চল টা । পুরোনো সোঁদা, গন্ধ মাখা খুব সাধাসিধে জীবনের প্রতিচ্ছবি সর্বত্র বেশ রহস্যাবৃত পরিবেশ।
ভেনিস কে প্রথম দেখাতে এক লহমায় দেখেই শ্রী ও অদ্রিজা অভিভূত । এ যেন অতীতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক এক মিউজিয়াম । সামুদ্রিক নোনা বাতাসের স্পর্শ এসে গায়ে লাগলো।ঋষভ বলে ,পৃথিবীর বুকে যে এত বৈচিত্র্য ময় সৌন্দর্য রাশি ছড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্যে পরিপূর্ন মানুষের নিজের হাতে গড়ে তোলা এমন মায়াবী একটি শহর আছে তা গত রাতের অন্ধকারে চলতে গিয়ে একটুও বুঝতে পারিনি। সকাল বেলার উজ্জ্বল কাঁচা হলদে আলোর স্পর্শে সুন্দরী নীল জলকন্যা চোখ মেলে তাকালো। সাগর জলে প্রাতঃস্নান পর্ব সেরে প্রসাধনের পর ধীরে ধীরে অবগুন্ঠন মেলে অপরূপ সুতনুকার হৃদয় খানি ধরা দিয়েছিলো সূর্যালোকে । এ শহর প্রকৃতই এতো সুন্দর! মনোহারিণী। নিপুন শিল্পীর হাতের রঙ তুলিতে আঁকা ছবিতে দেখা শহরটির মত। ,শ্রীর চোখে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে । দেখ,দেখ -- কী অপূর্ব দৃশ্য !
গথিক স্থাপত্যের শিল্প রীতির সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা বাড়ি গুলোর ঝুলবারান্দা বা ব্যালকনি গুলো যা আজো ভেনিজিয়াদের গভীর রোমান্টিক মননের পরিচায়ক। ঢেউ খেলানো জল প্রবাহের মাঝে জেগে উঠছে প্রাসাদ বাড়ি গুলো কালচে রঙের শ্যাওলা ধরা উঁচু উঁচু পাথুরে দেওয়াল। ভারী মনোরম লাগছিলো এখানে কোনো বড় রাস্তা নেই একটা দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে হবে হেঁটে সেতু পারাপার করে। ছোট ছোট গলি গোলকধাঁধার মত পায়ে হেঁটে চলতে গিয়ে রাস্তা বেশ কয়েক বার তিন জনেই গুলিয়ে ফেলে বারবার এসে ধাক্কা খাচ্ছিলো সুশোভিত কারুকার্য্য মন্ডিত প্রাসাদ গুলোর সামনে। ইতালী ভাষায় জায়গার নাম লেখা কিছুই বোঝার উপায় নেই। রাস্তায় কোনো যান বাহন নেই । অদ্রিজা ঋষভ কে বলে ; কী আশ্চর্য্য --একটাও গাড়ি বাস ট্রাম কিছুই নেই,। কর্ম ব্যস্ত মানুষ জন কে একটা সাইকেল ব্যবহার করতে ও দেখছি না। সব জায়গায় প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম মোটর লঞ্চ ,ওয়াটার ট্যাক্সি , স্পিড বোট বা ভ্যাপরাত্তি । আরএ পাড়া থেকে ও বাড়ি , কাছে দূরে সংযোগ রক্ষা করতে নিত্য দিনের চলার বা পারাপারে সারি সারি গন্ডোলা স্যান্ডোলা ডিঙি নৌকা অনবরত ছুটে বেড়াচ্ছ জল তোলপাড় করে,আলোড়ন তুলে।
গন্ডোলা ভেনিস।
নীলাকাশ হামাগুড়ি দিয়ে নেমে এসেছে সাদা নোনা ফেনায় মাখামাখি মত্ত ঢেউ গুলোর গায়ের ওপর। অপর পারে সারি সারি লাল হলুদ রঙের প্রাসাদ গুলো ছবির মত দাঁড়িয়ে আছে। সুউচ্চগোল গীর্জা ভবনের গম্বুজের শীর্ষ চুঁড়াগুলো সকালের সূর্যের হলুদবরণে হেলান দিয়ে অপরূপ সোনালী মুকুটে সেজেছে। পুরো শহরের বুক জুড়ে থাকা হ্রদের নীল জলে অপূর্ব সুন্দর কারুকার্য্য মন্ডিত প্রাসাদ গুলোর ছায়া প্রতিবিম্বিত হয়ে আছে।মায়ায় ঘেরা প্রাসাদ বাড়ি গুলোর সাথে আকাশে ভেসে বেড়ানো নীল সাদা উড়ো মেঘেদের ও জলে প্রতিচ্ছবি পড়েছে । মৃদু মৃদু ঢেউয়ের তালে নীল জলে ঐ মেঘেরা ও দল বেঁধে সাঁতরে চলেছে খুশির জোয়ারে গা ভাসিয়ে .অবারিত নীলাকাশ প্রতিবিম্বিত হয়ে জলের দর্পণে ভেসে বেড়ায়।
জীবনের প্রাত্যহিক হাসি কান্নার নির্বাক সঙ্গীহয়ে এড্রিয়াটিক সাগরের নীল জলে পৃথিবীর ভাসমান শহরের তালিকায় সর্ব শীর্ষ নামে ভূষিত হয়ে এমন নান্দনিক রোমান্টিক শহর পৃথিবীর ইতিহাসে নিজের অপ্রোতিরোদ্ধ স্থান টি পাকা করে রেখেছে। কোলাহল হীন যান্ত্রিক সভ্যতার ব্যস্ততার শব্দ দূষণ নেই , পেট্রোলের কালো ধোঁয়া নেই ,আছে শুধু প্রশান্তির সুখানুভূতির কোমলস্পর্শ।
0 Comments