জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি --৪১ পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য (জলকন্যা ভেনিসের পরবর্তী অংশ )

মুখোশ কার্নিভাল 
ফ্যাবরিস্ক গিলিয়ানা দ্বীপ

বার্লিনের ডায়েরি --৪১ পর্ব। চিত্রা ভট্টাচার্য্য 
(জলকন্যা ভেনিসের পরবর্তী অংশ )

সাগরের জলে আলোড়ন তুলে তীর বেগে ছুটে চলা ভেপোরাত্তর ডেকে দাঁড়িয়ে রাশিরাশি ঢেউয়ের সাদা ফেনার বারেবারে তীরে আঘাত করে যাওয়া মন দিয়ে দেখছিল শ্রী। ভূমধ্যসাগরের দুরন্ত হিমশীতল হাওয়ার দাপটে বিদ্ধস্থ হয়ে , ডেকের রেলিং ধরে অদ্রিজা এসে ওর পাশে দাঁড়ালো। মাঝ সাগরের গভীরে ঢেউয়ের সাথে রুপালি ডলফিনদের লাইন দিয়ে ভেসে চলার সাথে ডিগবাজি খেয়ে শান্ত জলে আলোড়ন তুলে সাগর পারাপারের মনোরম দৃশ্যতে মা ,মেয়ে বিভোর হয়েছিল। ওয়াটারবাস সাত মিনিট পরেই পৌঁছলো ফ্যাব্রিক্স গিলিয়ানা দ্বীপে। 

ভেপোরাত্তি থেকে জেটিতে নেমে বাইরে বেরিয়ে  শ্রী তার অভ্যাস মত  তিতিরের হাত শক্ত মুঠির মধ্যে চেপে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে পাড়াটির অন্দরের অলি গলিতে প্রবেশ করলো। কত দোকান ! থরে থরে সাজানো রয়েছে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় নানা বিধ টুকিটাকি, রঙ বাহারী জিনিস পত্র। মেলার মত সাজানো দ্বীপটিতে দোকানগুলো ইতালীয়ান ফ্যাশানেবল ভ্যানিটি ব্যাগ,লেডিস জেন্টস পার্স চটি ,জুতো বাচ্চাদের খেলনা ,স্কার্ফ টুপি হেয়ার পিন বেল্ট, আয়না ঢাকা, লেসের কাজ ইত্যাদির সাথে হরেক রকম সাজের জিনিস। 
মুখোশ উৎসব।
ফ্যাব্রিস্ক গিলিয়ানা দ্বীপ

এখানে  অনেক বাংলাদেশী যারা ছোটখাট হকারি ব্যবসার সাথে জড়িত তারা ও  ঘর সাজনোর ফুল সস্তার ছাতা লেডিস ব্যাগ উলেন টুপি সেল্ফিস্টিক ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয়  সামগ্রী পসরায় সাজিয়ে পুলিশী তাড়া লাঞ্ছণা ইত্যাদির চোখ এড়িয়ে বিক্রি করতে  আসে । ছোট্ট এক টুকরো দোকানের মালিক বাংলাদেশীয় রানার কাছ থেকে অদ্রিজা ঘর সাজানোর জন্য একজোড়া ''পোর্শিয়ার ''আদলে বানানো কাঁচের মেম পুতুল কিনেছিল। সেখানেই আলাপ জমে উঠলে , ওদের এই জলের শহরে কষ্ট করে টিকে থেকে  অর্থ উপার্জনের উপায় শ্রী জানলো । অদ্রিজা  বলে ,মাতৃভূমি স্বদেশ ছেড়ে এত দূর দেশে এসে লুকিয়ে এমন ছোটখাট কাজ করছে । প্রতিটা সময় ওদের অসংখ্য বাধা অতিক্রম করে ,পুলিশী নজর থেকে পালিয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে  কারণ ওদের বৈধ ভিসা নেই । অবশ্য অনেকেই এখানে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে আইনি সুবিধার আওতায় এসে ফুডপ্লাজা খুলে স্থিতু হয়েছেন। যদিও ফরাসী ,চাইনিজ ইতালীয়ান রেস্তোরাঁ অনেক বেশী রয়েছে।              

শ্রী ও তিতির উইন্ডো শপিং পছন্দ করলেও কিন্তু এখন কেনা কটার দিকে ও বেশ আগ্রহে গিফ্টের ঝোলা ভরে তুলছে। বিশেষ করে লেসের পোশাকে সজ্জিত টুপি মাথায় কাঁচের পুতুল গুলো দেখলে চোখ ফেরানো যায় না।  ভেনিসের সকল ঐতিহ্যময় হস্তশিল্প শো পিস ক্যালিগ্রাফি এবং ভ্রমণার্থী দর্শক কে আকৃষ্ট করার মুখোশ এই ডান দিকের প্লাজার পাশ দিয়ে গলিটি তে দোকান ময় ভরে আছে।                             

শ্রীময়ী স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায়। প্রায় দশ বছর আগের দেখা ভেনিস। ঘোরার জায়গাগুলো স্পষ্ট মনে পড়ে। তবে পরপর নয়। ছেড়া ডায়রিটার এই অংশের পাতা হারিয়ে গিয়েছে। তাই কিছুটা কল্পনা কে সঙ্গী করে বাস্তবের ছবি আঁকতে বসে। 

  ফ্যাব্রিক্স গিলিয়ানাতেই যেন দেখেছিল বিপনী কেন্দ্রগুলোয় বিভিন্ন রকমের মুখোশের সম্ভার। বেশ আশ্চর্য্য হয়েছিল বিভিন্ন প্রকারের মুখোশ গুলো দেখে।   
         প্রতিবছর স্প্রিঙ ও অটমে অনুষ্ঠিত ভেনিস  কার্নিভাল কে কেন্দ্র করে অসাধারণ শৈল্পিক রুচির সমন্বয়ে চমৎকার রংবেরঙের নানা ধরণের মুখোশ তৈরীর কারখানা ও কত লোকের রুজি রোজগার।  প্রতি টা দোকানে রং বেরঙের বিচিত্র বাহারী সব মুখোশ সাজানো । স্থানীয় এক মুখোশ বিক্রেতা লিটন সাহেবের কাছে রাশিরাশি মুখোশ থাকায় সেখানে বেশ গল্প জমে উঠলো। ইতালীর ভেনিসে প্রতিবছর দুইবার যে বিখ্যাত মুখোশ কার্নিভালের উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তাতে ঐ সময় সর্বত্র  লক্ষ্য লক্ষ্য মুখোশ বিক্রি ও তৈরীর শুরুহয়। মাসব্যাপী উৎসবে প্রতিদিনই দর্শনীয় বিচিত্র সব মুখোশ পরে প্রায় সবাই ছদ্মবেশে পথে নামেন। এবং সারা বছর ধরেই সমস্ত শহর জুড়ে চলে তার কেনা বেচা। একেকটা মুখোশ একেক রকমের রং চঙে পুতুলের মত , কোথাও পুরো মুখ ঢাকা বিদ্ঘুটে ভূতের বা কালো তে সাদা দিয়ে আঁকা কঙ্কালের মত। কোনটা  বিশালাকৃতির বীভৎস চেহারার রূপকথার গল্পে রাক্ষস। কোনটা আবার  চোখ নাক  ঢাকা তো ,কোনো টা পাখির মত পালক ময় লম্বা ঠোটঁ বিশিষ্ট। বিচিত্র কাল্পনিক পাখিপাখালি বা উদ্ভট প্রাণীর মত। 
মুরানো দ্বীপ 
কাঁচ শিল্প

  পুরোনো দিনের কথা শ্রী র মনে পড়লে তিতির কে বলে --পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার গ্রামগঞ্জের ছৌ উৎসবে দেখা মুখোশ নাচের কথা। চড়িদাগ্রামে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিল নৃত্যশিল্পে দেবদেবীর মুখের আদলের রূপে বা অসুর রাক্ষস ইত্যাদি পৌরাণিক চরিত্রের নাচে ব্যাবহৃত মুখোশের শিল্পের দোকান ঘরগুলো। এখানের বিখ্যাত ভেনিস কার্নিভালেও মুখোশের ছদ্মবেশে নানা সাজের মিছিল হয়ে থাকে। যদিও  এখন সেই কার্নিভাল উৎসবের সময় নয়। তবে ঐ কার্নিভাল কে কেন্দ্র করে ভেনিসে সারা বছরই তৈরী হয় অসাধারণ কারুকার্য্য খচিত শৈল্পিক রুচির সমন্বয়ে চমৎকার রংবেরঙের নানা ধরণের মুখোশ। 

 শ্রীময়ীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঋষভ প্রশ্ন করে এখানে মুখোশ শিল্পের এত রমরমা এবং  উৎসবের এত প্রাধান্য কেন ? বড়ো বিস্ময় লাগে ভাবতে ! মাস ব্যাপী এই মুখোশের কার্নিভাল চলে ভেনিসে বা  সারা ইতালী শহর জুড়ে?  উৎসবে ওরা মুখোশ পড়বে কেন? অদ্রিজা ভাবে ভারী মজা তো?প্রশ্ন টা কঠিন মা কি করে জানবে ? 

মুখোশ নিয়ে নানা গল্প  সাংবাদিক বন্ধু বেবের্তোর কাছে শুনেছিল এবং বিদেশী ঐতিহাসিক মিষ্টার হান্টের লেখা তথ্যের উল্লেখ করে শ্রী বলে ,যত দূর জানি ---সময় টা -১৮০০সালের একেবারে শেষের দিকে সারা ইউরোপ এমন কি ভেনিস জুড়ে,ও যখন অপ্রতিরোধ্য ছোঁয়াচে প্লেগ রোগের বিস্তারে সংক্রামিত মানুষ মরে যাচ্ছিল। অসুখ মহামারীর আকার নিয়েছিল।  হাজার হাজার মানুষ ঐ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করছে। অথচ ওষুধ বা প্রতিকার নেই। 
কাঁচ শিল্প। মুরানো দ্বীপ

সেইসময় এই বিষাক্ত রোগের ছোঁয়া থেকে মুক্তির হাতিয়ার  হিসাবে দেশবাসী এই মুখোশের ব্যবহার শুরু করেছিল। কিন্তু প্লেগ অসুখটি বহু বছর আগে নির্মূল হয়ে গেলেও  সেই সময় টিকে স্মরণ করে মুখোশ কার্নিভাল আজো ভেনিস বাসীর মনে সমান উজ্জ্বল হয়ে আছে। 

তাই রোগ মুক্তির ঐসময় টি কে স্মরণ করে  বৈচিত্র্যময়  রঙিন রূপের ধারায় নিজেদের সাজাতে দেশবাসী ঐ সময় বেশ  তৎপর হয়ে ওঠে।  ঐতিহ্য ও স্মারক চিহ্ন হিসেবে দেশ বিদেশের পর্যটক রাও সেই সময় মুখোশ পরিহিত হয়ে কার্নিভালে যোগদান করেন। প্রতি বছর এই কার্নিভাল কে কেন্দ্র করে ভেনিস তখন  নতুন  আনন্দেযজ্ঞে মেতে  ওঠার  স্বপ্নে বিভোর হয়।" বাকীটা নেট সার্চ করে দেখতে হবে। ঋষভ বলে চমৎকার বলেছো,আমার এর বেশী আর জানার ইচ্ছে নেই । অদ্রিজা হেসে বলে ,বাবা ! মা কে মোটেই হারাতে পারবে না তুমি। মা আগের থেকেই ব্রাউন ডায়েরিতে সব ইনফর্মেশন সংগ্রহ করে রেখেছে ।        
                                                                                           
 সূর্য তখন মধ্য গগন ছাড়িয়ে  বেলা শেষের  দিকে । অদ্রিজা বলে ভেনিস ট্যুরিস্ট দের কাছে খাবারের স্বর্গ রাজ্য, চল আমরা তার খোঁজ করি। ওরা তিন জনেই  খাবারের গন্ধেগন্ধে এক ফুড প্লাজার কাছে এসেছিল । একটি ছোট্টো চাইনিজ রেস্তোরাঁয়  কত রকমের সামুদ্রিক মাছের প্রিপারেশন।  বিচিত্র সব নাম নিয়ে মেনু কার্ডে শোভিত হচ্ছে দেখে ক্ষিদে যেন দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছিল। ভূমধ্যসাগরের নানান সামুদ্রিক প্রাণী  ও  মাছের সাথে আছে সুদূর উত্তর আটলান্টিক থেকে নিয়ে আসা কাঁকড়া অক্টোপাস স্কুইড এবং সঙ্গে আছে চিঙড়ির সমাহার। স্কুইডফ্রাই আর  প্ৰণ মালাইকারি  , এগ ও ভেজ সহ বানানো নুডুলসের প্রিপারেশন  দিয়ে অবেলায় লাঞ্চ সারা হলো। অত্যন্ত ব্যয় বহুল এই শহর ,ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায়  সাংঘাতিক দামী। পুরোনো ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্টের সাথে নতুন অনেক ক্যাফে রেস্তোরা রমরম করে চলে  নগরীর প্রাণ বায়ু চঞ্চলতায় মাতিয়ে তুলছে । 

🍂

 ,মিলানেই শ্রী শুনেছিল বেশ সুন্দর সাজানো দৃষ্টি নন্দন এবং জাকজমক পরিপূর্ণ  সুসজ্জিত ,ট্রেটরিয়া ডি ফার্নির রেস্তোরাঁটির  কথা। যেখানে  ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সব খাবার পাওয়া যায়। একটু হেঁটে এগতেই দুপুরের ভোজন পর্ব মেনু কার্ডে স্প্যাগেটি ইটালীয়ান সালসার ভিনিস্বাসী স্টার্টার খাবারের চেনা নাম গুলো ট্রেটরিয়া ডি ফার্নি রেস্তোরাঁটি দেখতে পেল। অদ্রিজার ভারী আফশোস লাগে --ইশ এতো কাছে ট্রেটরিয়া ডি ফার্নি  ? আগে এখানে এলেই বেশ হতো। এই শেষ বেলাতে ও অতিথির ভীড় উপচে পরছে।
 ঋষভ বলে চিন্তা নেই মন খারাপ করতে হবে না। ফেরার পথে রাতে এখানেই ডিনার সেরে হোটেলে ফেরা যাবে। অদ্রিজা দারুণ উৎসাহে বলে সেই ভালো। কিন্তু একটু এগিয়ে সামুদ্রিক প্রাণী এবং মাছ মাংস পোড়ানো বা ঝল সানোর রান্নার অস্বাভাবিক গন্ধ এবং কডলিভার তেলের আঁশটে কটু গন্ধ নাকে লাগতেই  সোজা সেখান থেকে দৌড় লাগিয়ে একবারে জেটির সামনে পৌঁছলো । শ্রী বলে ধুস ! ঐ উৎকট খাবারের গন্ধে এই ঠান্ডার রাতে আবার এখানে কে খেতে আসবে ?  

মাথার ওপর শেষ বেলাকার আকাশী রঙের ছায়ায় ভরা আকাশ ,পায়ের নীচে অগাধ সাগরের শ্যাওলা সবুজ জলরাশি ,তারই প্রসারিত বুকে গর্জন তুলে দুইপাড়ে প্রাসাদ দালানের গায়ে জল ছিটিয়ে ছুটছে ওয়াটার বাস। ঠিক সাত মিনিট লাগলো কাঁচ শিল্পে প্রসিদ্ধ মুরানো দ্বীপে পৌঁছতে। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া ডাকাতের মত চারদিক থেকে গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ওদের স্বাগত জানালো। মুরানো দ্বীপটি তে বিশ্বের অতি উচ্চ মানের কাঁচ শিল্পের প্রকল্প গড়ে উঠেছে। যেদিকে দেখাযায় ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী শুধুই গ্লাস কোম্পানী। কাঁচ শিল্পের রকমারি সম্ভার , দোকান পাট এবং ফ্যাক্টরি । প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাঁচের দেয়াল জানলা দরজা ফার্নিচার থেকে  কিচেনে ব্যবহৃত যাবতীয় কাঁচের বাসন পত্র তৈরির একমাত্র প্রসিদ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়াও ,মনোহারী গয়না ,অসাধারণ কারুকার্য্যের ঝাড়বাতি , ফুলদানী, ঘর সাজানোর রাজা রানী ,মেম সাহেবের পুতুল থেকে  বিভিন্ন লোভনীয় দ্রব্যাদি।শ্রী  ,অদ্রিজা ভারী খুশি হয়ে এখানে ও পছন্দ মত শপিং করে ,সুদৃশ্য মোড়োকে তাদের নিয়ে প্রায়ান্ধকারে মুরানো দ্বীপ থেকে আবার সানমার্ক প্লাজায় ফেরার তাগিদে ভেপোরাত্তর অপেক্ষায় জেটিতে এসে দাঁড়ালো।  
ভূমধ্যসাগরের বুকে ঝরঝর শব্দ তুলে বড্ড তাড়ায় ছুটছে ওয়াটারবাস। সন্ধ্যারাতের ভেনিসের আকাশে জুড়ে আসন বিছিয়ে বসেছে সোনার থালার মত মস্ত বড়ো এক গোল চাঁদ। জোৎস্না ধারার হাসি বহমান জলে তরঙ্গ তুলে ডুব সাঁতার কেটে ভেসে বেড়ায়। থৈ থৈ জলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এ শহর তখন রূপসী অপরূপা।  তিতির কে ডেকে শ্রী বলে , দেখ কেমন আলোকমালায় সেজেছে রাতের রানী।  প্রাসাদ নগরের ছবি পড়েছে সাগরের নীলচে কালো জলে। 
ওয়াটার বাস। ভেনিস।

অসম্ভব ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থায় সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে মেসত্রে তে নেমে সামনেই এক ইতালীয়ান রেস্তোরাঁ পাওয়া গেল। তার ভিতরে ঢুকে সোজা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে ফায়ার প্লেসের সামনে জড়োসড়ো হয়ে নির্দিদ্ধায় শ্রী বসে পড়েছিল। ফাঁকা টেবিল ,কাস্টমারদের  তখন ও ভীড় জমে ওঠেনি। সারভিংবয় মেনু কার্ড দিলে ,ঋষভ চোখ কপালে তুলে ,  হেসে বলে , ''কোথায় ঢুকেছো খেয়াল করে দেখ নি ? এটি যে বার কাম রেস্তোরাঁ ,এখানে শুধুই খাদ্য নয় পানীয় ও  নিতেই হবে । কিছুটা সময় পরে একটু স্বাভাবিক হয়ে সেখানে ইতালীয়ান পাস্তা আর ভেনিসিয়ান ওয়াইন দিয়ে রাতের ডিনার সেরে একটু ঠান্ডার আক্রমণ থেকে ওরা কিছুটা  মুক্তি পেয়েছিল। বরং বলা যায় খুব সাহসও দ্বিগুন শক্তি সঞ্চয় করে প্রায় একটা স্টেশন হেঁটে চক্কর লাগিয়ে হোটেলে ফিরেছিল। শ্রী চোখ পাকিয়ে ঋষভ কে বলে ভাগ্যিস ভুল করে ঐ রেস্তোরাঁয় ঢুকে ছিলাম। বলতে বাধা নেই ঐ ভেনেসিয়ান ওয়াইন কিন্তু এই যাত্রায় আমাকে অন্তত প্রাণ দান করেছে। অদ্রিজা আর ঋষভ দুজনেই হো হো করে হেসে উঠে বলে আমাদের ও। যথেষ্ট তর তাজা হয়ে গিয়েছি দেখ এই হিম শীতল ঠান্ডায় হাঁটতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।            ক্রমশ:

Post a Comment

0 Comments