জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /অমিত কুমার রায়

গুচ্ছ কবিতা 
অমিত কুমার রায়
     

স্বাধীনতার মানে কি?

একটা ছেলে খাচ্ছে লুটে রাজার ধন আর জমি দেদার 
একটা ছেলে ঘুরে বেড়ায় ধান্দাবাজির বদ্রি কেদার!
একটা ছেলে নদীর বুকে মনের সুখে গড়ছে বাড়ি
বুঝছে না কৈ, করছে বরং রংবাজি আর বাড়াবাড়ি।
একটা ছেলে তালাক দিলে আপার কোর্টে লড়ছে নারী,
একটা ছেলে ধর্ষক লজ্জা শরম গেছে ছাড়ি!
এটাই যদি স্বাধীনতা থু থু থু ঘেন্না জোটে,
স্বাধীনতার এটাই মানে সুযোগ পেলেই দেশটা লোটে!
সেম সেম সেম!

শরীর পোড়ায় আঘাত করে স্বাধীনতা এটাই কি তাই?
এদের সাজা ফাঁসির দড়ি, লড়ো নারী তোমরা সবাই।
ধর্ষণেরই ওলোট পুরাণ গড়ো নারী শিক্ষা দিতে 
দিকে দিকে কুস্তি শেখো ক্যারাটিয়া ঝাড়টা দিতে।

'ডাইনি' বলে পথে ফেলে গণ ধোলাই দেওয়া কি যায়?
সন্দেহের স্বাধীনতা মিথ্যা ফেলে সত্যে পেটায়!
গতির বাঁধন হারায় চালক বৃদ্ধ, বালক চাকার তলায়!
দু'কান জোড়া ইয়ার ফোনে গান চালিয়ে বাইক চালায়!
সেম সেম সেম!
ডাইনে বাঁয়ে মানছিনা কেউ বিপদ ঢেউ সঙ্গ যে দেয়,
নিয়ম ছাড়া পাঁকে ডুবে হারায় তারা স্বাধীনতায়।

বুজিয়ে জলা গড়ছে রিসোর্ট বহুতল ওই বুক ফোলায়,
পুকুর নদে বর্জ্য ফেলে পরিবেশে দূষণ ঝোলায়।
পাহাড় চড়ে নদীর চরে নোংরা রাজের নরক স্তূপ!
আমাজনে জ্বললে আগুন পোড়ে সবুজ স্বাধীন ধূপ!

কাটছে গাছে করাত দাঁতে কুঠার ঘায়ে গাছ লুটায়,
জীবন বাঁচায় যে গাছেরা তাকেই ঘুরে আঘাত হায়!

হানড্রেড ফরটিফোর ক্রোড় জন সংখ্যার ভারত হলো বিশ্ব সেরা,
পরের ঘরে খাটছে মা-বোন স্বাধীনতার পর্দা চেরা!

আকাশ বাতাস পাখি জানে স্বাধীনতার সূক্ষ্ম মানে, 
দুঃখ শুধু সমাজ জুড়ে জাগছে ক'জন সুকল্যাণে?

মিডডে মিলে যাচ্ছে ফেলে নাবালকের ক্ষুব্ধ দল,
ভাতের হোটেল- জরি- ট্রেনে টানছে তারা খুড়োর কল!
তাদের কাছে স্বাধীনতা শব্দ যেন আঙুর ফল!
খাঁচার পাখি বনকে খোঁজে খুলবে কে তার বেড় শিকল?
সেম সেম সেম!

স্বাধীনতার রাংতা মোড়ক খুলেই চলে যুবার দল,
চাকরি আছে ঝাঁপির ভেতর কেউটে বেরোয় অনর্গল!
ফুলের হৃদয় পাষাণ হয়ে খাচ্ছে পথে আশার জল,
ভবানী প্রসাদ বলতে পারেন! কোথায় সোনার জাদুর ফল?

🍂


সাবধান!

নিঙিয়ে নিঙিয়ে কথা বল
নিমকির স্বাদ যেন থাকে!
যেন মুড় মুড় মুড়ির শব্দ 
না হয়! 
লাল মাখানো মাখন মাখন 
কথা বলো মুচকি হেসে,
যেন শুনে মন গলে জল হয়ে....
জিলিপির প্যাঁচ আড়াইটে কথা বলো কিম্বা
চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলবেনা 
ঝেলো বোল বলবেনা 
তেঁতো বিষ লাগবে অর্থাৎ গায়ে বিঁধবে! 
এমন কথা বলতে নেই!
কেঁচো চাই বদলে কেউ উঠে বের হলে তখন?
বরফ মিছরি মিশিয়ে মিলিয়ে 
কথা বলো
তোমার শত্রু জন্মাবে না।

তুমি স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলো,
সময়ের দর্পণে মুখ দেখে 
সত্যটা অবশ্যই বলবেনা।
বিপদ বারুদের গন্ধ ভাসছে 
মুখে কুলুপ এঁটে চলো
বোবার কোনো শত্রু নেই!

আঙ্গুল তুলে কথা বলবেনা।
মচকে দেবে কেউ না কেউ 
সময়ের ঢেউ এখন ওদের অনুকূলে, 
খ্যাপা ফেউ তোমার খ্যাতির খাতির না করে, 
কখন যে কামড় দেয়!
তাই কবিতা লিখবে? লেখো
চুটিয়ে প্রেমের কবিতা লেখো,
রামী চণ্ডী দাস কিম্বা ওথেলো ডেসডেমনা কিম্বা জয়দেব পদ্মাবতী নিয়ে 
আরে দূত্ লায়লা মজনুর প্রেম !
ওসব ওল্ড ব্যাক ডেটেড!
তাহলে অভয়া কিম্বা সুস্মিতার কথা?
নৈব নৈব চ! ক্যাশ পাবেনা কেস খাবে!
তাই কবিতা লিখবে লেখো
লাইন ক্রশ করে লিখো না।
তোমার নামটাই টাই হয়ে ঝুলবে!
আইসিইউতে যাবার বাসনা কোরো না!
কবিতা লেখা ঘুচে যাবে।
বসে বসে শুধু পিছনে কাঠি নেড়ে কি হবে?
তুমি চোখে আঙুল দিতে যাবে 
তার আগেই তর্জনী কাটা যাবে,
সাধু কবি সাবধান!
দু'কলম লিখে মরতে চাও?
সুখে থাকতে ভুতে কিলবে 
তাই কি চাও?
চরিত্ররা সাজ ঘরে বসে।


বসুন্ধরা 

মানুষ মাটি খুঁড়েই চলেছে 
কত গভীর গর্তে দাঁড়াবে 
নিজেও জানেনা।
গাছেদের ধ্বংস করার অর্থই
নিজেদের জীবাশ্ম হবার সূচনা।
একদিন হয়তো সকল মানুষ 
অক্সিজেন জলের অভাবে শেষ শব হবে।
তারপর 
জীব জগতে নূতন যুগের সূচনা হবে।
মানুষ পচে জীবকূল পচে 
ফসফেট নাইট্রেট কার্ব হাইড্রেট....
তারপর?
পচনের থলেতে অসংখ্য দুর্গন্ধ কীট বাসা বাঁধবে
হাজার হাজার বছর ছাড়িয়ে 
ফসিলের পাথর!
তারও বহু যুগ পরে 
সবুজ বনভূমি বাতাস অক্সিজেনে পূর্ণ হয়ে 
ফুল ফোটাবে ক্যাকটাসে 
নরম সবুজ ঘাসে 
বৃক্ষেরা পুনঃ প্রান পাবে 
গাছেদের মরণ নেই!
গাছে গাছে কোটর হবে 
পেঁচা পেঁচি সংসার পাবে 
নব্য পাখিরা চিৎকার করে শিস দিয়ে বলবে
মানুষ তোমরা কোথায়?
হয় তো বন্য পশুর সঙ্গে বন মানুষ জন্ম নেবে 
তারপর?
ফসিলের আস্তানায়
ঘুমিয়ে থাকা হাজার হাজার বছর 
সে ঘুম ভেঙে জেগে 
নতুন আদম ইভকে খুঁজে বের করবে
তারপর
তাদের ঔরস জাতকে আর 
জাতের নামে বজ্জাতির বড়াই শেখাবে না 
শিখাবেনা ধর্ষণ আর হিংস্র হিংসা ঈর্ষার ইতিহাস।
জানাবেনা বিজ্ঞানের অভিশপ্ত অভিশাপ 
শেখাবেনা ভূগোলের নিচে চাপা থাকা 
হলুদ খনিজ সম্পদের রহস্যের ইতি কথা।

অরণ্য বনভূমি কেবল পশু আর পাখিদের 
আমড়া আম লিচু জাম বাগান 
মাঠের ধারে শুধু 
কুঁড়েঘর পাতায় ছাওয়া চাল!
কোনো বেআইনি ইমারত নয়
কোনো অপরিচ্ছন্ন অপরিকল্পিত শহর নয়
নগর নয়
সুপরিকল্পিত মানব বন্ধন 
পরিশীলিত পরিবেশ 
দুধের মতো শাদা প্রেম
ফুলের মতো হাসি আনন্দ 
আকাশের সূর্যের মতো ভালোবাসা 
পৃথিবীর এক অপরূপ সুন্দর 
ষঢ়রিপুহীন মন
সেই ঘরে হয় তো আমি তুমি আসব ফিরে 
নতুন নাম নদীর সাগরিকা পারে। 
পৃথিবীর নতুন করে নাম করণ হবে 
সুন্দরী বসুন্ধরা।


 হাইকু
চোখ রমণী
নদী ধমনী স্রোত
জল কুমারী।

৫) কবে যে পাখি 
নতুন সুর পাবে 
আক্ষেপ মনে।

Post a Comment

0 Comments