দূর দেশের লোকগল্প—লাটাভিয়া (ইউরোপ)
সাদা হরিণ শিকার
চিন্ময় দাশ
এক চাষির দু’জন ছেলে। ছেলে দুটো জোয়ান-মদ্দ হয়ে উঠেছে। ওকগাছের মতো মজবুত চেহারা দুজনেরই। একদিন বাবা তাদের ডেকে বলল—কী হতে মন চায় তোমাদের? বলো আমাকে।
মাথা-টাথা ঝাঁকিয়ে ছেলেরা বলল—ছুতোর মিস্ত্রি হলে মন্দ হয় না। তবে,শিকারী হওয়া আরও ভাল। কালো হাঁস, সাদা হাঁস মেরে বেড়ানোয় বেশ মজা।
বাবা কোন আপত্তি করল না। দুজনকে দুটো শিকারি কুকুর আর দুটো ধ্নুক ধরিয়ে দিল। আর একগোছা করে তীরও।
দুই ছেলে বেরিয়ে গেল মনের আনন্দে। কতদূর চলবার পর দেখল, একঝাঁক হাঁস উড়ে যাচ্ছে। দুজনেই তীর ছুঁড়ল। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। একটা পাখিও পড়ল না। দুজনেরই মন খারাপ।
খানিক বাদে খেয়াল হোল, একটা গভীর বনের ভিতর পথ হারিয়ে ফেলেছে তারা। বেশ ভড়কে গেল দুজনেই। খাবারও বেশি নাই সাথে। কিন্তু সাহস হারালে চলবে না।
হঠাৎই একজোড়া সারং (কৃষ্ণসার) হরিণ চোখে পড়ে গেল তাদের। যেই না ধনুক তুলেছে, অবাক করা কাণ্ড! হরিণ দুটো মানুষের গলায় বলে উঠল—মেরো না গো। বরং সঙ্গে রাখো। উপকারে লাগবো তোমাদের।
সেটাই সাব্যস্ত করল দু’ভাই। হরিণ দুটো রইল তাদের সাথে। খানিক বাদে দুটো নেকড়ে বাঘের সাথে দেখা। ধনুক তুলতেই, তারাও বলে উঠল-- মেরো না গো। বরং সঙ্গে রাখো। উপকারেই লাগবো তোমাদের।
এবার নেকড়ে দুটোও সঙ্গী হোল। কিছুদূর গিয়েছে, এবার দুটো খরগোশের উদয়। তারাও বলল-- মেরো না গো। বরং সঙ্গে রাখো। উপকারে লাগবো তোমাদের।
রয়ে গেল খরগোশগুলোও। এইভাবে দশজনের বড়সড় একটা দল গড়ে উঠল।
তারপর চলতে চলতে একটা মোড়ের মাথায় এসে পৌঁছল দুজনে। রাস্তাটা এখানে দু’ভাগ হয়ে, দু’দিকে চলে গিয়েছে। দুজনে ঠিক করল, দু’দিকে যাবে দু’জন। সামনে ছিল একটা বুড়ো ওকগাছ। দুজনে দুটো ছুরি গেঁথে দিল গাছে। ঠিক হোল, ঠিক একবছর বাদে, এখানে ফিরে আসবে তারা। যদি দেখা যায়, অন্য জনের ছুরি ঠিক আছে, তাহলে এখানেই অপেক্ষা করবে। কিন্তু যদি দেখে, মরচে পড়েছে ছুরিতে, তাহলে বুঝবে বিপদ হয়েছে কিছু। তার খোঁজে বেরিয়ে পড়বে।
বড়ভাই চলেছে ডানদিকের রাস্তা ধরে। একদিন গেল, দু’দিন গেল। কিছুই তেমন চোখে পড়ছে না। পরের দিন দেখে, উঁচু একটা ভাঙাচোরা দুর্গ। জনমনিষ্যি নাই কোথাও। কেবল একটি মেয়ে বসে আছে জানালায় মুখ রেখে।
🍂
বড় এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল—তুমি একাটি বসে আছো! আর সব কোথায়?
মেয়েটি বলল—সেই কতদিন আগে, সাদা হরিণ শিকার করতে গিয়েছিল সবাই। তারা তো ফেরেইনি। উলটে নিজেরাই পাহাড় আর পাথর হয়ে গিয়েছে। আমার বাবাও ছিল তাদের মধ্যে।
চিন্তা কোর না গো, মেয়ে। চার-চারজন উপকারি বন্ধু আছে আমার সাথে। আমি যাচ্ছি সাদা হরিণ শিকারে। তোমার বাবাকেও উদ্ধার করে আনব আমি।
সবে দুর্গের ফটকে এসে হাজির হয়েছে বড়ছেলেটা, হঠাৎই একটা সাদা হরিণকে ছুটে যেতে দেখল। এক ঝলকের দেখা মাত্র। সাথে সাথেই উধাও হয়ে গিয়েছে। হরিণ, নেকড়ে, খরগোশ আর নিজের কুকুরকে নিয়ে, হরিণের পিছু দৌড় লাগালো বড়। কিন্তু কোথাও চিহ্নটুকুও নাই হরিণের। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে।
সামনে চেয়ে দেখল, একটা আগুন জ্বলছে। একটা খিনখিনে বুড়ি বসে আছে সামনে। বড় গিয়ে বলল—তোমার আগুনে হাত দুটো একটু সেঁকে নিতে দেবে, ঠাকুমা?
--বুড়ি বলল—কেন দেব না? আমার কি যাবে আসবে তাতে? তবে, তোমার এই চার সঙ্গী কী মিষ্টি দেখতে গো! আহা, আগে দেখিনি এমনটা। একটু আদর করে দিই এদের?
--অবশ্যই। আমারও কী যাবে আসবে তাতে? করো আদর।
বুড়ি গিয়ে তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছে। অমনি কোথায় গেল হরিণ, নেকড়ে, খরগোশ আর তার নিজের কুকুর! চারখানা পাথর পড়ে আছে তার সামনে। পাথরগুলো ফ্যালফেলিয়ে দেখছে, বুড়ু টুক করে এসে, হাত বুলিয়ে দিয়েছে বড়র গায়েও। সাথে সাথেই একটা পাহাড় হয়ে গেল ছেলেটাও।
ওদিকে হয়েছে কী, যেতে যেতে, অনেক ঘোরাঘুরির পর, এক রাজার বাড়িতে পৌঁছেছিল ছোটছেলে। রাজবাড়ির ভেড়া চরানোর কাজ জুটেছিল তার। সকালে ভেড়ার পাল নিয়ে বেরিয়ে যায়। বিকেল গড়িয়ে যায় ফিরে আসতে।
একদিন আচমকা এক বিপদ এসে হাজির। পাশেই সমুদ্র। ভয়াণক তিনটা ড্রাগন থাকে তার তলায়। সে জানিয়ে দিয়েছে, রাজার তিনজন মেয়েকে তার কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। রাজকুমারির মাংসে রাতের ভোজ খাওয়ার সাধ হয়েছে তার।
কিছু উপায় না পেয়ে, রাজ্যে ঢেঁড়া পিটিয়ে দিয়েছে রাজা। যে কেউ ড্রাগনদের কোতল করতে পারবে, বড় রাজকুমারির সাথে বিয়ে দেওয়া হবে তার।
কিন্তু কার এমন হিম্মৎ আছে, এমন দানবের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? কার বুকে ভয় নাই? কোন রাস্তাই পাওয়া গেল না।
ছোট ছেলের কানেও গেছে ব্যাপারটা। সেদিন ঘরে ফিরে, সারা রাত জেগে বড়সড় একটা তলোয়ার বানাল ছেলে। তৈরি রইল পরের দিনের জন্য।
পরদিন একটা ঘোড়ার গাড়িতে চেপে, বড় রাজকুমারি যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। মাঠে ভেড়া চরাচ্ছিল ছোট। পিছন পিছন সেও চলল তার দলবল নিয়ে।
বিশাল সমুদ্র। বালির চরে এসে গাড়ি দাঁড়িয়েছে। অমনি কোচয়ান ছুট লাগিয়ে পালিয়ে গেল। ঢাল তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার আমি। এখানে থেকে মারা পড়ব না কি? এই ভাবনা তার।
তখনই জল ফুঁড়ে উঠে এল বিরাট এক ড্রাগন। ফনাওয়ালা তিন-তিনটে মাথা তার। দানবের মত এগিয়ে আসছে সে রাজকুমারির দিকে।
নিজের দলবল নিয়ে ছোট ছেলে আসছিল পিছনেই। সে এক লাফে ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসেছে। তার সঙ্গীরা গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ড্রাগনের উপর। সেই ফুরসতে ছেলেটা তলোয়ারের এক কোপে তিনটে মুণ্ডুই কেটে দিয়েছে ড্রাগনের।
এবার ঘোড়া থেকে নেমে পড়ল ছোট। ড্রাগনের তিনটা মুণ্ডু থেকে তিনটা জিভ কেটে নিল কপ-কপ করে। জিভগুলো জোব্বার পকেটে ভরে, চলে গেল দলবল নিয়ে। রাজকুমারি ফ্যালফ্যাল করে দেখছিল ঘটনাটা। তার দিকে তাকিয়েও দেখল না ছোট।
অমনি আড়াল থেকে বেরিয়ে এল কোচয়ান। লুকিয়ে সব দেখছিল সে। রাজকুমারিকে বলল— যদি বাঁচতে চাও, ফিরে গিয়ে, ছেলেটার কথা মুখেও আনবে না। যা বলবার আমিই বলব। তুমি শুধু বলবে, পুরষ্কারটা আমারই পাওনা।
পরদিন আবার কোচয়ান চলেছে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। সেদিন রাজার মেজ মেয়ে চলেছে ড্রাগনের ভোজের জন্য। ভেড়ার পাল ছেড়ে, ছোট ছেলেও পিছন ধরেছে।
সেদিনও সমুদ্রের চরে পৌঁছেই, দৌড়ে পালিয়েছে কোচয়ান। জল তোলপাড় করে যে ড্রাগনটা উঠে এলো মাথা তুলে, তার ছ’টা ফনা। ছোটছেলে লাফিয়ে ঘোড়ায় চড়েছে। তার চারজন সঙ্গী ঝাঁপিয়ে পড়েছে দানবটার উপর। অমনি এক কোপে ডাগনের ছটা মুণ্ডুই কেটে দিল ছেলেটা। তারপর কচ কচ করে জিভগুলো কেটে নিয়ে, ফিরে চলে গেল নিজের কাজে।
তখনই আবার দৌড়ে বেরিয়ে এল কোচয়ান। আবার ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে দিল রাজকুমারিকে। নীরব হয়েই থেকে গেল রাজকুমারি।
এবার শেষ দিন। একই ঘটনা তৃতীয় দিনেও। ছোট রাজকুমারিকে নিয়ে গাড়ি চলেছে সমুদ্রের দিকে। ভেড়ার দল মাঠে চরতে রইল। ছোট ছেলে চলল গাড়ির পিছন পিছন। আজই শেষ হেস্তনেস্ত। হয় ড্রাগন মারব, নয় নিজে মারা পড়ব।
আগে দু’দিন যেমনটা হয়েছে, একই ঘটনা সেদিনও। গাড়ি জলের কিনারায় রেখেই কোচয়ানের দৌড়। তখনই জল তোলপাড় করে, উঠে এল ন’টা ফনাওয়ালা দানব। ছেলেটার চার সঙ্গী ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর।
তখনই ঝলসে উঠল ছোটর তলোয়ার। এক কোপেই ন’টা ফনা কেটে ফেলল সে। তারপর জিভগুলো কেটে নিজের জোব্বায় পুরে, ফিরে চলে গেল।
আবার আসরে এসে গেল ধূর্ত কোচয়ান। ছোট রাজকুমারিকে ধমকে বলল—ফিরে গিয়ে রাখাল ছেলেটার কথা বলো যদি, তোমাকে মেরেই ফেলব আমি। তুমি বরং বলবে, এই কোচয়ান আমাকে ড্রাগনের কাছে নিয়ে গিয়েছে। ড্রাগন মেরে, ফিরিয়েও এনেছে। পুরষ্কারটা এরই পাওনা।
সেদিন ভরা দরবার। সবার মনেই আনন্দ। রাজামশাই কোচয়ানকে বলল—আমার তিনজন মেয়েকেই ভয়াণক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এনেছ তুমি। তিন তিনটে দানবকে নিকেশ করেছ একার হাতে। সারা রাজ্যে কেউ দেখাতে পারেনি এমন সাহস! ছোট রাজকুমারির সাথে বিয়ে দেব তোমার। আমার অর্ধেক রাজ্যও দেব তোমাকে, বীরত্বের পুরষ্কার হিসাবে।
কোচয়ানের আনন্দ ধরে না। সারা সভা ধন্য-ধন্য করে উঠল।
তখনই ছোট ছেলেটা দরবারে এসে হাজির। সে বলল—একজন বেইমান কোচয়ান কী করে তিনটা ড্রাগনকে মারবে, হুজুর? হাতে একটা ছোরা তো দূরের কথা। চাবুকটাও ছিল না ওর। ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ও মারবে দানবকে!
--বলছটা কী তুমি? রাজা অবাক।
ছেলেটা বলল—ও তো ভীতুর ডিম একটা। রাজকুমারিদের একা ফেলে, পালিয়ে গিয়েছিল। তিন তিন বার একই কাণ্ড করেছে ঐ মিথ্যেবাদীটা।
তিন রাজকুমারি এবার মনে সাহস পেয়েছে। তারা বলে উঠল—সত্যি কথাই বলেছে ও। কিচ্ছুটি করেনি মিথ্যেবাদী লোকটা।
রাজা বলল—তোমরা তো বলোনি কেউ কিছু!
--কী করে বলব? আমাদের মেরে ফেলবার ভয় দেখিয়ে রেখেছে যে।
রাগে গর-গর করে উঠল রাজা। সামলে নিয়ে বলল—তাহলে মারল কে তিনটে ড্রাগনকে?
--মেরেছে তোমাদের এই রাখাল ছেলেটা। এর জন্যই তিন বোন আমরা বেঁচে ফিরে এসেছি।
রাজার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। একটা রাখালছেলে ড্রাগন মেরেছে? বলল-- ও-ই যে মেরেছে, তার প্রমাণ কী? ও তো যায় ভেড়া চরাতে।
তিন মেয়েই ছেলেটাকে বলে উঠল—প্রমাণগুলো তো রেখেছ তুমি। আমরা দেখেছি নিজের চোখে। দেখাও এবার এখানে। দরবারের সবাই দেখুক নিজের চোখে।
কাঁধে একটা ঝোলা ছিল ছোটর। সেটা উপুড় করে দিল। ড্রাগনের আঠারটা জিভের একটা স্তুপ গড়ে উঠল সকলের সামনে। নিজের রক্তমাখা তলোয়ারটা রাজার পায়ের কাছে নামিয়ে রাখল ছোট।
আনন্দের বন্যা বয়ে গেল সভায়। রাজা বলল—ছোট রাজকুমারির সাথে বিয়ে দেব তোমার। অর্ধেক রাজ্যও দেওয়া হবে তোমাকে।
হই-হই করে উঠল সকলে। এবার রাজার চোখ গেল কোচয়ানের দিকে। হুকুম দিল—এ ব্যাটাকে সমুদ্রে নিয়ে যা। চুবিয়ে মারা হোক ওকে।
ছোটছেলে বলল—আমার একটা নিবেদন আছে,হুজুর। এত বড় শাস্তি দেবেন না ওকে। ড্রাগনকে মারা তো কোচয়ানের দায়িত্ব ছিল না, হুজুর। লোভে পড়ে মিথ্যে কথা বলেছে বেচারা। ওকে মাফ করে দিন।
--বলছটা কী তুমি? ওকে মাফ করে দেব?
ছোট বলল—এই কোচয়ানকে আমাকে দেওয়া হোক। আমাদের গাড়ি চালাবে ও। আমি ওকে শুধরে নেব।
সাধু-সাধু করে উঠল সভাশুদ্ধ সবাই। ধুমধাম করে বিয়েও হয়ে গেল ছোটছেলে আর ছোট রাজকুমারির।
দেখতে দেখতে এক বছর শেষ হতে চলল। বড়ভাইর কথা মনে আছে ছোটর। সেই ওকগাছের কাছে ফিরে চলল সে।
তিন রাস্তার মাথায়, সেই মোড়ে এসে হাজির হয়েছে ছোট। সেই ওকগাছ। তাতে দুটো ছুরিই গাঁথা আছে। কিন্তু বড়র ছুরিতে যে মরচের দাগ। ছোট বুঝে গেল, নিশ্চয় দাদার কিছু বিপদ হয়েছে। নিজের কুকুর আর হরিণ, নেকড়ে ও খরগোশকে সাথে নিয়ে দাদার খোঁজে চলল ছোট।
কত দূর যাওয়ার পর, সেই একটা পুরাণো দুর্গ। কেউ কোত্থাও নাই। কেবল একটি মেয়ে বসে আছে জানালায় মুখ রেখে।
--হ্যাঁগো, মেয়ে! সবাই কোথায় গেছে, জানো তুমি। ছোট জানতে চাইল।
মেয়েটি বলল—সবাই তো গিয়েছিল সাদা হরিণের খোঁজে। কিন্তু কেউ ফেরেনি। কেউ পাহাড় হয়ে গিয়েছে। কেউ বা পাথর। বছর খানেক আগে, একটি ছেলে এসেছিল। সেও ফেরেনি।
--আমারই ভাই সে। বলেই, ছেলেটা ভেতরে ঢুকে গেল। তখনই একটা সাদা রঙের হরিণ দেখতে পেল সে। তবে এক ঝলক মাত্র। তারপর সব উধাও। কোথাও চিহ্নটুকুও নাই তার।
খানিক এগোতেই দেখে, বনে ঢুকবার মুখে আগুন জ্বালিয়ে একটা বুড়ি বসে আছে। ছেলেটা বলল—হ্যাঁগো ঠাকুমা! এখানে হঠাৎ এই বড় বড় পাহাড়, আর এতসব পাথর এলো কোথা থেকে? জানো তুমি?
--জানব না কেন? বয়সটা কি কম হোল আমার? সব বলছি তোমাকে। তার আগে, তোমার এই সুন্দর সুন্দর বন্ধুদের এক্টুখানি আদর করতে দাও আমাকে।
ছোটর বুঝতে কিছু বাকি রইল না। সে বলল—আচ্ছা, তাহলে তুমিই সেই ডাইনি! বলি শোন, মানছি, তুমি অনেক বড় ডাইনি। অনেক দাপট তোমার। কিন্তু আমার এই তলোয়ারখানা দেখতে পাচ্ছো? এর দাপট তোমার চেয়ে বেশি। একটি কোপে মুণ্ডু উড়ে যাবে তোমার। সব খেল খতম হয়ে যাবে এক্ষুনি।
বুড়িটা কিছু বলতে যাচ্ছিল। ছোট বলল—একটিও কথা নয় আর। তিন ড্রাগনের আঠারটা মাথা কাটা গিয়েছে এই তলোয়ারের কোপে। একটা বুড়ির মুণ্ডু আর কী এমন ব্যাপার! তাড়াতাড়ি বলে ফেল, ব্যাপারটা কী?
ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে বুড়ি। বলেই ফেলল—বড় পাহাড়গুলো হচ্ছে মানুষজন। ছোটগুলো নানা জীবজন্তু। তোমার ভাইও আছে ওগুলোর ভেতর।
ছোটর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। বলল—তলোয়ার তুলবার আগে, ভালোয় ভালোয় বলে ফেলো, কী করে জীবন ফেরানো যাবে এদের?
--একেবারেই কঠিন কিছু নয়। এই আগুনের খানিকটা ছাই নিয়ে ছড়িয়ে দাও। ওদের সবাই এক্ষুনি নিজের চেহারায় ফিরে আসবে।
আর দেরী নয়। ছেলেটা এক মুঠো ছাই ছড়িয়ে দিতেই, কোথায় পাহাড়, আর কোথায়ই বা এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা পাথর! নিজের নিজের পুরাণো চেহারায় জেগে উঠল সবাই। অনেকগুলো জীবজন্তু। এক রাজা দাঁড়িয়ে আছেন নিজের লোকজন নিয়ে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার নিজের বড়ভাইও।
চোখের পলক পড়তে পেল না। কুকুর, হরিণ, নেকড়ে, খরগোশ সবাই এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল বুড়িটার ওপর। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল বুড়িকে।
তার পর? তার পর আর কী? ডাইনি বুড়িটা মারা যাবার সাথে সাথে, হরিণটাও মারা পড়েছিল। রাজা তাঁর মেয়ের বিয়ে দিলেন বড় ছেলেটির সাথে।
0 Comments