বার্লিনের ডায়েরি -- ৩৯ পর্ব চিত্রা ভট্টাচার্য্য
( ভেনিসের পরবর্তী অংশ )
শ্রাবণের রিমঝিম ধারায় সেই সকাল থেকেই গোমড়া মুখো কালো আকাশটার দিকে তাকিয়ে শ্রীর উদাসীন মন কাগজ কলমের মিলনে সৃষ্টিসুখের আনন্দে উল্লাসে মাতলে ও ,সাদা পাতার বুকে ওর কলম বিলাসী মন সেই থেকে একটি ও আঁচড় কাটতে পারেনি। হাতেধরা এলোমেলো গ্রন্থিবিহীন ডায়েরির পাতাগুলো দুই মলাটের বাঁধন থেকে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে। শ্রীময়ী যত্ন করে পাতাগুলো ক্রমিকসংখ্যা অনুযায়ী মেলাতে গিয়ে ভেসে চলেছে আড্রিয়াটিকের শ্যাওলা সবজে রঙ্গিন জলে।সেখানে পিছনে ফেলে আসা সেদিনের নীলাম্বরী আকাশ টাও ওর মনের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে স্মৃতির সাগরে সাঁতার কাটছিল। কানপেতে শুনেছিল অনেক দূর থেকে হাওয়ায় ভেসে আসা ভেনিসের ঘন্টা ঘরের মধ্যরাতের সতর্কবার্তা। অথবা ঘন্টার ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হওয়া জীবনের শেষ লগ্নের পরোয়ানা।
রঙ বাহারী রিয়াল্টো ব্রিজে যাবার আগেই উদ্দেশ্য হীন ভাবে কিছুটা সময় ওরা ঘুরে কাটিয়ে ছিল ব্যাসিলিকা গীর্জার প্রধান দরজার সামনে যেখানে ভেনিসের প্রতীক চিহ্ন ১০০ মিটারের সুউচ্চ বেলফ্রাই টাওয়ারের ঘন্টা ঘর টির সাথে আছে সেই সুদৃশ্য চিত্রাঙ্কিত ঘড়ির মিনার। তিতিরের সাথে লিফ্টে করে বেলফ্রাই টাওয়ারের ওপরে উঠলেও ওরা খুব বেশীক্ষন সেখানে থাকতে পারেনি। সাংঘাতিক হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে অস্থির হয়ে দুজনেই দুমিনিটে নেমে এসেছিল। শ্রীর মনে পড়ে সাংবাদিক বেবর্ত,বা বন্ধু সিলিয়ার কাছে শোনা বেল টাওয়ারের গল্প। জনহান্টের ঐতিহাসিক বিবরণী ও শ্রীর বেশ মনে আছে ।
ঘন্টা ঘর।
এই বেলটাওয়ার বা বেলফ্রাইটি নবম শতাব্দীতে প্রথম তৈরী হলেও বহুবার নানা কারণে বিধ্বস্ত হয়ে পুনরায় পাকাপাকি ভাবে ১৯ ১২ সালে নির্মিত হওয়ার পর এখনো কেমন অটুট রয়েছে দেখ। সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝায় ভেঙে যায়নি। বিধ্বংসী বোমার আঘাতে ও গুড়িয়ে যায়নি। বেল টাওয়ারের গুরুত্ব পূর্ণ পাঁচটি ঘন্টার কথা এতো দিন পরে ও বারবার মনে পড়ছে। তাদের নামগুলো বড্ড খটমট হলে ও ,হাতের কর গুনে স্বগতোক্তি করে আওড়ায়। ''মেলি ফিসি ও , নোনা, ট্র্রোত্রিয়েরা ,মেজ্জা --তেরজা আর মারাঙ্গটা। ডায়েরির পাতা উল্টে দেখে,ওর স্মৃতিরা এখনো কতটা সজাগ ! যাক একটা নাম ও বিস্মৃতির বশত ' আবোলতাবোল হয়ে যায় নি। মনে আছে এই বিশেষ পাঁচটি ঘন্টা কে বিভিন্ন জরুরী সময়ে বাজানো হতো। যেমন মেলিফিশিও ঘন্টাটি বেজে উঠলে তার করুণ সুরের ধ্বনির অনুরণন বহু দূরথেকে দূরে নাগরিক জীবনের কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হয়ে বেজে উঠে সকল কে জানিয়ে দিত কোন ও বিচারাধীন অপরাধীর প্রাণদন্ডে দণ্ডিত করার অন্তিম মুহূর্তের বিশেষ সময় টি দরজায় কড়া নাড়ছে ।
ভেনিসের হ্রদে গন্ডোলা ভাসছে।
নোনাবেল টি বাজতো ঘড়িতে দ্বিপ্রহর ঘোষণার সময়। ট্র্রোত্রিয়েরা বাজলে সম্ভ্রান্তদের নির্দেশ দেওয়া হতো যেখানে যে অবস্থায় থাকোনা কেন ঘোড়া সাজিয়ে এক্ষুণি ডজের প্রাসাদে উপস্থিত হও । মেজ্জা --তেজ্জা বাজলে বোঝানো হতো সিনেটের সভা বসেছে। আর মারাঙ্গা ঘন্টার ধ্বনি রাতের মধ্য প্রহরের সময় ঘোষণা করে আজো নিয়ম মত বেজে যায়। মনে পড়ে সেদিন প্রথম রাতে ভেনিসের হোটেলের ঘরে প্রবল ঠান্ডায় হঠাৎ রুমহিটার বিগড়ে যাওয়ায় ঘুম না আসা তে , ওই রাত্রির মধ্যযামে বেজে ওঠা প্রায় দুমিনিট ধরে ঘন্টাধ্বনি তে অজানা আশঙ্কায় ভয়ে কাঠের পুতুলের মত শ্রী বিছানায় উঠে বসেছিল। পরদিন সকালে রিসেপসনিস্ট মেয়ে স্ট্রোমি কে জিজ্ঞেস করলে ও আকর্ণ হেসে বলে ও এইকান্ড ! তারপর ঐ ঘন্টা ধ্বনির ঐতিহাসিক গল্প ও তাৎপর্য স্ট্রোমি খুলে বলায় গল্পবাজ শ্রীর ডায়রিতে পেন চলেছিল দুরন্ত গতিতে।
🍂
আরও পড়ুন 👇
ঘন্টা ঘরের গল্প সিলিয়া বলেছিল এখানের ঐ উঁচুতে বসেই বিজ্ঞানী গ্যালিলিও তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ যন্ত্রটিকে পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্রথমেই সম্পূর্ণ ভেনিস নগরীটি এমন কি আল্পস পর্বত মালাটিকে ও চোখের সামনে দেখতে পেয়েছিলেন। ১৫শ শতাব্দীতে তৈরী ভেনিস নগরের বিখ্যাত বিশাল ঘড়িটি ও কাছেই লম্বা এক টাওয়ারের ওপর নির্মিত ছিল। প্রাগে দেখা ঘড়িটির সাথে বেশ সাদৃশ্য থাকায় অদ্রিজার ভারী মজা লেগেছিল। ও ঋষভ কে বলেছিল ,একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখ ঠিক যেন প্রাগের ঘড়ির রিপ্লিকা। তবে এই ঘড়ির ডায়ালে আছে বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তন এবং রাশি চক্রের ওপর চাঁদ সূর্যের প্রভাব এবং গতির অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ। এক ঘন্টা পরপর দুটি ব্রোঞ্জের পুতুল দুপাশ থেকে বিরাট বড় এক ব্রোঞ্জের ঘন্টায় আঘাত করে সময় নির্দেশ করে। ঋষভ হেসে সমর্থন জানিয়ে তিতির কে বলে ,উপস্থিত দর্শকরা কখন ঘন্টা ধ্বনি বাজবে তা দেখবে বলে সবাই উর্দ্ধ মুখী হয়ে ওপরের দিকে কেমন ঘাড় উঁচু করে তাকিয়ে আছে দেখ। ওদের ঘাড়ে বোধহয় ব্যথা হয় না। এর ঠিক অদূরেই দেখাগেল এক পুরোনো দিনের ভগ্ন প্রায় লাইটহাউজ ও শহরের ওয়াচ টাওয়ার আর একটি ঐতিহাসিক স্মারক চিহ্ন দেখে ওরা এগিয়ে ছিল রিয়াল্টো ব্রিজ টির দিকে ।
সাগরের নীলজলের ওপরে দৃষ্টি নন্দন রঙের বাহারে সাজানো অত্যন্ত জাকজমক পূর্ণ আকর্ষণীয় ভেনিসের গর্ব রিয়াল্টো ব্রিজ টি কে সকালের উজ্জ্বল সোনালী আলোয় ভারী সুন্দর লাগছিল। তার অপূর্ব রং তুলির বাহারে নক্সাকাটা শৈল্পিক সৌন্দর্যে গড়া অনুপম কারুকার্য্য দেখে শ্রীময়ীর চোখে একরাশ মুগ্ধতা। আড্রিয়াটিকের শ্যাওলা সবুজে রাঙা জলের ওপর সুন্দরী রিয়াল্টো ব্রিজ আর তারই নীচ দিয়ে বইছে সব থেকে এলোমেলো নিরবচ্ছিন্ন ক্ষীণ স্রোতা গ্র্যান্ড ক্যানালের অজস্র ধারাগুলো। বিখ্যাত ব্রিজটির কারিগরী নির্মাণ কর্ম কুশলতা নিয়ে শ্রীর মোটেই চিন্তা নেই। কিন্তু ততোধিক মাথাব্যথা পিতা কন্যার। দুজনে মিলে বেশ গুরু গম্ভীর আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে মন দিয়ে খুব সূক্ষ্ণ ভাবে লক্ষ্য করে এবং শ্রী কে ও দেখায় কেমন করে এর দু পাশের দেওয়ালের মাঝখানে বড় একটা খিলান ,আর দুদিকে ছয় টি করে মোট বারো টি খিলান দিয়ে বেশ মজবুত করে গড়ে তোলা হয়েছিলো এই রিয়ালটো সেতু টি কে। পাথরের তৈরী ২৮মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি জলের ওপর মাত্র ৭.৫ মিটার লম্বা। শ্রী গাইড বুক ফলো করে বলে ,এই অত্যন্ত জাকজমক পূর্ণ আকর্ষণীয় ভেনিস সুন্দরীর অহঙ্কার ব্রিজটির ১১৮১সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে ১৫৯১সালে পরিপূর্নতা পেয়েছিল। ঋষভের মতে নদীমাতৃক ইউরোপীয়ান সভ্যতায় বেশীর ভাগ দেশেই দেখা যায় জন জীবনে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িতএই ব্রিজ গুলোর কী অসীম গুরুত্ব ।
রিয়াল্টো ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রীর মনে হয় সারা দুনিয়াটা যেন জলের ওপর ভাসছে। একরাশ হ্রদ বিভিন্ন দিক থেকে মাকড়সার গোলাকার জালের মত পুরো ভেনিস কে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে স্বচ্ছ জলের শাখা প্রশাখার অজস্র চঞ্চলা স্রোতের ধারায়। উত্তর দক্ষিণ বা পূব পশ্চিমে যেদিকে তাকাও অসংখ্য হ্রদগুলো বাহু বিস্তার করে আপন ক্রোড়ে ভেনিস কে সর্বদা আগলে রেখেছে । সেই সাথে পায়ে হেঁটে খাল পারাপারের জন্য রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য সেতু। তারই বুকের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক আকাশ ছোঁয়া সারিসারি বিশাল প্রাসাদ বাড়িগুলো। শ্রী বলে কিন্তু খেয়াল করে দেখ এরই মাঝে শহর কে দ্বিখণ্ডিত করেছে বিখ্যাত গ্রান্ডক্যানাল হ্রদ টি। এই খালের ও চারিদিকে ঘিরে রয়েছে অনুপম সৌন্দর্যের বাহক সব প্রাসাদগুলো, সেতু আর অসংখ্য প্রায় ৪৫টি ছোটছোট সরু লম্বা খাল। মূল খালের সঙ্গে চারদিক থেকে ভেসে এসে একত্রিত হয়ে ছোট ছোট সর্পিল আকারে আঁকাবাঁকা পথে চলে প্রাচীন নগরের ভিতরে শাখা প্রশাখায় লবনাক্ত সাগরের জলে মিশেছে । সেখানে শুধু স্পীডবোট ও গন্ডোলা বা ছোট্ট স্যান্ডলা চলে বেড়ায়। গ্র্যান্ডক্যানাল যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই দিকহারা উত্তাল সমুদ্রের ঢেউগুলো নিরুপায় হয়ে আছড়ে পড়ছে সংলগ্ন দ্বীপটির প্রাসাদে গির্জায়,ছোট বড় অসংখ্য ঘরবাড়ির পায়ের পাতা ছুঁয়ে চৌকাঠে সিঁড়িতে উঠোনে।
অদ্রিজা পুবের দিক আঙ্গুল নির্দেশ করে দেখায় ওদিকের সাগরে কেমন উন্মত্ততা। তারই মাঝে দেখ কেমন পুরোনো আমলের ভেনিস শহর স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে । সে ক্রমশঃ প্রসারিত হয়ে সাগরের কাছে উচ্ছল জলে তরঙ্গ তুলে "পো ও পিয়াভ " দুই নদীর মোহনায় সবেগে এগিয়ে যাচ্ছে।পশ্চিম দিকে গড়ে উঠছে আধুনিক ভেনিসিয়া নগরী এবং সে ক্রমশ আরো প্রসারিত হয়ে এগিয়ে চলেছে নিজস্ব ঐতিহ্য অটুট রেখে। ব্রিজের নীচ দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া নৌকা গুলোর সাথে সাগর পাড়ের মানুষ জনের কত রকমের দৃশ্য। নদীর মোহনার ওপর গড়ে ওঠা চলমান জীবনের জলছবি। ক্যামেরার ফোকাস কে সচল রেখে ব্রিজের ওপর থেকে একমনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ঋষভ। নবীন সূর্যের হলুদ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে জলকন্যা তখন অনন্যা ।
ব্রিজের ওপর থেকে হ্রদের দৃশ্য যেমন মনমুগ্ধ কর তেমনি হ্রদের জলের মধ্যে ভাসমান নৌকা থেকে এই সেতুর কারুকার্য্য ও অনুপম সুন্দর। এখন অফসিজিন। তবুও শীতের ছুটির সকাল বেলায় রোম্যান্টিক নগরীতে জনস্রোত বাঁধন হারা। সকাল বেলায় হ্রদের টলটলে জলের মধ্যে তার দোলায়মান প্রতিবিম্ব অপরূপ লাগছিল। যেন কোন অদৃশ্য আড়ালে থেকে শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা তাঁর নিপুন জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায় একটু একটু করে এই জমকালো অপরূপ সেতু টি নির্মাণ করেছেন। চারদিকের পরিপূর্ণ অথৈ সাগরের নীল জলের হ্রদের বুকের মাঝে যাত্রী নিয়ে ভেসে চলেছে মোচার খোলার মত সুসজ্জিত সব গন্ডোলার সারি। তিতির ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে গুনতে থাকে এক ,দুই তিন--। হ্রদেরই সংলগ্ন আঁকাবাঁকা পথে শাখা প্রশাখায় এ পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় হেলে দুলে ভেসে চলেছে ছোট্টো ছোট্টো ছিপ নৌকার মত সরু মুখের নৌকাগুলো। কোনোটা আকাশী নীল তো কোনো টা কালো সরু বাহারী ঢঙের। শান্ত হ্রদের ওপর দিয়ে মুক্ত আকাশের বুকে মেঘেরা ভেলা ভাসিয়ে চলেছে নিরুদ্দেশে। তারই সাথে চক্রাকারে ঘুরছে অজস্র মাছ শিকারী সাদা পাখার সামুদ্রিক পাখি।
ভেনিসের বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার
গন্ডোলায় চড়ে বিশাল হ্রদ টি ঘুরে প্রদক্ষিণ করার জন্য ইচ্ছুক যাত্রীরা এখানেই লাইন দিয়ে অপেক্ষামান । জলের শহরে বসবাস রত সব পরিবারেরই নিজস্ব জলযান আছে যা বাড়ির দরজায় বা সংলগ্ন উঠোনের সিঁড়িতে বাঁধা থাকে। কালো সরু লম্বা বাহারী অনেকটা ছিপ নৌকার মত দেখতে গন্ডোলার রাজত্ব হ্রদের শ্যাওলা রাঙা জলের বুক জুড়ে। হ্রদের এদিকে কিছু গন্ডোলা সাজিয়ে রাখা আছে ,লাল আর গাঢ় নীল রঙের মখমলের সীট। সুদৃশ্য সূক্ষ্ণ কাজের পার্শি কার্পেট পাতা রয়েছে মধ্যবর্তী জায়গা টুকুতে। গন্ডোলার চালক সাদা শার্ট ,সাদা জুতো কালো ট্রাউজার মাথায় লাল ফিতে জড়ানো শোলার টুপির প্রথাগত পোশাক টি পরে সুসজ্জিত হয়ে প্রতীক্ষা রত যাত্রীর আশায়।
এমনি একটি কারুকার্য্য মন্ডিত সুদৃশ্য গন্ডোলায় চড়ে বসে দিগন্ত প্রসারিত হ্রদের বুকে ভেসে বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছেতে অদ্রিজা ভারী উত্তেজিত হয়ে পরেছিল। গন্ডোলায় চড়ে ভেনিস ভ্রমণ খুব ব্যয় বহুল ,আধ ঘন্টার জন্য ওরা ৭০--৮০ ইউরোর বেশী চেয়ে বসে। এবং যে যার খুশি মত ভাড়া চাইছে । শ্রীময়ী ভাবছিল ভারী কস্টলি !গন্ডোলায় না হয় নাই বা চড়লাম। কিন্তু তিতিরের মন মানেনা ,বলে ভেনিসে এসে গন্ডোলায় চড়ব না তা ও কি হয় ?
ইতিমধ্যে ঋষভ একটি গন্ডোলা পছন্দ করলে তাতে রানীর মত আসন দখল করে শ্ৰীময়ী খুশিতে আত্মহারা। গন্ডোলার লম্বা দাঁড়টি বাইছে ভেনিসিয়ান রিমো। সহজ ইংরেজিতে খুব সাবলীল ভাবে বলে বুঝলে ,ভেনিস সৃষ্টির সেই আদিকালে ৮০ রকমের গন্ডোলা জলযান চলাচল করতো। মধ্যযুগ থেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণে এই আধুনিক কালে ও সমান ভাবে বিশেষত্ব বজায় রেখে চলেছে এই ছোট্ট অতুলনীয় আমাদের গর্ব রুজি রোজগারের পারানি নৌকা টি । আমাদের শহরের এই প্রিয় বাহন টি ভেনিসবাসীর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত একটি জলযান। জন্ম থেকে বিয়ে এমন কি শেষকৃত্যের দিনটি পর্যন্ত ভেনিসিয়ান রা এই গন্ডোলা যাত্রার ওপর প্রকৃত নির্ভর শীল। যাত্রী নিয়ে তারা অনবরত ছুটে চলেছে ভেনিসের জল কাঁপিয়ে । বিশ্বের সবচেয়ে রোম্যান্টিক জলযান বলে খ্যাত এই গন্ডোলা ছাড়া ভেনিস শহর সম্পূর্ণ অর্থহীন। জলকন্যা ভেনিসকে সেই আদিকালে ও গন্ডোলা ছাড়া কল্পনা করা যেত না, যেমন এই আধুনিক কালেও যায় না। ক্রমশঃ
0 Comments