গুচ্ছ কবিতা
অমিত কুমার রায়
চোখ চারিয়ে দেখো
পুজোর সময় ঘুরতে যাবে কেমন হচ্ছে বাজেট?
কাজিরাঙ্গা কচ্ছ- রনে ভদ্র গির জিম করবেট!
আরে শোনো বাজেট কত বলতে দাদা পারো?
হাজার বিশেক খরচ হবে নাকি একটু বেশি তারও!
কাজিরাঙ্গা যাচ্ছো কেনো পকেট খরচ করে,
লোকালয়েই ঘুরছে তারা মোটা গণ্ডার চামড়া পরে!
বাম্বু দ্বীপে না যেওনা কিচ্ছু দরকার নেই,
বাম্বু দিতে বাঁদর আছে এই অর্ধ মৃত পৃথিবীতেই!
ব্যালে দ্বীপে র্যালে দিতে খরচ হবে বেশি
ভূ-ভারতে বুদ্ধির চেয়ে জোর যে খাটায় পেশী।
ভদ্র গিরে বাঘ সিংহ দেখতে যাবে দূরে?
আশেপাশে দেখো চেয়ে সতর্ক হয়ে ঘুরে।
ভয় পেয়ো না কামড়াবে না অদৃশ্য তার থাবা,
দু'কান কাটা ধূর্ত তারা খ্যাঁকশেয়ালের বাবা!
অভয়ারণ্য প্রচুর আছে দাদা করবে না তো রাগ?
হরিণ ছাগল শুয়োর ধরে কুমির চিতা নেকড়ে বাঘ!
জঙ্গলটা লোকালয়েই একটু খেয়াল করো,
খটাস গোসাপ অজগর করতে পারি জড়ো!
নারী খেকো হায়না আছে, বন বেড়ালের বায়না আছে
ঠুকরে দেবার উলুক আছে মেনি মুখো ওঠে গাছে!
না না গড়চুমুক না !!
চাপড়ামারি না !
বোর এ গেলে বোর্ লাগবে
লাগবে অনেক ভোর,
তার চেয়ে ভাই হেথায় দেখার দাওনা একটু জোর।
চিড়িয়াখানা পাখিরালয় ঘুরে ঘুরে সারা?
তার চেয়ে ভাই লোকালয়ে বুঝবে আছে তারা।
রক্তচোষা বাদুড় ওড়ে
কালাচ বোড়া গর্তে
তাদের হুকুম মানলে পরে ছাড়বে সহজ শর্তে!
হাতি ঘোড়া উট গাধা
লক্কা গিরেবাজ পায়রা যতো
সেজে থাকে মানুষ রূপে তোমার আমার মতো।
কত আছে চিড়িয়াখানা অভয়ারণ্য উদ্যান,
পাঁচিল ঘেরায় ছাড়া থাকে বুলেট অ্যালসেশিয়ান!
টাকার কুমির জলেতে নয় ডাঙ্গায় করে বাস,
গা চাটে তার নেড়ি কুত্তা
গবেট গরু ছাগল দাস।
এবার ভাবো আর বেরুবে লংটুরেতে পাড়ি,
সত্যি দাদা তোমার সাথে মতের হবেই আড়ি!
বক ধার্মিক দেখবে যদি কানে কানে বলি
মগজ ধোলাই করে যেথায় হাজার অলিগলি।
বিদেশ থেকে আসছে দেশে ক্যাঙ্গারু সজারু
তার চেয়ে ভাই পোষ তো মানে দেশি দুধেল গরু!
শকুন আবার দেয় অভিশাপ গরু তুমি মরো!
এমন শকুন ছদ্মবেশে জনারন্যে বড়।
তোমার সময় নষ্ট হল স্পষ্ট কথা বলে
কি জানি ভাই কার গায়েতে ফোস্কা ওঠে জ্বলে!
এবার তুমি যেতে পারো টাকা খরচ করে
প্লেন কিংবা ট্রেনে যাও ফিরবে আশা ঘরে।
না দাদা না লজ্জাবতী বাঁদর বলছি না তো,
দুই চোখ খুলে চেয়ে দেখো জন্তু শত শত!!
অনেক জন্তু চোখের ভাষার গল্প কতো বলে,
লোকালয়ের জন্তু কথা এড়ায় ভারি ছলে!
কেউ যদি ভাই সাহস করে চোখে আঙুল দেয়,
আঙুলটা তার আই সি ইউ তে আপনি চলে যায়!
কি ভাবছো বোবা ভ্যাড়া ম্যাড়া হবে শেষে?
কাক-ময়ূরে ছেয়ে যাবে আহাম্মুকের দেশে?
ঝুলির বিড়াল খুঁজছে যারা যায়নি দূরে কোনো,
তাদের তালে তাল মিলাতে সঙ্গে নেবে বনও।
কিগো দাদা জন্তু ধরার জাল নিয়েছো হাতে?
অসূয়া সব জন্তু গুলোয় ধরবে বুঝি রাতে?
এতো কথা বলার পরে যাচ্ছ তুমি চলে
কালা নাকি অন্ধ ভানে ঠরকে চলো মন্দ তালে।
ষড়যন্ত্র
ষড়যন্ত্র কি দিয়ে তৈরি?
কাম ক্রোধ লোভ মোহ
মদ মাশ্চর্য।
এই মাশ্চর্য আবার
দুনিয়ার সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম!
এরা ঝড়ে উড়ে যায় না,
রোদে জলে জং ধরে না,
ফেলে রাখলে পচে না
অকেজো হয় না!
এর কোন মেকানিক নেই সারাবে।
বিশ্বকর্মা যা বানিয়েছিলেন
নিজেই রিপিয়ারিং আর করতে পারছেন না!!
এই ষড়যন্ত্র
কেবলমাত্র মানুষই
যত্ন করে ব্যবহার করে
অতি সন্তর্পণে
হাই ভোল্টেজও খারাপ হয় না
লো ভোল্টেজও না।
🍂
ডাকের আপেক্ষায়
ভোরবেলা উঠে পাখির ডাক শুনতাম।
এখন ব্যস্ততায় কানে ধরে না
এখন ভোর সকালে কাগজ আসে
তাতে অনেক রকম ডাক লেখা
শ্রমিকদের ডাক
কৃষকদের ডাক
প্রতিবাদের ডাক
ধর্মঘটের ডাক
অনুষ্ঠানের ডাক
অনশনের ডাক
মিছিলের ডাক
মিটিংয়ের ডাক
ধর্ষণের হত্যার কোনো ডাক হয় না হয়
চিৎকার আর হাহাকার!
সুযোগ সন্ধানীদের ডাক
ইশারা ইঙ্গিতে
পুত্র হারা কন্যা হারানো উত্তাপ সন্তাপে
পোড়া গন্ধের ঝাঁঝালো ডাক।
অনুতাপে অন্য গন্ধ ভাসে।
আগের স্মৃতির ডাক ছিল
ডাক হরকরার ছোটার ডাক!
পিয়নের ঝোলার চিঠির ডাক!
তার গন্ধের ডাকে
হৃদয় মথিত হতো আর আজ?
মায়ের ডাক বাবার ডাক অনেকেই শুনতে পায়
আমি দুজনেরই ডাক আর শুনতে পাইনা!
হঠাৎ করে হয়তো ডাক শুনতে পাবো
চলে আয়! চলে আয়!
অপেক্ষায় হয়তো আরো কিছুকাল
থাকতে হবে এই ইতরের দেশে!
স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার!!
খুঁজতে খুঁজতে আরও রাত হবে
ভোর হবে
কাকের ডাক শোনা যাবে
মোরগের ডাক শোনা যাবে
মানবিকতা মূল্যবোধ
বিবেকের ডাক?
শুনতে পাব?
শোনার অপেক্ষায় কান পাতি,
মাটির বুকে।
ওই দ্যাখো,
ঝড় উঠেছে
বৃষ্টি বাতাস কানাকানি করছে
সে আসছে সে আসছে।
মাটির মুখে কান পাতি
ফুলের মুখে কান রাখি
নিজের বুকে কান পাতি
সত্যিই সে আসছে?
তাকে আসতেই হবে
নৌকা ভাসছে,
তীরে পৌঁছতে আর
একটু সময় বাকি
সূর্য উঠবেই উঠবে
চেতনার বার্তা দিতে।
ফোটা
অশ্রুর ভাষায়
শিশির শিউলি ফোটায় না।
নীল কিম্বা শ্বেত শতদল
ফোটায় না
বেদনার কন্টক ফোটায়।
0 Comments