ইস্কুল ফিস্কুল
পর্ব -১৭
সৌমেন রায়
চিত্র – অসিত কুমার সেনাপতি।
এসো এসো বাসায় এসো
শিক্ষকদের অসুবিধা নিয়ে কথা চলছে আগের পর্ব থেকে।প্রথম অসুবিধাটা শুনেছেন। তারা যে দ্বিতীয় অসুবিধার সম্মুখীন হন সেটা হল অনুপস্থিতি। অনুপস্থিতির মাত্রা বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে অকল্পনীয়। এত রকমের সরকারি সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের স্কুলে টেনে আনা যাচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা এমনি এমনি আসে না। গিয়ে কি করবো গোছের ব্যাপার। মাঝে মাঝে বিবিধ অনুষ্ঠানের ফাঁকে মুখ দেখায়। অনুষ্ঠানের ফিরিস্তি আগেই শুনেছেন। মোটামুটি গড় হিসাব পঞ্চাশ শতাংশ উপস্থিতি। মনে হতে পারে এই পঞ্চাশ শতাংশকে তো শেখানো যায়। সে গুড়ে বালি। কারণ এই উপস্থিতিটা রোটেশন অনুযায়ী হয়।যে পনের শতাংশ মত নিয়মিত উপস্থিত থাকে তারা কিছুটা শিখতেও পারে। আপনি হয়তো ভাবলেন কোন একটা ছেলে একটু আধটু পারছে, ক্লাসে একটু নজর দেবেন। সে মাঝে মধ্যেই হাওয়া। কিছুদিনের মধ্যে শিক্ষকের উৎসাহ কর্পূরের মতো উড়ে যায়। বিভিন্ন কারণে দেখেছেন যে কার্যকর শিখন দিবস কমে গেছে। তাই পড়াতে হয় অত্যন্ত দ্রুত। শিক্ষকরা অনেকেই বোঝেন যে গতিতে তিনি পড়াচ্ছেন সেই গতিতে একটি সাধারণ মানের শিশু, কিশোর পড়াটা মনে নিতে পারছে না। কিন্তু উপায় নেই। শিখন দিবস কমে যাওয়ার ফলে তাকে সিলেবাস শেষ করার জন্য দ্রুত গতিতে পড়াতেই হয়। অনিবার্য যে প্রশ্নটা উঠে আসে সেটা হল সিলেবাস শেষ করে কি লাভ স্যার? যদি ছেলেমেয়েরা শিখতেই না পারে? একদম হক কথা। সত্যিই শিখতে না পারলে সিলেবাস সেরে কি হবে? কিন্তু সমস্যা আছে। যে কজন শিখতে পারছে তারাই শিক্ষার আলোটি টিমটিম করে জ্বালিয়ে রেখেছে। তাদেরকে বঞ্চিত করবেন কিভাবে? দ্বিতীয়ত যদি সিলেবাস শেষ করা না যায় দোষ সর্বদা শিক্ষকের উপরেই পড়ে। ধরুন সেভেনের একটি ছাত্র উৎপাদক বিশ্লেষণ বা ভয়েস চেঞ্জ এর কথা না শুনেই পাস করে গেল। কারণ সময় অভাবে ভালো করে পড়ানো যাবে না বলে ওই দুটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বাদ দিয়েছেন। সে ছেলেই যখন নাইনে উঠে বলবে এগুলো আমরা শুনিইনি। তখন এই আপনি আবার বলবেন না তো সেভেন এইটের শিক্ষক মশাইরা কি করছিলেন? পড়াননি কেন ? দ্রুত পড়ানোর সমস্যা দু একদিন না এলে কোন একটা অধ্যায় তার পুরো বাদ চলে যায়। না আসার কালচারটি শহরে শুরু হয়েছিল এখন আস্তে আস্তে গ্রামের সংক্রমিত হচ্ছে।
শহরাঞ্চলের না আসার কারণটি তো আগেই জেনেছেন। বেশিরভাগের কাছে স্কুল এন্টারটেইন্ড হওয়ার জায়গা। সেজন্য মাঝে মধ্যে আসে। গ্রামাঞ্চলে কিছু জেনুইন কজ থাকে। যেমন বাড়িতে ছোট ভাই আছে বাবা মা কাজে গেছে, তাকে দেখতে হবে। বাড়ির গরু, ছাগলটা দেখতে হবে। কারো শরীর খারাপ দেখভাল করতে হবে।মা কাজে গেছে রান্না করতে হবে।এসব কারণ অতীতেও ছিল এখনো আছে। সঙ্গে আছে চাষের কাজ, কাকেও কেমন দেখতে হয়। আরো আছে সামাজিক অনুষ্ঠান, বাড়ির অনুষ্ঠান। এগুলিও সঙ্গত কারণ । কিন্তু ধরুন বিয়ে বাড়িতে পনের দিন, শ্রাদ্ধ বাড়িতে সাত দিন, অন্নপ্রাশনের পাঁচদিন যদি ছেলে মেয়েরা না আসে তখন সেটাকে আর জেনুইন কজ বলা যায় না। একবার এক ছাত্রকে টার্গেট করে ধরে ধরে শেখানো হচ্ছিল। হঠাৎ সে এক সপ্তাহ স্কুল এলো না। জিজ্ঞেস করতে বলল যে ঠাকুর এসেছিল। ঠাকুর এসেছিল মানে? অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল দারুনির্মিত মহাপ্রভু অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেব এসেছিলেন। সরাসরি কারো ধর্ম চেতনায় আঘাত করা অনুচিত। অনেক সময় দারুনির্মিত ঠাকুর অনেকের মনে শান্তির সন্ধান দেয়। ক্রমাগত পাঠের মধ্যে থাকলে মনে অন্তত এই দ্বন্দ্ব টুকু তুলে দেওয়া যায় যে এই কাঠের ঠাকুরের সেবাই কি প্রকৃত ধর্ম না তার আরো ভিন্ন রূপ আছে? তা এইরকম ভয়াবহ অনুপস্থিতির আবহে সে দ্বন্দ্বটুকু তোলার সুযোগ সর্বদা হয় না। একই রকম ভাবে অষ্টমের আরেকটি ছেলেকে ধরা হল। অনুপস্থিতির কারণটি বলতে সে দ্বিধা করছিল। বন্ধুরা জানালো ওদের মুরগির দোকান আছে। সকালবেলা ওর বাবা মুরগি আনতে যায়। সেই সময় ওকে মুরগি কেটে বিক্রি করতে হয়। কিশোর বয়সে রক্তমাখা অস্ত্র হাত থেকে জ্ঞানজগতে উত্তরন ঘটানোর মত মনের জোর সবার থাকে না। সঙ্গে আছে বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা। তবে শুধুমাত্র এই কারণগুলিতে অনুপস্থিত হলে তাও বাঁচা যেত,অথবা বাঁচানো যেত। কিন্তু এখন যেটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে সেটা হল আমি তো এমনি এমনি যাই না । কোনো কারণ নেই ছেলেটা বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছে , স্কুল আসছে না। কিন্তু অভিভাবকেরও হেলদোল নেই। আর আছে টিউশন।কিরে প্রতি শনিবার তোকে দেখি না যে? অম্লান বদনের বলে স্যার আমার টিউশন থাকে। টিউশন শিক্ষকরা খানিকটা ইচ্ছে করে স্কুলের টাইমে টিউশনের টাইম দেয়।
সচেতন অভিভাবক ত্যাগ করতে জানে। সন্তান কোন অনুষ্ঠানে কতদিন পড়া বন্ধ রাখবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই তার সন্তানের পড়াও হয়। সবচেয়ে বেশি স্টুডেন্ট উপস্থিত হয় জুলাই, আগস্ট , সেপ্টেম্বর মাসে। এই সময় আবহাওয়া কিন্তু প্রতিকূল থাকে। তাও উপস্থিতি বাড়ে কি করে? এই সময় ছুটির পরিমাণটা একটু কম, তাই কন্টিনিউটি থাকে। মনে হয় সেই কারণেই হয়তো উপস্থিতি বাড়ে। আচ্ছা এই তিন মাসে কিছু বেসিক এডুকেশন দিলে হয় না? তাহলে তো কিছু অন্তত শেখানো যায়। না হয় না। এগার মাসের কোর্সে তেমনভাবে করতে গেলে যারা নিয়মিত স্কুল আসে তারা বঞ্চিত হবে। পূর্বেই বলা হয়েছে এরাই শিক্ষার সামান্য আলোটুকু জ্বেলে রেখেছে। এমন করলে সেটুকুও নিভে যাবে। সেরকম করতে চাইলে হবে, তাহলে তিন মাসের আলাদা কোর্স ডিজাইন করতে হবে । যারা মাঝেমধ্যে স্কুল আসে মাঝেমধ্যে বন্ধ করে তাদেরও শেখানো প্রায় অসম্ভব। কারণ শিক্ষা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নতুন সিলেবাস তো খুব বেশি রকমের ধারাবাহিকতা দাবি করে। আজ যা শেখান হল কাল সেটা প্রয়োগ করে নূতন কিছু শেখানো হয়। অনিয়মিতদের শেখাতে গেলে যেটা করতে হবে তা হলো পাঁচজনে একজন শিক্ষক রাখতে হবে। যেই সে ছেলেটি স্কুলে আসবে ওমনি খপ করে তাকে ধরে শিখিয়ে দিতে হবে। সেও অবশ্য গপ করে গিলে, ভক করে বার করে দেবে কিনা সেটা ভাবার কথা। আপনি হয়তো সত্তর শতাংশ উপস্থিত না হলে পরীক্ষার বসতে না দেওয়ার সরকারি নিয়মের কথা ভাবছেন। শুনুন অনেককে বাবা বাছা করে ঘর থেকে ধরে এনে রেজিস্ট্রেশন বা মাধ্যমিকের ফর্ম ফিল আপ করাতে হয়। ক্লাসের পরীক্ষায় বসতে না দিলে বয়েই গেছে।এখনই অত অবাক হবেন না।এখনও অনেক পর্ব বাকি!
তৃতীয় অসুবিধা ছাত্র-ছাত্রীদের চঞ্চলতা । শিশুরা স্বভাব চঞ্চল। অতীতে দেখা যেত একটি ক্লাসে কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়ে খানিকটা সময় পর থেকে চঞ্চল হয়ে উঠতো। প্রথমটা অন্তত শান্তিতে পড়ানো যেত। বর্তমানে মনোযোগের মাত্রা ভয়াবহ রকমের খারাপ। কোভিড উত্তর পরিস্থিতিতে সেটা মারাত্মক রকম ভাবে বেড়েছে। ক্লাস শুরু মিনিট তিনেকের মধ্যে চাঞ্চল্য শুরু হয়। নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। চঞ্চলতার কারনটি পরের পর্বে কিঞ্চিত আলোচনা করা যাবে। মোদ্দা কথা , গোলমাল এরা করবেই। কঠিন বিষয়বস্তু হলে না বোঝার জন্য গোলমাল করবে, সহজ বিষয়বস্তু হলে বুঝতে পেরে যাবে বলে করবে, হাতেনাতে করে দেখলে তার আনন্দে গোলমাল করবে, লেকচার মেথডে পড়ালে আনন্দ না পেয়ে গোলমাল করবে। এমনকি গল্প বললেও কিছু স্টুডেন্ট গোলমাল করে। কারণ ওদের নিজস্ব ‘ গুরত্বপূর্ন ‘ গল্পের পরিমাণ অনেক বেশি এবং মনের ব্রেক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল। প্রথমে বিষয়বস্তু গ্রহণ, তারপর মনোজগতে পাচন ঘটলে তবেই তো অঙ্গীভূত হবে। চঞ্চল মন নিয়ে তা কি সম্ভব?
ক্লাসে এত অনুপস্থিতি কেন? এলেই বা এত চাঞ্চল্য কেন? শিক্ষক দায়ী নয়তো? আনন্দহীন পাঠ দান দায়ী নয়তো? স্কুল ক্রমশ নীরস জায়গা হয়ে উঠছে না তো? তা যে নয় সেটা পর্ব- ১১ ও ১২ (পা পিছলে আলুর দম)ও পর্ব -১৫ (বিগ্রহ) পড়ে নিশ্চয়ই বুঝেছন। পড়া, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা যাই হোক না কেন তা খুব বেশি হলে চল্লিশ শতাংশ স্টুডেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাকিদের ইন্টারেস্ট কোথায় সেটা এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি। আরো বছর আটেক চেষ্টা করা বাকি আছে। খুঁজে পেলে জানাব।
আচ্ছা activity based learning করলে হয় না। যেমন ধরুন টপিক হল বঙ্গোপসাগর। এরপর স্টুডেন্টরা তার স্রোত, জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশে প্রভাব, ইতিহাস এসব খুঁজে পড়ল। এনগেজমেন্ট থাকলে গোলমাল কম হতে পারে। প্রথমত শিক্ষক নিজের থেকে দু একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। কিন্তু পুরো করতে গেলে নীতিগত পরিবর্তন দরকার। দ্বিতীয়ত এভাবে পড়ানোর জন্য যে পরিকাঠামো দরকার তা কোন স্কুলেই নেই। আরো বড় বিষয় হচ্ছে যারা পড়াই বুঝতে পারছে না, সেভাবে ছোট থেকে প্রস্তুতি হয়নি তাদের জন্য এমন পড়া কি সম্ভব? যারা এইরকম বিবিধ আকাশ কুসুম পরিকল্পনার কথা বলেন তারা একটা বেসিক জায়গাতে ভুল করেন। তারা ধরে নেন ছেলে মেয়েরা সব শেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। অসুবিধা যা হচ্ছে তা পড়ানোতে।
চতুর্থ সমস্যা হচ্ছে অনুশীলনের অভাব। যে কটা স্টুডেন্ট ক্লাসে পড়ে তাদের মধ্যে সিংহভাগ আবার বাড়িতে অনুশীলন করে না। পড়াশুনা বোঝা এক আর সেটাকে ধরে রাখা আর এক। তার জন্য দরকার যথেষ্ট অনুশীলন। সেটা প্রায় শূন্য। ফলে তাদের শেখার ক্ষমতা অত্যন্ত ধীর। অঙ্কের ক্লাসে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী যে গতিতে অনুশীলন করে তাদের সময় দিতে গেলে একটা ক্লাসের বিস্তার বছর তিনেক হতে হবে । যথেষ্ট অনুশীলন ছাড়া কোন শিক্ষাই মনের মধ্যে স্থায়ী হতে পারে না। তাই এদের প্রতিবার পূর্বের বলা কথা মনে করাতে হয়। যেমন ক্লাস সিক্স-সেভেনের শেখা বীজগণিতের নিয়ম নাইন টেন পর্যন্ত এরা সঠিকভাবে করে উঠতে পারে না, বুঝে উঠতে পারে না। বারবার মনে করাতে হয়। এভাবে কতদূর আগানো যায়! শহরের কিছু ছেলের ক্ষেত্রে কথাটা আবার উল্টো । তারা আবার অতি অনুশীলনে দগ্ধ হয়। বইয়ের একটি শব্দ যাতে বাদ না যায় সেই অনুশীলন চলে।বাদ গেলে মা হয়তো সেদিনের বরাদ্দ ডিমের কুসুমটাই কেড়ে নেবে। আরাবল্লীর ম্যাপ পয়েন্টিং কোন এন্ড থেকে কত সেন্টিমিটার দূরে তা হয়তো স্কেল ফেলে দেখে ।কিন্তু আরাবল্লীর খাঁজে কত গল্প লুকানো আছে তার সন্ধান করার সময় সে পায় না। কারণ সে সব ‘ ফালতু কথা’ সিলেবাসে নেই। শহরের চেরাপুঞ্জি থেকে এক ফালি মেঘ গ্রামের গোবি সাহারাতে দিতে পারলে ভালো হতো । কিন্তু উপায় নেই।
7 Comments
সৌমেন ধারাবাহিক ভাবে আমাদের সামনে একটা আরশি মেলে ধরছেন প্রতি মঙ্গলবার। আজকের আয়নায় ফুটে উঠেছে আর এক সমস্যার ছবি। এই সময়ের সমাজভাবনায় বিশ্বাস শব্দের কোনো মর্যাদা নেই ,যে দিকেই তাকাই সে দিকেই কেবল অবিশ্বাসের আস্ফালন। সব কিছুই নেড়ে ঘেঁটে গেছে। একটা সার্ভে করলে কেমন হয় ? কেন ছেলেপিলেরা স্কুলে আসছে না বা আসতে চাইছে না। এরফলে দু পক্ষের মতামতের আভাস মিলবে। সৌমেন সবটাই ভেবে লিখছেন, তবুও.....
ReplyDelete🙏🙏
Deleteআপনার সঙ্গে সহমত। নিরপেক্ষ ব্যক্তি/ সংস্থা দিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে উভয় পক্ষের সুবিধা অসুবিধা জানা উচিত।তবে ডাটা ম্যানিপুলেশন হবেনা এটা নিশ্চিত করতে হবে।
অনবদ্য লেখা, বিশ্লেষণ।
ReplyDeleteপড়ছেন এই পরম পাওয়া
Deleteআপনার লেখনী অসাধারণ। লেখা যত এগোবে আরও পরিষ্কার হবে সবকিছুই। কিন্তু একটা প্রশ্ন ছাত্র ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসাতে শিক্ষক সমাজ কতটা উদ্যোগ নিচ্ছেন! সমাজ তো শিক্ষকদের হাতে তৈরি হয়। কেন বলুন তো অভিভাবক রা টিউশন কে এত ভরসা করছেন! গ্ৰাম বাংলার যে সমস্ত সমস্যার কথা বলছেন সেগুলো চিরন্তন। তবুও সমস্যা বাড়ছে। আজ আর বাড়ি গিয়ে ছাত্র ছাত্রী দের খোঁজ নেওয়ার মাস্টার মশাই কোথায়! একটা সময় ছিল গ্ৰামের সব কিছুতেই শিক্ষক দের পরামর্শ অপরিহার্য ছিল। কি জানি বড্ড অসহায় মনে হয় নিজেকে!
ReplyDeleteবাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া মাস্টার মহাশয় যে একেবারে নেই তা নয়।তবে সবাই দুর থেকে যাতায়াত করেন তাই ভরসা কমে গেছে এটা সত্য।
Deleteটিউশনের উপর ভরসা করার কারণ আগের একটি পর্বে ছিল।শিক্ষদের দায়িত্ব তারা কতটা পালন করছেন সেটা পরে একটি পর্বে থাকবে।
আপনারা পড়ছেন, ভাবছেন এটাই লেখার স্বার্থকতা।🙏🙏
সবাইকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ভিত্তিক পাঠ গ্রহণের মধ্য দিয়ে কেন যেতে হবে এটাই আমার বোধগম্য হয় না। স্থানগত বৈচিত্র্য, জাতি ও পারিবারিক জীবিকা গত বৈচিত্র্য যেখানে ছেলে মেয়েদের কত শত ভিন্ন মানসিক গঠনে দাঁড় করিয়ে রাখে সেখানে সবাইকে একই ধাঁচে কেন বাংলা ইংরাজি ইতিহাস ভুগোল ভৌত বিজ্ঞান জীবন বিজ্ঞান গণিত ইত্যাদি পাঠের মধ্য দিয়ে যেতে হবে? কেন কারিগরি শিক্ষার বড়সড় জায়গাটির দখল উচ্চ মেধার (কগনিটিভ) কিছু ছেলেমেয়েদের জন্য তুলে রাখা হবে? সবাইকে কেন চাকরি পাবার জন্য চাকরি পাবার মত করে শিক্ষিত হতে হবে? সেটা তো একসময়ে ব্রিটিশদের প্রয়োজন ছিল। আজকে পলিটেকনিক বা ভোকেশনাল ট্রেনিং কেন বিদ্যালয় স্তরে নেমে আসবে না? যে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী সেই সব মানুষের জন্য গ্রাম স্তরে কেন কৃষিবিদ্যা ও তার অধিত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে কেন জীবন বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা ভুগোল ইতিহাসের পাঠ আবর্তিত হবে না? প্রশ্ন গুলোর উত্তর কিন্তু বিদ্যালয় শিক্ষার ওপর যে সর্বরোগহর চাপ তৈরি করে রেখেছে তা অনেকাংশে লাঘব করতে পারে।
ReplyDelete