জ্বলদর্চি

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস (১২ই সেপ্টেম্বর) /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস (১২ই সেপ্টেম্বর) 
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ১২ই সেপ্টেম্বর "বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস"। প্রাথমিক চিকিৎসা কি? এবং তা জানা থাকলে আমাদের কি,কি সুবিধা হতে পারে, সেই সব কিছুই আমরা জেনে নেব আজকের আলোচনায়। 
প্রাথমিক চিকিৎসা হল,কোন ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতা, ক্ষতিগ্রস্ততা বা আঘাতপ্রাপ্তির প্রেক্ষাপটে সাধারণ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে অস্থায়ী চিকিৎসাবিশেষ।
কোন কারণে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ততা ও সঙ্কটাপন্ন হবার হাত থেকে রোগীকে বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে ভূক্তভোগী ব্যক্তিকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিরাপত্তা প্রদান করে, উন্নত চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়, ফলশ্রুতিতে ডাক্তার বা নার্স প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহযোগিতা করে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন কিংবা অন্য কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে দ্রুত প্রেরণের সঠিক নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্যে তেমন কোন যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসা উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না; এর প্রধান কারণ হচ্ছে, যে-কোন স্থানে ও যে কোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। জরুরী চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার উপর আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এর ফলে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থানে তথ্য প্রেরণ করেন ও অ্যাম্বুলেন্স আসার পূর্ব পর্যন্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

প্রাথমিক চিকিৎসার মূল তিনটি উদ্দেশ্য হল,
১.বিপদাপন্ন ব্যক্তির জীবনকে সংরক্ষণ করা। তাকে মৃত্যুর সম্ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা।
২.আরও আঘাতপ্রাপ্তি হওয়া থেকে রক্ষা করা। ভূক্তভোগী ব্যক্তির আঘাত যাতে আরও দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে, কিংবা আরও গুরুতর পর্যায়ের দিকে অগ্রসর না হয়, সেদিকে নজর রাখা। 
৩.রক্তপাত বন্ধ করার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলে, ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে প্রেরণ না করা। এছাড়াও আঘাতপ্রাপ্তি তেমন গুরুতর নয়, এ বিষয়টি ব্যক্তির অন্তঃমনে প্রবেশ করানো। আরোগ্য লাভের জন্যে ব্যান্ডেজ বা প্লাস্টার প্রয়োগের ন্যায় সাধারণ চিকিৎসা সেবাই অনেকাংশে মূল চিকিৎসায় রূপান্তরিত হতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা খুব উঁচু মানের হয়,আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর খুবই উঁচুমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাধারণত, প্রশিক্ষণ পর্বটি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক ও ব্যক্তিত্ব কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণের মান, সময়সীমা দেশে-বিদেশে ভিন্ন হতে পারে। যুক্তরাজ্যে একদিনের জন্যে প্রাথমিক চিকিৎসাবিষয়ক প্রশিক্ষণমালা প্রদান করা হয় এবং কার্যস্থলে চার দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ চলে। প্রশিক্ষণে আঘাতপ্রাপ্তি থেকে আত্মরক্ষা, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা প্রদানের ধাপসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস, প্রতি বছর ১২ই সেপ্টেম্বর পালন করা হয়। জীবন বাঁচাতে এবং আঘাত প্রতিরোধে প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয় এই দিনে।বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা হল,একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, যেখানে জীবনযাপনের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্বের কথা বলা হয়। এখানে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক সংস্থার ব্যক্তিরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার আলোচনা এবং জরুরী পরিস্থিতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করে।
এই দিবসটি পালনের জন্য, প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি শিখতে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জরুরী পরিস্থিতি মানুষকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে,কিভাবে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করা যায় এবং জরুরী পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে জনগণকে দ্রুত শেখানো উচিত।জীবন বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পালন করা হয়, প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস।

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসের গুরুত্ব (WFAD) অনেক,প্রাথমিক চিকিৎসা কোন ব্যক্তি তার পূর্ব জ্ঞান ছাড়াই শিখতে পারে। "প্রাথমিক চিকিৎসা" শব্দটি একজন পথিকের দ্বারা প্রদত্ত একজন মানুষের যত্নের সাথে সম্পর্কিত, যদিও এটিতে চিকিৎসা সেবা বিবেচিত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল, সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করা, অবনতি নিরোধ করা।  প্রাথমিক চিকিৎসার মানসিক ধারণা ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয়। হেনরি ডুনান্ট,একজন শিল্পী রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে  তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেকেই জরুরি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার যোগ্য।

একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, জরুরি সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োজনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে ২০০৫সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, একটি অনির্দিষ্ট চিকিৎসায় জরুরী পরিস্থিতিতে, যাদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা করা হয়েছে এবং নিকটবর্তী হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তাদের ফলাফল অত্যন্ত ভালো হয়েছে। দিল্লি ২০০২ এর অগ্নিকাণ্ডে ব্যর্থতা ধরা পড়েছে, কারণ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়নি ফলে বেশিরভাগ মানুষের ইনজুরি গভীর হয়েছে। 
 প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান থাকতে হবে, চিকিৎসা প্রদানকারীদের এবং সাধারণ মানুষদের ইচ্ছার কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং শেখানো যেতে পারে। শুধু তাই নয়, বারবার  চেষ্টার মাধ্যমে গুণগতমান উন্নত করা যেতে পারে। বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসে বলা যেতে পারে, চিকিৎসা জরুরী একজন পথিকের  জন্য।প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ এবং বাস্তবে প্রয়োগের মাধ্যমে এর  গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়  ও সুস্থতার হার বাড়ে।

প্রত্যেক দিবসের একটা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে, ২০২৩সালের বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসের থিম ছিল,  "বিশ্বে প্রাথমিক চিকিৎসা যা প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থায় সহায়তা করে"।
প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে শুধুমাত্র ১২০বছর ধরে একটি পরিস্থিতি হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। সার্জনদের শিক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যারা যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষত স্প্লিন্টিং এবং ব্যান্ডেজ করার প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের মূল্য উপলব্ধি করেন।১৮৭৮সালে, লন্ডনের উলউইচের রয়্যাল হারার্টিটারি এবং জন-মেজর পিটার শেফার্ড এবং অ্যাবারডিনশায়ারের দুই কর্নেল, কর্নেল ফার্সি ডনকান বেমরিক  নাগরিকদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পরিকল্পনার  পথদর্শক বলা যায়।
সার্জন মেজ পিটার শেফার্ড উলউইচের প্রেসবিটারিয়ানে সেই সময় স্কুলে ছাত্রদের শিক্ষা দেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শিক্ষাক্রম গঠন করেন।১৯শতক নাগাদ, প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতির দ্রুত বিশ্বে প্রসার ঘটে। শুধু তাই নয়, এই চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং চারপাশের আন্তর্জাতিক মনোভাবকে পরিবর্তন করে।
এই বার্ষিক পালনের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি শিখতে এবং তার জন্য কিভাবে জীবনযাপন করতে হবে,যা স্বাস্থ্য এবং  জরুরী পরিস্থিতিতে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে, শুধু তাই নয়, কিভাবে জরুরী পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়েও নজর রাখতে হবে।

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস,একটা গুরুত্বপূর্ণ দিবস(WFAD)।এই দিন জনগণকে জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শেখানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিবস ।কেউ একজন প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে একটি বিপ্লব আনতে পারেন, প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষ, যেমন সিপিআর করা, বা কোথাও রক্তক্ষরণ হলে তা বেঁধে আটকানো এই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে একটা বা অনেক জীবন বাঁচাতে পারে।
এই দিনটি প্রাথমিক চিকিৎসা শিক্ষাতে একটা সম্প্রদায়কে একত্রিত করে।স্থানীয় ইভেন্ট এবং কর্মশালা জ্ঞান সৃষ্টি করতে এবং  সংগঠিত করতে পারে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জানতে পারা যায়, কিভাবে জরুরী পরিস্থিতিতে তাদের আশেপাশের বা কর্মক্ষেত্রে অন্যদের সাহায্য করতে পারবে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে।

বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি শিক্ষা এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে উঠে।এই প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিবসের লক্ষ্য হল, চিকিৎসার প্রাথমিক জ্ঞানকে উন্নতভাবে গণ্য করা এবং এর গুরুত্ব ও শক্তির উপর জোর দেওয়া।

প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্নভাবে (WFAD) উদযাপন করা হয় । কোথাও কোথাও মানুষদের চিকিৎসা কিট প্রদান করা, নিরাপত্তা পর্যালোচনা করা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হয়।
 বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস ২০২৪ সালের থিমকে হাইলাইট করে। এই থিমটি প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান শেখানোর গুরুত্বের উপর জোর দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেখার জন্য বিভিন্ন সুবিধে জনক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়,যা জরুরী জীবন বাঁচাতে পারে। 

প্রাথমিক চিকিৎসা হল, একজন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে যে চিকিৎসা রোগীকে দেওয়া হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি এমন যে,যে কেউ চিকিৎসা করতে পারে, এই চিকিৎসায়, ব্যান্ডেজ, পরিষ্কার কাপড় এবং কোল্ড প্যাকের মতো জিনিস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হল, সঠিক চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ না করা পর্যন্ত ব্যক্তিকে সুস্থ  রাখা।
প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল,প্রাথমিক সাহায্য, প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন।এটি একজন ব্যক্তি শিখে অনেক ব্যক্তিকে শেখাতে পারে এবং খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষদের সহায়তা করে।প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতির সহজ পদক্ষেপগুলি হল, যেমন আঘাতপ্রাপ্ত স্থানকে পরিষ্কার করা, রক্তপাত বন্ধ করা এবং সিপিআর করা, ব্যান্ডেজ এবং অ্যান্টিসেপটিক রাখা। প্রাথমিক চিকিৎসা কিটেই ব্যবহারের জিনিসপত্র রাখতে হবে।
কিছু কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা হল,পুঁড়ে গেলে, জল দিয়ে পোড়া ঠান্ডা করতে হবে এবং একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে, ঘরের জানালা দরজা খুলে দিতে হবে, যাতে বাইরের বাতাস ঘরে চলাচল করতে পারে এবং লোকজন থাকলে সরিয়ে যেতে বলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
হাড় ভেঙে গেলে সেখানটা  নাড়াচাড়া না করে, ব্যান্ডেজ দিয়ে আটকে রাখতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
এইভাবে বেশ কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে,যা আমাদের গুরুতর সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তাই  প্রত্যেক বাড়িতে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষ কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা উচিত, শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যে পাড়া এবং স্কুল- কলেজেগুলিতে এই নিয়ে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম করা উচিত। তাহলে হয়তো মানুষের মূল্যবান জীবন বেঁচে যেতে পারে, তাই প্রত্যেকেরই উচিত প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি জেনে নেওয়া।

Post a Comment

0 Comments