গুচ্ছ কবিতা
কমলিকা ভট্টাচার্য
ক্রমশ পাথর হচ্ছি আমি..
আমি দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে সম্পর্কের হাত ছেড়ে গেছে,
বৃষ্টিতে ভিজি, রোদে পুড়ি,
রূপালি অশ্রু ঝরে চাঁদের,
বাতাসে ভেঙে যায় আমার চিন্তা।
সময় গলে যায় ধীরে ধীরে, মোমের মতো,
তবু আমি রয়ে যাই, শিকড় গেড়ে,
অন্তহীন অপেক্ষায়,
যেন দুঃখ আমার হৃদয়কে খোদাই করছে।
আমার যন্ত্রণা শক্ত হয়ে যায়,
খরার শুকনো মাটির মতো,
যেখানে রক্ত স্রোত প্রবাহিত হত,
এখন শুধুই নিঃশব্দ প্রতিধ্বনি।
হারানো দিনের ছায়া দীর্ঘতর হয়ে যায়,
কিন্তু আমি অটল, অবিচল,
অপেক্ষার এক স্মৃতিস্তম্ভ,
শোকের ভাস্কর্যে রূপান্তরিত পাথর..
শব্দের তুলসীপত্র
একটা কবিতা লিখতে খুব ইচ্ছা করছে আজ,
যে কবিতা লেখার ছিল তোমার জন্য।
আজ না হয় নিজের জন্যই লিখি,
ফুলের মত ফুটে ছিল যে শব্দগুলো,
প্যাপিরাসের পাতায় লেখা প্রেম,
সেগুলোতে গাঢ় খয়েরী রং লেগেছে।
ছন্দ জলের ছেটায় তবু নেতিয়ে,
তবু রেখে আছি আশায়,
ঐ যে একটা হিসাবী মন,
সেটা ব্যঙ্গ করে,
টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে গেছে।
ধুয়ে মুছে ঝকঝকে উঠোন,
তবুও কিসের পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা?
মিথ্যা ভালোবাসার গল্প শোনার?
আমার কবিতা, ভালোবাসা তো মিথ্যা নয়,
সে যে চড়ানো তুলসীপত্র,
বাসী হবে না কখনো,
তোমার মনের আঙিনায়,
সে থাকবেই শাশ্বত,
চিরকালের মতোই সতেজ,
অনন্ত প্রেমের স্মৃতি হয়ে
শত অবহেলাতেও...
🍂
একটা সাধারণ দিনের মতো আমি....
একটা সাধারণ দিনের মতো,
আমি একটা সাধারণ মেয়ে,
ব্যস্ততার মধ্যে আছি,
কিন্তু নিজের অস্তিত্ব যেন হারিয়ে গেছে—
মনে রাখার মতো কিছু নেই,
আমি কেবল একটা সাধারণ দিনের মতো।
অস্থির ভোরের অপেক্ষা,
দীর্ঘ রাতের শেষে—
দিনের জানালায় খুলে যায় আলাপনের আলো,
ছায়াহীন দুপুরের নিঃশব্দ কথা।
টেবিলে সাজানো নানা পদ,
গড়ানো জলে তোমার স্মৃতি ভাসে,
বিষম খাওয়ার সময়, বারবার আমার নাম মনে পড়ে কি?
এই সব সাধারণ রোজকার ঘটনা,
ঠিক যেমন আমি—
একটা সাধারণ মেয়ে।
সূর্য যখন পশ্চিমে ঢলে,
চায়ের কাপে কথার আদর মাখা ঠোঁট,
ধীরে ধীরে বাইরে নামে অন্ধকার।
জানালার কপাট বন্ধ হলে,
থেকে যায় স্বপ্নের প্রতিশ্রুতি
----রোজ রাতে স্বপ্নে হাত মেলানো।
এই সবই এত সাধারণ,
একটা সাধারণ দিনের মতো—
ঠিক যেমন আমি,
একটা সাধারণ মেয়ে।
ভালোবাসার খোঁজে,
চাই কিছু অসাধারণ পেতে,
কিন্তু আমি যে—
একটা সাধারণ মেয়ে,
একটা সাধারণ দিনের মতো।
তোমার মনে দাগ কাটার মতো,
মুহূর্ত নেই আমার—
মুছে ফেলা যায় আমাকে সহজে,
ভুলে যাওয়া খুব সহজ।
আমি তো একটা সাধারণ মেয়ে—
একটা সাধারণ দিনের মতো।
কারো কি মনে থাকে,
আমার সাধারণতার গল্প?
স্মৃতির কাটাকুটি খেলা
তোমার ছোঁয়ায়
নদীর জল ফিরে পায় ঢেউয়ের দোলা,
উপেক্ষিত তটে মেলে প্রভাতের প্রথম রোদ
ঘুমিয়ে থাকা কূলপাড়ে ফিরে আসে গাঙচিলের গান
আলো ছায়া খেলে যায় বৃক্ষের গা ছুঁয়ে।
আজ যদি নিরাশা খেলা করে স্মৃতির রুক্ষ জমিতে,
অযত্নের ধুলোয় ঢেকে যায় আজ সবুজের আশা
বাতাসে মিশে যায় ক্লান্ত নিঃশ্বাসের রেশ
তখন চিনতে পারিনা— কে ছুঁয়ে ছিল, কে ফেলে গিয়েছে ?
তোমার প্রেমের স্পর্শ না তোমার অবহেলায় রেখে যাওয়া চিহ্ন,
ভাঙা সময়ের কাঁচের টুকরো বা একবুক কষ্টের গাঁথা।
আমার কথারা কোথায় যাবে?
বারবার পথ হারায় শব্দের ছন্দে,
চিরকালীন কাকে বলি!
স্মৃতির কবিতা না জীবনের কাটাকুটি খেলা
কেউ কি দেখবে, কেউ কি ধরবে
আমার জরাজীর্ণ কবিতার খাতা যা শুধু কাটাকুটি ভরা..
ছায়া -রোদ্দুর
মনের অলিন্দ জুড়ে সারাদিন রোদ্দুর আমার
ভোরের আলোয় সোহাগ মাখা তুলতুলে রোদ
সোনালি আভায় গলে গলে পড়ে
চায়ের কাপে চনমনে উষ্ণতার ঝলক।
বেলার সাথে বাড়ে রোদের চটপটে তেজ
মধ্যাহ্নে আঁকা গনগনে আগুন আঁচ,
অপরাহ্নে ঝিমানো রোদ, ক্লান্তি নিঝুম নিস্তব্ধ
বিকেলের পড়ন্ত রোদে বিষাদের ছাপ।
আমার মনের অলিন্দ জুড়ে সারাদিন রোদ্দুর
রোদ্দুর জরুরী,রোদ্দুর আমার শক্তি
কিন্তু যে রোদে অতিরিক্ত বেগুনী রশ্মি
চিড়বিড় করে শরীর ,পুড়ে যায় মন....
একটু শান্তির ছায়ার খোঁজে এক বেপরোয়া পথিক আমি
আমাকে একটু ছায়া দেবে তুমি?
একটু জিরিয়ে নেব...
🍂
প্রকাশিতব্য
0 Comments