জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /নবকুমার মাইতি

গুচ্ছ কবিতা
নবকুমার মাইতি


লক্ষীর পদচিহ্ন

পথ চলতে কখন যেন আনমনা হয়ে যাই
 অজান্তে ডুব সাঁতার কাটতে কাটতে 
কখন জলপরী ,কখন রাজহাঁস হয়ে যাই
 ইচ্ছে নদীতে তখন মায়াময় অনুভূতি
অন্তঃস্থল কেঁপে কেঁপে ওঠে, অনিকেত সময়
  
 লক্ষ্মীর সাথে সরস্বতীর বিবাদ চিরন্তন 
আবার সম্পূর্ণ ফিরে আসাও যায় না
 ক্ষুধারঅন্ন ছাড়া বোধিজ্ঞানও অচল
 মহা ক্রান্তিকাল চারিদিকে, শূন্যতা অন্তর-বাহিরে 
চন্দন চর্চিত পূজার্ঘ্য নিয়ে দাঁড়াই বিগ্রহের সামনে
                      
হৃদয় সিংহাসনে লক্ষীর ঘট স্থাপনা করি 
আত্মরতি বিভ্রম ঘটায় চলমান জীবন ছন্দে
যাপনের গ্লানি মুখে এগিয়ে যেতে চাই সমুখে 
ত্যাগ ও ভোগের মিলন মধুর রসায়ন 
উঠোনে জ্যোৎস্না লোকে দেখি লক্ষীর পদচিহ্ন.........


ক্রান্তিকাল

নিসর্গ ও প্রকৃতির গানে বেজে ওঠে তান 
সময়ের ক্রান্তিকালে বেঁচে থাকা অতিব কঠিন 
নিরবধিকাল হাতড়ে বেড়াই সময়ের সফেন সাগর
 পালানোর পথ নেই,ধর্মান্ধ পশুর ক্ষিপ্র চিৎকার 
ধ্বংসের উন্মাদনা নর-নারী পরস্পর সবে 
পুড়ে যায় অন্তরাত্মা,মহাফেজখানা তান্ডব উৎসবে 
অবিবেকি রাষ্ট্র শক্তি ছলনার শেষ পোতাশ্রয়
 বিনাশের তীর ছোঁড়ে লক্ষ্যভেদী সমর-অন্বয় 
কলিজার খুন মাখে দেশমাতা অনিন্দ্যসুন্দর 
তথাপি বেহুঁশ যারা আবাল্যের স্বপ্ন হারা নীড় 
 কলঙ্ক সয়েও চাঁদ দান করে স্নিগ্ধ জোছনা 
নষ্ট সময় বোধ শৌর্য বীর্য আর সব অলীক দ্যোতনা
 কি হবে আজ দেশ ও জাতির নিছক বিপন্ন সময় 
সাম্রাজ্যের অধিকারে মূঢ়মতি,যুদ্ধ জয় নিদারুণ বিস্ময়! 

         
আর কতকাল!!! 

সর্বংসহা ধরিত্রীর ধৈর্য নিয়ে আর কতকাল
 ওরা পথ চলবে,সেই আদিকাল থেকে 
একবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে চিত্রপট বদলায়না
 কাকচক্ষু জলের মত স্থির,উজ্জ্বল অনিমিখ
 দামিনী নির্ভয়া অভয়া সাত্যকি যেই বিশেষণ 
দিইনা কেন,অন্তর দৃষ্টিতে দেদীপ্যমান 
সর্বাঙ্গে নীল ক্ষত,পিঠে কালসিটে দাগ
আলজিভ,মুখমণ্ডল,স্তনযুগল, নাভি,জঙ্ঘা 
ক্রমশ বিকল স্মৃতির সরণি,কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র
 ধর্ষণ উল্লাসে ফেটে পড়ে বর্বর কামান্ধ পুরুষ
 ছলে বলে কৌশলে রতি চিহ্ন এঁকে দেয় 
পবিত্র মাতৃদেহে,গোপনাঙ্গে, শুনিত স্রোতে 
বিঘ্নিত করে চিরন্তন ভালবাসার সফল সঙ্গম 
সাইকেলেডিক আলো আর তার নিচে কেঁপে ওঠা নারী দেহ
 সংঞ্জাহীন,ভাষাহীন,পরিত্রানহীন, কামজকুসুম !
তথাকথিত নরকের কীট সঞ্জয়,ধনঞ্জয়রা আজও
 দাপিয়ে বেড়ায় রাষ্ট্রশক্তির নাকের ডগায়
 সুশীল সমাজ অনুশোচনায় শুধু জোড়া তালি দিই
 অফিস আদালত সাইনবোর্ড সর্বস্ব,নারী স্বাধীনতার
 স্লোগান,ঠিক তার পাশেই সুচি ভেদ্য অন্ধকার
 ভগবতী স্বরূপা অবোধ নারী,হাড়হিম অত্যাচারে শুধু কাতরায়
 আর্ত-চিৎকার টুকু বাদ দিলে পড়ে থাকে 
বিষণ্ন বলীরেখা,চেগুয়েভেরার ডায়েরী আর নিষ্পাপ 
টলটলে দুটি চোখের ওই করুণ আর্দ্রতা
 হে অবোধ্য পৃথিবী,তোমার আজও কত দৃশ্য দেখা বাকি!!!

      
অন্তর্গত মিলনের গান

শরতের নীল মেঘে তোমার আবছায়া উপস্থিতি
 আজও আমার স্মৃতিপটে আলো ফেলে যায়
 মনে পড়ে জীবনের বহু অকথিত অধ্যায় 
শেষ গোধূলির আলোয় দু'টো হাত ধরে বলেছিলে 
আবার আসবে তো,মোহনার ধারে? 

বিরহ দিনের অনাবিল শোক ও শূচিতা 
আমাকে নিয়ে যায় কোনো এক দিগন্ত রেখায়
 যেখানে আকাশ মাটিতে লুকোচুরি
 ফেলে আসা জাগতিক বিষয়- বৈভব 
বুকের ভেতর বাজে তোমার নূপুর
 স্বাতী নক্ষত্রের আলোয় তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি 
আজও আমি পাই শতরুপা,তুমি দেবী হয়ে ওঠো 
রুপ আর অরূপের মাঝে চলমান জলছবি 
নিদ্রাহীন রাতের আকাশ ছিল অতীতের স্মৃতিময়
 অনন্ত অনুভব ফিরে ফিরে আসে আমার সত্তায় 

গোধূলির ক্ষণে ওই দূরে আজান ডেকে যায় 
বামুনপাড়ার মেয়েরা চলে গাগরি ভরণে
 কৃষ্ণগত প্রাণ,ঐশী মহিমায় সমুজ্জ্বল 
গাছের ডালে পাখি গায় অন্তর্গত মিলনের গান 
বেহাগ বসন্ত রাগে রচিত হয় বনপলাশীর পদাবলী


মহাশূন্যের পথ

শূন্যের ভেতরেও বৃহৎ প্রাপ্তি আছে
 শুধু জেনে নিতে হয় ভালবাসার সদর-অন্দর
 কৃষ্ণা দ্বাদশীর চাঁদে এত মায়া কেন 
জানে শুধু নিরন্ধ্র অন্ধকারে পোড় খাওয়া মানুষ 
আজ আমি জীবন বাউল,সময়ের প্রান্ত বেলায় 
তোমাকে ছুঁয়ে দেখার অধীর আগ্রহ নিয়ে
 চলতে থাকি মহাশূন্যের পথ
 নিষ্পাপ চুম্বনের আলোময় যাপন
 নৈসর্গিক জীবন প্রবাহে অনিকেত বোধের মায়ায়
 খুঁজে ফিরি দূর প্রবাহিত নদীর মোহনা 
সবুজ সোনালী খেত,কনক বরণ ধান 
ভোগ নয়,ত্যাগেই সুখ,পরিতৃপ্তি জগৎ-কল্যাণে 
পথ চলতি ভিখারিনী আজ উপাস্য দেবী
 মাঝেমাঝে মনে হয় নিঃস্ব রিক্ত ক্ষণ ভঙ্গুর এই জীবন
 নাগরিক সভ্যতার অলিন্দে অজস্র ঘুনপোকা 
জৈবিক তাড়নায় কলুষিত সম্ভ্রম, মানবতা ভালোবাসা
 প্রেম সখ্যতা,বৈভব,বিগতস্পৃহ সঙ্গসুখ 
বিস্তীর্ণ শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছে দিন-রাত্রি 
তবু শেষ সত্য এই নয়,মানব- মানবীর নিকোনো উঠোনে
 অমরাবতীর তীর্থ লোকে স্মৃতি বিজড়িত কোলাজ 
অফুরন্ত সিন্ধু জলে আমরা ডুব সাঁতার দিয়ে 
আবার সূচনা করব সৃষ্টির মহেন্দ্রক্ষন!

Post a Comment

0 Comments