জ্বলদর্চি

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে/চন্দন ভট্টাচার্য্য

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে 
                           
চন্দন ভট্টাচার্য্য 

                  
সুখেন ও বিদেশ দুই বন্ধু। বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তাদের বসবাস। দুজনেই একই স্কুলে পড়ে। সুখেনের জন্ম খুবই দরিদ্র পরিবারে। বাড়ি বলতে একটি ছোট্ট মাটির ঘর। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কিন্তু সেই ছোট্টবেলা থেকেই খুবই ধীর - স্থির এবং শান্ত প্রকৃতির । খুব কম বয়স থেকেই অসাধারণ অসাধারণ তত্ত্বকথা বলে সে। একদিন প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষক তাকে এক গ্লাস জল আনতে বলেন। বলা মাত্রই সে একটা গ্লাস নিয়ে স্কুলের টিউবকলের কাছে গিয়ে গ্লাসটি জলে ভর্তি করে একদৌড়ে  নিয়ে আসে। দৌড়ে আসতে আসতে কিছুটা জল গ্লাস থেকে পড়ে যায়। শিক্ষক বলেন, " একিরে ! গ্লাসটা যে অর্ধেক খালি।" সঙ্গে সঙ্গে সে উত্তর দেয়, " না স্যার গ্লাসটা অর্ধেক ভর্তি।" উত্তর শুনে শিক্ষক মশাই চমকে গেলেন। ভাবলেন ঠিকমতো লালন পালন করতে পারলে এই ছেলে একদিন কিছু না কিছু একটা হবে। ওদিকে বিদেশ খুবই ছটফটে কিন্তু খুবই হিসেবি। মেধাও তার কম নেই। মনে তার উচ্চাশা দেদার। এভাবেই দুই বন্ধু স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হল। সুখেনের প্রিয় বিষয় বাংলা ও দর্শন। তাই সে আর্টসে ভর্তি হল। আর বিদেশের খুব ব্যবসা করতে ইচ্ছে করে। তাই সে শহরের একটি নামকরা স্কুলে কমার্স নিয়ে ভর্তি হল। সুখেনের পড়াশোনা করার খরচই জোটেনা। অনেক কষ্টে তার বাবা পরের জমিতে জোনমজুরের কাজ করে ও তার মা কাগজের ঠোঙা বানিয়ে তার খরচ জোগাড় করে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে সে দারুন রেজাল্ট করে। 

🍂
তারপর বাংলায় অনার্সে প্রথম বিভাগে পাশ করে। তারপর বাংলায় এম এ তে প্রথম বিভাগ। তারপর ডক্টরেট করাটা আর হয়ে ওঠেনি। এদিকে সংসারে খুবই অভাব। বাবা আর কাজ করতে পারেন না। তার উপর সোহা তাকে বারে বারে বলতে থাকে যে বাড়ির লোকেরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু সে সুখেনকে ছাড়া কাকেও বিয়ে করতে চায় না। সুখেনও অনেক স্কুলে ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত। ইন্টারভিউতে প্রথম হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে সরকারি স্কুলে চাকরি তার হয়েও হয়না। অবশেষে একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি নিয়ে সোহাকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বাবা মাকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে। বিদেশ কোনোমতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ব্যবসায় মনোযোগ দেয়। ক্রমে ক্রমে একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে। টাকাপয়সা,বাড়ি গাড়ি কি নেই তার! বিয়েও করে তার ভালোবাসার মানুষ শ্রেয়সীকে। শ্রেয়সীর রূপ দেখে এলাকার সকলেই তাজ্জব বনে যায়। কিন্তু রূপের আড়ালে শ্রেয়সীর মনের গহীন অরণ্যে লুকিয়ে ছিল প্রচণ্ড লোভ, লালসা, হিংসা ও উচ্চাভিলাষ। কিছুদিন একান্নবর্তী পরিবারে থাকার পর বিদেশের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারজন্য বিদেশ নির্মাণ করতে বাধ্য হয় বিদেশি আদলে সুসজ্জিত একটি নয়নাভিরাম রং মহল। বিদেশ নিজের যোগ্যতায় একাধিক ব্যবসায় সফল হয়ে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু তাতেও শ্রেয়সীর মন ভরে না। তার আরো চাই। আরো আরো। ফলে সৎ আদর্শ ও নিষ্ঠাবান বিদেশ বিপথগামী হতে বাধ্য হয়।  শুধু আয় বাড়ানোর জন্য সে অসৎ পথ অবলম্বন করেনি, চরিত্রটাকেও ঠিক রাখতে পারেনি। তার কার্যকলাপ ও তার স্ত্রীর আচরণে কাছের মানুষেরা ধীরে ধীরে পর হতে থাকে। অসৎ মানুষেরাই তার কাছে সবসময় ভীড় করতে থাকে। বাল্যকালের বন্ধু সুখেনের কানেও এইসব কথাগুলো যায়। সুখেন উপযাচক হয়ে তাকে এর থেকে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করে। কিন্তু আর্থিক প্রাচুর্যে , ক্ষমতার দম্ভে এবং  অহঙ্কার বশতঃ সে তার বাল্যকালের বন্ধু সুখেনের কোনো কথা শোনে না, পরন্তু তাকে যারপরনাই অপমান করে।অবশেষে সে একদিন প্রতারণা ও দুর্নীতির কেসে ফেঁসে যায় । পুলিশ এসে একদিন তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অশ্রুসজল নয়নে হাতে হাতকড়া পরে পুলিশের গাড়িতে চড়তে চড়তে বিদেশ ভাবতে থাকে সুখেনের সাথে দূর্ব্যবহার না করে তার পরামর্শ মতো চললে হয়তো বা তার এমন দূরাবস্থা হতনা কখনও।
 
    নীতিকথা....." মাত্রাতিরিক্ত লোভ,ক্ষমতার দম্ভ ও অহংকার কখনো কখনো মানুষের চরম সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।"

            

Post a Comment

0 Comments