জ্বলদর্চি

বার্লিনের ডায়েরি -৪৮ পর্ব / চিত্রা ভট্টাচার্য্য

রোমের ভাস্কর্য্য।

বার্লিনের ডায়েরি  
৪৮ পর্ব     
চিত্রা ভট্টাচার্য্য     
(রোমের পরবর্তী অংশ)

দিনের ভাটার শেষে ধীরেধীরে রাতের জোয়ার নেমে আসছে কালচে আকাশের গায়ে অজস্র তারার ফুল  বুকে বয়ে। তবুও অজস্র নিয়ন আলোর প্লাবনে আলোময় নগরী এক স্বর্গীয় সুখে ভাসছে। আকাশ টা ও থমকে আছে মাটির কিনারায় । শ্রীময়ী পিয়াজ্জার এক কোণের ফেন্সিংয়ের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দেখেছিল সাতপাহাড়ের ওপর থেকে সন্ধ্যের মেঘের ভেলায় ভেসে গুড়িমেরে রাত নামছে। দিনান্তের সূর্যের শেষ আলোটুকু বিদায় নিয়ে নিসর্গের দৈনন্দিন নিয়মে চলছে পালা বদলের পালা। নগরীর চত্বরের কেন্দ্র স্থলে নানা স্থানেই শৌর্য্যের প্রতীক বিশাল বিজয় স্তম্ভগুলো সুসজ্জিত রয়েছে। তার আশেপাশের জায়গাটি ঘিরে মানুষের ঘরবাড়ি ,প্রাসাদ ভবন শোভিত হয়ে বেশ জমজমাট । 

  শ্রীময়ী মোহিত হয়ে আছে ম্যাক্সপ্ল্যাংক ইনস্টিটিউটে পোস্টডকের স্টুডেন্ট মিসেস কোর্ডিলিয়ার ইতিহাসের প্রতি এত গভীর আকর্ষণ দেখে। ওর তথ্য সমৃদ্ধ সুন্দর সাবলীল বর্ণনায় মুগ্ধ শ্রী ভাবে আগামীতে ভ্রমণ উপন্যাস লিখতে গেলে কোর্ডিলিয়ার এই নিখুঁত বর্ণনার তথ্যগুলো শ্রীর লেখার অমূল্য সম্পদ হবে। 

জার্মানির এই  সুন্দরী স্বাবলম্বী জেদী মেয়েটির সাথে  বার্লিনে আসার পর থেকেই  তিতিরের গভীর পরিচয়। আসলে ঠিক হয়ে ছিল ওরা রোমনগরী দুজনে একসাথে বেড়াবে। ইদানিং কোর্ডিলিয়ার ফ্যামিলিতে কিছু দুর্যোগ ঘটে যাওয়ায় ওর মন খারাপ থাকে। প্রতিনিয়ত অনেক প্রতিকূল অবস্থার সাথে ওর  লড়াই চলছে। তবুও যথেষ্ট সপ্রতিভ এই বিদেশিনী মুখে হাসিটি নিয়ে বেড়ানোর আনন্দ সম্পূর্ণ ভাবে অনুভব করেছিল। পিয়াজ্জার শপিং সেন্টারে যেমন পর্যটকের ভীড় তেমনি উজ্জ্বল আলোর তলে বসে ইতালীয়ান চিত্রকরেরা নিজস্ব সৃষ্টি হাতে আঁকা বহু ছবির পশরা সাজিয়েছে । ওরা দুজনেই সেখানে পছন্দ মত ছবি কেনায় বেশ ব্যস্ত ।                                   
 এই চত্বরের দক্ষিণ প্রান্তে যেখানে চমৎকার একটি স্থাপত্য শিল্প কলার দৃষ্টান্ত ডেলমোরো ফন্তনা রয়েছে সেখানে ওরা পৌঁছলে কোর্ডিলিয়া শ্রী কে বলে তোমরা রূপকথায় মৎস কন্যার গল্প পড়েছো। কিন্তু এইখানে মৎসপুরুষ দেখতে পাবে। গম্ভীর প্রকৃতির ঋষভ বলার থেকে শোনে বেশী। এ ক্ষেত্রে সবাই কে চমকে দিয়ে সজোরে হেসে উঠে বলে ,"গ্রীক পুরানে আছে তো মৎস্য পুরুষের কথা। সমুদ্রের দেবতা পসেইডন  এবং দেবী আম্ফিট্রাইটের পুত্র ট্রাইটন হলেন মৎস্য পুরুষ।তারা সাগরের তলদেশে সোনার প্রাসাদে থাকতেন। 
 সাত পাহাড়ের অন্যতম একটি পাহাড়ের শীর্ষদেশ।

অবশ্য পরে তাকে শঙ্খের খোলশে থাকা  শিঙ্গাবাদক   হিসাবে চিত্রিত করা হয় । তাঁর দেহের উপরের অংশ পুরুষের মত এবং নিম্নাংশ  মৎস্যের পুচ্ছ মানে ল্যাজার মত দেখতে । সমুদ্রের দেবতা পুত্র কল্পিত এই ট্রাইটন হলেন সাগরের  দূত বা ম্যাসেঞ্জার।" ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দে শিল্পী গিয়াকোমো ডেলা পোর্টা এই স্থাপত্য টি নির্মাণ করেছিলেন। ঋষভের  বর্ণনায় বেশ খুশি  তিতির অবাক হয়ে বলে গ্রীকপুরানের এত গল্প তুমি জানো ? কখনো আগে বলোনি তো ? 
শ্রী বলে ডিসকভারি বা ন্যাশানাল জিয়োগ্রাফি চ্যানেলের একনম্বর পোকা এই মহাশয় টি। তাই গ্রীক পুরাণের গল্প এত সহজে মনে করতে পারছে। এইতো কয়েক দিন আগে এমনি এক কাহিনী টিভি তে দেখেছিলাম। ঋষভ হো হো করে হেসে ওঠে বলে ঠিক ধরেছো ,সেই ব্যাপারটাই তো এখানে দেখতে পেলাম। উত্তর টাও তাই বেশ সোজা হলো। হাসি ঠাট্টায় ইতিহাসের স্থানের গল্পগুলো ঋষভের বলার ধরনে ভারী প্রাণময় হয়েছিল।                     ট্রাইটন বা সমুদ্রের দেবতা।                                                                                         
শ্রী ও তিতির অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে একটি বিরাট গোলাকার জলাশয়ে তাকিয়ে দেখে চারদিক থেকে চারটি ট্রাইটন ঘিরে আছে। ডলফিনের সঙ্গে মল্ল যুদ্ধে মত্ত দাঁড়িয়ে থাকা দৈত্তদেহী আফ্রিকান পুরুষের মূর্তিটির সঙ্গে। কোর্ডিলিয়া বলে কথিত আছে , প্রথমদিকে এখানে ডলফিন কে ঘিরে থাকা চারিদিকে ট্রাইটন বা মৎস্যপুরুষের মূর্তি গড়া ছিল। এর অনেক বছর পরে ১৬৫৩ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত শিল্পী লরেঞ্জো বার্নিনি এই আফ্রিকান ম্যুরের মূর্তি টি নির্মাণ করে এখানে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। 

         ছায়া ছায়া অন্ধকারের পথে কোর্ডিলিয়ার সাথে তিতির এগিয়ে গিয়েছে  ''ক্যাসেল সেন্ট এঞ্জেলো"র দিকে। গাইডম্যাপ দেখে শ্রী ঋষভ কে বলে সে যে অনেকটা দূরে হবে প্রায় এক কিলোমিটারের ও বেশী । প্ৰথমে টাইবার নদীর ওপর নির্মিত ''পন্টে সেন্টএঞ্জেলা ''সেতুর ওপরে পৌঁছতে হবে। অদ্রিজাও কোর্ডিলিয়া মরিয়া ওদের  ইনস্টিটিউট রোজ বেড়ানোর সুযোগ দেবে না তাই  যতটা দেখার সুযোগ পাওয়া যায় আজ দেখতে হবে।  এ নগরী রাতেও আলোয় আলোময়।   অগত্যা শ্রী ও ওদের সাথে সেতু পরিক্রমায় মন দিয়েছে।হিমেল উদাসী বাতাস কানের পাশ দিয়ে সাড়ম্বরে বয়ে ফিসফিস করে বলে পুরোনো পাথরের গায়ে জমে থাকা কত যে না বলা কথা ।.  

  ১৩৪ খ্রীষ্টাব্দে রোমান সম্রাট হাড্রিয়ানের নির্দেশে শিল্পী বার্ণিনীর নির্মিত অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি ও এঞ্জেল দিয়ে এই সেতুটি বানানো এবং সাজানো হয়েছিল। ব্রীজের নীচে ক্ষীন স্রোতা টাইবারের হালকা সবজে রঙের গভীর জলের ধারা অন্তহীন বয়ে চলেছে। শান্ত নদীতে ওয়াটারবাস বা সীবোট ভেসে বেড়ায়।ওরা কেউবা দেশান্তরের যাত্রী। আঁধারের ছায়ায় আলোকের মালায় সজ্জিত নগরের প্রতিবিম্ব কালোজলে দুলে ওঠে। শ্রী বলে এই সেই টাইবার নদী যেখানে রোমের প্রতিষ্ঠাতা ইতালীর প্রথম রাজা নাবালক রেমিউলাস ও রেমাস কে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এবং তারা প্রতিপালিত হয়েছিল নেকড়ে মায়ের ছত্রছায়ায়। খ্রীষ্টপূর্ব ৭৫৩সালে এই নদীর ধারেই রোমান সভ্যতার গোড়া পত্তন করেছিলেন রোমের  সম্রাট রেমিউলাস এবং তারই নামানুসারে এই সাম্রাজ্যের নাম রোম হয়েছিল।
 টাইবার নদী।

  স্নিগ্ধ টাইবার নদীর জল তরতরিয়ে বয়ে যায়। আকাশ রাঙিয়ে ক্লান্ত সূর্য ও ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে। কোর্ডিলিয়া বলে যদি দিনের  আলো থাকতো  তাহলে এই নদী  তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাহারে অপরূপ লাগতো।  প্রাসাদের প্রতিচ্ছবি স্বচ্ছ কাঁচের মত জলে ছায়া ফেলে। মাঝ নদীতে পানকৌড়ি ডুব দিয়ে টুপ্ করে ভেসে ওঠে । পাতিহাঁসের দল বড় থেকে ছোট সারিবদ্ধ হয়ে চলেছে। কুব কুব শব্দ তুলে নিঃসঙ্গ কোন পাখি গাছের আড়ালে তার সঙ্গী কে খুঁজচ্ছে । স্বচ্ছ জলের ধার ঘেঁষে মাছ শিকারে ব্যস্ত ইবিস,স্টক বা সারসদের অবাধ বিচরণ। কোনো ভয় ভাবনা নেই নিশ্চিন্তে প্রাণের খেলায় মেতে তাদের অবাধে জলকেলী চলছে।  

দূরে রোমান ক্যাথলিকদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীর্জা সেন্টপিটার্স ক্যাথিড্রালের চূড়া আপন ঐতিহ্য নিয়ে উন্নত শিরে আকাশের গায়ে হেলে বিশ্ব শান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তিতির কোর্ডিলিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে সবেগে নাড়া দিয়ে বলে মনে হচ্ছে যেন আমারই দেশের কোনো নির্জন নদী পাড়ের গল্প তুমি বলছো আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি। 

খুব ঠান্ডা হাওয়া বইছিল ,ওরা দ্রুত ক্যাসেল সেন্ট এঞ্জেল এর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সেন্ট এঞ্জেল ক্যাসেল টি রোমান সম্রাট হাড্রিয়ান ১২৩ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৩৯ খৃষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর নিজের পারিবারিক সমাধি মন্দির হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন। চতুর্দিকে বিশাল প্রাচীর ও বাগান দিয়ে ঘেরা এবং সিলিন্ডারের মতন বৃত্তাকার ক্যাসেলের কেন্দ্রের প্রধান ভবন টি দেখে আবার বিস্মিত হওয়ার পালা। দুর্গটি পুরোটাই এখন মিউজিয়াম। ১৩৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট হার্ডিয়ান মারা গেলে তাঁর চিতা ভস্মাবশেষ এই ক্যাসেলের সমাধি মন্দিরে রাখা হয়েছিল। একটা প্রশ্ন শ্রীকে বেশ ভাবায়  "সে যুগে তা হলে রোমানদের মৃত্যুর পর পোড়ানো রীতি চালু ছিল কি ?  নয় তো ভস্মাবশেষ আসবে কোথা থেকে? সে প্রশ্নের  আপাতত কোনো সমাধান নেই , কে দেবে তার উত্তর ?   
🍂
 
বিশাল স্থাপত্য কীর্তির স্বাক্ষী হয়ে চারধারে গোল করে প্রাকার দিয়ে ঘেরা ক্যাসেলটির মাথায় উঠলে অনেক টা জায়গা জুড়ে রোম শহর দেখতে পাওয়া যায়। ওদের সাথে রোমাপাস থাকায়  ওরা ক্যাসেলের মাথায়  উঠে   সায়াহ্নের মোহময়ী আলোর সাজে অপরূপা রোম শহর কে দেখে চমৎকৃত হয়ে ছিলো। এখান থেকে সেন্ট পিটার্স চার্চ খুব কাছে হলেও গেট বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে চার্চের স্থাপত্য শিল্প দেখে  কাছেই কোনো কফি শপে ওরা ফেভারিট ইতালীয়ান কাপুচিনো কফিতে গলা ভেজালে ও শ্রীময়ীর ঐ বিখ্যাত তিতকুটে  কাপুচিনো একটুও পছন্দ ছিলনা বরং গাঢ় দুধের ক্রিম দেওয়া চালু কফি ও পান করে বেশ তৃপ্তি পেয়েছিল। 

 রাতগাঢ় হচ্ছিলো,কোর্ডিলিয়া কে ঋষভ বলেছিল আজকের বেড়ানোর পালায়  ইতি টেনে এবারে ফিরতে হবে । কিন্তু কাছেই আরো দুটো স্পট আছে। ব্যাসিলিকা থেকে পূর্বদিকের একটি বড়ো রাস্তায় ভিয়া ডি পেনিটেন জিয়েরি তে এসে টাইবার নদীর ব্রিজের ওপর দিয়ে নদীর অপর পাড়ে পৌঁছলে  রোমান উচ্চারণে রাস্তার খটমট নামগুলো শ্রী কে অবাক করেছিল।  তখনকার  অনেক জানা নাম এখন বয়সের ভারে একদম ভুলে গিয়েছে। কিন্তু ডায়েরিতে সে সময় যা কিছু লিখে রেখেছিল  এবং ইদানিং গুগুল সার্চ করলে স্মৃতি আবার  জেগে ওঠে। 

পিয়াজ্জা ভেনিজিয়া স্কোয়ারে এসে ডান দিকে ট্রাজান স্তম্ভের নিকটে পৌঁছে  উজ্জ্বল আলোয় দেখেছিল রোমান সম্রাট ট্রাজান ডেসিয়ান যুদ্ধ জয়ের স্মারক স্তম্ভ স্বরূপ বীরদর্পে উচ্চ শিরে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ১০৭ থেকে ১১ খ্ৰীষ্টাব্দের মধ্যে ১১৫ ফুট উঁচু এই স্তম্ভ টি বানিয়ে ছিলেন। এর গায়ে পেঁচিয়ে খোদাই করা শিল্প কর্মটি প্রায় ২৫ টি র মত পাক দিয়ে এঁকেবেঁকে সাপের মতস্তম্ভ টিকে জড়িয়ে রয়েছে। এই স্তম্ভ টির মাথার ওপর সম্রাট ট্রাজানের একটি মূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল কিন্তু মধ্য যুগে যে কোনো কারণে সেই মূর্তিটি অপসারিত হয়ে গেলে সেই সময়ের সর্বেসর্বা পোপ, সেন্ট পিটারের বর্তমান মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন। শ্রী র ভুল ভাঙলো ও পোপ সেন্ট পিটারের মূর্তি টি কে সম্রাট ট্রাজানের মূর্তিই ভেবেছিল। 
 
    অবশেষে অনেক পথ পেরিয়ে পৌঁছেছিল  সান আল্টারে ডেলা পাত্রিয়া তে । কোর্ডিলিয়া বলে আজের মত এটাই দেখার শেষ স্থান। ইউরোপ মহা দেশের যত জায়গায় যাও প্রকৃতির আলো অস্তাচলে গেলে ও কৃত্রিম আলোর সাজে এই দেশ টির শিল্প স্থাপত্য পথ ঘাট প্রান্তর সর্বত্র অনন্যা হয়ে ওঠে। চোখের সামনেই বৈদ্যুতিক নিয়ন আলোর  ছটায় ধবধবে সাদা বাড়ি টি-পিয়াজ্জা ভেনেজিয়া স্কয়্যার। এবং ক্যাপিটোলিয়ান হিলের মাঝখানে অনবদ্য এক স্থাপত্য দেখে ওরা অভিভূত।  ঋষভ  বলে এই শৈল্পিক সৌন্দর্যের পরিচায়ক এই স্থাপত্যটি জগৎ পিতার উদ্দেশে উৎসর্গ করা এবং সর্বসাধারণের  দরবারে ১৯১১সালে দ্বার উদ্ঘাটন হয়েছিল।  ইতালীয়ান ভাষায় লেখা আলতারে ডেলা পাত্রিয়া । সম্মিলিত ইতালীর প্রথম রাজা ভিক্টর এমান্যুয়েলের সম্মানার্থে ১৮৮৫ সালে যার স্থাপনা শুরু হয়েছিল ১৯২৫ সালে তার কাজ পূর্ণতা পায়। 
  ক্যাসেল সেন্ট এঞ্জেলা।

ঐতিহাসিকদের মতে এই  স্থাপত্য টি  ভারী সুন্দর হলেও প্রাচীন রোমান আর্কিটেকচার নয়। এটি অনবদ্য এক ভিন্ন ঘরানার  শৈল্পিক সৌন্দর্যের  দাবী রাখে।। গ্রীক ও জার্মান দের মিক্সড কালচারে  গড়ে ওঠা এক মিশ্র শিল্পের প্রতি ফলন " আলতারে দে লা পাত্রিয়ার "।   ২৩০ফুট উঁচু এই স্থাপনাটিতে কোরিন্থিয়ান স্তম্ভ শ্রেণী ফোয়ারা এবং বিল্ডিংটির মধ্যভাগের শীর্ষ স্থানে রাজা ভিক্টর ঈমানুয়েলের অশ্বারোহী মূর্তি টি পরাক্রম শালী রণ সাজে সজ্জিত বীর সম্রাট যোদ্ধা র বীরত্বের উজ্জ্বল মূর্তির প্রতীক হয়ে বিরাজিত।  

চারিটি অশ্ব টানা রথে স্বর্গলোকের বিজয়শ্রী ভঙ্গিমায় দেবীর মূর্তি শোভিত হয়ে আছে। ঋষভের মতে এখানে প্রাচীন রোমের শিল্প ঐতিহ্যের স্বাক্ষর নেই ।বরং আধুনিক শিল্পের পরিচয় বহন করছে । লক্ষ্য করেলেই বোঝা যায় অন্য এক বিশেষ নিপুণতায় এই ইট গুলো গাঁথা হয়েছে ।  
আলো আঁধারিতে পাহাড়ের গায়ে এক অপরূপ স্বর্গীয় দৃশ্য শ্রী মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে। মনেমনে  কোর্ডিলিয়াকে ধন্যবাদ জানায় ,ওর অনুপ্ররেণায় এই রাতে এমন অনুপম সৌন্দর্যের ওরা সাক্ষী হয়ে রইলো।  অদ্রিজা বলে রোমের চলার পথে পায়ে পায়ে ইতিহাস কত জড়িয়ে আছে তাকে উপেক্ষা করে এক পা ও এগোনো  যায়না। বিশেষ করে মা ও কোর্ডিলিয়ার মত ইতিহাস প্রেমীর পাল্লায় পড়লে আর দেখছি রেহাই নেই।  প্রাচীন পাথরের দেওয়াল ইটকাঠ চত্বরের কালো কোবল্ট পাথর অদৃশ্য আকর্ষণে অসীম মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ধরে বলছে দু দন্ড থাকলে না হয় আমার পাশে।  
 এবার ঘরে ফেরার বাস ধরবে বলে ওরা বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগোয়। পাঁচ মিনিটেই পাব্লিক বাস এলে যাত্রী বোঝাই গাড়ি ছুটলো। দুই দিকের রাস্তায় ভীড় জমেছে। আলোর স্রোতে ভাসছে রাতের রোম নগরী । যেন এক পরীর দেশের রাজকন্যা ।  নিয়নের উজ্জ্বল নীল আলোয় প্রাচীন স্থাপনা গুলো আরো কত কাব্যময় লাগছে।                          ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments