বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ৫১
ফুলকপি
ভাস্করব্রত পতি
সবুজ পাতা দিয়ে ঘিরে থাকে সাদা পুষ্পাক্ষ। তাই ফুলকপি নামকরণ। কপির সংসারে রয়েছে বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ওলকপি। ফুলকপির মতোই দেখতে সবুজ ব্রকোলি। এটিরও পুষ্টিগুণ খুব। যেটুকু তথ্য মেলে, তাতে জানা যায় ১৮২২ সালে ব্রিটিশরা ভারতে প্রথম ফুলকপি চাষ শুরু করেছিল। ফুলকপিকে হিন্দিতে গোবি বলে। ইংরেজিতে বলে Cauliflower।
ফুলকপি হল ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত শীতকালীন সবজি। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Brassica oleracea। সাদা রঙের ফুলকপির অনেক ধরনের প্রজাতির সন্ধান মেলে। সেগুলি হল -- ˈWalcheren Winterˈ, ˈMulti Headˈ (F1) or cut and come again cauliflower, ˈNeckar perleˈ, ˈSnowballˈ, ˈTabiro', ‘Autumn Giant Cauliflower’, ˈAlphaˈ ইত্যাদি। রঙিন ফুলকপির প্রজাতিগুলি হল -- হালকা সবুজ রঙের ˈGreen Treviˈ F1, পীতাভ সবুজ রঙের ˈMarches Greenˈ, হলুদ রঙের ˈCheddarˈ (F1), বেগুনি রঙের ˈGrafittiˈ, ˈDi Sicilia Violettoˈ ইত্যাদি। তবে বাজারে সাদা ফুলকপির আমদানি সবচেয়ে বেশি।
রঙিন ফুলকপি
আমরা খাই ফুলকপির সাদা অংশটি। যা পরিচিত ফুলকপির পুষ্পাক্ষ নামে। এই সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকে ফুলকপির ডাঁটা সহ পুরু, সবুজ পাতা। এই নরম ডাঁটা সহ পাতা সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়না। তা সাধারণত গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফুলকপির পাতায় আইসো থায়োসায়ানেটস নামক রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছেন বাল্টিমোর জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা। যা নাকি ক্যানসার রোগ নিরোধক ভূমিকা নিতে সক্ষম। এই আইসো থায়োসায়ানেটসের নির্যাস বুকের টিউমারের আকার ও সংখ্যা হ্রাস করতে সাহায্য করে। ফুলকপির কচি পাতা প্রতি সপ্তাহে খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি অর্ধেক কমতে পারে। তেমনি কোলোন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেক কমাতে হলে সপ্তাহে নিয়ম করে ফুলকপি এবং এ জাতীয় শাকসবজি খেতে হবে। সবজি হিসেবে ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। শীতের মুখে বাজার ছেয়ে থাকে ফুলকপিতে। কাঁচা ফুলকপির চেয়ে রান্না করে খাওয়া হয় বেশি বেশি। ফুলকপি খেতে ভালোবাসেনা -- এরকম লোক পাওয়া দুষ্কর।
ফুলকপির পাহাড় ছবি -- অরুনাংশু প্রধান
ফুলকপির মধ্যে থাকে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এছাড়াও থাকে ২৫ কিলো ক্যালরি শক্তি, কার্বোহাইড্রেট-৪.৯৭ গ্রাম , প্রোটিন-১.৯২ গ্রাম , ফ্যাট-০.২৮ , আঁশ-২ গ্রাম, ফোলেট-০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন-০.৫০ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন-০.০৫ , প্যানথানিক এসিড-০.৬৬৭ মাইকোগ্রাম।
ফুলকপি দিয়ে হেঁসেলে অসংখ্য মেনু বানানো হয়। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -- তন্দুরি গোবি, গোবি টিক্কা, গোবি মাঞ্চুরিয়ান, আলু গোবি মাতার, ফুলকপির দম, ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির ডাল, ক্রিস্টিনা কলিফ্লাওয়ার, চিলি ফুলকপি, ফুলকপির রোস্ট, আলু ফুলকপি ভাজা, সীম ফুলকপির তরকারি, ফুলকপি কষা, ফুলকপির পকোড়া, দই ফুলকপি, আলু ফুলকপির সিঙাড়া, ফুলকপির ডালনা, ফুলকপির বড়ি, ফুলকপির কোপ্তা কারি, ফুলকপির পোস্ত, ফুলকপি দিয়ে মাছের ঝোল, ফুলকপির পোলাও, মাংসের মেটে দিয়ে ফুলকপি, হাঁসের ডিম দিয়ে ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির পরোটা, পনির ফুলকপি ফুলকপির ভর্তা, ফুলকপির পাটিসাপটা, ফুলকপির পাতুরি, ফুলকপির ভাটা চচ্চড়ি, মটরশুঁটি দিয়ে ফুলকপির কারি, আলু ফুলকপির চপ, ফুলকপি মেথি পুরি, কাসুন্দি ফুলকপি রুই, ফুলকপি চিংড়ি, ফুলকপির শাহি রেজালা ইত্যাদি।
ফেসবুকে ভাইরাল আসিফ এন্তাজ রবিকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফুলকপি নিয়ে ফেসবুকের এক ভাইরাল কবিতা এই রচনায় উল্লেখ করা উচিত বলে মনে হয়। আসলে 'ফুলকপি সমাচার' যে কতখানি মজাদার হতে পারে, তা ভাবাই যায়না! তিনি শুনিয়েছেন ----
“মানুষের মাথায় ভূত চাপে, আমার মাথায় চেপেছিলো ফুলকপি! কোন দুঃখে আমি সেদিন ফুলকপি নিয়ে একটা ছড়া লিখেছিলাম, "শীতের দিনে, তোমার কাছে, ফুল চাইনি প্রিয়; সময় পেলে, রান্না করে, ভাজা ফুলকপি দিও!"
ফেসবুকে এই ছড়া পোস্ট করার পর, আমার জীবন এবং যৌবন ''ভাজা ভাজা, তিলের খাজা'' হয়ে গেছে!
বউ আমাকে বললো:- এই কবিতা কার উদ্দেশ্যে লিখেছো?
আমি সরল গলায় বললাম, কার উদ্দেশ্যে মানে?
এরপর একদমে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো! সবমিলিয়ে প্রায় শ-পাঁচেক প্রশ্ন; সব কটা প্রশ্ন আমার মনে নেই; অল্প কয়েকটা মনে আছে। যেমন:-
১. প্রথম লাইনে একটা শব্দটা আছে, "প্রিয়"! কে তোমার প্রিয়?
২. কে তোমাকে ফুল দেয়?
৩. কেন দেয়?
৪. কিভাবে দেয়?
৫. কোথায় দেয়?
৬. দিনে কয় বার দেয়?
৭. কি ফুল দেয়?
৮. আর কি কি দেয়?
৯. কি কি দিতে বাকি রাখছে?
১০. তাজা ফুল না প্ল্যাস্টিকের ফুল?
১১. কার কাছে তুমি এই শীতে ফুলের বদলে ফুলকপি চাইছো?
১২. এত কিছু থাকতে ফুলকপি চাইতে গেলে কেন?
১৩. কাঁচা ফুলকপি না চেয়ে রান্না করা ফুলকপি কেন চাইলে?
১৪. অন্য কোনও মেয়ে কেন তোমার জন্য ফুলকপি রাঁধবে?
১৫. ঘরের রান্না মুখে রোচে না?
১৬. ফুলকপি মানে কি সবজি ফুলকপি না এর অন্য কোনো গোপন অর্থ আছে?
১৭. সারাজীবন ফুলকপি খেয়েও শখ মেটেনি?
১৮. আর কত ফুলকপি চাও?
১৯. কবে তোমার পেট ভরবে?
২০. বুড়ো হচ্ছো আর ক্ষিধে বাড়ছে তোমার না?
২১. পেয়েছো কি তুমি?
২২. তোমাকে কি আমি খেতে দিই না?
২৩. রাস্তা ঘাটে ফুলকপি চেয়ে বেড়াও?
২৪. আজ ফেসবুকে চাইছ , কাল কি থালা নিয়ে রাস্তায় বসবে?
২৫. পরশু কি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে?
২৬. আমার কাছে চাইলে কি আর আমি ফুলকপি দিতাম না?
সর্বশেষ প্রশ্নটা বড়ই নির্মম:-
২৭. তোমার এত নোলা কেন?
আমি কোনও প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে দিতে পারিনি, ফলে আমার জীবন হয়ে গেছে ফুলকপিময় !!
সকালে রুটির সাথে ফুলকপি ভাজা, দুপুরে রান্না করা ফুলকপি, রাত্রে ফুলকপি দিয়ে মাছ!! মাঝে বেলায় বেলায় ফুলকপি আর ফুলকপি; মাঝখানে ফুলকপির স্যুপ পর্যন্ত খেতে হয়েছে!! গত এক সপ্তাহে আমি যে পরিমাণ ফুলকপি খেয়েছি, মাটি ও মানুষের উপস্থাপকও তার গোটা জীবনে এতগুলি ফুলকপি দেখেননি!!
বাজারে ফুলকপি সাজিয়ে এক বিক্রেতা
আজ সন্ধ্যায় বললাম, আদা দিয়ে একটু লাল চা করে দাও, একটু সর্দি লেগেছে!! ও পাথর মুখ করে চা বানাতে গেলো; আর আমি ভয়ে ভয়ে রইলাম!! চায়ে আদার বদলে ফুলকপি দিয়ে ফেলে কিনা কে জানে!! অশেষ কৃপায় খানিকবাদে ও আদা চা নিয়ে এলো; গলাটা একটু কোমল করে বলল, খালি পেটে চা খাবে না। ফুলকপির বড়া ভেজেছি। ওটা খেয়ে তারপর চা খাও !!
পুনশ্চ:- আরেকটা প্রশ্ন ছিলো এখন মনে পড়েছে!! "কি আছে ফুলকপিতে, যা আমার নেই? (বলে কান্না)
পুনশ্চ ২ :- আরেকটা প্রশ্নও ছিল; এক্ষুনি মনে পড়লো:- "সত্যি করে বলো তো, আমাকে না জানিয়ে তুমি এ পর্যন্ত কতগুলি ফুলকপি খেয়েছো? লুকিয়ে লুকিয়ে!”
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার - আসিফ এন্তাজ রবি )
🍂
3 Comments
সুন্দর প্রয়াস।
ReplyDeleteকবে কোনটি খাওয়াবে বলো ?
ReplyDeleteতন্দুরি গোবি, গোবি টিক্কা, গোবি মাঞ্চুরিয়ান, আলু গোবি মাতার, ফুলকপির দম, ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির ডাল, ক্রিস্টিনা কলিফ্লাওয়ার, চিলি ফুলকপি, ফুলকপির রোস্ট, আলু ফুলকপি ভাজা, সীম ফুলকপির তরকারি, ফুলকপি কষা, ফুলকপির পকোড়া, দই ফুলকপি, আলু ফুলকপির সিঙাড়া, ফুলকপির ডালনা, ফুলকপির বড়ি, ফুলকপির কোপ্তা কারি, ফুলকপির পোস্ত, ফুলকপি দিয়ে মাছের ঝোল, ফুলকপির পোলাও, মাংসের মেটে দিয়ে ফুলকপি, হাঁসের ডিম দিয়ে ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির পরোটা, পনির ফুলকপি ফুলকপির ভর্তা, ফুলকপির পাটিসাপটা, ফুলকপির পাতুরি, ফুলকপির ভাটা চচ্চড়ি, মটরশুঁটি দিয়ে ফুলকপির কারি, আলু ফুলকপির চপ, ফুলকপি মেথি পুরি, কাসুন্দি ফুলকপি রুই, ফুলকপি চিংড়ি, ফুলকপির শাহি রেজালা ইত্যাদি।
কবে কোনটি খাওয়াবে বলো ?
ReplyDeleteতন্দুরি গোবি, গোবি টিক্কা, গোবি মাঞ্চুরিয়ান, আলু গোবি মাতার, ফুলকপির দম, ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির ডাল, ক্রিস্টিনা কলিফ্লাওয়ার, চিলি ফুলকপি, ফুলকপির রোস্ট, আলু ফুলকপি ভাজা, সীম ফুলকপির তরকারি, ফুলকপি কষা, ফুলকপির পকোড়া, দই ফুলকপি, আলু ফুলকপির সিঙাড়া, ফুলকপির ডালনা, ফুলকপির বড়ি, ফুলকপির কোপ্তা কারি, ফুলকপির পোস্ত, ফুলকপি দিয়ে মাছের ঝোল, ফুলকপির পোলাও, মাংসের মেটে দিয়ে ফুলকপি, হাঁসের ডিম দিয়ে ফুলকপির ঝোল, ফুলকপির পরোটা, পনির ফুলকপি ফুলকপির ভর্তা, ফুলকপির পাটিসাপটা, ফুলকপির পাতুরি, ফুলকপির ভাটা চচ্চড়ি, মটরশুঁটি দিয়ে ফুলকপির কারি, আলু ফুলকপির চপ, ফুলকপি মেথি পুরি, কাসুন্দি ফুলকপি রুই, ফুলকপি চিংড়ি, ফুলকপির শাহি রেজালা ইত্যাদি।