কমলিকা ভট্টাচার্য
বায়বীয়
ভাবিনি কখনও করব যে প্রেম,
সেই প্রেমে ডুবে আছি আমি।
ছন্নছাড়া হিসাব ফেলে,
খালি তুমি আর তুমি চুমি।
নেই দেখা, নেই ছোঁয়া,
তবু স্পর্শ শরীর জুড়ে।
জানি না কোন অলীক তারে,
মন গিয়েছে জুড়ে।
হাসি, কান্না, মান, অভিমান,
মান ভাঙ্গাবার পালা।
চিঠি পড়াপড়ি, সব লুকোচুরি,
আছে সব প্রাণ ঢালা।
এই ভালো, বেশ!
ঘিরে থাকা আবেশ,
ভালো লাগা মন জুড়ে,
একসুরে বাজুক বাঁশি, কাছে কিম্বা দূরে।
মিলেছি আমরা রোদের ছোঁয়ায়,
আদরমাখা বাতাস কাঁপায়।
আমার ভেজা চুলের জল মেঘ হয়ে যায়,
বৃষ্টি হয়ে তোমায় ভেজায়।
আবেগে ভেসে আমি বলি—
"এ প্রেম স্বর্গীয়!"
তুমি হেসে বল,
"বায়বীয় যুগে, এ প্রেমও বায়বীয়!"
তবু জানো?
বায়বীয় এই ভালোবাসাই
মিশে থাকে প্রতিটি শ্বাসে,
অদৃশ্য হলেও অমলিন,
আছে, থাকবে—তোমার পাশে।
শ্বাসমূল
প্রেম হোক ধূপবাতি, ধোঁয়া হয়ে,
ধীর লয়ে, মিশে যাক সময়ের গন্ধে,
এক নিমেষে শেষ নয়, আস্তে আস্তে জ্বলুক
ক্ষয়ে ক্ষয়ে স্নিগ্ধতায় মন ভরুক।
প্রেম হোক নদীর উজান,
স্রোতের বিপরীতে বাড়ুক ধৈর্য ধরে,
শব্দ না করে গভীরের পাথর ছুঁয়ে
চলুক না হয় নতুন মোহনায় বয়ে।
প্রেম হোক সুন্দরীর শ্বাসমূল
নোনা ভরা জীবনে একটু বাতাস আকুল
স্বার্থের ঊর্ধ্বে নিঃস্বার্থ টান,
থাকবে পাশে শত ঝড়-তুফান।
প্রেম হোক জোছনার মাদকতা
যা রাতভর জ্বলবে নিঃশব্দে,
আলো ফুরোলেও স্মৃতির সুবাসে
ঢেকে রাখবে মন নরম সবুজ ঘাসে।
প্রেম কোনো রঙিন আতশবাজি নয়,
যা মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়
প্রেম হলো অন্তরের দীপ্তি,
যেখানে মিলনে মহাকাশের ব্যাপ্তি।
অব্যক্ত
আজ আর যদি নাই বলি
সেই কথা, যা কোনোদিনও হয়নি বলা,
তবু কেঁপেছে অধরপাপড়ি
তবু নয়নপদ্মের ভাষা মনকাড়ি
অক্ষরহীন কথায় লজ্জারাঙা গাল
মেলেনি সময়ের অলস সুরে তাল
না বলা কথা আলসী দুপুরের
খোলামকুচির খেলা ছায়ার জলপুকুরে
থেমে থেকেছে সেই নীরব খেলাঘর
থেকে গেছে কথার আসরবাসর।
হয়েছে পত্রালাপ,
কিছু মধুর সুখবিলাপ,
হয়েছে লেখা পদ্যগাঁথা,
তবু রয়ে গেছে না বলা সেই কথা।
সে কথা, যা হৃদয় গহীনে ভাসে,
সে কথা, যা অন্তরের অব্যক্ত বাসনায় হাসে।
আজও তাকে রেখে দিই রক্ষনীয়া করে,
লুকোচুরির এই অসীম বিড়ম্বনার ঘরে
আলোর রোদের ছায়াঘেরা বিকেলে,
সে কথা জানিনি সকলে।
তাই খেলাশেষে, এসো ফিরে মনের অঙ্গণে
আমাদের নীরবতার রুদ্ধ প্রাঙ্গণে।
সেই নাবলা কথা বলবো না আর
গোপনেই রাখব হৃদয়ে আমার
আমার হয়েছে হার
ফিরে এসো এবার ...
ডুবুরি খোঁজ
দুচোখ বন্ধ করে আমি তোমাকে অনুভবে ভরি
মধুকর যেমন করে ভরে নেয়
ফুলের নির্যাস।
তোমার নির্যাসে নিজেকে ভরি,
তোমার হাসি টুকু আমি
আমার ঠোঁটে বুনে নিই,
যেমন চাঁদ বোনে তার আলো
অন্ধকার রাতের আকাশে।
তোমার চোখের চাওয়া
আমাকে অস্থির করে,
যেন উত্তাল নদীর ঢেউ
কূলে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়।
নজর লুকোতে চেয়েও
সেই গভীরেই ঝাঁপ দিই,
তোমার প্রেমে আমি তলিয়ে যেতেও রাজি,
তবু ডুবুরি সেজে সমুদ্রের গভীরে
মুক্তো খুঁজি জীবনের জন্য
এদিকে প্রবালের প্রাচীরে স্বপ্নের রঙিন প্রাসাদ।
তোমার কণ্ঠস্বরে
মায়াবী আদর
যা আমাকে বন্দী করেছে
আলিঙ্গনের তীব্র চাওয়ায়..
তোমার না ছোঁয়া স্পর্শের উষ্ণতাতেও
আমি গলে গলে যাচ্ছি...
অনুভূতিতে বাঁধা যে প্রেম ...
প্রেমের কি বুঝি আমি?
সত্যি বুঝিনা...
অকারণে কেন উসখুঁস মন,
নেই দেখা তবু নয়নে সারাক্ষণ।
ভাবলেই ভালো লাগা একরাশ,
গ্রীষ্মের খরতাপে বসন্তের মাস।
বুকের ভিতর খাঁ খাঁ চাওয়া,
হওয়ার শব্দ বাঁশ পাতার ফাঁকে বয়ে যাওয়া।
কি কারণে অনুতাপ? কেন অভিমান?
নয়ন ছাপিয়ে কেন যে প্লাবন?
মনের মাঝে কেন এই টান,
যেন কিছু নেই, তবু কিছু চাওয়ার অভিযান।
তোমার কন্ঠে কি মায়া যে বাজে
মন কেন যে বসে না কোনো কাজে ।
তোমার হাসি ভরা ঐ মুখ,
অন্ধকারেও আমার আলোর সুখ।
রাত্রি এলেই মনের কোণে
তোমার ছায়া যেন চুপটি করে বসে
তুমি কি জানো, হৃদয়ের গভীরে
কেমন আলোড়ন আসে?
কেন আমার সমস্তটা জুড়ে
তোমারই একটুখানি ছোঁয়ার অপেক্ষা?
অবুঝ কেন হয় মন জেনেও পরিণতি অ-দেখা।
বুকের ভিতর একলা নদী
কেন তোড়ে বয়।
তোমার নাম মনে আসতেই
কেন জানি থমকে যায় সময়।
প্রেমের কি বুঝি আমি?
সত্যি বুঝিনা...
তবু অনুভবে পেয়েছি তোমাকে
তোমারই কাছে যে আমার মন বাঁধা থাকে...
🍂
2 Comments
অতি মনোহর কবিতাগুলি। শব্দচয়ন যথার্থ। ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে কমলিকার উপযুক্ত উপহার। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ
ReplyDelete