জ্বলদর্চি

বঙ্কুর কোলকাতা দর্শন / সুদেব কুমার ঘোষ

একটি হাসির গল্প 

    
বঙ্কুর  কোলকাতা দর্শন                                       

সুদেব কুমার ঘোষ 

                                                 

ভালো নাম বঙ্কু। বঙ্কু  বিহারী রায়।  কিন্তু গ্রামের লোক তাকে কেউ ভালো নামে ডাকে না।  সবাই বাঁকা বলে ডাকে। তাতে বঙ্কুর অবশ্য কিছু যায় আসে না। ওই নামেই সে সাড়া দেয়। ছোটবেলা থেকেই সে সহজ -  সরল , সাদা – সিধে। সে তার পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে। বিধবা মায়ের কাছেই মানুষ হয়েছে। সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে কোনো রকমে প্রমোশন পেয়েছিল। কিন্তু পড়াশুনা আর করেনি। অনেকে পড়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু বঙ্কু নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিল। পড়াশুনা তার ভালো লাগেনি। খেলা – ধূলা , মাছ ধরা , ঘুড়ি ওড়ানো --- এই সব নিয়ে সময় কাটে। দেখতে দেখতে বঙ্কু ষোলো বছরে পা দিল। মা রাজমিস্ত্রী গোবিন্দর কাছে জোগাড়ের কাজের ব্যবস্থা করল। গোবিন্দ তাকে পছন্দ করে। কারণ সে কাজে ফাঁকি দেয়না। গোবিন্দ কাজে যাওয়ার আগেই তাকে চলে যেতে হয়। বালি চালা , ইঁট সরানো , বালি – সিমেন্ট ঠিক অনুপাতে মেশানো ইত্যাদি কাজগুলি তাকে করে রাখতে হয়। গোবিন্দ এসে ইঁট গাঁথে। গোবিন্দ অবশ্য তাকে বলে রেখেছে “ রাজমিস্ত্রির কাজটা শিখে রাখবি।“ দিনের শেষে বঙ্কুর হাতে কুর্ণিক ধরিয়ে দেয়। বঙ্কু মনোযোগ সহকারে ইঁট গাঁথে। কাজ শিখে নেয়।

🍂
ad
যেদিন কাজ থাকেনা সেদিন বঙ্কু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। এটা – ওটা গল্প করে। বঙ্কুর স্কুলের বন্ধুরা বাইরে থাকে। কেউ বড় চাকরী করে। কেউ আবার সোনার কাজও করে। বঙ্কু তার মামা বাড়ি গেছে। কারো কারো সাথে দু – একটা ছোটো – খাটো শহর ঘুরেছে। যেমন আরামবাগ , কামারপুকুর , বর্ধমান সে দেখেছে। কিন্তু কোলকাতা দেখেনি। এজন্য তার বন্ধুরা তাকে রাগায়। ‘ তুই এখনো কোলকাতা দেখিসনি? তুই পার্টির মিছিলেও যাসনি? তুই তো শিশু আছিস রে । ‘ বঙ্কু কেবল শুনে যায়। কিছু বলেনা। কিন্তু সে তক্কে তক্কে থাকে। একে ওকে কোলকাতা নিয়ে যাবার জন্য বলে। কিন্তু তাকে কেউ পাত্তা দেয়না । শেষে সে তাদেরই পাড়ার ছেলে নিখিলকে সঙ্কোচ বোধ করেই বলে “ দাদা আমাকে কোলকাতা নিয়ে যাবে ? আমি কোনোদিন কোলকাতা দেখিনি। কোলকাতা দেখার বড় ইচ্ছা। “ 

নিখিলদের ঘরে বঙ্কুর বাবা কাজ করত। নিখিল বঙ্কুকে ভালো করেই চিনে। বঙ্কুর সবিনয় নিবেদন তার মনে দাগ কেটেছে। ছেলেটাকে কোলকাতা সে দেখাবে। বঙ্কুকে সে আশ্বাস দিয়েছে। বঙ্কু মনের আনন্দে থাকে। পয়সা জমায়। কোলকাতা যেতে গেলে তো খরচ কিছু হবেই। নিখিল কোলকাতায় ভালো চাকরী করে। ফ্ল্যাটে থাকে। এক লম্বা ছুটির সময় নিখিল বঙ্কুকে কোলকাতায় নিয়ে যায়। চিড়িয়াখানা ,কালীঘাট , সায়েন্স সিটি , নিক্কো পার্ক -- এইসব দেখা হয়ে গেছে। আজ ভিক্টোরিয়া , বিড়লা তারামন্ডল, ইডেন গার্ডেন --- এইসব দেখবে। ধর্মতলার ফুটপাথ ধরে হাঁটছে। টাকা – পয়সা যা এনেছিল নিখিলের কাছে জমা রেখেছে। পকেটে সামান্য পয়সা রেখে দিয়েছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখে সেগুলি ঠিক - ঠাকই আছে। হঠাৎ কৌতুহলবশত সে নিখিল কে বলে “ নিখিল দাদা তোমাদের কোলকাতায় শুনেছি অনেক পকেটমার থাকে। আমার কিন্তু কিছুই নিতে পারেনি। “ নিখিল এই কথা শুনতে পেয়েছিল কি – না জানিনা। কিন্তু বঙ্কুর পিছনেই ছিল পকেটমার। তার কর্নগোচর হয়েছে। সে বলল “ ভাই , তোমার কী পকেট মারব। তোমার পকেটে তো আছে দশটি টাকা , একটি ভাঙ্গা চিরুনি আর দুটো বিড়ি।“ বঙ্কু তার কথা শুনে একটু ভিরমি খেয়ে গেল। নিখিল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল বঙ্কু অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। সে দাঁড়িয়ে বঙ্কুকে ডাক দিল “ বঙ্কু তাড়াতাড়ি পা চালা। আজ অনেক কিছু দেখতে হবে পাতাল রেলে চড়তে হবে।বঙ্কু সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নিখিলকে অনুসরন করতে লাগল।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments