কমলিকা ভট্টাচার্য
মধুবাবু সকালে চায়ের কাপ হাতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। হঠাৎ একটা খবর পড়ে বলে উঠলেন,
— “সত্যি বলি কল্যাণী, বাবারাও তো কম করে না সন্তানের জন্য, কিন্তু সব জায়গায় শুধু মায়ের বন্দনা। মা-ই সব! বাবার কোনও কদরই নেই!”
রান্নাঘর থেকে কল্যাণী দেবী বললেন,
— “তা ঠিক, কিন্তু আমাদের বাড়ির বাবার মনে নেই বুঝি, ছেলেটা তো আগামী সপ্তাহে চলে যাচ্ছে। ওখানে নিজে মাছ বানাতে পারে না, সকাল সকাল যদি ভালো মাছ কিনে আনো, তাহলে ওর কিছু পছন্দের কিছু রান্না করে দিয়ে দিতে পারি।”
মধুবাবু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
— “তা নিজেও তো যেতে পারো। এখন তো মহিলারাই বাজারের আসল ক্রেতা,দোকানদাররা ‘দিদি’, ‘বৌদি’ বলে ডেকে ছাড়ে,আর দামও কমে যায়—৫০ টাকার জিনিস ৪০তে দিয়ে দেয়। সময় পয়সা সবের সাশ্রয়!”
কল্যাণী মৃদু হেসে বললেন,
— “তা হলে তুমি ঘরের কাজগুলো সামলাও, আমি বাজারে যাই। তবে হ্যাঁ, হেঁটে যেতে পারবো না”
মধুবাবু সঙ্গে সঙ্গে বললেন,
— “অবশ্যই! আজ সানডে। সব মহিলা তো গাড়ি নিয়ে যায় বাজারে, পাশে বর বসে থাকে। ”
মধুবাবুর আবদারটা বুঝে কল্যাণী দেবী মুচকি হেসে বললেন,
— “চলো, তবে ফিরে অনেক কাজ পড়ে আছে, মনে রেখো।”
মধুবাবু উৎসাহিত হয়ে বললেন,
— “আজ দেরি হলে ক্ষতি নেই। গিয়ে তাড়াতাড়ি বাজার সেরে নিই, ফিরে এসে তোমাকে সাহায্য করব।”
কল্যাণী মনে মনে হাসলেন। মধুবাবুর ‘হাতে-হাতে সাহায্য’-এর অভিজ্ঞতা তার আছে। মনে পড়ল, সেদিন সুনীলরা এসেছিল, তখন মধুবাবু ‘বেগুন কেটেছিলেন’ — এমনভাবে বলেছিলেন, যেন পুরো রান্নাটাই তিনিই করেছিলেন।
🍂
গাড়ি গেটে আসতেই সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে স্যালুট করে বলল,
— “গুড মর্নিং, ম্যাডাম!”
আরেকবার স্যালুট করল দরজা খুলে।
মধুবাবু মুখ কষে বললেন,
— “দেখো দেখি! আজ ম্যাডামকে গাড়ি চালাতে দেখে স্যালুট, আর আমি রোজ হর্ন বাজিয়ে হইচই করলেও কারও টনক নড়ে না মোবাইলে ব্যস্ত থাকে!”
কল্যাণী দেবী হাসতে হাসতে বললেন,
— “তোমার সমস্যা কি? সবাই তো ম্যাডামকে ভালোবাসে!”
মধুবাবু মুখ টিপে বললেন,
— “জানি, জানি… ম্যাডাম সবাইকে ‘হাত’ করে রেখেছেন।”
কল্যাণী মৃদু খোঁচা দিয়ে বললেন,
— “শুধু তোমাকেই পারলাম না।”
মাছের বাজারে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করতেই মাছওয়ালা সামীর ছুটে এসে বলল,
— “ম্যাডাম! এতদিন বাদে আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।কিতনা দিন বাদ আপকা গোল্ডেন ফিট এধার পড়া।”
কল্যাণী হেসে বললেন,
— “ক্যায়সে হো সামীর? দোকান চাল রাহা হ্যায় ঠিকঠাক?”
সামীর গর্বের সঙ্গে বলল,
— “ম্যাডাম, আপ মেরি পহেলি কাস্টমার থি। আপকি মেহেরবানি সে এখন বিজনেস বহুত আচ্ছা চল রাহা হ্যায়!”
মধুবাবু ঠোঁট চেপে বললেন,
— “বিজনেস তো বাড়বেই! এক পয়সা তো কম করে না!”
সামীর হাসতে হাসতে বলল,
— “ম্যাডাম জো বলেগা, ওহি দাম লাগেগা আজ!”
মাছ কিনা হয়ে গেলে সামীর নিজে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বলল,
— “স্যার তো আতে হ্যায়, ম্যাম আপ ভি আনা। আপকা গোল্ডেন ফিট দোকান মে পড়েগা তো অনেক শুভ হোগা।”
সবজির দোকানেও একইরকম ‘ম্যাডামের ট্রিটমেন্ট’।
মধুবাবু গাড়িতে বসে বললেন,
— “ফুল রিল্যাক্স! ভাবা যায় কুড়ি–তিরিশ পারসেন্ট ছাড়! এবার থেকে বাজারে তুমিই এসো।”
কল্যাণী বললেন,
— “বাজে কথা বাদ দাও। বাড়ি গিয়ে তোমাকে ঠাকুরঘরের কাজটা এগিয়ে রাখতে হবে। আমি বাকি সব সামলে নেব।”
হঠাৎ মধুবাবু বললেন,
— “সাইড করো সাইড করো!”
কল্যাণীদেবী রেগে গিয়ে বললেন,
— “আবার কী হল! হঠাৎ করে গাড়ি থামানো যায়?”
— “এই ইলেকট্রিক দোকানটার কাছে একটু নামাও তো, একটা জিনিস নেওয়ার আছে।”
কল্যাণী জানতেন — ‘একটু’ মানেই কম করে কুড়ি মিনিট।
ঠিক তাই হল।
বাড়ি ফিরে কল্যাণী দেবী তাড়াতাড়ি ঘরের কাজ সেরে, স্নান করে ঠাকুরঘরে গেলেন। মধুবাবু আগে থেকেই সেখানে।
তিনি বললেন,
— “একটু দাঁড়াও।”
পুজোর ঘরে যে টুলটিতে বসে কল্যাণী দেবী পূজা করেন,মাটিতে বসতে অসুবিধা হয় বলে সেই টুলটির নিচে মধুবাবু নিজের হাতে একটা নরম কার্পেট পেতে দিলেন।
কল্যাণীদেবী বিস্ময়ে বললেন,
— “এটা আবার কেন?”
মধুবাবু হেসে বললেন,
— “ম্যাডাম, আপনার গোল্ডেন ফিটের জন্য যেন ঠান্ডা না লাগে।”
কল্যাণীদেবী চুপচাপ মুচকি হাসলেন,বললেন
“থ্যাঙ্ক ইউ।”
মধুবাবু বললেন “ইট ইজ মাই প্লেজার টু সার্ভ ইউ, ম্যাডাম!,"
অলক্ষে ভগবানও হাসলেন কল্যানীদেবী ও মধুবাবুর সাথে।
2 Comments
দারুণ জমাটি গল্প
ReplyDeleteMone holo jeno nijer galpo....bhari bhalo likhechho❤️
ReplyDelete