ম ল য় পা হা ড়ি
বন্দরের ঘোড়াগুলি
যতটা আকাশ ও পথ আমার ভিতর থাকে সেটুকুই কাঁচামাল। যেটুকু লগ্নি করে উৎরে যেতে পারি কোন কঠিন দুপুর বা সন্ধে-করিডোর।
সাহসের আকাল নাকি বিশ্বাসের?
পরীক্ষা মঞ্চ থেকে চেয়ে দেখি, দেখি সমগ্র গাছ, পাতা, ডালপালা ও পাখি ।আমাদের তো 'পাখির চোখ ' দেখার কথা ছিল। লক্ষ্যভেদ ব্যার্থ হলে সাপ্তাহিক রেশন, সব্জি, বিবাহের গিফট ও কিছুটা ডেটা কিনে গৃহে ফিরেছি ।
ষোলোর বি, এই জাতীয় সড়ক আমার দ্রোন, গুরুমুখ। দীর্ঘ পথযাত্রার পর একটা কমা...
অতঃপর পায়ের পাতায় জল, প্রাথমিক ঢেউ আর নীল প্রশান্তি। দীঘা এই পোশাক বদলের ঘাট। একটা অনিবার্য স্নান - ও অভ্রে, বালিতে ভেঙে সূক্ষ্ম দেহে যাওয়া ।
দীঘা সেই কমা যাকে লাভ বাইট নামেও ডাকা যেতে পারে...
পথ ও আকাশের মাঝে একটা ছাদ টাঙিয়েছি।
তাই গুরুর অভিশাপ মাথায় এসে পড়ল।সরণের সাধনাই শিক্ষা। সেখানে পথ ও আকাশের সরাসর, মাঝে কোনো কমা বা ফুলস্টপ থাকতে নেই।
দীঘার ঘোড়াগুলি একদিন বন্য ছিল। কোনও চতুর্দশীর রাতে এক ভরাট সঙ্গমে রাগমোচনের স্বাদ পেলে কেমন তারা শান্ত হয়ে গেল,ওদের চোখদুটি কে এখন বন্দর নামে ডাকা যায়। বালিবাঁধের উপর ঝাঁউ লগার কুঠি, নারকেল পাতা ছাওয়া...
গুরুদেব, পরমা জানে, অমর ও জানে এ ঘোড়া থাকবে না, কোনো আশ্বিনের ত্রয়োদশীতে পূর্ণিমা-খোঁজে বেরিয়ে যাবে।
ফুল, গন্ধতেল কিংবা ঘুঙুর
কিংবা বিপরীত শরীরের গন্ধ
ওসব কিছু থাকে না, খোলা থাকে ষোলোর বি,
মেন্টর-সৈকত আর জলজ আকাশ।
ডানার অর্জন যাদের হয়ে গেছে তারা আকাশ খায়, উত্তর মুখো বাকি দলটি, তারা নগর -খাকি ।
দীঘা, নিয়ম মেনে সকাল হয়, দুপুর আসে, সন্ধে নামে , আর মানুষের যত ফেলে যাওয়া ক্রোধ জলের কলহ বাধিয়ে রাখে, তাদের বিলাপ দূর থেকে শোনা যায়...
উইলোপিটকে খেলবো
অনেক দিন লিখিনি কিছু।
মুখোমুখি বসিনি। মুখরজ্জুতে টান মেরে
মহাকাল মুটেগিরি করিয়ে নিচ্ছে । তারপর গম, পিঁয়াজ, চাটনি -পিঠে টেনে দাওয়ায় এনে ফেললে
ঘর, ভিতর- বাইর খল খল করে ।
শিশুর মতো মুক্ত শব্দেরা জিদ্ ধরে গল্পের বায়না করে ।আমার আর কবিতার কাছে যাওয়া হয় না।
মানুষ না খেয়ে দু’মাস ও বাঁচতে পারে, একথা
কোন সন্তানের পিতা স্বীকার করবেন!
তা ই সন্তানের ভাত ভাঙার দৃশ্যে কবিতাকে হেরে যেতে হয়।
জিতে যান বাবা। মানুষ থেমে যায়।
ঘুঘনি, চপ ,মিলনমেলা কিংবা মুখ্যমন্ত্রী
কোনো মলয় ফিরিয়ে দিতে পারে না ।মলয় কোথাও নেই।
অন্ধকার জমাট করে পাথুরে রাত। বন্ধুহীন,
ওরাংওটাং, চিড়িয়াঘরের দারোয়ানের মতো
মৃত পশুর স্বপ্নদেখা রাতে কোনদিন শব্দেরা ঝর্না
নামায়, বাবারা ভেজেন, মায়ের পায়ের কাছে বসে
রাজহাঁসের পালকে অক্ষর জুড়ে জুড়ে আসন বানান, দেবীর জেগেওঠার জন্য অপেক্ষা করেন।
সে রাতে বৃষ্টি নেমে এলে ঘাসেরা ,সবুজ বাহুর ঘাসেরা নরম বন্ধুতা বাড়ায় । ঘাসের পাতার জলে
হাত ধুয়ে নিলে খিদে পায় খুব।
এমন খিদের মুখে শব্দেরা নিরাপদ নয়।
সন্তানেরা নিরাপদ নয়, ম্যাগ্রা', ব্রেট লি, ভুবনেশ্বর কুমার রা ধেয়ে আসছে ভেজা ঘাসের পিচে।
হেলমেট আমার আছে, হেলমেটে নিজের মুখ ঢাকলে সে মুখ কাব্য হয়ে ওঠে না। একলা বারান্দায় খোলাচুল, মুক্ত কপাল আর রক্তাভ ঠোঁটে ওভারের সকল ভেজা ছোবল কে উইলোপিটকে খেলবো, পদ্মপাতার কাব্য বানাবো।
সাইকেল
চাকা দুটি পড়ে আছে, চাকা দুটি জড়
সহজর সহজ টানে সে শিরে উঠে দাঁড়ায় ,সে খাড়া সে মজবুত ।
পেছানোর পথ নেই, পেছালে ভীষণ পতন -
সম্পর্কের হাতদুটি পেলে গতিতে শক্তিতে জীবনমুখি হয়ে ওঠে মৃত সাইকেল।
ঘাট
নিজস্ব জলাশয়। তারও স্নানঘাট হারিয়ে পাড়ের অন্ধকারকে বৃত্ত দিয়েছি পায়ে ও পাতায়
অথচ এই জল কতরাত শিয়রে ভাসিয়েছে
অশ্বত্থের আলোছায়া, আদিবাসী বসতির প্রান্তগাঁ
মোরগের গলাফোলানো ভোর।
কাঁড়েদের মাঠে নিয়ে যায় দুলারি
স্কুলের পাস দিয়ে
চিতল হরিণ তৃষ্ণাজলে উন্মত্ত হলে আচম্বিতে ঝাঁপিয়ে নামে জলে। সাঁতার-পথ শেখা হয়েছে শৈশবে কি?
সে বৃত্তান্ত মনে পড়ে না।
গেঞ্জি, লুঙ্গি আর বুকের তোয়ালাটি জল খায়।
গায়ে সেঁটে যায় শেষ পর্যন্ত।
জলাশয়, চোখের মতো নরম ঘাট হারিয়ে অন্ধ হলে!
অপরাধ সংঘটিত হতে দিলে?
অমেরুদণ্ডী
কাঁদবে বলেই জল অমেরুদণ্ডী।
যতটুকু আলো শিরদাঁড়ার সংজ্ঞায় আঁটে, আর যতটুকু আলোয় অভ্যস্ত হতে হয়, শুধু জলের শরীর বলে তাও সয়ে গেল, ধুয়ে গেল চোখের রক্ত।
আজও প্রথম বন্ধনীর ভেতর ভাঙাচোরা পঙক্তিমালা, পুরাতন প্রচ্ছদ, ক্ষুধা...
কাঁদবে বলেই জল অমেরুদণ্ডী
কাঁদতে শিখেছে বলেই সভ্যতা জলকে জীবন নামে ডাকে।
-------
7 Comments
নতুন কবি কেউ এলেন। ভাবনা ও বুননে নতুন। এজন্য স্বাগত। কবিতার ভাষা সহজ হলেও কাব্যের জার্নিতে অনেকটাই ব্যক্তিগত দৃকপাত--- ফলে ঘটনার সংঘট্ট থেকে,হাউইয়ের ফেটে পড়া পাপড়ি থেকে সমে পৌঁছে আয়ত্ত ক'রে নিতে আমার সময় লাগবে। আমাদের মন চায় আবর্তনের প্রকৃতি, রেকারেন্স, প্রতিদিন নতুন বসতি ভেবে ওঠা যায় না, তেমনই এখানে কবিতাস্থিত টেরিটোরিকে যদি জানা যায় তবে এই ভাবকল্পের চোখে পড়া কানে শোনার আনন্দময় প্রতীতি ও উদ্ধার পাব। কবিকে শুভেচ্ছা।
ReplyDeleteএভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
Deleteঅনেক বৈভব এর ভিতর থাকে।
বুঝে নেওয়ার চোখ থাকতে হয়।
আমি কৃতজ্ঞ কবি অভিজিৎ দত্তের কাছে।
আধুনিকতা কবিতার প্রতিটি লাইনে ছুঁয়ে গেছে। ভাল লাগল বেশ।
ReplyDeleteভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানাই।
Deleteসব্বাইকে ধন্যবাদ
ReplyDeleteপ্রতিটি কবিতাই স্বকিয়। নিজস্ব ভাষায় উজ্জ্বল। এই কবিতা পড়ে মনে হল এরকম করে কথা বলা আজ শুনলাম৷ যদিও এ লেখা কয়েকটা আগেও পড়েছি। নিঃসন্দেহে দারুন কাজ। প্রিয় কবিকে আমার আন্তরিক প্রীতি ও প্রণাম। তবে 'অমেরুদণ্ডী 'শিরোনামের লেখাটি আমার অত্যন্ত ভালোলাগার। ভালো থাকুন মলয়দা।
ReplyDeleteপ্রতিটি কবিতা অসাধারণ
ReplyDelete