জ্বলদর্চি

স্মৃতি সুধায়…../ সুব্রত মাইতি


স্মৃতি সুধায়….. 

সুব্রত মাইতি

আমার হাতে খড়ি আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাওয়ার দিনগুলো আজও সমানভাবে উজ্জ্বল মনের মনিকোঠায়।বিদ্যালয়ে লেখাপড়া, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সমস্ত নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা একেবারে রীতি ছিল আমাদের মধ্যে। শিক্ষক মহাশয়দের শাসন ছিল এক একটি বিধান।এ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না কারো মধ্যে। বরং বাড়ির বাবা মায়েরা এসে শিক্ষক মহাশয় কে বলে যেতেন পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে কি কি দুষ্টুমি করেছে তার শাসন ও বিচার যেন বিদ্যালয় দেওয়া হয়।এ এক স্থিতিশীল সময় ছিল,কারও বিন্দুমাত্র সংশয় ছিল না বিদ্যালয় নিয়ে বা শিক্ষক মহাশয়ের গন সম্পর্কে কোন কিছু কটুকথা বলার।বিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক সবাই টিফিন আনতো। অদ্ভুতভাবে সবাই ভাগ করে খেতাম অনাবিল আনন্দ পরম তৃপ্তি। আমার এক শিক্ষক মহাশয় বাদাম মুড়ি প্রায় প্রতিদিন আনতেন,জানিনা ঈশ্বরের আশীর্বাদ কিনা আমাকে ডেকে বাদাম মুড়ি খাওয়াতেন। এইদিনগুলো আজও এক একটা সুখ স্মৃতি। 

🍂

    বিগত দিনের বাৎসরিক পরীক্ষার সময় শিক্ষক মহাশয় বিশেষত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে রাত্রিবাস করতেন বিদ্যালয়ে,সঙ্গে হ্যারিকেনের আলো।আমরা যারা থাকতাম আমাদের বাড়ি থেকে কখন খাওয়ার নিয়ে আসবে, শিক্ষক মহাশয় সেই খাবার খেয়েই রাত্রি কাটাতেন।যথেষ্ট সমারোহে লেখাপড়া চলত।আসলে শিক্ষক মহাশয় স্বাধীন ভাবে পাঠদান করতে পারতেন,একদম নিজের মতো করে। কোন নিয়ম কানুনের ঘেরাটোপ ছিল না।সেই উজ্জ্বল দিনগুলো আজ অতীত। 

   সময়ের সাথে বদলে গেছে সরকারি নানা শিক্ষা কমিশনের অভিমত।যা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনে সহায়ক বলে শিক্ষা কমিমনও সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা মান্যতা দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় জোয়ার এসেছে বলে তেমন সমীক্ষা ও চোখে পড়ে। শিক্ষাকে আরও সমসাময়িক প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য নানা পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হচ্ছে তবে শিক্ষিত হচ্ছে ঠিকই। 

আসলে মানব সম্পদের উন্নতি কতটা হচ্ছে তা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে?

   আমাদের পঠন পাঠন কালে বারবার শিক্ষক মহাশয় বলতেন " বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্"।বিনয় ছাড়া শিক্ষা লাভ করা যায় না,শ্রদ্ধা ছাড়া জ্ঞান লাভ করা যায় না। এই আধুনিক না অতি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনয় শ্রদ্ধা এসব অতীত।

  বিদ্যালয় আছে বিদ্যালয় পরিচালনায় আমুল পরিবর্তন এসেছে একদম ঠিক। আমাদের মত পাঠরত ছাত্র ছাত্রীরা আজ অভিভাবক অনেকেই অতীত ইতিহাস ভুলে গেছি নিজের আত্ম অহংকারের দর্পে ডগমগ।যারা শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত হয়েছি তাদের অনেক সতীর্থর সঙ্গে কথা বলে এটুকু অন্তত অনুধাবন করতে পেরেছি শিক্ষাঙ্গনে বড্ড অসহায় বোধ করি আমরা।আসলে স্বাধীনতা আছে বলে কিছু মনে হয় না।

সরকারি নানা নিয়ম নীতির গেরোয় আপনি আমি আবদ্ধ। তবে স্মৃতির পাতায় আমাদের ছাত্র জীবনের আলোকিত দিনগুলো আজও উজ্জ্বল। 

ক্লিক করে পড়ে দেখতে পারেন 👇

হে, কবি হে... /ঋত্বিক ত্রিপাঠী


Post a Comment

1 Comments

  1. "দাগ রেখে দিঘি জল শুকায় যেমন /সুধা মাখা শৈশব হারায় তেমন। রেখে যাওয়া পদধ্বনি, /বেজে চলে রিনি ঝিনি/হৃদয় বীণার মাঝে, বাজে অনুক্রম। " কবি সুব্রত মাইতি র "স্মৃতি সুধা" প্রতিবেদন টি পাঠকালে এমনটাই অনুভব হলো। প্রতিবেদন টি পাঠকালে সুব্রত বাবু মনের অজান্তেই নিয়ে গেলেন ফেলে আসা স্মৃতির শৈশবে। স্কুল জীবনের অনেক স্মৃতিই আমাদের প্রিয় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহাশয়গনদের ঘিরে আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সেই সব উস্কে দিলেন প্রতিবেদক সুব্রত মাইতি মহাশয়। ফেলে আসা শৈশবে র দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। হ্যারি ক্যানের আলোয় পড়া ছাত্র জীবন আজ ইলেকট্রিক আলোয় কতখানি আলোকিত হয়ে উঠেছে তা তো সময় বিচার করবে। কিন্তু, সেই সব সোনার দিন গুলো আজকের শৈশব কালের মধ্যে রয়েছে কি ? অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এই প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেছেন তিনি। প্রতিবেদক নিজেই একজন শিক্ষক। তাই, তাঁর এই হতাশা টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সকল হৃদয়েই এমন ব্যথা-বেদনা আর হতাশা অনুভূত হয়-"হারিয়ে গেছে স্বপ্ন সুধা/হারিয়ে সেই শৈশব। সেই স্মৃতি কে আঁকড়ে ধরে বুকের ব্যথা সই সব! "

    ReplyDelete