জ্বলদর্চি

দিল্লি দর্পণ -১



কা লী প দ  চ ক্র ব র্ত্তী, নতুন দিল্লি

দিল্লি দর্পন || পর্ব- ১

                                                          
সবার প্রিয় দিল্লি 

প্রমথ নাথ বিশী তাঁর “লালকেল্লা” গ্রন্থের ভূমিকা লিখতে গিয়ে বলেছেন – ‘মানুষকে যেমন ভূতে পায় আমাকে তেমনি দিল্লিতে পেয়েছিল। পেয়েছিল বা বলি কেন, দিল্লির ভূত এখনো আমার ঘাড় থেকে সম্পূর্ণ নামেনি। আবার কোনদিন নিশ্চয়ই কলম হাতে দিল্লির প্রসঙ্গে ফিরে আসতে হবে। কিছুই বিস্ময়ের নেই এতে। দিল্লির কি একটি রহস্যময় দুর্বার আকর্ষণ আছে, যার টানে কালে কালে – পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও আধুনিক কালে – চন্দ্রবংশের নৃপতিগণ, হিন্দু-রাজগণ, পাঠান, মুঘল, ইংরেজ ও স্বাধীন ভারতের সরকার দিল্লিতে শাসনের আসন পেতেছে। সেই আকর্ষণে সামান্য একজন লেখকের চিত্ত যে মুগ্ধ হবে এ তো খুবই স্বাভাবিক”। এ থেকে পাঠকেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে দিল্লিতে এমন কিছু আছে যা আজও মানুষকে আকর্ষণ করে। প্রতিনিয়ত ভূমিকম্প এবং বিভিন্ন দুর্যোগ সত্ত্বেও দিল্লির মানুষ দিল্লি ছেড়ে যেতে নারাজ। দিল্লির চারিদিকে আজও ছড়িয়ে আছে পুরানো আমলের বিভিন্ন নিদর্শন। মাটির নিচে খননকার্য চালালে আজও হয়তো পাওয়া যাবে আগের রাজ-রাজাদের হাতে মৃত অসংখ্য লোকের কঙ্কাল।  
সাহিত্যিক প্রমথ নাথ বিশী-র কথাগুলো যে হাড়ে হাড়ে সত্যি তা আমি এখন বুঝতে পারছি। আমি যখন প্রথম দিল্লি আসি তখন মনে অনেক আশঙ্কা, ভয় ইত্যাদি ছিল। কারণ দিল্লি সম্পর্কে দিল্লির বাইরের লোকেদের বেশকিছু ভুল ধারণা আছে। আমি দিল্লি আসার আগে একজন আমাকে সাবধান করে বলেছিলেন – রাতে বেরোবে না, ওখানে টাকা, পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে প্রাণে মেরে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর দিল্লি আসার পর দেখলাম এসবই ভ্রান্ত ধারণা। কারণ সব শহরেই এমন কিছু রাস্তা বা গলি থাকে যেখানে রাতে যাওয়া নিরাপদ নয়। দিল্লিতে এসে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল মনে হয়েছে। বরং আমি যখন দিল্লিতে এসেছিলাম তখন দিল্লি অনেক শান্ত, এবং বিপদমুক্ত ছিল বলা যায়। এখনকার দিল্লির মত নয়।এর একটা উদাহরণ দিয়ে বলি - ১৯৮০ সালে আমি তখন থাকতাম এন্ড্রুজগঞ্জে এক বন্ধুর সাথে মেসে। সেসময় রাতে লাজপত নগর থেকে নাইট শো সিনেমা দেখে রাত ১২টার পর স্বাভাবিকভাবেই বাস না পেয়ে বন্ধুবান্ধবসহ হেঁটে ফেরার পথে ছেলে,মেয়ে ও মহিলাদের রিং রোড দিয়ে হেঁটে ফিরতে দেখেছি। যা আজকাল অনেকেরই মেনে নিতে অসুবিধে হবে।ভাল-মন্দ সব জায়গায়ই আছে।সব জায়গারই ভাল দিক এবং মন্দ দিক থাকে। 
দিল্লিতে একটা জিনিস লক্ষ্য করার মত, এখানে বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের বা রাজনৈতিক দলের আধিপত্য নেই। এমনকি ভোটের আগের দিন পর্যন্ত অনেক জায়গায় বোঝাই যায় না যে পরের দিন ভোট। লোকেরা যাকে ভোট দেওয়ার গিয়ে দিয়ে আসেন। বুথ ক্যাপচার বা রিগিং এখনও পর্যন্ত নেই। মিছিল, মিটিং নেই বললেই চলে। নামকরা সুপারস্টার বা ব্যক্তিত্বরা এলে তাদের দেখার জন্য হুড়োমুড়ি নেই।সবাই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।   

আমরা যারা দিল্লির প্রবাসী, তারা অনেকেই হয়তো মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বা হতাশ হয়ে বলে থাকি – দিল্লি ছেড়ে চলে যাবো, আর ভাল লাগছে না। কিন্তু সত্যিই কি মন থেকে আমরা চাই চলে যেতে? মনে হয় না। দিল্লিতে রাজনীতির কোন চাপ নেই। খুব বেশি কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। কারণ সকলেই এখানে এসেছেন কাজের তাগিদে। হরতাল, বন্ধ ইত্যাদি প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও গুরগাঁও (বর্তমান নাম গুরুগ্রাম) বা নয়ডা-তে অনেক জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোর ইউনিয়ন দেখা যায়, দিল্লিতে সেগুলো প্রায় অনুপস্থিত। তবে বিগত বছরগুলোতে দিল্লি দাঙ্গা-র যে ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে তা সাধারণ মানুষের কাছে মোটেই গ্রহণ যোগ্য নয় বা তাঁরা এগুলোকে সমর্থন করেন না। দিল্লি যে দিলওয়ালাদের শহর সেই সুনামটা এই দাঙ্গা-কারীরা ঘুচিয়ে দিতে চলেছে। দেখা গেছে বেশিরভাগ  অসামাজিক-তত্ত্বের লোকেরা দিল্লির আশে-পাশের রাজ্যগুলো থেকে এসে গণ্ডগোল পাকিয়ে আবার ফিরে যায় তাদের রাজ্যে। দিল্লিতে যারা আসেন, তারা প্রধাণতঃ আসেন অর্থ উপার্জনের জন্য। তাই তারা গণ্ডগোল ঝুট ঝামেলা থেকে একটু দূরে থাকতেই ভালবাসেন। (চলবে) 
-----

Post a Comment

8 Comments

  1. ভালো লাগলো। পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete
  2. Dada, khoob bhalo laaglo

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  4. ভাল লাগল, আপনার ওয়েব পত্রিকা।

    ReplyDelete
  5. সুদেব ভট্টাচার্যAugust 6, 2020 at 10:36 AM

    ভালো লাগলো। পরের টার অপেক্ষা রইলো

    ReplyDelete
  6. সমীর বিশ্বাস

    বেশ লাগলো পড়তে
    আরো কিছুর অপেক্ষায় থাকলাম

    ReplyDelete