শর্ট জার্নি
অষ্টপদ মালিক
বেরোচ্ছি অনির্দিষ্টকালের জন্য
কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরব
আমি গিন্নিকে আটপৌরে কথাটা বললাম ,
তুমি নিয়মিত ফোন ক'রো
যোগাযোগ তোমার তরফেই বেশি চাই ।
আমার যে কি কাজ
তোমাকে আলাদা করে কিছুই বলার নেই ।
বলতে পারো ভবঘুরের মতোই বেরিয়ে পড়লাম
এদিক সেদিক তাকালাম
আকাশটাকে দেখলাম ধোঁয়া ধুলি ভরা
আর দূষণে জর্জরিত ।
আর এদিকে মাটির মুখ ভার
সে উর্বরতা হারিয়েছে
ভালো ফসল সোনা ফসল
তার কাছে আশা করা যায় না ।
সামনে কল কল নদী বয়ে যায়
এই নদী বড় রহস্যময়ী ,
কখনো নিজে নাচতে নাচতে
সাগরের নোনা জলে মিশে যায়
আবার এই নদী বেপরোয়া গতিতে
প্রজ্ঞা প্রতিজ্ঞা পিছুটান
কোন কিছুই মানে না
নদীকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে
হঠাৎ মনে পড়ল
কে যেন বলেছিল পাহাড় হাসছে
আমি পাহাড়ে পৌঁছে গেলাম।
আর তার গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম ।
মৌন পাহাড়ের চোখে চোখ রাখলাম
কিন্তু হায় ! পাহাড়ের ঠোঁটে হাসি কোথায় ?
সে কাঁদে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে
আর হবে নাই বা কেন
চা বাগানের শিশু শ্রমিক আর নারী শ্রমিকরা
ঠিকমতো খেতে পায়না
বাগানের মালিক তাদের কত রকম ভাবে পেষণ করে
তাদের দুঃখ বলার মতো নয় বর্ণনাতীত ।
পাহাড়ের অশ্রুতে ফুটে উঠেছে
জীবনযাত্রার আবিল প্রতিচ্ছবি ।
🍂
আরও পড়ুন 👇
পাহাড় ছাড়িয়ে একেবারে দেশের সীমান্তে এলাম
আগেভাগে ভেবেছিলাম
এখানে দীর্ঘ সময় থাকা ঠিক হবে না
আজকাল প্রতিবেশী দেশের মধ্যে
যখন-তখন আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণ
যুদ্ধ যুদ্ধ সাজে অস্থির সবাই
সীমান্ত লড়াইয়ে ন্যায়-অন্যায় মেনে চলার বালাই নেই
এখানে মানবিক মূল্যবোধ দিশেহারা আর
সর্বগ্রাসী যুদ্ধের পরিবেশ !
আমি প্রাণের তাগিদে তাই
ছেড়ে এলাম সীমান্ত অঞ্চল ।
এখানে সেখানে ঘুরতে ঘুরতে কটা দিন কেটে গেল
এবার বাড়ি ফেরার পালা
এখান থেকে আমার বাড়ি
অনুমানে ৭০০ কিলোমিটার হবে ।
গ্রাম - শহরের উপর দিয়ে আসতে হবে
দীর্ঘ পথ ।
শহরে ঢুকলেই বোঝা যায়
শহরের হাল হকিকত
এখানে মিটিং মিছিল প্রতিদিন
এখানে পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতা
অপহরণ খুন ধর্ষণ আরো
এ যেন অনিশ্চিত জীবনের রোজনামচা ।
আমার মনে হল
শহর যেন নিষ্প্রাণ কঙ্কালসার !
এসব দেখতে দেখতে
দুচোখে ক্লান্তি নেমে এলো
যা যা দেখলাম এসবই ছবি ।
এই ছবিতে শব্দ বসিয়ে
আমার ডায়েরি বন্ধ করে
ট্রেনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম বসে বসে ।
আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী আমাকে
ঠেলা দিতে ঘুম ভেঙে গেল
চোখ চেয়ে দেখি
বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছি ।
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
2 Comments
বাহ্।খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteবাহ্, খুব ভালো লাগলো কবিতা।
ReplyDelete