জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কৃষ্ণেন্দু পাল

গুচ্ছ কবিতা 
কৃষ্ণেন্দু পাল


ছন্দের জীবন

ছন্দের মতো কথাগুলি
এখনো কানে বাজে।
জীবনের রস সুধা হারিয়ে ফেলেছি।
সিক্ততার ধাঁচে গায়ে জড়িয়ে আছে
তোমার পরশ প্রেম।
কি অবলীলায় বলতে পারো!
আমি তোমার আর পরিচিত কেউ নয়!
কলমের কালি শেষ।
কত শত উপন্যাস লেখা হয়েছে।
এবার পরিবর্তনের পালা।
জীবন ছন্দময়।
ছন্দময়তা জীবনের কোশকলা।
অথচ আমি কত সাবলীলতায়
ছন্দবিহীন ডানাভাঙা পাখি।


              
প্রতীক্ষায়

সময়ের প্রবাহ বড্ড বেগতিক।
সমুদ্রের নোনাস্বাদ জ্বীহায় লেগে থাকে।
কালের অন্তরালে ছুটি।
বিষম জঞ্জালে ভরা আধারের ছোঁয়া,
বর্ণহীন কারুকার্যে শ্যাওলার দাগ,
সময় এগিয়ে যায় আরো দূরে।
আমি নির্বিকার হয়ে বসে থাকি,
আরো প্রতীক্ষায়।

হৃদয়ের ঝনঝনি শব্দ
আড়ালে থেকেই শুধু শুনি।
শান্ততার লহমায় কেটে যায়
পলকের পর পলক।
তবুও অবিচল হয়ে বসে থাকি
আরো প্রতীক্ষায়।

  
         
মরমে প্রেম

মরমের অভিষিক্ততায় বেঁচে থাকার আহ্বান
নাবালক থেকে কখন সাবালক বনেছি।
চোখের পাতার লোম ছিঁড়ে হাতের তালুতে রাখি।
আমার জগৎ, আমার সমাজ, আমার ভাবনা,
আমার যন্ত্রণা, আমার অঙ্গীকার,
তারুণ্যের জোয়ারে গতর লাগিয়ে
ভেঙ্গে ফেলি আজ সব, সবকিছু।
নিস্তার নাকি আরো আস্তেপিষ্টে জড়ায়!
আমার কদাচার অযৌক্তিক আবেগ,
যত নিন্দুক আজ মুখ খুলুক আমার বিরোধে।
মন্দীভূত করার অঙ্গীকারে,
তীব্র জ্বালার অভিঘাতে,
অভিষিক্ত হতে চাই শুধুই মরমে।
যেখানে প্রেম বড্ড প্রেমময়ী।
           
ইচ্ছে নদী

আমার ইচ্ছে নদী চলার পথে
কত কথাই শুনিয়ে থাকে
কল কলা কল স্রোতের সুরে
বাজায় মধুর গান,
আমিও আবার সেই নদীতে
আপন বোলে নিঝুম রাতে
ভয় কাটিয়ে স্বপ্নভোরে
সারি, প্রাণ ভেজানো স্নান।


           
অবগাহন

যেখানেই থাকো, সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে এসো।
সূর্যের রঙ লাল হলেই শুরু করো তোমার ঘরে ফেরার তাড়া।
কৃষ্ণচূড়ার শেষ ডালে বিকেলের গাঙচিল বিশ্রাম নেবে।
পূব দিকের বাগদিপাড়ায় শাঁখ বাজবে।
খেজুরের ঝোপে উঁকি দেবে চাঁদ।
বুঝে নিও, তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি আমি।

হিমেল বাতাসের কোনো শব্দ নেই।
মাথাটা রেখো আমার বুকে।
ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাবে তোমার সমস্ত দেহে।
টুনটুনি পাখিদের বিছানার মতো তুলতুলে তোমার দেহ।
নিঃশব্দে সেরে নেবো দু'জন, অবগাহন।

Post a Comment

0 Comments