পর্ব -১৩
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া
|| ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম ||
তা বছরখানেক আগে তো হবেই ঠিক দুক্কুরবেলা একখানা পেরেক কুড়িয়ে পেয়ে ঝিনি খুশি হয়ে উঠেছিল। বীজ পুতলে যদি গাছ হয়,পেরেক লাগালে নিশ্চয়ই পেরেকেরও গাছ বেরুবে এবং ফলন্ত পেরেক গাছের কল্পনায় দারুণ উত্তেজিত সে ছোড়দাকে ডেকে বলল চল মিতু, আমরা পেরেক গাছ লাগাই।নাম ধরে ডাকচিস যে? নিজের পদমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবার অত্যন্ত বিরক্তি ও মানহানিকর পরিস্থিতিতে ছোড়দা তখনও পেরেকের বিষয়ে মন দিতে পারেনি।আচ্ছা আচ্ছা ছোড়দামণি চল না উঠোনে পেরেক গাছ পুঁতি।কী গাছ পুঁতবো?এই যে পেরেক পেরেক,চল না কত বড় হবে বেশ পেরেকের গাছ কিন্তু সব উত্তেজনায় একরাশ জল ঢেলে অরু অরু শোন শিগগিরই,মন্টু বিড়ি নতুন একখানা ছেড়েছে বলে ছোড়দা বিচ্ছিরিভাবে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে এমন চেঁচিয়ে সবাইকে ডেকে ডেকে তার বোকামোর কথা বলতে লাগল যে রেগেমেগে সে উঠোন পেরিয়ে ছুঁড়ে দিল পেরেকটা। অথচ জংলাগা সেই পেরেক কী করে লাফিয়ে উঠে গেঁথে গেল রাতের ভেতর?
আর এখন দেখো সকালের এই রোদে কিচ্ছু আবছায়া হয়ে নেই। শুধু উনুনে ছাই হয়ে ঝুলে আছে স্তব্ধতা। বারান্দায় নীল শাদা ডোরাকাটা কাপড় লাগানো তাদের বাবার ইজি চেয়ারখানা নিঃসঙ্গ ভবিষ্যতবাণীর মতো একা বসে আছে। একলাই চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখে ঝিনি। বোঝার চেষ্টা করে ঝনঝন শব্দটা তবে আসছে কোত্থেকে? উঠোনের মাটিতে পোঁতার বদলে ভুল করে মাথার ভেতর লাগানো হয়ে গেল নাকি?তাইই বোধহয় যন্ত্রণা হয় খুব। দিন আর রাতের ফাঁকে ফাঁকে যন্ত্রণার নীল নীল কাঁটা গেঁথে থাকে মাথায় আর সর্ব অঙ্গে গড়িয়ে পড়ে রক্ত। অথচ বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না।ভেজা ক্ষত থেকে ধোঁয়া ওড়ে না বলেই বোধহয় বোঝা যায় না কতটা গভীরে যেতে পারে একরত্তি বুকের নিরুপায় প্রতিরোধ।
এক ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঝিনি দেখলো পাশে কেউ নেই। বড় ঘরের লণ্ডভণ্ড তোষকের ওপর সে শুয়ে আছে। বিছানায় চাদর নেই। তোষকের আদ্দেক খাট থেকে ঝুলছে। মা'র লেদার বক্স যা মা তাদের ধরতেও দেয় না এমনকি মা সেটা খুলে কিছু বার করার সময় উঁকি দিয়ে দেখতে গেলেও সর সর বলে ভাগিয়ে দেয়;তালা দিয়ে আটকে যত্নে বোনা ক্রুসের ফ্রিল তোলা ঢাকা দিয়ে রাখে থাক দেওয়া পরপর দু'খানা ট্রাঙ্কের ওপর।ট্রাঙ্কদুটোও মানানসই রঙিন পাড়ের ঝালর দেওয়া ঢাকনায় ঢাকা। আর এই সকালে সব ঢাকনা টাকনা উধাও।সব বাক্সগুলোরই ডালা খোলা ভেতরের কাপড়চোপড় শাল সোয়েটার ছত্রখান।মায়ের শখের আ্যলবাম,গয়নার ছোট নীল কৌটো উপুড়। লাল জরি দেওয়া একখানা ওড়নার পুঁটুলিতে দাদুভাইয়ের চশমার খাপ,দিদুনের বৃন্দাবন থেকে আনা চন্দনকাঠের মালা ,যা মা কাউকে ছুঁতে অবধি দেয় না সব পড়ে আছে এদিক সেদিক।
🍂
আরও পড়ুন 👇
মরা পাখিদের মতো আলনার জামা কাপড় মেঝেতে ছিটিয়ে আছে। ভয়ানক কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে নিশ্চিত। তেষ্টায় শুকনো লাগছে মুখ জিভ।
এক্ষুণি মাকে ছুঁয়ে স্বপ্নটা জোড়া লাগাতে হবে ভেবেও চারদিকে আর একবার চাইল সে।
বইয়ের আলমারির কাচ ভাঙা; বইপত্রও ঘরময়। টেবিলের ড্রয়ার নিচে উপুড় হয়ে আছে। বাড়ি নিঝুঝুম। গলা শুকিয়ে কাঠ তবু সে চিৎকার করে উঠল মাআআআআ! সাড়া দিল না কেউ। হঠাৎই রাতে দেখা ভয়ংকর স্বপ্নটা যেন জ্যান্ত হয়ে পরপর ফিরে এল চোখের সামনে।
কারা যেন দরজা ধাক্কাচ্ছে। দরজা খুলুন বলে দমাদ্দম বাড়ি দিচ্ছে দরজায়।সে আর ছোড়দা ঘুম ভেঙে বিছানায় জড়াজড়ি করে সিঁটিয়ে গেছে দেওয়ালের কোণে। দুজনের মাঝ থেকে বাঘিনির মতো লাফিয়ে নেমেছে মা মেঝেতে। ফিসফিস করে বাপিকে বলল অমলদা তো ঠিকই বলেছিল তবে।যে কোনো দিন ওরা আসতে পারে। তুমি শুনলে না।কেন গেলে না বলো? কী করবো এখন?কোনো কথা বলছিল না বাবা। নিচের ঠোঁট কামড়ে শক্ত গলায় বলল দরজা খুলতে দাও বিনু, নয়তো ওরা ভেঙে ফেলবে।
খুলব না।সাপের মতো হিসহিসিয়ে উঠল মা। জেদ কোরো না। পালিয়ে কিছু বাঁচা যায় না সরো।
বাপির এই গলা সম্পূর্ণ অচেনা ঝিনির। হ্যারিকেন উস্কে দিয়ে মাকে টেনে সরিয়ে বাপি খিল আর ছিটকিনি খুলে দিল সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড় করে কারা ঢুকে পড়ল। হাতে লাঠি, বন্দুক সেজো জ্যাঠা মনির মতোই জামাপ্যান্ট পরা লোকগুলো তার মানে পুলিশ ওরা কিন্তু ওরা কেন এতো রাতে বাড়ি ঢুকে তাদের বাবাকে ধমকে কথা বলছে? বাবাকে তো সবাই খুব ভালবাসে, সম্মান করে কথা বলে।
পালাবার চেষ্টাও করবেন না কে যেন কড়া গলায় হেঁকে উঠল।তাহলে অনেক আগেই সেটা করতাম ,শান্ত গলায় বাপি বলল।দয়া করে জিনিসপত্র ভাঙচুর করবেন না। বাচ্চারা ভয় পাবে। রাজনীতি করার সময় বাচ্চাদের কথা মনে ছিল না? ফুল সাজানো ব্যপক অভ্যর্থনা আশা করে বুঝি দলে যোগ দিয়েছিলেন? চশমা আর ইউনিফর্ম পরা অফিসার কথাগুলো মুখের মধ্যে চিবোচ্ছিলেন।
বাকিরা ছুঁড়ে ফেলল টেবিলের উপরকার বইপত্র। চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল সে আর ছোড়দামণি তার মুখ চেপে আরও জড়িয়ে রাখল।ততক্ষণে ঘরের জিনিসপত্র চেয়ার আলনা উল্টে দিয়েছে তারা।লাঠির বাড়ি দিয়ে বই আলমারির কাচ চুরমার। ঠকঠক করে কাঁপছিল তিন ভাইবোন। কাঁদতেও পারছিল না ভয়ে।কী পত্রিকা রাখেন? আনন্দ বাজার পত্রিকা।আপনাদের খোঁজাখুঁজি শেষ হয়েছে? দয়া করে বাচ্চাদের ভয় দেখাবেন না ।
সেকি? দেশব্রতী,ফ্রন্টিয়ার এমন কি মহান রেড বুক অবধি ঘরে নেই? সরিয়ে দিয়েছেন না পুড়িয়ে ফেলেছেন সব বইপত্রিকা? অফিসার মুখ বাঁকিয়ে হাসল। চলুন তাহলে কিভাবে আপ্যায়ন করা যায় আপনাকে দেখা যাক।
চাপা কান্নার আওয়াজ ছিটকে উঠল আঁচল গুজে দেওয়া মার মুখ থেকে। সেদিকে না তাকিয়ে বাপি বলল, চলুন অফিসার।কোথায় যাচ্ছ বাপি?মুখ থেকে ছোড়দামণির হাত সরিয়ে ঝিনি চেঁচিয়ে উঠল। বাপি পিছু ফিরে তাকালো এবার। এমন করে হাসল তার দিকে,যেন আর কেউ। চোখে তার অচেনা এক চাউনি।যেন অনেকখানি ফাঁকা সেখানে জমাট বেঁধে গেছে খুব দ্রুতই। ফাঁকার ভেতর হাতড়ে হাতড়ে তার হাতের লম্বা সরু আঙুলগুলো এইমাত্র ছুঁয়ে দিলো কোনো অদ্ভুত আলোর টুকরো!বাপি তাই এমন করে হাসছে।
বাপি হাসলে তো ঝিনির সব ভয় আর অসুখ সেরে যায়। অথচ তার ডাকে সাড়া দিয়ে আজকের ওই পিছু ফিরে হাসিটুকুতে তার ভেতর মোচড়াতে লাগল ,হাহাকারে ভরে গেল ছোট্ট বুক অথচ কী হচ্ছে কেন হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না।
কলেজ,ছাত্রছাত্রী,বাড়ির বাগান আর তারা ছাড়া আর কোনো জগতের সঙ্গে বাপির যোগাযোগ থাকতে পারে তার তো জানা নেই। বই এত ভালবাসে তাদের বাবা আর বাপির প্রিয় বইগুলোকে ছিঁড়ে ফেলে সব জিনিসপত্তর তছনছ করে দিচ্ছে খারাপ লোকগুলো। পৃথিবীর সব চে' সাহসী সব চে' দরদী তাদের বাবাকে ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?উঠোন পেরিয়ে লোকগুলোর সঙ্গে কালো গাড়িতে উঠে গেল বাপি। পেছনে পেছনে দৌড়োতে দৌড়তে মা হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল মাটিতে। শাড়ির আঁচল ধুলোয় গড়িয়ে পড়ল আর শব্দ করে কঁকিয়ে উঠল মা।
কান্নাকাটি বা প্রশ্নে প্রশ্নে সবাইকে উৎক্ষিপ্ত করে তোলার মতো শক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে। পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে রুবি দিদি মাকে টেনে তুলল। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে তাকে ঘরে এনে জল খাওয়ালো। ঝিনির মনে পড়ল গলা কাঠ হয়ে আছে।ফ্যাসফেসে গলায় সেও জল খেতে চাইলে রুবি দিদি জল খাইয়ে তাকে খাটের ওপর শুইয়ে দিল। চাদর বালিশ ছড়ানো ছিল মেঝেতে ভাঙা কাচের টুকরোর মধ্যে। ন্যাংটা তোষকের বিছানায় দুই দাদা পা গুটিয়ে উঠে বসল মা'র পাশে। বেশ অনেক ক্ষণ পর সে বলতে পারলো ওরা কোথায় গেল মা? বাপি কোথায় গেল? কেউ উত্তর দিলো না।বারবার কঁকিয়ে উঠতে উঠতে মা'র শাড়ি আঁকড়ে কখন ঘুমিয়ে পড়ল সে অচৈতন্য হয়ে।
যেন ঘটনা ও রাত্তিরের মাঝখানে সামান্য কুঁকড়ে শুয়ে পড়লো সে।নিয়মমাফিক পাদুটি হাওয়ায় উঠে গেল খানিক কারণ ঘুমের ভেতরেই সে হেঁটে যাচ্ছিল খুব দ্রুত। হাঁটতে হাঁটতে কত বছর পর তার মালুম হলো কেউ কোত্থাও যায় না আসলে অতীত আর ভবিষ্যের মাঝখানে বারবার দূর পাল্লার ট্রেন এসে পড়ে। সবকিছুই ঘটতেও থাকে একইরকমভাবে। ব্যাগ আর ওড়না সামলে প্লাটফর্মের অচেনা লোকদের সঙ্গে ঝিনিকে উঠে যেতে হয় রিজার্ভেশনের কামরায়।
চলন্ত গৌড় এক্সপ্রেসের জানলার ধারে বসে ঝিনি দেখে ঘটনা ও রাতের মাঝখানে টর্চের আলো ঘোরে ইতস্তত ;নিচু গলায় ফ্রয়েড শোনায়। শিশু কালে কোনো কোনো রাতে সে যেমন শুনতে পেত পুবের ঘরে অমল কাকুদের স্টাডি সার্কেল নামের বন্ধ দরোজা। ব্যস্ত পায়ে মা'র চা আর মুড়িমাখা দিয়ে আসার সময় চৌকাঠের ওধার থেকে শ্রেণী সংগ্রাম, বুর্জোয়া, দ্বন্দ্বমূলক কিসব অদ্ভুত শব্দ ছিটকে পড়তো চৌকাঠের এধারে যার মাথামুন্ডু বোঝা যায় কেবল অনেক কাল পর দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে বসলেই। জানলার সিট থেকে স্পষ্ট দেখা যায় আগামী দিনের স্বপ্ন দেখা একদল মেধাবী যুবক চলেছে গ্ৰাম দিয়ে ঘিরে ফেলতে শহর। ভালবাসার মাটিকে মানুষের মধ্যে ভাগ করে দিতে তারা স্বপ্নের শস্যে ভরতে চায় যৌথ খামার। মানুষের হয়ে চাঁদের বিষমাখা ছুরি নিজেদের লাল বল ঘেঁষে চালিয়েছে তারা তো নিজেই।কষ্টে আরও কষ্টে দেখেছে চাঁদ ডুবে গেল তারও পর।
দুদিন পর লণ্ডভণ্ড জিনিসপাতির মধ্যে ক্লাস টু'র ঝিনি কুড়িয়ে পেয়েছিল ইন্দিরা একাদশী নামের চটি একখানা বই। তার পাতায় আঁকা কিছু ছবিতে পুলিশি অত্যাচারের বর্ণনা বেবাক অবাস্তব ঠেকছিল তার কাছে। সেদিনকার রাতের মতোই কাঠ হয়ে সে দাঁড়িয়ে রইলো অনেক ক্ষণ। মানুষ কিভাবে অন্য মানুষের নখের মধ্যে ছুঁচ ঢুকিয়ে দেয়,গরম সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয় হাতপা বেঁধে? যোনি বা মলদ্বারে ঢুকিয়ে দেয় লাঠি তাই হয় কখনো? বরফের ওপর শুয়ে বস্তা দিয়ে ঢেকে মারে যাতে গায়ে কোনো দাগ থাকে না অথচ ভেতরে হাড় ভেঙে যায়? মানুষের ওপর মানুষ কী করে এমন করতে পারে? পুলিশরা তো অবিকল সেজো জ্যাঠা মনির মতো খাকি রং জামাপ্যান্ট পরে ডিউটি থেকে ফিরে জ্যাঠাইমাকে যে রোজ ভাত দিতে বলে।
মায়ের ফোন পেয়ে পরদিনই হেমকে নিয়ে রাঙা মেসো চলে এসেছিল। পাতলা বইখানা হাতে করে হতভম্ব সে হেমকে গিয়ে ধরলো। কথা বেরোচ্ছে না। ফ্যাকাশে মুখে কাঁপতে কাঁপতে বললো বাপিকে ওরা মেরে ফেলবে এভাবে?মহুলকে রেখে শশব্যস্তে তাকে জড়িয়ে ধরলো হেম। এ বই কোথায় পেলি, কিচ্ছু হবে না ইত্যাদি সে শুনতেও পেল না। কেবল হেমের বুকের নরম শব্দের মধ্যে সে মিশিয়ে দিতে চাইল নিজের ধুকপুক।
জানলা দিয়ে দেখলো ঝিনি রামপুরহাট ছেড়ে এলো শেষ রাতের গৌড় এক্সপ্রেস।রাতের রেলগাড়ি একঘেয়ে ঝমঝম শব্দের মধ্যে বলে স্বপ্ন দেখতে জানে যারা, মানুষকে ভালবাসবে বলে তাজা মিষ্টি বাতাসে ভরে নেয় সিনা আর সিংহের হাঁ মুখে হাসতে হাসতে ঢুকিয়ে দেয় মাথা।ফায়ারিং স্কোয়াড ও তাক করা বন্দুকের সামনে ফি পূর্ণিমায় শিস দিতে দিতে লুফে নেয় চ্যাপ্টা এই গ্ৰহ কেননা সবার জন্য কবিতা আর আয়ু লিখে দেবে বলে মোটা দানার চিনির সঙ্গে তারা ঝেড়ে ফ্যালে একঘেয়ে সাদামাটা সকাল।
ভোরবেলায় কুয়াশা ঘেরা রহস্যময় ময়দানে তারা শুরু করে দীর্ঘতম দৌড় যাতে করে ছুটন্ত পিঠে নির্বিকার গুলি ছুটে আসে ।
উল্টোদিকে ঘুরে যাওয়া চেয়ার নোট নেয় এনকাউন্টারের।
0 Comments